দুষ্টের শিরোমনী লঙ্কার রাজা
চুপিচুপি খাও তুমি চানাচুর ভাজা ।
ছুটি গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র ফটিক । তার সে চরিত্রের ব্যাপক অংশ আমি চুরি করেছিলাম । আমার বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত দুষ্টের শিরোমনী উপাধী আমার ঝোলাতে ছিল
প্রচুর দুষ্টমি করতাম সে হারে মার খেতাম শিক্ষকদের কম শিক্ষকরা ক্লাসে এসেই খোজ করতেন আমি কোথায় । এসেই পাঠ্য বইয়ের পড়া নিতেন । উত্তর দিতাম নিজের সাধ্যের মধ্যে । লোকদেখানো পরীক্ষায় সবসময় ভাল রেজাল্ট করেছি । কখনই অকৃতকার্য হই নি । তিন ঘন্টা সময় বা তিনটি পরীক্ষা কখনই মানুষের মেধা যাচাইয়ের জন্য যথেষ্ট নয় । এটি একান্তই আমার পিলোসফি .
পড়াশুনায়ও ছিলাম প্রথম কাতারের দিকে । তবে প্রথম নই কারন সারাক্ষণ বইয়ের পরিবর্তে আম গাছের মগ ডাল থেকে আম চুরি, নারিকেল চুরি, সাতার কাটা, মারামারিতে পটু ছিলাম ।
ইচ্ছাকৃত ভাবে স্কুল চুরি করতাম । স্কুল চুরি করে এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াতাম । সীমান্তবর্তী এরিয়াতে ছিল বলে মাঝে মাঝে ইন্ডিয়াতে চলে যেতাম । আমাদের পৈত্রিক অনেক আবাদী জমি, শান বাধানো দীঘি ত্রিপুরাতে পড়ে রয়েছে । সীমান্ত অতিক্রম করতেও আমাদের আবাদী জমির উপর পা চালাতে হয় ।
আমার শিক্ষকদের একটা চেষ্টা শক্তি কাজ করতো পরীক্ষার খাতায় প্রথম সারীতে আসার জন্য । তাদের সে আশা গুড়ে বালী । বলত চেষ্টা করলেই সম্ভব । কে শোনে কার কথা । হ্যাঁ, হ্যাঁ করতাম আর পেছনে বলতাম...খালি জ্ঞান দেয় ।
আরেক আতংকের নাম ছিল পরিবার । যতই আদর করুক তবে শাসনের লাঠির প্রয়োগ একটু বেশিই হয়েছিল । তার উপর সবার ছোট । মায়ের অভিযোগ ছিল চোখে পড়ার মত । বলত তার পড়ার চেয়ারে আমি একদিনও দেখতাম না তাকে, কষ্ট পেয়ে বলত । বলতাম পরীক্ষায় যদি ভাল ফলাফল না করি তখন বললেই হবে । ভাইয়াদের অভিযোগের হাল খাতা । আজকে অমুককে মেরেছিস, তার গরুর খুটি ছেড়ে দিয়েছিস, স্কুলে যাচ নাই । তার পরেই উত্তম মধ্যম শুরু । উপলব্দি করতাম আর বলতাম জীবনেও করবো না । পরেরদিন পুরো আম গাছ ছাপা করে দিতাম । নিজের আম বাগানে ডু মেরেও দেখতাম না ।
সবচেয়ে ভয় ও মজার অভিজ্ঞতা বলি । মাধ্যমিক পরীক্ষার ২৯ দিন বাকী । মধুমাস চলছে তখন । বিদ্যালয়ের দেওয়ালের উপর পা দুলিয়ে বসে আছি আর গান গাইছিলাম । গান ও কবিতা আবৃত্তি করে বর্তমান মন্ত্রীর কাছ থেকে বই আর গ্লাস পেয়েছিলাম । হঠাৎ দেওয়ালের অপর প্রান্তে চোখ পড়ল পাকা আমের উপর ।
ভাবলাম এপাশ থেকে লাফ দিয়ে গাছের ডাল ধরতে পারলে সহজ হবে । যেমন অনন্ত জলিলের মত । যখনি লাভ দিলাম তখনি বুঝলাম আমি তো পুরাই মমিন । ডাল ধরতে না পেরে নিচে পড়ে গেলাম । উঠে দেখি ডান হাত কমলা সুন্দীরর মত বেকে গেছে । দু ভাগে দু খন্ডিত ।
বাসায় গিয়ে বলতেই সবাই জনতার পকেট মারের মত ক্ষেপে গেল । আমি পরীক্ষার ভয়ে হাত ভেঙ্গে ফেলেছি ।তখন অর্থোপেডিক অধ্যাপক ছিলেন বাবার ভাগ্নে । বলল পরীক্ষার তিনদিন আগে হাত খুলে দিবে তবে রিস্ক আছে । পরীক্ষা দিতে যাচ্ছি সবাইতো চার্লস চেপলিন বানিয়ে দিল , গলায় হাত ঝুলিয়ে যাচ্ছি পরীক্ষা দিতে । সবাইকে আশ্বস্ত করলাম রেজাল্ট পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরার জন্য । যে কথা সেই কাজ রেজাল্ট করেছি দূর্দান্ত । কবিরা নিরব
পরীক্ষা শেষে ভালো কলেজে পড়ার জন্য যে সহপাঠী জিন্দেগীতে পশ্চিম দিকে আছাড় খায় নাই । সে মসজিদে নামাজের একামত দিত ৫ ওয়াক্ত । আমি তখন কোথাও জিপসী, বাউন্ডুলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারছি । আর শকুন্তলাকে দেখে গাইছিলাম কাজরারে তেরে কারে কারে নেয়না...
রেজাল্ট আনতে গিয়ে গনিতের নাম্বার গুলো আমার নামে খুঁজে পেলাম। দিল আমার চাক্কুম চাক্কুম হয়ে গেল। আর যারা কেরামতি করে টিকতে চাইছিল আল্লাহ বললেন চান্দু , তুমি আমার লগে মজা লও । পরে বন্ধুর কষ্টে কষ্ট পেতাম যখন দেখতাম বন্ধু আমার কলেজের ছাত্র না হয়েও আমাদের ইউনিফর্ম পরিধান করে ঘুরে বেডায় ।
শিক্ষকদের শাসন আদর মিস করি অনেক । সহপাঠীদের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় ছাত্র বাদের তালিকায় । শুনতে ভাল লাগে যখন উত্তর পাই দোস্ত আমি তো মেরিন,কম্পিউটার ইন্জ্ঞিনিয়ার, ডাক্তার, প্রাশাসনিক ব্যক্তি বর্গ । আমার পথ আমি মুক্ত বিহঙ্গের মত রেখেছি । তার সুবাদে পাশ্চাত্যের জীবন তত্ত্ব , মানুষ তত্ত্ব, জীবন ব্যাবস্থা দেখে আমি ভাবুক হয়ে পড়েছি । আমি বিমোহিত আর নিজে নিজে গাই
আমি তোমারই তালাশে ফেরারী
নতুন মুখের সুতায় সুতায় লাগে টান ।।