somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বোরো আবাদে বিপাকে কৃষক

২৪ শে মার্চ, ২০১২ বিকাল ৩:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খরায় পুড়ছে নবীগঞ্জ হাওরাঞ্চলের ৫০ হাজার একর বোরো ফসলের ক্ষেত। পানির আভাবে ধানের চারা লালচে হয়ে গেছে। অনেক কৃষকের ক্ষেত ফেটে যাওয়ায় ধানগাছ মরে গেছে। নদ-নদীতে পানি না থাকার কারণে সেচ দিতে পারছেন না কৃষক। এদিকে আকাশের কোনোখানে নেই বৃষ্টির ইঙ্গিত। অনেক জায়গায় গভীর নলকূপেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না।
বোরো চাষি রিপন মিয়া জানান, ‘পানির জন্য আমরা মহা সমস্যায় রয়েছি। নলকূপগুলোয়ও পানি উঠছে না। বিল-বাদাল শুকিয়ে গেছে। এখন আল্লাহর ওপর ভরসা। বৃষ্টি না অইলে সকল বোরো ধান মইরা যাইব।’
কৃষক আলাউল মিয়া বলেন, ‘সরকার কৃষি খাতে ভর্তুকি দিলেও সঠিক সময়ে আমরা সার পাচ্ছি না এবং খননের অভাবে খালগুলো শুকিয়ে গেছে। এগুলো খনন কইরা দিলে বোরো জমিনে পানির অভাব অইত না।’
সেচের জন্য বোরো উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এ কথা স্বীকার করে নবীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অজিত কুমার বলেন, পানির জন্য হাওরাঞ্চলের বোরো জমিগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় সেচ দেয়া যাচ্ছে না। অনেক জায়গায় নলকূপেও পানি উঠছে না।
ময়মনসিংহের গৌরীপুরের রামগোপালপুর ইউনিয়নে ভূগর্ভস্থ পানিস্তর অস্বাভাবিক নিচে নেমে যাওয়ায় ১৫টি গ্রামের পাঁচ শতাধিক সেচযন্ত্র অচল হয়ে পড়েছে। এতে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তেরশিরা গ্রামের কৃষক মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, তার বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্রটি ২৫ ফুট গর্ত করে নিচে ২২০ ফুট পাইপ দিয়ে স্থাপন করা হলেও ঠিকমত পানি উঠছে না। ফলে ডিজেলচালিত ওই সেচযন্ত্রের আওতায় প্রায় ১০ একর জমি পানির অভাবে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহজাহান সিরাজ জানান, সেচের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকা, পানিস্তর নিচে নেমে যাওয়া এবং নদ-নদীতে পানি না থাকায় এবার বোরো চাষাবাদ কম হয়েছে।
নদ-নদী ভরাট হয়ে যেমন পানির অভাবে সেচের কাজ ব্যাহত হচ্ছে তেমনি পানির স্তরে নিচে নেমে যাওয়ার কারণেও ব্যাহত হচ্ছে ইরি-বোরো উৎপাদন। এদিকে আবার লোডশেডিংয়ের কারণেও বিভিন্ন জেলার শত শত একর আবাদি জমি ফেটে হাঁ করে আছে। নীলফামারীর কথাই ধরা যাক। এ জেলাতে কৃষক এখন নিরুপায় হয়ে বৈদ্যুতিক মোটরের পরিবর্তে ডিজেল চালিত সেচপাম্প ব্যবহার শুরু করেছেন। আর এই সুযোগে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী ডিজেলের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এ পর্যন্ত নীলফামারী জেলায় অর্ধেকের কিছু বেশি জমিতে বোরো আবাদ হলেও বাকি জমিগুলো অনাবাদি পড়ে আছে। বিদ্যুতের সঙ্কটের কারণে বিকল্প ফসল উৎপাদনের চিন্তা-ভাবনাও করছেন কোনো কোনো কৃষক। ডিমলা উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বিক্ষুব্ধ কৃষকরা দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও, রাস্তা অবরোধ, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় ঘেরাও করে কোনো সমাধান পাচ্ছেন না। ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, ১০ দিন ধরে জেলার ডোমার উপজেলার পাঙ্গা মটুকপুর, সদর উপজেলার ইটাখোলাসহ ছয়টি উপজেলার সকল বিদ্যুৎ গ্রাহকরা মোট ১৫ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পায়নি। যতটুকু সময় থাকে তাও লো-ভোল্টেজের কারণে মটর পুড়ে যায়।
ধানের দাম না পেয়ে আগামী মৌসুমের জন্য অনেক কষ্ট স্বীকার করে মাঠে নেমেছেন কৃষক। একদিকে সার, বীজ ও ডিজেলের বাজার অগ্নিমূল্য। অন্যদিকে বৈরী জলবায়ু আর লোডশেডিংয়ের কারণে দিশেহারা কৃষক। ইরি-বোরো মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে এসে কৃষকের লোকসানের ভয় আরো বাড়িয়ে দিয়েছে লোডশেডিং। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, সারাদেশে লোডশেডিংয়ের যে মাত্রা শুরু হয়েছে তাতে এই ধারা অব্যাহত থাকলে বোরো উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের হিসাবে চলতি বোরো মৌসুমে দেশে মোট ৪৭ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে এক কোটি ৮৭ লাখ টন বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বিদ্যুৎ, ডিজেল ও সারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় প্রান্তিক কৃষকেরা বিকল্প কিছু আবাদের কথা ভাবছেন।
প্রতি লিটার ডিজেলের দাম আগে ছিল ৪৪ টাকা। লিটারে ১৭ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৬১ টাকায়। ৬০০ টাকা বস্তার ইউরিয়া বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকায়। তারপরও কোনো কোনো অঞ্চলে রয়েছে সারের সঙ্কট। এদিকে সব মিলিয়ে এক বছরে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ২১ ভাগ, ডিজেলের দাম বেড়েছে ৩৯ ভাগ এবং ইউরিয়া সারের দাম বেড়েছে ৬৭ ভাগ। সেচ আর ইউরিয়া নির্ভর ইরি-বোরো মৌসুমে যদিও গুটি ইউরিয়া ব্যবহারে ইউরিয়ার পরিমাণ কম লাগে তারপরও গুটি ইউরিয়া সম্পর্কে এখনো অনেক কৃষক সচেতন না। এর ফলে সামগ্রিকভাবে বোরোর উৎপাদন খরচ গত বছরের তুলনায় ৪০ ভাগ পর্যন্ত বেড়ে গেলেও কৃষক নিশ্চিত নয় যে তার উৎপাদিত ধানের সঠিক মূল্য পাবেন। যশোর মনিরামপুর উপজেলার পানিছত্র গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম গাজী জানান, ইরি-বোরো আবাদ মূলত সেচ ও রাসায়নিক সারনির্ভর। এবার প্রধান এই দু’টি উপকরণের অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে। অন্যদিকে বাজারে ধানের একেবারে কম। এই পরিস্থিতিতে সরকার যা-ই বলুক, ধান উৎপাদন করে কৃষক বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়বে। তিনি আরো বলেন, ডিজেল চালিত নলকূপে একবিঘা (৪২ শতাংশ) জন্য দিতে হচ্ছে সাড়ে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। সারের দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ইউরিয়া কিনতে হচ্ছে এক হাজার টাকা বস্তা। কীটনাশকসহ অন্যান্য সারেরও দাম বেড়েছে। সঙ্গে বেড়েছে কৃষি শ্রমিকের মজুরি। সব মিলিয়ে একবিঘা জমিতে ইরি আবাদ করতে এবার খরচ হবে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা। ধান পাওয়া যাবে ২০ থেকে ২৫ মণ। বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী ধানের দাম পাওয়া যাবে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। অবশ্য যারা বিদ্যুৎচালিত পাম্পের অধীনে আবাদ করেছেন তাদের খরচ বিঘাপ্রতি ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা কম পড়বে।
অব্যাহত লোডশেডিং, পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়া, কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি সবকিছু মিলিয়ে ইরি-বোরো মৌসুমে কৃষক এগিয়ে যাচ্ছে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে। তারপরও সবকিছু মোকাবিলা করে কৃষকের উঠে দাঁড়ানোর শক্তি পাবেন যদি সে তার উৎপাদিত ফসলে সঠিক মূল্য পান।

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১২ বিকাল ৩:৩২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×