এই অটোপাসের সিস্টেমটা আমার সময় থাকলে আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক উপকৃত হইতাম। জেএসসি এসসসি'র তুলনায় আমার এইএসসি'র রেজাল্ট ভয়ানক খারাপ। যথেষ্ট ভাল প্রস্তুতি আর পরীক্ষা দিয়েও পাবলিক ক্যাম্পাসে পা দিতে পরিনি এইএসসি'র কীর্তিকলাপের কারনে। সেই আফসোসটা থাকত না। (যদিও সেখানে শিক্ষা বোর্ডগুলোর খামখেয়ালীমার্কা মূল্যয়ণকে বিশেষভাবে দায়ী করব আমি। কোন একটা শিক্ষা বোর্ড একবছর ৮২% পাসের হার নিয়ে পরের বছর কেন ৪৬% হয় আবার তার পরের বছর ৮৬% পাসের হার নিয়ে সারা বাংলাদেশের সমস্ত শিক্ষা বোর্ডের ভেতর প্রথম হয়। এমন নয় যে পরীক্ষা খারাপ দিয়েছি। অনেক মেধাবী ছাত্র ছাত্রীও সেই রেজাল্টের পর হতাশ হয়েছে, ফেল করেছে। যা অবিশ্বাস্য! এইচএসসি ২০১৫ যশোর বোর্ডের রেজাল্ট সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে তারা বুঝবেন নিশ্চই।) যাক, তাও পরীক্ষা দিয়েছি, রেজাল্ট ভাল হয় নাই তা মেনে নিয়েছি।
এবার আসি ২০২০ এর এই করোনা দূর্যোগের কারণে এইচএসসি বাতিলের বিষয়ে। হ্যা আমরা একটা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি এবং এ অবস্থায় যে কোন ধরণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। এই সচেতনতা অবলম্বন করে কি পরীক্ষাটা নিয়ে নেওয়া যেত না? অনলাইনের মত পন্থা অবলম্বন করে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সেমিস্টার শেষ করে দিয়েছে। সেখানে এইএসসি একটা মেজর পাবলিক এক্সাম। এটা ছাড়া এখন উচ্চশিক্ষার জন্য এসব ছেলেমেয়েদের যাচাই বাছাই কি করে হবে? আরও এমন অযৌক্তিক কোন সিদ্ধান্ত নিয়েই হয়ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের শিক্ষার্থী সিলেক্ট করবে। পরীক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য যথাযথ ব্যবস্থার কোন সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত একেবারে অযৌক্তিক বলে মনে করি! ভাল কোন প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চশিক্ষা অর্জন করা সব শিক্ষার্থীর স্বপ্ন, এখন এই ব্যাচের অনেক পরিশ্রমী শিক্ষার্থীর সেই স্বপ্ন পূরণ হবে না (যেমন ভাল পরীক্ষা দিয়েও আমার ব্যাচের অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীর হয় নাই। আমারও না, যদিও আমি কখনো খুব মেধাবী ছিলাম না)। তাদের হতাশার দায়ভার আর তার যথাযথ সমাধান সরকার না করলে এটা আসলেই বাজে সিদ্ধান্ত বলে আমার কাছে মনে হয়। আর যদি করেও তো কতজনের করবে? কে জানে যে কত স্টুডেন্ট এসএসসির হতাশা কাটিয়ে এইচএসসিতে ঘুরে দাড়াত! কতজনের ভাল প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার ব্যবস্থা করবে সরকার?
সোশ্যাল গ্যাদারিং এড়িয়ে পাবলিক পরীক্ষা নেওয়া টাফ, কিন্তু পুরো পরীক্ষাটাই বাতিলে এখন ভর্তি পরীক্ষার ক্রাইটেরিয়াগুলোও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কমিয়ে আনতে হবে বা নতুন কোন নীতিমালা তৈরী করতে হবে। এতে করে পুরো বিষয়টা আরও জটিল আর কঠিন হয়ে গেল না? আর তা কবে হবে তা কে জানে! সরকার কি চাইলেই পারত না অলটারনেটিভ কোন উপায়ে পরীক্ষা নিয়ে ফেলতে?
প্রথমেই আমি আমার ব্যক্তিগত তথ্য এই কারণে তুলে ধরেছি কারণ, অনেকেই বলছেন যে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অতীতের ক্রিয়াকর্মই এখন কাজে দেবে ইত্যাদি ইত্যাদি। দেখুন অনেকেই আছেন যাদের জন্য এই অটোপাস সিস্টেমে রেজাল্ট হুজুগে ভাল হয়ে যায়, তাদের কাছে বিষয়টা মন্দ না। সেটাই বলেছি আমার সময়ে হলে আমারও ভাল হত। কিন্তু যারা রিয়লি ট্যালেন্টেড তারা অতীতে চরম সফল থাকলেও এই বেখাপ্পা বর্তমান মেনে নেবে না। আর যারা অতীতের খারাপ রেজাল্ট নিয়ে এবার ঘুরে দাড়াতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ছিল তাদের কথা ভাবুন। শিক্ষাব্যবস্থা এদের জন্য কি ইনসাফ করবে?
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:০৩