somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্প: চিলেকোঠা

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ভোর ৪:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সুব্রত'র সাথে আমার বিয়ে যতটা ধুমধাম করে হয়েছিল, সেপারেশনটাও ঠিক ততটাই নিশ্চুপে সেরেছিলাম। একটা আইডিয়াল সেপারেশনের পিছনে যা যা কারন থাকে তার অধিকাংশই উপস্থিত ছিল আমাদের মাঝখানে।

মানসিক দূরত্ব, শ্বশুরবাড়ীর লোকজনের সাথে টানাপোড়ন, আমার বাচ্চা জন্মদানের অক্ষমতা, সুব্রতর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক- কি ছিল না?

আর সেজন্যই আমাদের ডিভোর্সটা নিয়ে কারো কোন মন্তব্য ছিল না। ভাবটা এমন, যেন ‘এ-তো হওয়ারই ছিল’।

শুধুমাত্র একজন মানুষের হয়তো পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়েছিল ।

সৌমেন চ্যাটার্জি। সম্পর্কে উনি সুব্রতর বাবা। ভদ্রলোকের সাথে আমার পরিচয় শাহবাগ পাবলিক লাইব্রেরিতে। প্রায় প্রতিদিনই আসতেন উনি। আমিও এক কোনায় বসে বইয়ের জগতে ডুবে থাকতাম। একদিন বেরোতে পথে ঝুম বৃষ্টিতে আটকে ছিলাম দুজনেই।

মানুষটা কথার জাদুকর। ৫ মিনিট ২৩ সেকেন্ডের আলাপেই আমি সেদিন উনার সাথে বৃষ্টিতে ভিজে চা খেয়েছিলাম আর বহুপথ পাড়ি দিয়ে গিয়েছিলাম বাসাবো বৌদ্ধ মন্দিরে। উনি যে জোর করেছেন, তাও কিন্তু না। একরকম ভালোলাগা থেকেই যাওয়া।

মিস্টার চ্যাটার্জির সাথে আমার যখন খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেল ঠিক তার মাস তিনেক পরে উনি সরাসরি আমাকে তার ছেলের জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিলেন। আমি হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করেছিলাম কি ফন্দি এঁটেছো সত্যি করে বলো দেখি?

উনি গম্ভীর ভাবে বললেন ‘তোকে হাত ছাড়া করা যাবেনা কোনভাবেই’। যদিও আমার ছেলে আহামরি কিছুনা। তবুও দেখি চেষ্টা করে।

পরবর্তী ছয় মাসে সুব্রতর সাথেও জানাশোনা হলো ভালোভাবে। আর এভাবেই আমি সারনেইম সরকার বদলে চ্যাটার্জি হয়ে গেলাম।

প্রথম কিছুদিন ভালো গেলেও, ধীরে ধীরে বুঝতে পারছিলাম যে সুব্রত খুব রক এন্ড রোল টাইপ ক্যারেক্টার। আমার যেখানে শেষ-বিকেলের আলোতে বারান্দায় বসে রবীন্দ্র সঙ্গীত গুনগুন করতে ভালো লাগে, সেখানে সুব্রতর পছন্দ বিয়ার পার্টি। আমি ঘরকুনো মানুষ আর সুব্রত প্রচন্ড খোলামেলা। সুর কাটতে শুরু করলো। সুব্রতর মামনি আমাকে আরো বেশি অপছন্দ করতে শুরু করলেন।

আমার তখন গ্রাজুয়েশনের শেষ সেমিস্টার। থিসিস জমা দেয়া, পাবলিকেশন বানানো ইত্যাদি হাজারটা ঝামেলায় আমি নাস্তানুবাদ। যখন বুক ভেঙ্গে খুব কান্না পেত তখন গিয়ে চিলেকোঠার কার্ণিশে পা ঝুলিয়ে বসে থাকতাম। সুব্রতদের প্রকান্ড এই বাড়ির শুধু চিলেকোঠাটাকেই আমার আপন মনে হতো।

মাঝে মধ্যে মিস্টার চ্যাটার্জি দু কাপ চা নিয়ে আমার পাশে এসে বসতেন। প্রথম প্রথম আমার মন ভুলানোর চেষ্টা করতেন। যখন বুঝলেন আমাদের দাম্পত্যের সুর পুরোপুরি কেটে গিয়েছে, তখন কেবল বিষণ্ণ হয়ে আমার পাশে বসে থাকতেন।

অনেক বছর আগে নভেম্বর মাসের এক বিকেলে আমি সুব্রতদের বাড়ি ছেড়ে চলে আসি। এরপর শুধু একদিন সুব্রতর সাথে কোর্টে দেখা হয়েছিল। ব্যাস! আর কখনো কারো সাথে কোন যোগাযোগ হয়নি।

সত্যি বলতে কি, আমিও হাফ ছেড়ে বেঁচেছিলাম যে, কোন উটকো ঝামেলা পোহাতে হয়নি। শুধু হটাৎ হটাৎ মনে হতো, মিস্টার চ্যাটার্জি আর একবারো খুঁজলেন না আমাকে!

অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে মাস্টার্স-এর ফুল স্কলারশীপ নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে আসি।

এরপর কেটে গেছে প্রায় ৭ বছর।

ফেলে আসা কত খুঁটিনাটি ভুলতে বসেছি।

হটাৎ একদিন জিমেইলে সুব্রত'র দুই লাইনের একটা ইলেক্ট্রনিক চিঠি পেলাম। সে আমার সাথে কথা বলতে চায়। ভীষণ জরুরী নাকি।

প্রথমে ভেবেছিলাম নিশ্চুপ থাকবো, পরে আবার কি ভেবে কথা বলার সুযোগ করে দিলাম তাকে।

সে হরবর করে অনেক কিছু বলে গেল। যার সারমর্ম অনেকটা এরকম:

সুব্রুতদের বিরাট বাড়িটার এখন আকাশচুম্বী দাম। এটাকে সে ভেঙ্গে মাল্টিস্টোরিড বিল্ডিং বানাতে চাচ্ছে। কিন্তু সেই কাজটা আটকে আছে আমার জন্য!

কারন মিস্টার চ্যাটার্জি এই বাড়ির চিলেকোঠাটুকুন আমাকে লিখে দিয়ে গেছেন পৃথিবী ছাড়ার আগে। তাই সুব্রত আমার কাছ থেকে সেটুকু অংশ কিনে নিতে চাচ্ছে যেকোন মূল্যে।

ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফোনের লাইন কেটে দিলাম।

আচ্ছা, সুব্রতরা কি কখনোই বুঝবেনা যে সবকিছুর জাগতিক মূল্য হয় না?
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ভোর ৪:২০
১৬টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×