somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বঙ্গাব্দ কি শুধুই বাঙালির বা মৌলিক কিছু ?

০৮ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশে বর্তমানে খ্রীষ্টাব্দ, হিজরী, ও বঙ্গাব্দ নামক তিনটি সনের প্রচলন আছে । আন্তর্জাতিক ভাবে খ্রীষ্টাব্দের ব্যাপক প্রচলন থাকলেও মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব ইত্যাদি পালিত হয় হিজরী সনের তথা চন্দ্র মাসের হিসাবে । ঈদ, রোজা সহ সব হিসাব নিকাশের জন্য হিজরীই মুসলমানদের পথিকৃত এবং বাঙ্গালীর জীবনের দৈনন্দিন কার্যকলাপ, বিয়ে-সাদী, পূজা-পর্বন এবং বর্ষবরণসহ সমস্ত অনুষ্ঠানাদি সংগঠিত হয়ে থাকে বঙ্গাব্দের হিসাবে । তাই বঙ্গাব্দ বাঙ্গালীর মন-মানসিকতা ও জীবনের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বঙ্গাব্দ বাঙ্গালীর নিজস্ব সম্পদ হিসাবে প্রচলিত ও প্রচারিত ।




বলা হয়ে থাকে ভারত সম্রাট মহামতি আকবর বঙ্গাব্দের প্রচলন করেছেন । সম্রাট আকবর ১৫৫৬ খ্রীষ্টাব্দে সিংহাসনে আরোহন করেন। তখন ভারতে শকাব্দ, বিক্রম সম্বত, গুপ্তাব্দ, লক্ষন সন, হিজরী ও খ্রীষ্টাব্দ সহ বহু সনের প্রচলন ছিল । তবে রাজ দরবারে চন্দ্র মাসের হিজরী সনের হিসাবেই রাজকার্য ও উৎসব অনুষ্ঠানাদি সম্পন্ন করা হতো । অব্যশই আকবরের আমলে পান্ঞ্জাব, দাক্ষিণাত্য, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, দিল্লী ও তামিল নাড়ুতে শকাব্দ এবং কেরালাতে কোলবর্ষম ও বাংলায় লক্ষন সন, মগীসন, গুপ্তাব্দ সন নামক বহু সনের প্রচলন ছিল । বৎসরের একটি নির্দিষ্ট দিনে সারা ভারতে সম্রাট তার প্রজা সাধারনের কাছ থেকে খাজনা আদায় করতে যেন সমর্থ হন এবং ঐ দিন যেন ভারত উৎসবের দিনে পরিণত হয় সেজন্য হিজরী সনের পরিবর্তন জরুরী হয়ে পড়ে । কারণ হিজরী সন যেহেতু প্রতি বৎসর ১০/১১ দিন এগিয়ে যায়। ফলে খাজনা বা পূণ্যাবর দিন প্রতি বৎসরই পরিবর্তন হয় । এই দূর্ভোগ থেকে বাচার জন্য সম্রাট একটি নতুন সন প্রচলন করেন । তার নাম 'ফসলী সন' ।



এই ভারতীয় সন প্রচলনে মহামতি আকবর স্বতন্ত্র কিছু না করে তৎকালীন হিজরী সনকেই সৌর সনে পরিবর্তন করেছেন । এটি আকবরের কোন মৌল সৃষ্টি নয়। বরং শকাব্দ, বিক্রম সম্বত, গুপ্তাব্দ ও তামিল সনের কার্বন কপি মাত্র । কারন তৎকালে শকাব্দ ও বিক্রম সম্বত ইত্যাদি সৌর সনে ব্যবহারকৃত মাসের নাম যেমন ছিলঃ বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রাহায়ন, পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন, চৈত্র এবং সপ্তাহের সাত দিনে নাম ছিল শনি, রবি, সোম, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার ঠিক তেমনি অবিকৃতভাবে ঐ সব মাস এবং দিন গুলিকেই আকবর তার সনে ব্যবহার করেছেন । অর্থাৎ মুসলমানের হিজরী সন এবং দ্রাবিড়, আর্যদেও মাস ও বার। হিজরী চন্দ্র মাসের এবং শকাব্দ ও বিক্রম সম্বত ইত্যাদি মাস ও দিনগুলো সৌর সনের । এগুলোর মিশ্রনই হলো আকবরের সন । যা প্রর্বতনে আমির ফতেই উল্যাহ সিরাজির প্রভাব অবদান প্রচুর । আকবর তার সনের নাম দিলেন 'ফসলী সন'। ফসল কাটার সময় খাজনা উসুল করার সুবিদার জন্যই এই সনের প্রচলন। আকবর যখন তার 'ফসলী সন' প্রবর্তন করেন তখন হিজরী ছিল ৯৬৩ সন। আকবরের ফসলী সনের জন্মকালও ৯৬৩। এখানে একটি কথা প্রাণিধানযোগ্য তা হলো প্রত্যেক সনই জন্মলগ্ন থেকে ১ সংখ্যা দিয়ে শুরু হয়েছে ।





খ্রীষ্টের জন্ম সনের সাথে সঙ্গতি রেখে খ্রীষ্টাব্দ । হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর মক্কা থেকে হিজরতের সময় কাল থেকে প্রথম হিজরী গণনা করা হয় । তেমনি শকাব্দ, শুপাব্দ, কোলাবর্ষম, বিক্রম সম্বত সহ প্রত্যেক সনই প্রবক্তাদের জন্মকাল বা ঘটনা কালের সূচনা থেকেই গণনা করা হয় । শুধুমাত্র আকবরের 'ফসলী সন' এর ব্যতিক্রম। জন্মকালেই এই সনের বয়স ৯৬৩ বৎসর । অর্থাৎ হিজরীও ফসলী সনে কোন প্রভেদ নাই । সৌর ও চন্দ্র মাসের গণনায় শুধু প্রভেদ । যার ফলে হিজরী সন প্রতি বৎসর বাংলা সন থেকে দশ এগারো দিন করে কম পড়ে যায় । বাংলাদেশে লক্ষন মঘি মনের শকাব্দের মতো ভারতে সৌর সনে প্রচলন থাকা স্বত্তেও আকবরের এই অমৌলিক সনটাকেই বাংলাদেশের তাত্ত্বিক বুদ্বিজীবি ও পন্ডিতেরা 'বঙ্গাব্দ' নামে অভিহিত করেছেন । পন্ডিতেরা প্রায় সবাই এক বাক্যে বলেন যে সম্রাট আকবর 'বঙ্গাব্দ' বা বাংলা সনের প্রচলন করেছেন । অথচ ভারতের ইতিহাসে 'বঙ্গাব্দ' নামে কোন সন সম্রাট আকবর প্রচলন করেছেন বলে উল্লেখ নাই ।






আসমুদ্র হিমাচল তথা কাবুল থেকে বার্মা, হিমালয় থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত উপমহাদেশের কোথাও 'বঙ্গাব্দ' নামক কোন সনের প্রচলন নেই । এর একমাত্র ব্যতিক্রম বাংলাদেশ বা তৎকালিন পূর্ব বঙ্গ । পশ্চিম বঙ্গেও শকাব্দ সনই প্রচলিত রয়েছে । যা বর্তমান ভারতের রাজসন । স্বভাবতঃই আজ প্রশ্ন জাগে দিল্লীশ্বর পুরো ভারতকে বণ্ঞ্চিত করে শুধুমাত্র বঙ্গ দেশের জন্য বঙ্গাব্দ' বা বাংলা সনের প্রচলন কেন করেছেন ?



আকবরের বঙ্গাব্দ সম্বন্ধে কিছু উক্তি উল্লেখ করা প্রয়োজন। বাংলা একাডেমীতে বর্ষপন্ঞ্জি শুদ্ধি করণের জন্য ডঃ শহিদুল্লাহর নেতৃত্বে যে কমিটি গঠিত হয় তারা যে ঘোষণা দেন তাতে লেখা হয়ঃ-
(১) মোঘল আমলে সম্রাট আকবরের সময়ে হিজরী সনের সঙ্গে সামন্ঞ্জস্য রক্ষা করে যে ' বঙ্গাব্দ ' প্রচলন করা হয়েছিল তা হতে বৎসর গণনা করতে হবে ।
(২) জনাব আমজেদ হোসেন সাহেব লিখেন, 'বঙ্গাব্দ' বা ফারসী সনে সৌর সনের ভিত্তিতে হিজরী সনকে গ্রহণ করা হয়। এভাবেই ' হিজরী ' সালকে ' বাংলা সনে ' রূপান্তরিত করা হয়। অর্থাৎ 'এক কথায় হিজরী সনের রূপান্তরই বাংলা সন । ( স্বাগত ১৪০০ সাল )
(৩) "বাংলা সন" কিভাবে যাত্রা শুরু" প্রবন্ধে জনাব গোলাম মোর্তজা লিখেছেন- 'আকবরের রাজত্ব কালে এবং তারই নির্দেশে সৌর পদ্ধতির বাংলা সনের প্রবর্তন করা হয় । বাংলা সনের গণনা শুরু হয় আকবরের সিংহাসনে আরোহনের একমাস পরে ১১ই এপ্রিল ১৫৫৬ খ্রীষ্টাব্দে ।





এই রকম উদাহরণ ভুরি ভুরি । এক কথায় আমাদের বাংলাদেশী পন্ডিতদের একই হরিবোল, " সম্রাট আকবরই বাংলা সন বা বঙ্গাব্দের প্রচলন করেছেন।" কিন্তু সত্যিই কি সম্রাট আকবর ১৫৫৬ সালে বাংলা সনের প্রচলন করেছিলেন?
ইতিহাসের আলোকে চিন্তা করলে দেখা যায় । ১৫৫৬ সালে আকবর যখন দিল্লীর সিংহাসনে আরোহন করেন ও কথিত বাংলা সন প্রচলন করেন তখন (বর্তমানের বাংলাদেশ ও পশ্চিম বঙ্গ) বাংলা ছিল কার্যত: স্বাধীন ।





শেরশাহের মৃত্যু পর থেকে সুবে বাংলা দিল্লী অধীনতার নাগপাশ থেকে প্রায় মুক্ত ও স্বাধীন থেকেছে । গৌড়ের পাঠান সুলতান দাউদ খাঁন কররানী ১৫৭৩ সালে সিংহাসনে বসেই গৌড় থেকে দক্ষিণে চট্রগ্রাম পর্যন্ত আপন রাজ্যসীমা বিস্তার করেছিলেন । ১৫৭৫ সালে রাজমহলের যুদ্ধে সম্রাট আকবরের বাহিনী দাউদ খাঁন কররানীকে পরাজিত ও নিহত করলেও 'সুরে বাংলায়' সুদৃভাবে শাসন ক্ষমতা বিস্তার করতে পারেননি ।





বার ভূঁইয়ার প্রধান ঈশা খাঁর রাজত্ব কালেও মোগলেরা বাংলায় দাঁত ফুটাতে সক্ষম হয়নি । ১৫৯৯ খৃষ্টাব্দে ঈশা খাঁর পরলোক গমনের পরেও তার পুত্র মুসা খাঁ যতদিন জীবিত ছিলেন ততোদিন মোগল শক্তির আধিপত্য বাংলায় ছিল না। সুতরাং এ কথা ধ্রব সত্য যে ১৬১০ খ্রীষ্টাব্দে সুবেদার ইসরাম খাঁন রাজমহল থেকে ঢাকায় "সুরে বাংলার" রাজধানী স্থানান্তরের পূর্বে বাংলায় মোঘল আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি । আবার মোঘলেরা ১৬১২ খ্রীষ্টাব্দে নোয়াখালী পর্যন্ত দখল করতে পারলেও ১৬৬৬ খ্রীষ্টাব্দে পূর্বে চট্রগ্রাম করতলগত করতে সক্ষম হয়নি । তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, ১৬৬৬ খ্রীষ্টাব্দের পূর্বে বাংলায় কথিত 'বঙ্গাব্দ' বা 'বাংলা সন' তো দূরের কথা, আকবরের প্রচলিত সর্ব ভারতীয় "ফসলী সন" ও প্রচলিত হতে পারেনি। বাংলার কিয়দংশে তখন 'লক্ষণ সন', চট্রগ্রামে 'মগী সন' ও ত্রিপুরায় 'ত্রিপুরাব্দ' প্রচলিত ছিল ।






তা হলে আমাদের ইতিহাসবিদরা ও পন্ডিতেরা কেন বলছেন যে সম্রাট আকবরই ১৯৫৬ খ্রীষ্টাব্দে 'বাংলা সন' চালু করেছন । স্বয়ং বাংলাই যখন সম্রাট আকবরের অধীনে ছিল না তখন তের পক্ষে 'বঙ্গাব্দ' বা 'বাংলা সন' প্রচলনের প্রশ্ন উঠে কি ?






সম্রাট আকবর হিজরী সনের সাথে সৌর মাসের সঙ্গতি রেখে ফসলী সনের প্রবর্তন করেছিলেন ভারতে। আর এই ফসলী সন ও বালায় উদয় খাঁনের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রচলিত হতে পারেনি । বঙ্গাব্দ বা বাংলা নামের কোন মৌলিক বা নিজস্ব সম্পদ নয়। ইংরেজী ও হিজরীর মতো বিদেশী সন। ফসলী সনের সঙ্গিয় কারন মাত্র । সম্রাট আকবর তার ফসলী সনে নিজ সৃষ্ট কোন মাস বা বার সংযোগ করতে পারেননি। তিনি তার সনে বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ থেকে শুরু করে চৈত্র পর্যন্ত সব মাস ও শনি বার থেকে শুরু করে শুক্রবার দিনগুলির তৎকালে প্রচলিত 'শকাব্দ' ও 'বিক্রম সম্বত' সন থেকে গ্রহন করেছেন । এসব মাস ও বারের নাম থাকে গ্রহন করেছেন। যেমন বিশাখা, জ্যৈষ্ঠ, পূর্বাষাঢ়া, শ্রাবণী, পূর্বাভাদ্র পদ, আশ্বিনী, কুত্তিকা, মৃগশিয়া, পূষ্যা, মাঘ, পূর্ব ফালগুনী চিত্রা নক্ষত্রের নাম থাকে বার মাসের নাম এবং শুক্র, শনি, রবি, সোম, মঙ্গল, বুধ, বৃহঃস্পতি নাম থেকে বারের নাম নেয়া হয়েছে । এই সব নাম দ্রাবিডিয়ান ও আর্যদের দেওয়া। পরে তা শকাব্দ, বিক্রম সম্বত, গুপ্তাব্দ ও লক্ষণ সন ইত্যাদি সন বর্তমান রুপে ব্যবহার করা হয় । আকবর ঐ মাস ও বারকেই তার সনে ব্যবহার করেন ।
খৃষ্ট জন্মের ৩০০০ বা ৫০০০ বছর পূর্ব হতে তামিল সনে আজও বার মাসের নামগুলি নিম্নরুপ চিত্তিরাই ৩১, বৈগাছি ৩২, আডি ৩১, আভানা ৩১, পরাননি ৩০, ইপাছি ৩০, কীর্তিগাই ৩০, গামারী ৩০, থাই ২৯, মাচি ৩০, ফানগুনী ৩০ ।

খৃষ্ট জন্মের ৫৮ বছর পূর্ব থেকে যে বিক্রম সম্বত সন এবং ‌৭৮ বছর পরে যে শকাব্দ বা শাকাবর্ষ ও ৩১৯ বৎসর পর যে গুপ্তাব্দ সনের জন্ম হয় এদের মাস গুলি নিম্নরুপ: বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবন, ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ন, পৌষ, মাঘ, ফালগুন, চৈত্র ।






ভারতবর্ষে একমাত্র কেরালাতে ভারতীয় কোন সন ব্যবহার হয় না । তারা কোলাবর্ষম নামে নিজেদের সন ব্যবহার করে থাকেন যা মৌলিক । তাদের মাসের নাম গুলি হলো: সিংগাম ৩০, কন্নি ৩০, ধনুকম ৩০, সরকম ৩১, তুলুম ৩০, কুম্ভম ৩০, মিনম ৩১, মেডম ৩১, ইটাওম ৩২, মিথুনম ৩১, কর্কটম ৩১ । ভারতবর্ষের তথা বাংলার রাশির নামগুলি কোলাবর্ষম থেকে নেয়া । আর তাই শকাব্দ, বিক্রম সম্বত, গুপ্তাব্দ, কোলাবর্ষম ইত্যাদি থেকে ধার করা মাস ও দিন সম্বলিত কোন সনই বাঙ্গালীর নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী নয় । বাঙ্গালীর কৃষ্টি ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে সামস্যহীন অবাঙ্গাল সম্রাট আকভর প্রচলিত 'ফসলী সন' কোনক্রমেই বাঙ্গালীর নিজস্ব সম্পদ নয়। কোনক্রমে তা বঙ্গাব্দ বা বাংলা সনও হতে পারে না ।





পহেলা বৈশাখ কি বাঙ্গালীর উৎসবের দিন ? এটা কি বাঙ্গালীর নিজস্ব ঐতিহ্য ও কৃষ্টির ধারক-বাহক ? দ্রাবিডিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত তামিলেরা (তামিল নাড়ুর অধিবাসী) খ্রীষ্ট জন্মের তিন হাজার বৎসর পূর্ব থেকেই 'বৈগাচি' নামের একই মাসের প্রথম দিনকে তাদের উৎসবের দিন হিসাবে পালন করে আসছে।মালায়ালাম বাসী কেরালার রোকদের কোলাবর্ষম ক্যালেন্ডারেও আমাদের পহেলা বৈশাখ ১৪ই এপ্রিল তাদের সংক্রান্তির দিন। শকাব্দ, বিক্রম সম্বত, গুপ্তাব্দ সনেও ১লা বৈশাখ থেকেই বৎসর গননা শুরু হয় । পাকিস্তানের পান্ঞ্জাব, ভারতীয় পান্ঞ্জাব, দিল্লী, রাজস্হান, মহারাষ্ঠ্র, ভারতের উত্তর ও মধ্য প্রায় খ্রীষ্ট জন্মের পূর্ব থেকেই ১লা বৈশাখ উৎসবের দিন হিসাবে পালিত হয়ে আসছে । সুতরাং পহেলা বৈশাখ পালনে বাঙ্গালীর স্বতন্ত্রতা কোথায় ?



একথা সত্য যে, আকবরের ১৫৫৬ খ্রীষ্টাব্দে প্রচলিত ফসলী সনকে তৎকালীন বাংলায় ১৬০০ খ্রীষ্টাব্দের পর সন গণনার মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছে । সম্ভবত মীর জুমলার আমলেই বাংলায় আকবরের সনকে চালু করা হয়। মীর জুমলার ত্রিপূরা জয় করেছিলেন । ফলে বাংলা ও ত্রিপূরায় একই সময়ে এই সন চালু হয় । তখন থেকেই বোধ হয় আকবরের ভারতীয় 'ফসলী সন' বাংলায় বঙ্গাব্দ ও ত্রিপূরায় ত্রিপূরাব্দ হিসাবে প্রচলিত। বঙ্গাব্দ ও ত্রিপূরাব্দের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। বর্তমানে বাংলাদেশে ১৪১৫ বঙ্গাব্দ আর ত্রিপূরায়ও ১৪১৫ ত্রিপূরাব্দ ।






ইতিহাস পর্যালোচনায় প্রমাণিত যে, সম্রাট আকবর ১৫৫৬ খ্রীষ্টাব্দে যে সর্বভারতীয় সন প্রচলন করেছিলেন তার নাম 'ফসলী সন' তা কোনমতে বঙ্গাব্দ বা বাংলা সন নয় । মোঘল ইতিহাস বা দলীল দস্তাবেজে কোথাও উল্লেখ নেই যে, বাংলার লোকদের জন্য নির্দিষ্ট কোন বঙ্গাব্দ বা বাংলা সন চালু করেছিলেন । সত্য কথা এই যে, বঙ্গাব্দ বা বেংলা সনের উৎপত্তির তথ্যভিত্তিক কিন ইতিহাস নেই । বাংলাদেশের তাত্ত্বিক বুদ্ধিজীবিরা বঙ্গাব্দ বা বাংলা সনের জন্মের সাথে সম্রাট আকবরের নাম জুড়ে দিয়েছেন । ইতিহাসে বঙ্গাব্দ নামের কোন সন নেই । এই বঙ্গাব্দ ভারতীয় ফসলী সনের বঙ্গীয় রুপান্তর মাত্র । সমগ্র ভারতবর্ষকে উপেক্ষা করে সম্রাট আকবর শুধুমাত্র বাংলার জন্য কেন বাংলা সন প্রচলন করলেন তার তথ্যভিত্তিক ইতিহাস কি ? তাছাড়া বাংলাদেশে শকাব্দ, লক্ষণ সন, গুপ্তাব্দ সনের মতো সৌর সনের প্রচলন থাকা সত্ত্বেও আকবরের সর্বভারতীয় ফসলীসনকেই বঙ্গাব্দ বা বাংলা সন হিসাবে কেন গ্রহন করা হলো ?











বিঃ দ্রঃ-
(‘‘জলপাই আলম’’ ব্লগারের ব্লগ থেকে নেয়া । তিনি
লেখাটি পেয়েছেন একটি বৈশাখী স্বরনিকা থেকে । স্বরনিকাতে লেখক হিসাবে যার নাম উল্লেখ আছে তা হলো এ, বি, এম, ফয়েজ উল্লাহ। লেখাটির শেষে লেখা আছে " লেখকঃ কলামিষ্ট, নজরুল গবেষক ও জাগরন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ।"
লেখাটি আমার ভালো লেগেছে তাই এখানে তুলে দিলাম। লেখার পুরো কৃতিত্ত্ব মূল লেখকের।)
[ প্রসঙ্গটি কৌতুহলোদ্দীপক হওয়ায় পরবর্তীতে এ নিয়ে নিজের মতামতের উপর লেখার ইচ্ছা আছে । ব্লগটি চার পর্বে ছিল, দেখার সুবিধার্থে একসাথে দিলাম । ]
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১:৪৭
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

লিখেছেন আবু ছােলহ, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৮

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

গুগল থেকে নেয়া ছবি।

সামুতে মাল্টি নিক নিয়ে অনেকেই কথা বলেন। অনেকের কাছে মাল্টি যন্ত্রণারও কারণ। শুধু যন্ত্রণা নয়, নরক যন্ত্রণাও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×