somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি ভাত খামো না.. না.. না::

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই ডেস্কের এক কোনে মন বসাই কাজে। কী-বোর্ডে টপাটপ বেশ কয়েকবার হাত বোলাতেই মল্লিকের হাক-ডাক, ভুমিকম্প হচ্ছে!! একবার মাথা উচু করে তাকিয়ে বিষয়টাকে খুব বেশী দুতয়ালি মনে হলোনা। আবারো চলে কাজের সঙ্গে কী-বোর্ডের সখ্যতা। খানিকবাদেই মনে হলো, আরেক এ কী আমার চেয়ারখানা আজ আমার সঙ্গে এতোটা বিশ্বাস ঘাতকতা করছে কীভাবে!

অফিসের অনেকের সঙ্গে আমিও পা বাড়াই তিন তলার সিড়িতে। সঙ্গে ল্যাপটপের ব্যাগ। তবে তারো আগে বাম পকেটে নিজের অজান্তে হাত রাখি। যাক বাচা গেল পকেটে নয় হাজার টাকাটা ঠিকমতোই আছে। মনে হলো আর অন্য সবার থেকে আমি একটু বেশী নিরাপত্তা অনুভব করছি। টাকার নিরপত্তার সঙ্গে পুরকৌশলের ছাত্র হিসেবে আমার যানা আছে অন্যসব বিল্ডিং থেকে আমাদের স্টিলের তৈরি বিল্ডিংটা একটু দেরীতে ভেঙ্গে পড়বে। আর সেটা যদি হয়েই যায়। তবে দুপুরের বোকামির দু:খটা কিছুটা হলেও ঘুচাবে।



বাসা থেকে বের হওয়ার সময় পকেটে তিরিশ চল্লিশ টাকা নিয়ে বের হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম বের হয়েই এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলব। তবে বাসার পাশের বুথটা যে মাসের ২৫ দিনই নেটোয়ার্ক ভুতে আক্রান্ত থাকে, তা মনে পড়ে গেল বুথের গার্ডের কথায়-মামা নেটোয়ার্ক সমস্যা।

কোনমতে চিবুকটা সামলে স্টার্ট দিই মোটর সাইকেলে। ততক্ষনে মোটর সাইকেলের তেলখেকো মিটারটা জানান দিচ্ছিল তেলের বিকল্প নেই।

অগত্যা জনা চল্লিশেক টাকাটা হাতড়ে আর মনের সান্তনাকে পুজি করে রওনা হই। কোনমতে রামপুরা ব্রিজ পাড় হতেই মিসড কলে পাখির (পাসপোর্টর দালাল) ডাক পড়ল। পনেরো মিনিটের উপাখ্যান দেড় মিনিটে শেষ করতেই কল ওযেটিং-এ আবারো ডাক। পাখির লাইন কেটে রিসিভ করতেই উপাশের কণ্ঠ- স্যারের যে ইন্টারভিউটা নিতে চেয়েছীলেন তার জন্য এখনই বেস্ট সময়। এখন না আসলে পড়ে সময় করা মুশকীল হবে। নি:শ্বাসটাকে আর দীর্ঘ না করে রওনা দিলাম বসুন্ধরা সিটির পথে। এর মাঝেই ফটোগ্রাফার নিশককে (Nishok Tarek Aziz) ছবি তোলার জন্য সময় ম্যানেজ করতে বল্লাম।



তখন পর্যন্ত পেটে দানাপনি বলতে-বাসা থেকে বের হওয়ার সময় হাফ গ্লাস ঠান্ডা পানি। দুইটা বাজে শুরু হলো ইন্টারভিউ। একঘন্টা ইন্টারভিউ শেষে পাশের ব্যাংক এশিয়ার বুথে যাই টাকা তুলতে। তখনো আমার বোধের উদয় হয়নি ভুত যে কাওরান বাজার এলাকায়ও হানা দিয়েছে। টাকা না তুলতে পেরে শেষেমষ প্রথম আলোর পাশে ডাচ-বাংলার বুথে গেলাম। মানিব্যাগ থেকে ডেবিট কার্ডটা বের করতেই গার্ড মামার পান খাওয়া মুখের হাসি- নেটোয়ার্ক সমস্যা। পাশেই দাড়িয়েছিলেন আমার মতো ভুক্তভোগী একজন, বুথের দিকে ইশারা করে বল্লেন- যান একবার ট্রাই করে মনকে সান্তনা দেন। করলামো তাই। বিসমিল্লাহ বলে পাসোয়ার্ড চাপলাম। আর টাকার অংকের জায়গায় এক হাজারের পরিবর্তে দশ হাজারের বোতাম চাপলাম। কচকচে নতুন দশটা এক হাজার নোট বের হয়ে আসল। ঈদের চাদ দেখার খুশির সঙ্গে আমাবস্যার তারাটাও দেখলাম। আমি তো তুলতে চাচ্ছিলাম এক হাজার। এখন এতো টাকা দিয়ে কী করব?? ধ্যাত... ততক্ষণে সব ব্যাংকই বন্ধ হয়ে গেছে। তাই ভাজ খাোয়া কপাল খুটরে রওনা হলাম অফিসের পথে। খানিক বিরতি দিয়ে ট্রাস্ট ফিলিং থেকে ৬০০ টাকার তেল (পেট্রোল) কিনলাম। আর শামীমের (Akramul Hoque Samim) বদান্যতায় সমকাল ক্যান্টিনে সেড়ে নিলাম লাঞ্চ। পুরো রাস্তায় বেশী টাকা তোলার যে যাতনায় হাইকোর্ট-সুপ্রমকোর্ট ভেবে নিজেকে তাড়িত করছিলাম তা সন্ধ্যায় ভুমি কম্প হতেই সান্ত্বনার বিদুৎ ঝলকানিতে রুপ নিল। কারণ ভুমিকম্পে যদি বিল্ডিংগুলোর কিছু একটা হয়েই যায় তবে আমার এ এক হাজার টাকা, কোটি না হোক লাখ টাকার সমাদার পাবে নিশ্চিত। সে সময় এক হাজার টাকার ইলিশ একশ টাকায়ও পাওয়া যেতে পারতো। কারণ ব্যাংকসহ সব ভুমিকম্পে ধ্বংস হয়ে গেলে বাজারে ক্রেতা সংকট দেখা দিত। আর সবার সঙ্গে থাকা টাকাটাই হতো শেষ সম্বল। সেদিক থেকে নিজেকে আলালের ঘরে দুলাল ভাবতেই পারি।

যাক শেষমেষ তা হয়নি। বাসায় ফেরার পথে সঞ্জীব দা'র গাড়ি চলেনা গানটি শুনতে শুনতে এলাম। বাসায় এসে মধ্যরাতের খবরে শুনতে পেলাম আজ রাত থেকে প্রতি লিটার তেলে ৫-৮ টাকা দাম বাড়ানো হয়েছে। খবরটা আমার জন্য কিছুটা আতংকেরই বটে। কারন সরকার হুট করে লিটার প্রতি ৫-৮ টাকা তেলের দাম বাড়ালেও আমার বসের কাছে যতোই আরজি জানাই না কেন আগামী মাসে আমার এক টাকাও বেতন বাড়বেনা। তাই শেষমেষ ঘুমের তাড়নায় আমার বারবারই মনে হচ্ছে আন্না হাজারে, মোদী কিংবা আমাদের আবুল মকসুদ ভাইয়ের মতো শহীদ মিনারে অনশন একটা করতেই হবে। তবে আমার অনশনের স্লোগান হবে- আমি ভাত খামোনা।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×