somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পটা সত্যি না হলেও পারতো

০৭ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৭ই মার্চ, ২০১৪
পড়ন্ত দুপুরে হাকিম চত্বরে পা ঝুলিয়ে বসে গুনগুন করছিল ছেলেটি।
দূর থেকে দুই বন্ধুকে এগিয়ে আসতে দেখে স্মিত হেসে তাদের স্বাগত জানায় সে।
এক বন্ধুর হাতে সুন্দর প্যাকেটে সদ্য কেনা একটি বই। বইটা হাতে নিয়ে উলটে পালটে দেখে ছেলেটি পকেটে হাত দেয়।
পকেট হাতড়ে ছেলেটির ঠোঁটের কোণে সূক্ষ্ম এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে।
সে বন্ধুদের বলে, "চল! একটা মজার খেলা খেলি.. সাথে থাক, আর যা বলি - সায় দিয়ে যা..."
সদা ফুর্তিবাজ ইয়ারবন্ধুর এ আহবানে না করার কোন কারণ খুঁজে পেল না বাকি দু বন্ধু।

সামনে দিয়েই যাচ্ছিল প্রায় সমবয়সী দুজন পথচারী।
তাদের কাছে গিয়ে ছেলেটি রেডিও আরজে'দের মতো করে বলল,
"ভাই, আমরা একটা স্ট্রীট গেম খেলছি।
গেম'টা শুরু করার আগে সেটা কেমন পাবলিক রেসপন্স পাবে,
তার একটা পরীক্ষামূলক জরিপ করা হচ্ছে আজ। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চে জরিপ,
তাই আজ আপনাদের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক খুব সিম্পল একটা প্রশ্ন করবো।
সঠিক উত্তর দিতে পারলে আপনি উপহার হিসেবে পাবেন এই বইটি।"
বলে ছেলেটি বন্ধুর সদ্য কেনা বইটি তাদের দেখায়।

"আর সঠিক উত্তর না দিতে পারলেও সমস্যা নেই,
এই জরিপে দেয়া কোন উত্তর আমরা সম্প্রচার করছি না।
সো গাইজ! আর ইউ রেডি?"

এ কথায় দু পথচারীই হেসে রাজি হয়।
এবার ছেলেটি প্রশ্ন করে, "মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের যে সাত জন বীরশ্রেষ্ঠ, তাদের নামগুলো কি কি?"
পথচারী দুজনেই একে অপরের দিকে তাকায়, কিন্তু একটার বেশি নাম কেউই বলতে পারে না।

ছেলেটি এবারে পথচারী দু'জনকে ধন্যবাদ দিয়ে বন্ধুদের নিয়ে সামনে এগিয়ে যায়।
সমবয়সী থেকে শুরু করে নানা বয়সী মানুষকে সে এই একই প্রশ্ন করে।

পড়ন্ত দুপুর থেকে বিকেল হয়ে যায়,
বিকেল গড়ায় সাঁঝে!
কিন্তু কেউ জানে না সে নাম যে হায়,
এতো মানুষের মাঝে!!

সন্ধ্যাবেলায়,
দৃশ্যপটে আবারও সেই হাকিম চত্বর।
এবারে তিন বন্ধুই পা ঝুলিয়ে বসে আছে।
ঝিরিঝিরি বাতাস সাথে আশেপাশের নানা কোলাহলের মধ্যেও তিনজনের মাঝে অস্বস্তিকর নীরবতা বিদ্যমান।

অনুচ্চস্বরে সেই ছেলেটি আনমনে বলে উঠলো,
"হে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান, মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর, মোস্তফা কামাল, মোহাম্মদ রুহুল আমিন, মুন্সি আব্দুর রউফ, নূর মোহাম্মদ শেখ, হামিদুর রহমান! ক্ষমা করে দিয়েন। আপনাদের নামটুকু পর্যন্ত ভুলে যাবার জন্যে..."

বন্ধুদের দিকে ফিরে বলল,
"বইটা দেখেই চিন্তাটা মাথায় এলো, ভাবলাম খেলি একদান।
বইয়ের দামটা পকেটে আছে দেখে মাথার চিন্তাপোকাটা এই খেলার ভাবনাটাকে আরও উসকে দিল..
পোকাটাকে মেরে ফেলবো ভাবছি.. বিবেকের কামড় খেতে আর ভালো লাগে না, বড্ড জ্বালা!"

এই বলে হাতের বইটা বন্ধুর দিকে এগিয়ে দিলো, "নিয়ে যা..."

বইটা ফিরিয়ে দিয়ে বন্ধুটি বলল,
"খেলায় তিনজনই ছিলাম, শর্ত মেনেই ছিলাম। বইটা তুইই রাখ।
আমরাও সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের মধ্যে চারজনের বেশি নাম বলতে পারতাম না।
তুই পেরেছিস.. তুই জিতেছিস।"

দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছেলেটি বলে উঠলো,
"এভাবে জিততে চাই নি রে।
এ খেলায় একা জেতা মানে হেরে যাওয়া - সবাইকে নিয়ে হেরে যাওয়া।
জিতি নি, বরং হেরে গেছি বিবেকের কাছে..."

এলোমেলো পায়ে, টলোমলো চোখে ছেলেটি এবারে পা বাড়ায় পথে।


গল্পটা সত্যি না হলেও পারতো
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×