somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিথীর জানালা।

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৬:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তিথীর জানালা

এটা ঠিক রাস্তা না আবার গলিও না। দুপুরে চারিদিকে ঝিম মেরে থাকে, অথচ কতটা কোলাহল মুখর এই শহর। বিবিএমপির অসাধারণ পরিকল্পনায় শহরবাসী স্বস্তির নিশ্বাস নিতে পারেন। কৃষ্ণরাজাপুরামে নামার সময় অনেকটা সৌজন্যস্বরূপ পৌছে দেবার কথা বলেছিলাম, কে যানতো যে একই ব্লকেই আমাদের বাস। সেদিনের পর থেকে প্রতিদিন জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে, ওর বয় ফ্রেন্ডের সাথে ঝামেলাগুলো ঠিক হয়েছে কিনা। মধ্যদুপুরে জনাবিশেক মানুষের বসবাস করা এই বাড়ীতে এখন আমি আর বাড়ীর মালকিন আন্টি, এসময় উনি চা খান বলে আমার জন্যও বানাতেন ! এখন পানি গরম হবার পরে চা ঢালার আগে আমার জন্য কফি করেন, চা টা আমার কাছে একটু কোষ্টে লাগে বলে কয়েকবার ফেরত দিয়েছিলাম। রুবী আন্টির সাথে আমার কখনো কথা হয়নি, উনি ইন্দি বা ইংরেজী জানেন না, আর আমি তেলুগু ও কান্নাডা জানি না। তবুও ওনার কাছে যানতে ইচ্ছে করে, সম্পর্ক ভাঙার পরে একটা মেয়ে কেমন থাকে, সে কি আবার সম্পর্কে ফিরে যায় ?

নয়দিন হল, তিথীর খোজ নিতে ইচ্ছে হলেও যাইনা ! যদি ভাবে, করুণা করতে এসেছি অথবা নিজেকে রিপ্লেস করতে চাই। আসলে এমন ভাবতেই পারে, বাংলাদেশেতো এমন হয়। সেবার শারমিন এমনই বলেছিলো, "আচ্ছা, তুই কি রাফাতের যায়গা নিতে চাস ?" হয়ত নিতে চাইতাম কিন্তু সেদিনের পর থেকে শারমিনের প্রতি আমার সব আগ্রহ ও ভালোবাসা হারায়। অথচ ও নিজেই বাজার থেকে একটু দূরে গিয়ে রাস্তায় দাডিয়ে থাকতো, কখন আমি আসবো আর ও আমার সাইকেলের পিছনে চড়ে স্কুলে যাবে! সেবার স্কুল থেকে ফেরার পথে ও বলেছিলো আজকে তোর সাইকেলের সামনে বসবো। তারপর থেকে অনেকবার ও সামনে বসেছিলো ! রুবী আন্টি মগ ভরে কফি দিয়ে গেলেন সাধারণত আমার কফির অর্ধেক ঠান্ডা হয়ে যায়, এরপরেও খেয়ে নেই। জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকি সামনের রাস্তা দিয়ে মাঝে মাঝে গাড়ি যায়। বেশ কয়েকদিন হলো জামাকাপড় স্ত্রী করা হয় না, কাজের মেয়েটাকে দিয়ে সবগুলো ধুইয়ে রেখেছি আলসেমি করে স্ত্রী করাতে যাওয়া হয়না, আজকে সেগুলো নিয়ে বের হলাম।কাপড় দিয়ে ফেরার পথে তিথীর ভাড়া বাসার সামনে দাঁড়ালাম, কিন্তু সাধারনত কর্মজীবিরা এসময় ঘরে থাকেনা চিন্তা করে হাটতে শুরু করলে ডাক শুনতে পেলাম, সামনে পেছনে তাকিয়ে বাড়িটির উপরের দিকে তাকাতেই দেখি তিনতলার জানালা দিয়ে তিথী ডাকছে। দূর থেকে অনেকটা উসকোখুসকো মনে হল। "তুমি ঘরে ঢুকে ওয়েটিং রুমে বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।" নিচতলায় দারোয়ানকে কান্নাডা ভাষায় কি যেন বলে দিল বুঝতে পারলাম আমাকে যেন না আটকানো হয়।

সেদিন বিকেলে তিথীর স্কুটি স্টার্ট হচ্ছিলো না, অব্যবহারিত থাকার কারনে মাঝে মাঝে এমন হয় দেখে আমরা হাটতে শুরু করলাম। কয়েক ব্লক নিশ্চুপ হেটেছি, এরপরে একটু একটু কথা শুরু হল। আমি আর ওর ব্রেক-আপ নিয়ে জিজ্ঞেস করিনি, আসলে উচিত মনে করিনি। সেদিন আমাকে সাথে নিয়ে কয়েক যায়গায় গেল, পার্লার থেকে প্লাক করে চুল কাটিয়ে বের হলো। সাধারণত এগুলো আমাকে দিয়ে হয়না, তবে সেদিন খারাপ লাগেনি। বিকেলে পার্কেও হেটেছিলাম, সন্ধ্যার পরে মেট্র ধরে এমজি রোডে গিয়েছিলাম সিনেমা দেখতে। কয়েকদিনের অনুপস্থিতি ও অফিসের ফোন রিসিভ না করার কারনে আবার অফিসে না যাবার জন্য অফিস চিঠি এসেছে, তাতেও মেয়েটা উত্তর দেয়নি। যে মেয়েটা এত কিছুর পরে আবার নিজেকে খুজে পাচ্ছে সেটার কারন কি আমি ? না এটা শুধু নিজের প্রশ্ন! ওকে জিজ্ঞেস করা হয়নি। দিনে দুই ঘন্টার ট্রেনিং শেষে সারাদিন ফ্রি থাকা হয়, এ শহরে লাখো মানুষের ভিড়ে একজন ভালো বন্ধু পাওয়া ভার। ইদানিন তিথীর সঙ্গ উপভোগ করছি। এই শহরে ওর বন্ধুসংখ্যা নেহাত কম নয়, ওর শখ ফটোগ্রাফি, একটা বড় গ্রুপও রয়েছে। একটা এ্যাড হাউজে কাজ করতো, হয়ত আবার কাজ খুজে পেতে সময়ও লাগবে না। বিএমটিসি থেকে ডে পাসে টিকেট কিনে সারাদিন ঘুরে বেড়িয়েছি শহরটা, দিনে রাতে শহরের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়িয়েছি।

"জানো, চাপা কষ্টগুলো নিজের মধ্যে থেকে দূর করার সবচেয়ে সহজ উপায় হল অপরিচিত কাউকে বন্ধু করা আবার তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করা। যাতে সে খুচিয়ে খুচিয়ে অতীতগুলো না জানতে চায়, তোমায় নিয়ে আমার শঙ্কা ছিলো তুমি জিজ্ঞেস করো কিনা। কিন্তু তুমি তা করোনি বলেই আমি তোমার সাথে চলতে পেরেছি। বাই দ্যা ওয়ে আমি তোমার সঙ্গ উপভোগ করি"
আমি চুপ করে তিথীর পাশে হাটতে থাকি। উলশুর লেকের এই পাথওয়েতে প্রায়ই হাটি, তবে আজকেরটা আলাদা ছিলো। বুঝতে পারলাম দুরের অজানা শহরে আমি হয়ত একজন ভালো বন্ধু পেয়ে গেছি, কেন যেন মনে হল তিথীকে আমি যেন বন্ধুর বাইরে কিছু না ভাবি। আজীবন বন্ধু হয়েই থাকবো আমরা। সেদিন তৃতীয় তলার একটা ডাক আমারও জীবন বদলে দিয়েছে, প্রান্তরে ঘুরে বেড়াতে পেরেছি, বিপরীত লিঙ্গের উপর আস্থার সম্পর্ক তৈরি করতে পেরেছি। এখনঅব্দি কাছের বন্ধুটির মাঝে রয়ে গেছে কয়েকঘন্টা বিমান ভ্রমনের দূরত্ব, তবুও বন্ধুটি যেন সব সময় পাশে থাকে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৬:০৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড্রাকুলা

লিখেছেন সুদীপ কুমার, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১২

কোন একদিন তাদের মুখোশ খুলে যায়
বেরিয়ে আসে দানবীয় কপোট মুখায়ব।

অতীতে তারা ছিল আমাদের স্বপ্ন পুরুষ
তাদের দেশ ছিল স্বপ্নের দেশ।
তাদেরকে দেখলেই আমরা ভক্তিতে নুয়ে পড়তাম
ঠিক যেন তাদের চাকর,
অবশ্য আমাদের মেরুদন্ড তখনও... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×