somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাস্তি

২৫ শে জুন, ২০১৪ রাত ২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রহমান সাহেবের বয়স হয়েছে। এখন আর গায়ে আগের মতো তেমন জোর নেই। তবে মাথায় কূটবুদ্ধির মাশাল্লাহ কমতি নেই, বরং ম্যালাদিনের অভিজ্ঞতায় তা আরও ঋদ্ধ হয়েছে। যৌবনের আকাম কুকামগুলোর কথা মনে পড়লে এখনো রক্তচাপ বেড়ে যায় রহমান সাহেবের। কি সব দিন ছিল সেগুলো.. মাঝে মাঝে ওসব ভেবে পুলকিত হন তিনি। নেহায়েত বয়েস হয়ে গেছে বলে আফসোস যে হয় না, তা নয়। তবে এখনকার কাজগুলো হয় নিখাদ বুদ্ধির.. কাঁচাবয়সের কাঁচাকাজ নয়। এই ভেবে তৃপ্ত থাকেন তিনি।

একমাত্র ছেলে নিজাম বিদেশ থেকে উচ্চতর শিক্ষা নিয়ে ফিরে এসেছে বাবাকে দেখাশোনা করার জন্য। ছেলের বউ আর ছোট্ট নাতিকে নিয়ে বিপত্নীক রহমান সাহেবের সুখের সংসার। এর মধ্যে একদিন নিজাম থমথমে মুখে অবেলায় ফিরে আসে কর্মস্থল থেকে। কি এক কাগজ হাতে বাবার সামনে গিয়ে জানতে চায়, মতির মা কে? কি তার মেয়ের বৃত্তান্ত? মতির আদ্যোপান্ত জানার আগ্রহ নিজামের। রহমান সাহেবের রক্তচাপ বেড়ে যায়, তিনি নিরুত্তর থাকেন। অসুস্থতার ভান করে এড়িয়ে যেতে চান নিজামকে। কিন্তু নিজাম হাল ছাড়ে না, সে উত্তর খুঁজতে থাকে।

"মতির মা" নাম শুনেই রহমান সাহেবের মনে পড়ে যায় অনেক বছর আগের কথা। তখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন, একটা ছাত্র সংগঠনের সভাপতি হিসেবে তার বিপুল প্রতাপ। মতি ছিল সে বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র। সাধারণ ছাত্রদের অধিকার চাইবার অপরাধে(!) তিনি মতিকে খতম করার নির্দেশ দেন। আর তার সাথে খুনের চাক্ষুষ সাক্ষী আর উপরি পাওনা হিসেবে ভোগে যায় মতির ছোটবোন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় মেয়েটিকে। বিধবা মতির মা বাড়ীর পাশে ছোট্ট একটা মুরগীর খামার করে সংসার চালাতেন। চরম আক্রোশে সেটিও জ্বালিয়ে দেয়া হয়। সব হারিয়ে পাগল হয়ে গিয়েছিল মতির মা। পুরো বিষয়টাই রহমান সাহেব টাকা আর রাজনৈতিক প্রভাব দিয়ে ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন। নিজেদের করা হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন আর অগ্নিসংযোগকে বানিয়ে ফেলেছিলেন সাধারণ হানাহানির মামলা। আর এই চরম অপরাধগুলোকে তিনি বলেছিলেন মতিদের অভ্যন্তরীণ গণ্ডগোল। ঘোষণা দিয়েছিলেন, অচিরেই চক্রান্তকারীদের খুঁজে বের করে ব্লা ব্লা ব্লা... ব্লা ব্লা ব্লা...

হালে সেই অপরাধের কিছু প্রমাণ কিভাবে কিভাবে যেন বেরিয়ে এসেছে। নিজাম সেগুলোরই কিছু জানতে পেরেছে। কিছু সচেতন মানুষও জানতে পারে এই অন্যায়ের কথা, অতঃপর শুরু হল মামলা। রহমান সাহেব সুতো টানলেন। মামলা ঝুলে গেল। তবে মানুষ আর আগের মত দমে গেল না। কিছু মানুষ জেগে উঠলো, প্রতিবাদ করলো। গিয়ে দাঁড়ালো সব হারানো মতির মার পাশে। রহমান সাহেবের শত প্যাঁচেও সেটা দমলো না। এভাবে না পেরে রহমান সাহেব মোক্ষম চাল চাললেন। নিজের শয়তানি বুদ্ধির সবটুকু আর বিপুল অর্থ খরচ করে তিনি মামলা ঝুলিয়ে দিলেন অনির্দিষ্টকালের জন্য।

নিজাম গোছগাছ করছে, সে চলে যাবে দেশ ছেড়ে চিরতরে। নিজামের স্ত্রী তার বাবার বাড়ীতে বিদায় নিতে গেছে, নিজাম তাকে সেখান থেকেই তুলে নেবে বিমান বন্দরের পথে। বের হবার আগে পথ আগলে দাঁড়ালেন রহমান সাহেব, তার রক্তচাপ বেড়ে গেল। তিনি অসুস্থ হয়ে গেলেন, নিজামকে তার পাশে থাকতে অনুরোধ করলেন। কিন্তু নিজাম শুনলো না, সে এভাবেই শাস্তি দেবে তার আপাদমস্তক অপরাধী বাবাকে। ফাঁসি তো তার এখতিয়ারে নেই, তাই সে দেবেঃ পরিবার-পরিজনহীন যাবজ্জীবন।

কৈফিয়তঃ এমনিতেই আবর্জনা জাতীয় গল্প লিখি। কিন্তু তারপরেও এই লেখাটা কেন জানি আরও বেশি আবর্জনাময় হইছে। এ পর্যন্ত এতোটা আবর্জনাময় কিছু আর লিখি নাই। জীবিত বা মৃত নির্বিশেষে, বিশেষত মতিউর রহমান নিজামী কিংবা তাহার রক্তচাপের সাথে এই গল্পের কোথাও কোন সম্পর্ক নেই। যদি এই আবর্জনার ভেতরে কেউ মতিউর রহমান নিজামী অথবা তাহার রক্তচাপ সম্পর্কিত কিছু খুঁজে পায় তবে সেইটা একান্তই কাকতালীয় বিষয় আশয়। এতে এই আবর্জনার মালিকের কোথাও কোন প্রকার কৃতিত্ব নাই।
কৈফিয়তটি শেষ হলো।।

শাস্তি
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×