চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গন্ডামারা ইউনিয়নের পশ্চিম বড়ঘোনা এলাকার বিভিন্ন স্থানে এখনো ছোপ ছোপ রক্তের দাগ লেগে আছে। শোকে ও আতঙ্কে নিরব স্তব্ধ গ্রামটিতে মাঝে মাঝে ভেসে আসছে নারী কণ্ঠের বিলাপ ও কান্নার শব্দ। মাত্র দুদিন আগে ঝরে গেছে ৪টি তাজা প্রাণ। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে অনেকে। সে শোক এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি গ্রামবাসী।আপনি জানেন এদের কে গুলি করছে ,আপনার আমার ভ্যাটের টাকায় চলা পুলিশ ।যাদের কাজ আপনার আমার নিরাপত্তা দেয়া ।তারা আপনার আমার নিরাপত্তা দেয়নি ,দিয়েছে এস আলম গ্রুপের এবং তাদের ক্যাডারদের ।আপনি জানেন কি ,একই পরিবারের ৩ জন নিহত হয়ছে ।আপনি ভাবতে পারেন কি পরিমাণ মানবতাহীন ব্যবহার করা হয়েছে এই বাঁশখালির মানুষের সাথে ।আমরা কখন রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করি ,যখন আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যায় ।বাঁশখালির মানুষের অবস্থান কোথায় গিয়ে ঠেকছে ,তারা আজ কি পরিমাণ অসহায় ।তারা কেন রাস্তায় নামছে এইটা আপনি কি কখনো চিন্তা করছেন কেন আজ তাদের মুখে-' ভিটে বাড়ি ছাড়ব না, বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে না’ স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত। আতঙ্কের মাঝেও রক্তপাতের প্রতিবাদে মুখরিত আছে নিরীহ গ্রামবাসী।কেন বদি মিয়াকে বলতে হ্য় ওরা আমার দুই ভাই ও এক মেয়ে জামাইকে মেরে ফেলেছে, প্রয়োজনে আমিও মরব। তবুও কয়লা বিদ্যুৎ হতে দিবনা। এখন আমার দুই ভাই আর মেয়ের জামাই মরেছে। কয়লা বিদ্যুৎ হলে আমরা সবাই (গ্রামবাসী) মরে যাব। পরিবেশ বিধ্বংসী এ কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র কোন অবস্থাতেই আমরা হতে দেবনা।এই কয়লা বিদ্যুৎ করতে এস আলম গ্রুপের ৬শ একর জমির উপর বিদ্যুৎ কেন্দ্র করার উদ্যোগ নেয়ার পরে থেকে স্থানীয় লোকদের মাঝে বিক্ষোভের দানা বাঁধে শুধু কিছু সুবিধাভুগী ব্যতীত।কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে পরিবেশ এবং জনজীবনের জন্য হুমকি, বসতভিটা বিলুপ্তসহ বিভিন্ন কারণে এর বিরোধিতা করছে এলাকার বিশাল একটি অংশ। এ অংশে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী।যুগে যুগে মীর জাফর রা ছিল আছে এবং থাকবে ।এরা জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে থাকে ।এরা আছে বাঁশখালিতেও ।বিদ্যুৎকেন্দ্রের পক্ষে আছেন স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুল আলম মাস্টার। বিদ্যুৎকেন্দ্রে পক্ষে-বিপক্ষে দুটি গ্রপ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। একটি পক্ষ কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিরোধে মিছিল মিটিং, সভা, সমাবেশের মাধ্যমে প্রতিবাদ চালাচ্ছে। এ নিয়ে দু’পক্ষ বেশ কয়েকবার সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। রবিবার রাতে এস আলম বিদ্যুৎকেন্দ্রে মালামাল নেওয়ার সময় গ্রামবাসী গাড়িতে হামলা চালায়। এ ঘটনায় পুলিশ রাতে ছয়জনকে আটক করলে গ্রামবাসীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরদিন সোমবার (৪ এপ্রিল) বিকাল ৩টায় গণ্ডামারা মনাজি পুকুরপাড়ে স্থানীয় সাইক্লোন সেন্টার মাঠে প্রতিবাদ সমাবেশ ডাকেন বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধীরা। অপরদিকে একই সময়ে সমাবেশ ঘোষণা করে বিদ্যুৎকেন্দ্রের পক্ষের গ্রুপটি। এ নিয়ে সংঘর্ষের আশঙ্কা সৃষ্টি হওয়ায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধারা ঘোষণা করে সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। বিদ্যুৎকেন্দ্র-বিরোধী গ্রামবাসী প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে দুপুর থেকে প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দিতে থাকেন। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে পুলিশ ফাঁকা গুলি চালিয়ে সমাবেশ পণ্ড করার চেষ্টা করলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পুলিশ শত শত রাউন্ড গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে চারজন নিহত হন।ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলো নেই শুধু হতাহতের কষ্টে ,তাদের লড়তে হচ্ছে এখন সরকার এবং এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে ।ওই যে বদির কথা বললাম ,যে বদির পরিবারের ৩ জন মারা গেছে ,আপনি জানেন তার ছেলেকে পুলিশ হাসপাতালে হাতকড়া পরাইয়া রাখছে ।সে পারেনা স্বাভাবিক নড়াচড়া করতে ।পুলিশের গুলি শুধু তার শাস্তি না তার জন্য আরো কষ্ট হয়ত অপেক্ষা করতেছে ।অত্যাচারিত এই গ্রামবাসীকে শান্তি না দিয়ে সরকার তাদের ৩০০০ গ্রামবাসীকে আসামী করে মামলা করছে ।তাদের বিক্ষোভ করার কারণ ,এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে প্রতিদিন এক হাজার মেট্রিক টন কয়লা জ্বলবে, এখানে পরিবেশের অবস্থা কী হতে পারে, আপনারা আমার চেয়ে ভালো জানবেন। এক হাজার মেট্রিক টন কয়লার ফ্লাই অ্যাশ আকাশে উড়বে, সূর্য অন্ধকার হয়ে যাবে। যে ধোঁয়া উঠবে, কার্বন ডাই-অক্সাইডের কারণে মেঘ হবে না। যদি ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মেঘও না হয়, সূর্যও দেখা না যায়, তাহলে মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে এখানকার পরিবেশ। প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে ১০ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে বঙ্গোপসাগরে প্রচুর পরিমাণে মাছ হয়। জেলেরা মাছ ধরে। পশ্চিমে কতগুলো লবণের মাঠ আছে। ওখান থেকে মানুষ লবণ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। সরকারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ এলাকায় দেড়শো পরিবার আছে। আসলে এখানে ১০ হাজারের মতো পরিবার আছে। এসব মানুষকে ক্ষতির মুখে ফেলে এরা কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র করছে। রামপালে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে আন্দোলন হচ্ছে। সরকারকে বুঝতে হবে তারা কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র চায় না। কিন্তু শেষ অবধি পালের গোদা হতে হল এই গ্রামবাসীকে সরকার এখনও এস আলম গ্রুপকে সমর্থন করে আছে।গ্রামবাসীকে এবং বরাবরের রাজনৈতিক স্টান্ডবাজি মত বিরোধী পক্ষকে দায়ী করে সরকারের এমপি মন্ত্রীরা সাংবাদিক ব্রিফ করছে।আর এই সাধারণ গ্রামবাসিরা কোন দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে না তাদের ভিটা মাটি রক্ষার জন্য আন্দোলনে আছে।তাদের সাথে সরকার কিংবা টাকা নেই আছে শুধু দু ফোটা সস্তার অশ্রু।
আমি আমার বাঁশখালির ভাইদের পক্ষে বলব বসতভিটায় থাকতে চাই, বিদ্যুৎকেন্দ্র না।
বাঁশখালির মানুষগুলো কেমন আছে। বদির মেয়ের স্বামী হারানোর বেদনাটা মন থেকে অনুভব করুন ,বুঝবেন বাঁশখালির মানুষ কেমন আছে ।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:২২