আওয়ামী শাসন ব্যবস্থা কী নাৎসীবাদ? নাকি ফ্যাসিবাদ? স্বৈরচার নাকি মাফিয়াতন্ত্র?
রাজনীতি সম্পর্কে যারা ধারণা রাখেন তারা এটাকে মাফিয়াতন্ত্র বলছেন, কারণ অন্য দুটি মতবাদ এর একটা লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আছে যদিও এটা অনৈতিক। তবুও তারা তাদের মতো করে একটা আদর্শ সেট করে সেটার দিকে এগোতে থাকে। কিন্তু মাফিয়াতন্ত্রে কোন আদর্শ ও উদ্দেশ্য থাকেনা। গুম, খুন ইত্যাদি করে আর্থিক লাভবান হয়ে থাকে এবং ক্ষমতাকে ধরে রাখার যন্য যা করারা দরকার সবই করে থাকে।
নাৎসিবাদ (Nazism) একটি রাজনৈতিক মতবাদ, যা জার্মানির নাৎসি পার্টির (National Socialist German Workers' Party - NSDAP) আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। এই মতবাদটি ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জার্মানির উপর প্রভাব বিস্তার করে এবং অ্যাডলফ হিটলারের নেতৃত্বে তা জার্মানির সরকারী মতবাদে পরিণত হয়।
নাৎসিবাদের মূল তত্ত্বগুলোর মধ্যে ছিল জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা, বিশেষত আর্য জাতিকে শ্রেষ্ঠ বলে দাবি করা। তারা বিশ্বাস করতো যে জার্মান জাতি বা আর্য জাতি অন্য জাতিগুলির তুলনায় শ্রেষ্ঠ এবং অন্যান্য জাতির সাথে তাদের বসবাস করা উচিত নয়। এ কারণে, ইহুদি, রোমা, শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী, এবং অন্য যেসব গোষ্ঠীকে তারা "নিম্নমানের" বলে বিবেচনা করতো, তাদের উপর নিপীড়ন ও গণহত্যা চালানো হয়, যা হোলোকাস্ট নামে পরিচিত।
নাৎসিবাদের আদর্শে জাতীয়তাবাদ, সামরিকবাদ, একনায়কতন্ত্র, এবং সরকারীভাবে আর্য জাতির শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছিল। এ মতবাদ গণতন্ত্রের বিরোধী ছিল এবং রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বত্র নাৎসি পার্টির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে চেয়েছিল।
ফ্যাসিবাদ (Fascism) একটি রাজনৈতিক মতবাদ যা একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, জাতীয়তাবাদ, এবং রাষ্ট্রের ওপর চরম নিয়ন্ত্রণের ধারণা প্রচার করে। এই মতবাদ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে ইতালিতে বেঞ্জামিন মুসোলিনির নেতৃত্বে গড়ে ওঠে এবং পরে অ্যাডলফ হিটলারের জার্মানির মতো অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
ফ্যাসিবাদের মূল বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
কঠোর জাতীয়তাবাদ: ফ্যাসিবাদ চরম জাতীয়তাবাদের উপর ভিত্তি করে, যেখানে একটি নির্দিষ্ট জাতি বা গোষ্ঠীকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।
একনায়কতন্ত্র: ফ্যাসিবাদে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকে এবং একটি নির্দিষ্ট নেতার (যেমন: মুসোলিনি, হিটলার) প্রাধান্য থাকে, যাকে প্রায় অলঙ্ঘনীয় বলা হয়।
ব্যক্তিগত স্বাধীনতার দমন: ফ্যাসিবাদ ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের বিরোধিতা করে, যেখানে সরকারের সমালোচনা বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত থাকে।
সামরিকবাদ: ফ্যাসিবাদে সামরিক শক্তি এবং যুদ্ধকে জাতীয় শক্তি ও ঐক্যের মাধ্যম হিসেবে দেখা হয়।
প্রোপাগান্ডা ও প্রচারযন্ত্রের ব্যবহার: জনগণের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে ফ্যাসিস্ট শাসকরা প্রচারযন্ত্রের সাহায্যে জনগণকে নিজেদের মতবাদের সাথে একীভূত করার চেষ্টা করে।
ফ্যাসিবাদ সাধারণত বৈচিত্র্য ও মতভেদকে শত্রু মনে করে এবং একধরনের ঐক্য, শৃঙ্খলা, এবং জাতির জন্য আত্মত্যাগের ধারণা জোরদার করে।
মাফিয়াতন্ত্র (Mafia Rule) এমন একটি শাসনব্যবস্থা বা সমাজ কাঠামো, যেখানে অপরাধী গোষ্ঠী বা মাফিয়া তাদের ক্ষমতা ও প্রভাব বিস্তার করে। মাফিয়াতন্ত্র সাধারণত দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, হুমকি এবং সহিংসতার মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে তাদের প্রভাব প্রতিষ্ঠা করে।
মাফিয়াতন্ত্রের কিছু মূল বৈশিষ্ট্য হলো:
অপরাধচক্রের প্রভাব: মাফিয়া বা অপরাধী গোষ্ঠী সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে।
চাঁদাবাজি ও দুর্নীতি: মাফিয়াতন্ত্রে টাকা আদায়ের জন্য চাঁদাবাজি, অবৈধ লেনদেন, এবং দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়। এই তন্ত্রে সাধারণত আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও সরকারি কর্তৃপক্ষকে ঘুষ দিয়ে নিজেদের অপরাধ ঢেকে রাখা হয়।
হুমকি ও সহিংসতা: মাফিয়া গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থ আদায়ের জন্য মানুষকে ভয় দেখানো, হত্যার হুমকি দেওয়া, এমনকি হত্যা করতেও দ্বিধা করে না।
গোপনীয়তা ও বিশ্বস্ততার শৃঙ্খলা: মাফিয়াতন্ত্রের মধ্যে একটি গোপনীয় এবং কঠোর শৃঙ্খলাবদ্ধ কাঠামো থাকে, যেখানে বিশ্বস্ততা এবং গোপনীয়তা রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ।
সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব: কিছু ক্ষেত্রে মাফিয়া গোষ্ঠী স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে এবং নিজেদের সুবিধার্থে রাজনীতিবিদদেরকে প্রভাবিত করে।
মাফিয়াতন্ত্রের কারণে সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী এবং সমাজের সাধারণ শৃঙ্খলা ব্যাহত হয়, এবং একটি দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


