somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনের মানে বুঝে খোকা যখন বাবাকে খোঁজে

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৩:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





ভোর হয়েছে নামাজ পড়তে উঠো, প্রতি সকাল দরজার ওপাশ থেকে এই সুর শুনেই আমার সকাল জানান দিতো ৷ এ ডাক শুনিনা বিগত ৭ বছর ধরে ।আজীবনের জন্য সে ডাক দেওয়ার মানুষটি পারাপার হয়েছেন গতকাল ৯:৩৫ মিনিটে । সবাই বলতো রেডি হও শোনার জন্য কোনদিন এ সত্যটি তোমাকে মেনে নিতেই হবে । রোগ, অসুস্থতা,মৃত্যু আমাদের জীবনেরই অংশ তবুও মায়া আর জন্মবান্ধনের উর্ধ্বে মনুষ্য জীব । আমিও তার রঙ্গমঞ্চের অভিনেতা । গতকালের মঞ্চে আমি অভিনয় করি নি আমাকে সময় দর্শক সারিতে বসিয়ে ছিল । দেখিয়েছে সময়ের কাছে আমি কতটা অসহায়ত্ব বোধ করেছি ।

পবিত্র কুরআনের ধ্বনি পুনরাবৃত্তি শুনতাম আর বলতো এখনো উঠোনি ? ভাবতাম কবে যে এর থেকে উত্তরণ হতে পারবো ৷ এখন তো দিব্যি দিনের ১২- ১ টা তে সকাল হয় কিন্তু কেউ আমাকে ডাকেন না । তার সুযোগও নেই বা আর কখনোই সুযোগ হবেনা ঠিকক তখনি আমার চিন্তাশক্তিতে কাজ করে , বড় হয়ে গিয়েছি । পাশাপাশি এটাই প্রবাস এবং বাস্তবিক জীবন জীবন ৷ আর হয়তবা কখনোই আমাকে ডাকবেনা বা ডাকবে কিন্তু সেই দৃঢ়তা উয্য থাকবে ৷

একটি বিশেষ স্মৃতি অবতারণ করি, আজ থেকে নির্দিষ্ট কিছু বছর পূর্বেও আমার কার্যফল ছিল রুক্ষও কর্কট প্রকৃতির ৷ একদিন কিছুসংখ্যক বন্ধু মিলে কনসার্ট দেখতে যাই ৷ অনুষ্ঠান শেষের পথে আবির্ভাব হয় সম্যসার, এবং এটা গড়ায় বিচারে, আমি বাসায় যাবার পর দেখি যাদের সাথে সৃষ্ট সমস্যা তারা হাজির, সব বিশ্লেষণ করার পর বাবাকে লক্ষ্য করলাম তাদের কাছে খুবী সমুচিত সুরে বললেন" আমার ছেলের জন্য আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রাথী তাকে অভিসম্পাত দিবেন না

তার উপর এসে আমাকে থাপ্পড় দিলেন বললেন sorry বলার জন্য ৷ চোখের বদলে চোখ নিলে তো পুরো দুনিয়া অন্ধ হয়ে যাবে । রাগ হলো আমার অনেক বললাম sorry বলতে পারবো না আর বাবাকে বললাম আমি তোমার ছেলে, অন্যায় আমি করিনি কেন আমি সরি বলবো তারপরও গায়ে হাত তুলেছো । এই তোমার বুদ্ধিমত্তা ? কিভাবে তুমি নেশন কে সার্ভ করেছ আমার মাথায় আসে না তাহা । বাবা কিছুই বলেননি ।

কিছুদিন যাবার পর হাতে ভিসা পেয়েছি ইংল্যান্ডে পড়াশুনা করার ৷ ঐদিন বিকেলে বাবা আমাকে বললেন আজ বিকেলে কোথাও যেনো না যাই বাবা আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবেন ৷ বের হলাম বাবার সাথে, নির্দিষ্ট কিছু দূরত্বে পৈত্রিক সুত্রে পাওয়া জমিন ও বাগান বাড়ি দেখতে ৷ বাবা ছেলের কথোপকথন শুরু,

বাবা : তোমার মা বললো তুমি ইংল্যান্ড যাচ্ছো ?
আমি : প্রফুল্ল মনে উত্তর করলাম হ্যাঁ বাবা ৷
বাবা : অভিনন্দন দিলেন , বললো পরিপূর্ণ মানুষ হও ৷ বাবা : আবার জিগ্গেস করলেন আমি যেখানে পড়াশুনা করবো সেখানে কেমন অর্থ লাগতে পারে ?
আমি : লাখ দশেক BD টাকা উত্তর জানাল দিলাম ৷ বাবা : আবার বললো তুমি কি কখনো অভাববোধ অনুভব করেছিলে ?
আমি : হঠাৎ এই ধরনের কথা শুনে অনেকটা অস্বস্তির সুরে বললাম না তা হবে কেনো বাবা , না বাবা ।

বাবা: এবার বললেন বাবার জন্মের পর পরই হারান দাদু ভাই কে, মানুষ হয়েছিলেন বড় বাবার কাছে,অনেকসময় বাতির কূপে তৈল থাকতো না পড়ার জন্য ৷ কখনো আবার তৈল কেনার জন্য থাকতো না পয়সা ৷ মায়ের ভালবাসা কি সেটাও সান্নিধ্য হয়ে উঠেনি ৷ কথাগুলো শুনতে শুনতে কষ্ট লেগে গেলো মনে ৷ বললেন বাবা , তোমার বাবার সব কিছুতেই অভাববোধ লাঘামহীন ভাবে পিষ্ট থাকতো, অতো শিক্ষিত না আমি তোমার মত, বা আমর সুযোগ হয়নি বিলেতে পড়ার ৷ বাবা বললেন তুমি প্রায় সময়ই জিজ্ঞেস কর আমি কেন জুতো রিপেয়ার করে পরি । আমি যদি জুতো রিপেয়ার করে না পরতাম তোমার নিত্য নতুন জুতো আসতো কোথা থেকে ? আমার তো বড় ভাইয়া নাই তোমার মতন যে আমাকে বিলেতী জিনিস পত্র দিবে । তোমার দুনিয়া আর আমার পৃথিবী সুবিশাল ফারাক্কা রে বাবা ৷ জানিনা কিভাবে বাংলাদেশ সরকার আমাকে মূল্যায়িত করেছে, তুমিতো পেয়ে বড় হয়েছো শুধু আমাকে প্রথম সারির নয়, তৃতীয় সারির কর্মকর্তা হয়ে দেখাবে, পারবা না ? কিছুই উত্তর দেইনি সেইদিন ।

কথাগুলোর আমল আজ উপলব্দি করে উত্তর ঠিকক করেছি, কিন্তু উত্তর কিভাবে দিবো আমি কেননা তুমি উত্তর শোনার বা বোঝার জন্য অপ্রস্তুত ৷ হারিয়ে বসে ছিলে স্মৃতিশক্তি জীবনের সাথে প্রতিনিয়ত লড়াই করছো বেঁচে থাকার ৷ একদিন শুনার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে যে চলে যাবা অপার্থিব জগতে ৷ আকাশের মত সুবিশাল গর্বিত অংশীদার যে তুমি আমার জনক ৷ জানিনা তোমার সাথে আর দেখা হবে হয়তবা না ৷ চলেই গিয়েছ বাবা । চোখে জল ঝরতে লাগল থামছেই না । জীবনের প্রথম শিক্ষক যে বাবাই ।আমি আমার জীবনের ব্যর্থতা দিয়ে তোমার জায়গাটা বুঝেছি আমি তোমার জন্য কিছুই করতে পারি নি । সুফী রুমীর উক্তি দিয়ে শেষ করি আমার অনুভূতি “ সকল জল্পনা কল্পনার বাইরে অনেক দুরে ভালো কিংবা মন্দ কাজের একটা ময়দান আছে হয়তবা প্রশ্নের উত্তর সেখানেই দিবো যা দিতে পারি নি ৷ যেখানেই থাকো ভালো থাকো,সুস্থ থাকো দেখাতো হবেই কাল অথবা কোনো একদিন_________❤️ বাবা ।

তোমার কনিষ্ঠ পুত্র ৷
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৩:১৬
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×