রসিক আলী মাঝ বয়সি লোক। মাথায় হালকা সমস্যা থাকলেও সমাজ টমাজ নিয়ে ভাবেন। ইদানিং তার কিছু পরিচিতিও হয়েছে। সঙ্গীতের প্রতি টান আছে। সুযোগ পেলেই দু চারটা গান শুনিয়ে দেন। রসিক আলী তরুণী বউ লইয়া ঢাকা শহরে বেড়াইতে আসলেন। সারাদিন বৌ লইয়া নানারকম পাগলামি করে রাতে ফাইভ ষ্টার হোটেলে উঠলেন। কিছুক্ষন দুজনে গল্প সল্প করে বিছানায় যাবেন।
[ এই পর্যন্ত পড়ে যারা একটু নড়ে চড়ে বসছেন তাদের আশা পূরণ হবেনা বলে দুঃখ প্রকাশ করছি, এটা পিউর সামাজিক স্ট্যাটাস ]
বিছানায় শুতে যাবেন তার আগেই দুজনের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়ে গেল, তুমুল ঝগড়া। রসিক আলী আবেগি মানুষ। তখনি জানালা দিয়ে পাঁচ তলা থেকে লাফ দিবেন।
বৌ ম্যানেজারকে ফোন দিয়ে বললেন "আমার স্বামী আত্মহত্যা করতে চাইছেন, প্লিজ আমাকে সাহায্য করুন"। ম্যনেজার বললেন, "ম্যাডাম এসব আপনাদের পার্সোনাল ব্যাপার, আমরা সাধারণত পার্সোনাল ব্যাপারে কোন হেল্প করিনা"।
রসিক আলীর বউতো বেজায় ক্ষেপে গেল, ফোনে চিৎকার করে বলল, "হারামজাদা ম্যানেজারের বাচ্চা ম্যানেজার, তাড়াতাড়ি মিস্ত্রি পাঠা, তোদের জানালা খুলেনা কেন্, পাগলটার আবার কোন সময় মত চেইঞ্জ হয়ে যায়।
ম্যানেজার তখনই মিস্ত্রি পাঠানোর আশ্বাস দিয়ে জিজ্ঞেস করল, "স্যারতো বেশ মজার মানুষ, আপনি স্যারের উপর রেগে আছেন কেন ম্যাডাম"।
এবার বেচারি মেয়েটা আর কান্না ধরে রাখতে পারলনা, বলল, "আপনারাতো পাগলটার কিছু ডায়লগ শুনেন আর ফেস বুকে সেটা নিয়ে মজা লুটেন। কিন্তু আমারতো পাগলটার সাথে দিনরাত থাকতে হয়, আমার কষ্ট আপনার বুঝবেননা"।
রসিক আলীর হুশ ঠিক মাথা খারাপ, তাই যথারীতি আত্মহত্যা থেকে সরে আসলেন। এভাবে দিন যায়, মাস যায় আর রসিক আলীর পাগলামি আরো বেড়ে যায়। এই লোকের পাগলামিতেই কিনা বউটার কঠিন অসুখ করল, মর মর অবস্থা। মৃত্যু শয্যায় স্বামীর হাত ধরে বলল, "আমি জানি তুমি অল্প বয়সী বউ ছাড়া থাকতে পারবানা, তুমি আবার বিয়ে করবে সেটা কোন সমস্যা না, তবে আমার দুটি শর্ত পুরণ করবে। প্রথমটা হল, আমার চেয়ে কম বয়সী বিয়ে করবেনা, তোমার পাগলামি কম বয়সী মেয়েরা হজম করতে পারবেনা। দ্বিতীয়টা হল, আমার কবরটা শুকানোর সময় দিবে"।
রসিক আলী মনে মনে ভাবলো বেশ সহজ শর্ত। তার এই বৌএর বয়স একুশ, না হয় পরেরটা সাড়ে একুশ বা বাইশ বছরের করবে। যাহাই বাহান্ন তাহাই তিপ্পান্ন। মনে মনে বেশ খুশি হল। কিন্তু পরের শর্তটা সে ঠিক বুঝলনা, সে বৌকে এটার কারণ জিজ্ঞেস করল। বউ বলল, "দেখো তোমাকে লোকজন আড়ালে এখন যা বলে আমি চাই আমার মৃত্যুর পরে সারা জীবন লোকে ভালোবেসে তোমাকে সামনাসামনি বলুক। রসিক আলী কি বুঝল কে জানে, চুপ হয়ে গেল।
সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই রসিক আলীর বউ মরিয়া গেল। তার জন্য মেয়ে দেখাদেখিও শুরু হয়ে গেল। রসিক আলী মানুষ একেবারে খারাপনা। বউ এর শর্ত দুটির কথা তার মনে রইল। তাই সে কবর শুকানোর আগে কোনো মেয়ের প্রতি আগ্রহ দেখালনা। এদিকে তখন আবার বর্ষা কাল। কবর আর শুকায়না, সে পড়ল মহা বিপদে। বৃষ্টি থামলেই সে কবরের পানি সরিয়ে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করা শুরু করল। কিন্তু আবার বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দেয়। এরকম কয়েকদিন হওয়ার পর সে আর কবরের সামনে থেকে নড়েনা। বৃষ্টির মধ্যেই সে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করতে থাকে, যেন কবরটা তাড়াতাড়ি শুকায়। বর্ষাও শেষ হচ্ছেনা, তারও কবরের সামনে থেকে নড়া হচ্ছেনা।
এদিকে দশ গ্রামের লোকজনের মধ্যে ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে গেল। কেউতো আর ভিতরের ব্যাপার জানেনা, সবাই ভাবছে বেচারা বৌএর শোকে কাতর, আগে হালকা পাগল ছিল, এখন পুরা পাগল হয়ে গেছে। যেই সেই পথ দিয়ে যায়, যাওয়ার সময় বলে যায়, "রসিক পাগলা আর কান্দিসনা, এবার তুই বাড়িত যা"।
[অফটপিক: এই রসিক আলীর সাথে সাধারণ অসাধারণ, মন্ত্রি অমন্ত্রী কারো সাথে কোন মিল খুঁজে পেলে আমি কোন দায়ভার লইবনা, ভদ্র লোকের এক কথা।]

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



