শিশুটির বয়স এক বছর । কিংবা তার চেয়ে কিছুদিন বেশি। বাঁ দিকে উপুড় হয়ে চোখ বুজে শুয়ে আছে শুভ্র এক শিশু। গায়ে ভেজা লাল টি-শার্ট, নেভি-ব্লু হাফ প্যান্ট আর পা জোড়ায় ছোট্ট জুতা। দেখে মনে হবে ঘুমিয়ে আছে। চারপাশে খেলা করছে পবিত্র এক আভা। কিন্তু বাস্তবে এ এক ভিন্ন দৃশ্য। তার নিথর প্রাণহীন দেহের চারপাশে সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ছে। তার মাথা খানিকটা ডেবে গেছে সৈকতের বালিতে। এই শিশুটিই ভূ-মধ্যসাগরে ডুবে যাওয়া ১২ জন ইউরোপগামী অভিবাসন-প্রত্যাশীর একজন। বিশাল সমুদ্রেরও হয়তো নিজের ভেতর তাকে ধারণ করতে বুক কাঁপছিল। এজন্যই ঢেউয়ের তোড়ে সৈকতে ঠেলে দিয়েছে তার দেহকে। আর শিশুটির এমন ছবিই ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তাকে বলা যায় ‘ ধ্বংসপ্রাপ্ত মানবতা’র প্রতিচ্ছবি । বিশ্বের বেশির ভাগ সংবাদপত্রের প্রধান শিরোনাম এ ছবিটিকে ঘিরে। এ খবর দিয়েছে সিএনএন ও আল-জাজিরা।
এই ছবি চোখে আংুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় মানবতা ।বিশ্ব মানবতা আজ সমুদ্র উপকূলে মৃত ।মানবতা আজ যেন এক চেতনা ।যার কোন রুপ আছে কিছু সস্তা বুলি ।শিশুটির নাম জানা যায়নি। কেউ জানে না, তার যাত্রা শুরু হয়েছিল কোথা থেকে। তবে তুরস্কের মুগলা প্রদেশের গভর্নরের কার্যালয় বলেছে, একদল সিরিয়ান শরণার্থীদের সঙ্গে ছিল শিশুটি। দুইটি নৌকায় করে তারা ভূ-মধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে গ্রিক দ্বীপ কোসে পৌঁছতে চেয়েছিলেন। নৌকার কয়েকজনকে উদ্ধার করতে পেরেছে তুরস্কের উদ্ধারকারী দল। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই দলের ২ পুরুষ ও ১ শিশু নিখোঁজ। প্রসঙ্গত, ভূমধ্যসাগর পার হয়ে ইউরোপে পাড়ি জমাতে গিয়ে কেবল এ বছরই মারা গেছে ২৬০০ জনেরও বেশি। বিশ্বে এ বছর যত অভিবাসী বা অভিবাসন-প্রত্যাশীর মৃত্যু হয়েছে, গড়ে তাদের চার জনের তিন জনই মারা গেছেন ভূ-মধ্যসাগরে। গত বছরের (২২২৩) চেয়ে এ বছর মৃত্যুর পরিমাণ ২০ শতাংশ বেশি। এদের কেউ ডুবে গেছেন অতল সমুদ্রে। কেউবা মারা গেছেন পদপিষ্ট হয়ে। কেউ আবার নৌকার ইঞ্জিনের ধোঁয়ায় নিঃশ্বাস নিতে না পেরে। নাম না জানা ওই শিশুটিও হয়তো এদের কোনো এক দলের হবে।হয়ত ভূ-মধ্যসাগর সাক্ষী হয়ে থাকল মানবতা পরাজয়ের ।
এ ছবি হয়তো অনেকদিন তাড়িয়ে বেড়াবে বিশ্বজুড়ে অসংখ্যা মানবতাবাদীকে। এটিই সামগ্রিক ব্যার্থতার সবচেয়ে সপষ্ট প্রতিবিম্ব। গোটা পৃথিবীর জন্য একরাশ লজ্জা। ছবিটিতে শুধু আছে শিশু, মানবতার ছোঁয়া না।
এইটা লন্ডনের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট ভাষায় বলতে হয় ‘সামবডিজ চাইল্ড’। এই শিশুটি সিরিয়ার মানবতা না পুরো বিশ্বের মানবতার পরাজয়। ইউরোপে প্রবেশ করতে মানবতার সঙ্কট বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানবিক এ সঙ্কটের জন্য ইইউ দায়ী।প্রতিটা পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠাজুড়ে শিশুটির ছবি প্রকাশ করা হয়েছে ,কিন্তু তাকে বাঁচাতে পারিনি। একজন উদ্ধারকর্মী শিশুটিকে দুই হাতে কোলে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন,আজ মনে হয় বিশ্ব নেতাদের উচিত মানবতাকে কোলে কোরে বাঁচান।ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের শিকার ছোট্ট শিশু চলে গেল পৃথিবী ছেড়ে কিন্তু হারিয়ে গেল বিশ্ব মানবতাকে ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৩০