[আমার এক ছোটবোনের লেখা। ওর ব্লগে অ্যাকাউন্ট নাই। তাই তার অনুরোধে আমার অ্যাকাউন্টে শেয়ার দিলাম।]
ছেলেটি প্রথম যেদিন মেয়েটিকে ফেসবুকে Friend Request পাঠায়, তখন মেয়েটি চিনত না ছেলেটিকে । কিন্তু তার পরেও কোন এক অজানা কারনে অচেনা ছেলেটির Friend Request! Accept করল মেয়েটি। এটা খুবই সাধারন ব্যাপার । এরকম সাধারন ব্যাপার নিয়ে চিন্তা করার মত সময় মেয়েটির নেই। মেয়েটি তখন তার নিজের দুনিয়া নিয়েই মসগুল ।
হঠাত একদিন মেয়েটির মেসেজ বক্সে ভেসে উঠল সেই অচেনা ছেলেটির প্রথম মেসেজ ।
- “ HI কন্যা !
“ খুবই সাধারন এক মেসজ আর তার থেকেও সাধারন “কন্যা” ডাকটা ! কিন্তু তার পরেও এই সাধারন ডাকটাই মুহূর্তেই মেয়েটির মনে তৈরি করেছিল এক অন্য রকম অসাধারন ভাল লাগা । এই থেকে চলতে থাকল কথা। শেষ হল পরিচয় পর্ব ।
কিন্তু, কন্যার মনে উপস্থিত হল এক বিরাট চিন্তা । যে ছেলেটি প্রথম দিনের প্রথম আলাপেই এত সুন্দর একটা নাম উপহার দিল তাকে, সেই ছেলেটিকে কি বলে ডাকবে সে?
শুরু হল নাম খোজার পালা । মিতা, ভিনদেশি তারা আরো কত নাম যে ভাবল। কিন্তু নাহ, কোন নামই যেন ঠিকমত প্রত্যুপহার হচ্ছে না, ছেলেটির দেয়া প্রথম উপহারের ।
এই সব ভাবতে ভাবতেই মেয়েটি তার Homepage এ তাকিয়ে দেখে ,
সেখানে ভেসে আছে ছেলেটির সবুজ জামা পরা একটি ছবি। কি সুন্দর ! সবুজ জামায় ঠিক ঘাস ফড়িং এর মত লাগছে তাকে। আচ্ছা তাহলে তার নাম ঘাস ফড়িং দিলে কেমন হয়?
পরের দিন ভোরে এক অবাক কান্ড। কোথা থেকে যেন একটি সবুজ ঘাস ফড়িং এসে লাফিয়ে পড়ল মেয়েটির গায়। অন্যদিন হলে মেয়েটি এতক্ষনে ভয় আর চিৎকার মিশিয়ে পুরো বাড়ি মাথায় তুলত । কিন্তু, কি অবাক কান্ড, মেয়েটি আজ একটু ও ভয় পেল না। বরং কি যেন একটা অজানা আনন্দ হল তার । এই ঘটনার পরে তো আর ছেলেটির নাম ঘাসফড়িং ছাড়া আর কিছু হতেই পারে না। দুই জন মিলেই ঠিক করল , হ্যা, এই নামটাই ঠিক আছে ।
এর পর শুরু হয় দুজনের স্বপ্নের গল্প। মেয়েটি ছেলেটিকে তার স্বপ্নের রাজ্যের গল্প শোনাত আর ছেলেটি মেয়েটিকে। মেয়েটির স্বপ্ন জুড়ে ছিল Theater ! সে চোখ বুজলেই দেখত থিয়েটার মঞ্চের হাল্কা আলোতে সে কখন সেজে আছে অপরূপ পরি, কখন মমতাময়ী মা, কখন বা দেবী আর কখন সাধারন কোন এক নারি । যে তার সাধারনত্ব দিয়েই জয় করে নিচ্ছে তার মঞ্চের নায়ক আর মঞ্চের সামনে বসে থাকা হাজার হাজার দর্শকের মন ।
আর ছেলেটির স্বপ্নে আছে শুধু মেশিন। যন্ত্র নিয়েই সে ভাবে । যন্ত্র দিয়েই সুন্দর করতে চায় পৃথিবিটাকে ।
এভাবে কথা বলতে বলতে তারা দুজনেই অথবা হয়ত শুধু মেয়েটি ই ভাবতে শুরু করে তাদের একদিন দেখা হবে।
এত কথা যার সাথে হয়, তার সাথে দেখা হবে এটা ভাবতেই ভাল লাগত কন্যার। ঘাসফড়িং এর মনের খবর সে জানতে জানে না। অগত্যা তার মুখের কথাই মনের কথা ভেবে নেয় মেয়েটা ।
কোন একদিন তাদের আলাপঃ কন্যা : আমি না ভালবাসতে ভয় পাই , কষ্ট পাবার ভয় ।
ফড়িং:: "don"t fear to fall in love.this is the best feelings for a human being."
হয়ত সেদিন থেকেই মেয়েটির মনের দরজায় একটা পাগলা হাওয়া এসে দোলা দিয়েছিল , মেয়েটি বুঝতে পারেনি । বুঝবে কি করে? সে তো সবকিছুকে ই চিন্তা করত একটা শিশুর মত সরল সহজ করে ।
ঘাস ফড়িং এর এক সময় Movie বানানোর অনেক ইচ্ছে ছিল। কিন্তু এখন আর নেই। কেন নেই , তা জানতে কন্যার খুব ইচ্ছে করে । কিন্তু তা আর কেন জানি জানা হয়ে ওঠে না।
কথা ছিল তাদের যেদিন প্রথম দেখা হবে, শিউলি ফুলের মালা দিয়ে কন্যাকে বরন করে নেবে ঘাসফড়িং । কন্যাও ভেবে রেখেছিল, সেই মালা চুলে দেবে কন্যা । কথায় কথায় প্রায়ই ঘাসফড়িং কন্যাকে বলতো , তুমি এমন সাধারনই থেক না কন্যা । কখন বদলে যেও না।
এভাবে যতই দিন যায় তাদের কথা কমতে থাকে। আগের মত তাদের আর দেখা হয় না ফেসবুকে। ঠিকমত Timing এ মেলে না তাদের । কন্যার কেন জানি খারাপ লাগা তৈরি হয়। কারনটা সে জানে না।
কন্যার বাসায় ইদানিং ফড়িং এর আনাগোনা বেড়ে গেছে অনেক । যদিও তার মনে বেড়েছে কি না সেটা কন্যা জানেনা ।
এখন ঘাসফড়িং খুব ব্যাস্ত। কথাই হচ্ছে না ফেসবুকে। ঘাসফড়িং কন্যার ফোন নাম্বার চায়। কিন্তু কন্যার মনের মধ্যে কেন জানি ভয় হয়।
ফোনে কথা!
না থাক!
এভাবে সময় যেতে থাকে ফোনে না হলেও ফেসবুকে কথা বাড়ে তাদের আবার আস্তে আস্তে । এর পরে ঘাসফড়িং বেশ কয়েকবার কন্যার ফোন নাম্বার চেয়েছে । কিন্তু কন্যা তার ভয়ে ওই রকম করতে পারেনি । কথার সাথে ভাল লাগাটাও বাড়ে দুজনেরই বা, হয়তবা বাড়েনি। তবে, কন্যার মনের দরজা ইতিমধ্যেই খুলতে শুরু করেছে। কন্যা তো তা বুঝছে না ।
ঘাসফড়িং বেড়াতে যাচ্ছে কিছু দিনের জন্যে । তার মন খুব ভাল । কিন্তু কন্যার মন খুব খারাপ হয়ে গেছে কথাটা শোনার পর থেকেই । কথা হবে না অনেক দিন। কন্যা ঘাসফড়িং কে মেসেজ দেয়, “আমি আপনাকে মিস করছি” । এই প্রথম কন্যা তার মনের কোন Feelings ঘাসফড়িং কে জানাল ।
ঘোরা শেষে ফিরে আসে ছেলেটি । মেয়েটি ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করে কেমন ঘুরলেন? সহজ উত্তর দেয় ঘাসফড়িং, “এইতো ঘুরলাম, খেলাম, ছবি তুললাম আর মেয়েদের সাথে flirt করলাম ”
Flirt!
কন্যা মনে মনে ভাবে।
- Flirt করেন আপনি? তাহলে তো আমাকে সাবধানে থাকতে হবে ফড়িং।
- করি, কিন্তু তুমি বড্ড ভাল মেয়ে কন্যা। তোমার সাথে করব না । তুমি Flirt এর আওতা মুক্ত!
এর পর যেদিন ঘাসফড়িং কন্যার নাম্বার চাইল, কন্যা আর না করল না। সেও যে চায় তার প্রিয় নাম উপহার দেয়া ঘাসফড়িং এর সাথে কথা বলতে । তার ও যে বড্ড ইচ্ছে হয়, যার দেয়া বকুল ফুলের মালা তার চুলে জড়ানোর স্বপ্ন সে দেখে তার গলায় শুনুক সেই অদ্ভুত মায়া লাগান “কন্যা” ডাকটা ।
যাই হোক, নাম্বার দিয়েই দিল কন্যা।
শুরু হল কথা। কন্যা শুনল তার ঘাসফড়িং এর কন্ঠে কন্যা ডাক। একদিন ঘাসফড়িং বলে, “কন্যা, এভাবে কথা বলতে থাকলে তো, আমি তোমার প্রেমে পড়ে যাব , কন্যা” ঘাসফড়িং কন্যাকে বুঝায় সে অনেক পছন্দ করে কন্যাকে, তাই এই দুরত্বটা বজায় চলতে হবে তাদের । কন্যাও ভাবে, ঠিকই আছে ।
কন্যার মনে ততদিনে জায়গা করে নিয়েছে ঘাসফড়িং , সে তা বুঝতেই পারে নি ।
হঠাত ই একদিন কন্যার মেসেজ বক্সে ভেসে ওঠে , - কন্যা, তুমি কি আমাকে পছন্দ কর?
কোন উত্তর দেয়নি কন্যা ।
কিন্তু উত্তর না দিয়ে শান্ত থাকতে পারে না কন্যা। সব সময় তার মন তাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। তাকে বুঝায়, সব বাধা পেরিয়ে ছুটে যেতে তার ফড়িং এর কাছে । মনের সাথে আর যুদ্ধ করে পারে না কন্যা।
কিছুদিন পরেই সব বাধা ভেঙ্গে কন্যা স্বপ্নে দুচোখ ভাসিয়ে ঘাসফড়িং কে বলে তার মনের কথা ।
কিন্তু, এ কি? ঘাসফড়িং তো আর আগের সেই ঘাসফড়িং নেই। চেনা মানুষ থেকে এক অচেনা মানুষ হয়ে গেছে তার ঘাসফড়িং। সেই অচেনা ঘাসফড়িং উত্তর দেয়।
- আমি মজা করেই এসব বলেছি । শোন কন্যা, আমি আসলে অতটা serious ছিলাম না। আমাদের কিছুই মেলে না । আর আমার সব কথা যে তুমি এতটা Seriously নেবে তা আমি ভাবি নি ।
অবাক হয়ে কন্যা ভাবে, কিন্তু ঘাসফড়িং তুমি হয়ত ভুলে গেছ, কন্যা সহজ সরল ভাবেই চিন্তা করে প্রথম থেকে । এক দিন ছেলেটি ই বলেছিল, এমন সরলই থেক কন্যা। কিন্তু, তার সারল্যের শাস্তি এই ভাবে কেন দিল ঘাসফড়িং ? কিছুতেই হিসেব মিলাতে পারে না কন্যা। জীবনের অংক তার কাছে বড্ড সোজা । অত জটিল করে ভাবেনি সে কোন দিন ও । আজও ভাবে নি । আজ হয়ত চাইলেও সে আর ভাবতে পারবে না সে। তার ভাবনার রাজ্যের প্রানপাখির যে আজ মৃত্যু হল।
হ্যা, আজ সেই কন্যা মৃত। কিন্তু কেউ সে খবর জানে না । কেননা, পৃথিবী নামের আমাদের এই গ্রহের বাসিন্দারা , শুধুই শরীরের মৃত্যুর খবরটাই রাখে , মনের মৃত্যুর খোজ তো তারা কেউ রাখে না ।
পূনশ্চ : ঘাসফড়িঙ আজ ও ভাল আছে
NB: বলে রাখা ভাল, এই গল্পের সব চরিত্রই কাল্পনিক। কারো সাথে মিল খোজার বৃথা চেষ্টা করে লাভ কি?
- সঞ্চিতা দেবনাথ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


