somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পশ্চিমবঙ্গের লোকাল ট্রেন। এ্য জার্নি বাই লোকাল ট্রেন !

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৪:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সেবার প্রথম ভারত যাচ্ছি, লোকমুখে ভারতের কত কত গল্প শুনেছি। আবার ভারতীয় লেখকদের লেখনীতে ভারতকে যেভাবে দেখেছি সেটা কিভাবে আবিষ্কার করবো চিন্তা করতে করতে রিজেন্ট এয়ারের ড্যাশ-৮ বিমানটির ফাটানো আওয়াজ শুনতে শুনতে পঞ্চাশ মিনিটের বিমান ভ্রমন শেষে নামলাম নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। কোলকাতায় এমনিতেই প্রথম তাই কোথায় হারিয়ে যাই ভেবে ছোটকালের বন্ধু Kripaan Biswas প্রান্তরের পথ পাড়ি দিয়ে আমাকে এয়ারপোর্টে নিতে চলে এলো। বেশ কয়েক মাসের ট্রিপে ভারত ঘুরবো বলে ল্যাপটপ, ক্যামেরা, জামাকাপড় মিলে ভারী ব্যাগটা পরম বিশ্বাসে যখন কাঁধে নিচ্ছিলেন তখন হয়ত ভাবেননি রীতিমত পাথর বইতে চলেছেন, আর তাহার বন্ধুবর এই এমন কেউ নই যে সৌজন্যের খাতিরে হলেও ব্যাগ ফেরত নিতে চাইবো :)

সিটিপুলিশের বুথ থেকে প্রিপেইড ট্যাক্সির টিকেট কেটে চড়ে বসলাম মান্ধাতা আমলের এ্যাম্বাসেডর হলুদ ট্যাক্সিতে। আহা, পরম আনন্দ ! ড্রাইভার দেখি মাঝে মাঝে পেছনের দিকে ফিরে তাকায়, এই আবড়া থাবড়া চেহারা যুক্ত ছেলে আবার প্লেনে চড়ে এয়ারপোর্টে এসেছে। ২০০৪ সালে একবার কমলাপুর থেকে ট্রেনে চড়ে চাষাড়া গিয়েছিলাম, এবার হবে আসল ট্রেনে যাত্রা। এয়ারপোর্ট থেকে অনেকটা পায়ে হাটা দূরত্ব হলেও ট্যাক্সি করেই চলে এলাম বিধাননগর স্টেশনে, বন্ধুবর আমাকে বলল শিয়ালদহে ভিড় হবে বলে এখান থেকে ওঠা ভালো হবে। কিন্তু একই ভিড় এড়াতে গিয়ে ট্রেনে ঢোকার সুযোগ না পেয়ে দুটো ট্রেন অলরেডি মিস ! কিছুক্ষন পরে এল মাতৃভূমী এক্সপ্রেস, ট্রেন থামতেই আমি যখন উঠতে যাবো তখন কৃপাণ হাত ধরে নামিয়ে দিলো, ওমা একি ! এই ট্রেনে উঠলে নাকি ৫০০ টাকা জরিমানা। মমতা ব্যানার্জি রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মহিলাদের চলাচলের জন্য স্পেশাল এই ট্রেনটি নামিয়েছিলেন।

কোন রকমের ঠেলে ধাক্কায় যখন ট্রেনে উঠলাম তখন চাপাচাপি, আর চাপা গন্ধে টেকা যাচ্ছিলো না। কৃপা দেখি মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকায়, কিভাবে যেন ভিড় ঠেলে ঠেলে চলন্ত ট্রেনে বিভিন্ন রকমের খাবারের ফেরিওয়ালারা আসে। বন্ধুর মন রক্ষার্থে সেবার কি কি যেন কিনে খাইয়েছিলো। কিছুক্ষন পরপর এক এক স্টেশনে ট্রেন থামে কিছু মানুষ নামে আবার কিছু মানুষ ওঠে, ট্রেনের বেশিরভাগ মানুষগুলো কোলকাতা থেকে এসেছে। দরজায় দরজায় ঝুলে ঝুলে চলে আসে মানুষগুলো কিন্তু একটুও শঙ্কা অনুভব করে না কারন তারা বাড়ি ফিরছে, হয়ত কেবল সকালেই প্রিয়জনকে ছেড়ে এসেছিলো তাতে কি? অফিস ফেরত মানুষগুলোর চেহারায় বাড়ি ফেরার তুষ্ঠি লক্ষ করতে পারি, তবে ভাবতে অদ্ভুত আনন্দ লাগে লোকগুলো শুধু নিজের বাড়িতে স্ত্রী-সন্তানদের সাথে থাকবে বলে দির্ঘ্যপথ ট্রেন ভ্রমন করে কলকাতা গিয়ে অফিস করে আবার বাসায় ফিরে যায়, সারাদিনের ৫/৬ ঘন্টাই চলে যায় এই স্টেশন আর ট্রেন করে করে। আসলেই জীবনের প্রয়োজনের আপনের পাশে থাকতে আমরা বাঙ্গালীরা কি না করি, পৃথিবীর অনেক দেশে এমন মেলা ভার।

স্টেশনে স্টেশনে অফিস ফেরত মানুষগুলো নামতে থাকে খালি হতে থাকে সিট গুলো, আমরাও সুযোগে বসে পড়ি। গল্প শুনি চারপাশের সহযাত্রীদের, কেউ কেউ অফিস শেষ করেছেন কেউ আবার কোলকাতায় গিয়েছিলো ডাক্তার দেখাতে, এই রুটটা এমনই বাংলাদেশিদের ব্যাপক চলাচল এখানদিয়ে, এমন কি বাংলাদেশ থেকে আসা সপ্তাহের দুটি ট্রেনও এই রাস্তা দিয়ে চলে। এই প্রথম কোন ইলেক্ট্রিক ট্রেনে চড়লাম, সা-সা করে ছুটে চলে ট্রেনটি। কষ্ট আনন্দ মিলে যে অভিজ্ঞতা তা হলো বাড়ি ফেরার আনন্দ দেখা। আমরা চলে আসি আমাদের গন্তবে, চাকদা ! ওহ হ্যা রবি ঠাকুরের গল্পেও এই চাকদার নাম এসেছিলো।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৪:০২
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×