বাবার দুই অকৃত্রিম বন্ধু, শন্তুষ বাবু এবং ফার্ণান্দেজ কাকা। বাবা এবং শন্তুষ বাবু গত হয়েছেন, জানিনা ফার্ণান্দেজ কাকার বর্তমান অবস্থা। বাবা মুসলিম, শন্তুষ বাবু হিন্দু এবং ফার্ণান্দেজ কাকা খ্রিষ্টান। শন্তুষ বাবুর কথা অন্যদিন লিখব, আজ শুভেচ্ছা জানাচ্ছি ফার্ণান্দেজ কাকাকে।
ফার্ণান্দেজ কাকা আব্বার কলিগ ছিলেন। আমাদের আপনি করে বলতেন। সুঠাম দেহ স্বাস্থ্যবান ফর্সা। দারুণ স্মার্ট ছিলেন। বড়দিন মানেই আমরা অপেক্ষায় থাকতাম কাকা কেক মিষ্টি নিয়ে আসবে। নানা রকম কেক, মিষ্টি, চকলেটে ভরা একটা পেকেট গছিয়ে দিয়ে চলে যেতেন, বাবা বাসায় থাকলে এককাপ চা খেয়ে যেতেন আর না থাকলে গছিয়ে দিয়ে চলে যেতেন, বসতেননা।
কোন কারনে বাবার অপিষে গেলে ওনার সাথে বসাতেন, আপনি করে সম্মোধন করতেন, আমার জন্য চা নাস্তার অর্ডার করতেন। অপিষে ওনি ট্রেড ইউনিয়ন/সিবিএ বাবার প্রতিপক্ষ দল সাপোর্ট করতেন, কিন্তু ওনাদের বন্ধুত্বে বিন্দুমাত্র তার প্রভাব নেই। সন্তোষ বাবুরে বাসায় ইংরেজিতে কথা বলেন। প্রতি কোরবানে আমরা গরুর মাংসের প্যাকেট দিয়ে আসতাম। বাবাই নিয়ে যেতেন, রিটায়ার্ড হবার পর বয়স হয়ে গেলে আমরা যেতাম, বড় ভাই যেত, একার আমিও গেছিলাম। একটা ছোট্ট বাচ্চা দৌড়ে গিয়ে ওনাকে বলল "সাম ওয়ান ওয়ানটেড টু ইউ," শুনতে বেশ ভাল লেগেছিল তায় এখনে মনে আছে।
ওনার ছেলে হঠাৎ করে বড় হয়ে গেছিল, ছেলের এক গাদা সার্ট প্যান্ট আমাকে গিফ্ট করে দিয়েছিল। ছোট বেলায় আমরা এমন পড়তাম, বড়দের জামা কাপড় ছোট হয়ে গেছে এমন পরিস্থিতি হলে ছোটদের গিফ্ট করে দিত। ছোটরা পড়তাম। আমার মামাতো ভাই এর জিন্স প্যান্ট আমার বোন পড়ত।
বাবার অনেক ব্যাক্তিগত ব্যাপারে ওনি ভাল পরামর্শ দিতেন, কলেজে উঠলে আসা যাওয়ার জন্য সাইকেল কিনব। ওনি অপিষ শেষ করে আমাকে নিয়ে গিয়ে সাইকেল কিনে দিয়েছিলেন। পনিক্স সাইকেল, রমজান মাসে আমি নিজে চালিয়ে তাড়াহুড়া করে বাসায় আসার সময় ঘরের কাছে মেইন রোড থেকে গলি দিয়ে ঢুকে মসজিদের সামনে আসতেই একটা ছোট কন্যা তার বাবার জন্য ইফাতারি নিয়ে যাচ্ছিল, ভয়ে এদিক সেদিক করেছে আমিও কন্ট্রোল করতে পারিনি, এক্সিডেন্ট হয়ে গেছে। বাচ্চার বাবা আমাকে চিনতো, তায় এটা নিয়ে কিছু বলেনি, আমি নির্বাক ছিলাম।
আজ বড় দিনে কাকাকে মন পড়ছে। ভাল থাকবেন আপনি, যে অবস্থাতেই থাকুননা কেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:০৯