“আমি তোমায় ভালবাসি” , তিনটা শব্দ । খুব সহজেই বলে ফেলা যায় । কিন্তু এ তিনটা শব্দের ব্যপ্তি সারা জীবন কিংবা তার থেকেও বেশি । আমরা খুব সহজেই বলে ফেলি শত জন্ম ধরে ভালোবেসে যাব, তোমার জন্যে মরে যাব ইত্যাদি ইত্যাদি । কিন্তু সময় সুযোগে পেলে নিজের ভাগটা খুব সুন্দর করে বুঝে নিই । কোন রকম ত্যাগ স্বীকার করিনা কিংবা করার মনোভাব রাখিনা । ভালোবাসার ফলে সৃষ্ট দ্বায়িত্ব থেকে সরে আসি। মরচে ধরে যায় আমাদের সম্পর্কগুলোতে। সবকিছু থেকেও তখন নিজেকে বড় একা লাগে । আজকে ভালবাসার একটা সুন্দর উদাহরন দিব। এক কাপলের কয়েকটি ছবি । শারিরীকভাবে তারা অপূর্ন । কিন্তু ভালোবাসায় তারা আমাদের চেয়ে অনেক অনেক এগিয়ে । আসুন তাদের দেখে আমরা একটু উদ্বুদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করি ।
দুই-তিনবছর আগের ঘটনা । অনেকেরই হয়তো জানা আছে । মেয়েটি ফাতিমা আর ছেলেটির নাম আহমেদ। ছেলেটির দুটি হাত নেই এবং মেয়েটির দুটি পা পঙ্গু ।তাদের মধ্যে অসাধারন এক ভালবাসার বন্ধন গড়ে উঠে তারা বিয়ে করে । শুরু হয় তাদের একসাথে পথচলা ।অনেকদূর যেতে হবে তাদের ।
ভাইয়াটা খুব সুন্দরে পাও দিয়ে ব্রাশ করে। হয়তো অনেক কষ্ট করতে শিখতে হয়েছে ।প্রয়োজন মানুষকে অনেক কিছু শিখায়!!
ব্রাশ করে পাও ধুয়ে রেডি হয় । হাসিহাসি মুখ ।
আয়না দেখে নিজের মাথার চুল নিজেই আঁচড়িয়ে ঠিক করে নেয় । নিজের এলোমেলো জীবনটাকে যেভাবে গুছিয়েছে ঠিক সেভাবে । অনেক যত্ন করে ।
আপুটা দেখি অনেক ভালবাসা দিয়ে আরেকটু সুন্দর করে গুছিয়ে দিচ্ছে চুল । একে অন্যের পরিপূরক তারা।
একসাথে টিভি দেখে তারা নাস্তা করছে তারা । আপুটার সম্ভবত ঘনঘন চ্যানেল পাল্টানোর অভ্যাস আছে ।
এরপর ফাতিমা রান্নাঘরে বাসনকোসন পরিষ্কার করছে । সারাদিনের অনেক কাজ বাকি পড়ে আছে । একটা একটা করে শেষ করতে হবে তাদের।
আহমেদটাও কিন্তু বসে নেই । বসে বসে খাওয়ার মানুষ না সে । জামাকাপড় আয়রন করে ফেলছে ।
ঘরের বিভিন্ন কাজে যতটুকু সম্ভব আহমেদ ফাতিমাকে সাহায্য করে ।
একজন আরেকজনকে ছাড়া খেতে চায় না । কি যে ভালুবাসা । একসাথে লাঞ্চ করছে তারা ।
কাজে যাওয়ার জন্য তারা দুজন একসাথে রেডি হয় । স্বামীটাকে পারফিউম মেখে দেয় । একটা পুনর্বাসন কেন্দ্রে তারা কাজে চলে যায় ।
শিল্পমনষ্ক এ পরিবার গান-বাজনা ভালবাসে । বন্ধুর সাথে একটা গানে সুর তুলছে ছেলেটা ।
সুন্দর করে ছবিও আকতে পারে সে (সম্ভবত ক্যালিগ্রাফি) ।অনেক গুন তার ।
অবসর সময়ে বিয়ের অ্যালবাম সহ বিভিন্ন ছবি দেখে তারা । স্মৃতিগুলো মনে করে, প্রথম দেখা কিংবা প্রেমের শুরু। আরো কত কী ?
মাঝে মাঝে বিধাতার সাথে আনমনে নীরবে কথা বলে আহমেদ । কি বলে সে ই জানুক। আমরা না হয় নাই জানলাম ।
খুব ভাল কবিতা আবৃত্তি করে সে । ফাতিমা চোখ বন্ধকরে শুনে কবিতা । ভালোবাসার মানুষটা , ভাললাগার মানুষটার প্রতিটি শব্দ অনেক আপন মনে হয় । সে নতুন দিনের স্বপ্ন দেখে যায় । অপূর্ন মানুষদের জন্য একটা প্রতিষ্ঠান খুলতে হবে একটা গানের স্কুলও । চোখমুখে খেলে যায় অনাগত ভবিষ্যতের স্বপ্নের ঝিলিক । সে মুখ দেখে পরম ভালবাসায় আহমেদ আরেকটা কবিতা ধরে ।
এই তো কাহিনীটা মোটামুটি এরকমই । তাদেরকে কখনো হতাশায় জেঁকে ধরে না । কারন দুষ্টু জীবন যদি তাদের মন খারাপ করার, হতাশার ১০টি কারন দেখায় তারাও জীবনকে তাদের উপভোগ করার ১০০টি ঘটনা দেখিয়ে দেয় ।
তাদের ভালবাসা , নির্ভরতা দেখে আমার খুব ভাল লাগল । তাই শেয়ার করলাম । আসুন আমাদের জং ধরা ভালবাসাটাকে আরেকটা ঝাকি দেই । ভালবাসার প্রিয় মানুষটিকে ভালোবাসার চেয়ে আরেকটু বেশি ভালোবাসি । পরম মমতায় বুকে টেনে আনি । সুখে দুঃখে তাকে নিয়ে পাড়ি দেই জীবনের বন্ধুর পথ ।
একটা গান শুনিঃ Céline Dion - My Heart Will Go On
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:৩৪