somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনের ছেড়া পাতাঃ তুমি নেই বলে

৩০ শে মার্চ, ২০১২ বিকাল ৪:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তোমাকে খুব মনে পড়ছিল । আনমনেই হাঁটছিলাম সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডের দিকে । হঠাৎ মানুষের খুব হই-চই , আমাকে হাত নাড়িয়ে কিছু বলছে । ট্রেনের তীব্র কানফাটা আওয়াজে লক্ষ্য করে দেখি অল্পদূরেই যন্ত্রদানবটা তীব্র বেগে হুংকার ছেড়ে ছেড়ে আসছে । শরীরের পেশিগুলো শক্ত হয়ে বোধশক্তি লোপ পেতে শুরু করল , শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত নেমে শরীর বরফের মত জমে যাচ্ছিল । প্রচন্ড একটা ধাক্কা খেলাম , কান শোঁশোঁ করে উঠল । শুনতে পেলাম, “স্যার, আপনি কি পাগল হইলেন নাকি ? আর একটু হইলেই তো শেষ !” পিছনে সাইসাই করে হাওয়া কেটেকেটে যন্ত্রদানবটা চলে গেল ।

আমি ঘোর কেটে উঠার আগেই সাদামনের মানুষটা কোথায় যে হারিয়ে গেল ! সাদামনের মানুষেরা বুঝি এমনই হয় ! যেমনি ঝড়ের বেগে এসেছিল ঠিক তেমনিই হারিয়ে গেল ! ঝড়ের কঠিন হৃদয় যেমন ধ্বংস করে তেমনি কোমল হৃদয় বাতাসে অক্সিজেনের সামঞ্জস্য এনে প্রকৃতির প্রান সঞ্চার করে । এ যেন কোমল ঝড় ! তার প্রতি অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা ।

একটা খালি বাসে উঠে পড়লাম । বাসের জানালার পাশে একুশ নাম্বার সিট টাতে বসেছি । যেটা ওর প্রিয় সিট ছিল ওর , মাঝামাঝি হওয়াতে ঝাঁকুনি কম লাগে । একসিডেন্ট হলে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম থাকে । মৃত্যুতে ভীষন ভয় ছিল তার। মেয়েটাও মায়ের মত চঞ্চল আর আবেগী হয়েছে । একটুতেই মন খারাপ হয়ে যায় । ও চলে যাওয়ার পর থেকে কেমন যেন মনমরা হয়ে থাকে । তার মুখের দিকে তাকালে কষ্টে বুকটা ফেটে যায় আমার । এত কম বয়সে এত মলিন মুখ, মা হারার যন্ত্রনা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি মেয়েটা ।

বাস ছেড়ে দিয়েছে । হকারদের মাঝে খুব হুড়াহুড়ি, কার আগে কে জানলার পাশে আসবে এ নিয়ে রীতিমত প্রতিযোগিতা । জানালার পাশে এসে খাবার নাড়িয়ে যাত্রীদের বিশেষ করে ছোট্ট যাত্রীদের লোভ লাগাচ্ছে তারা । ওরা থাকলে সব বারের মত খুব সহজেই তাদের লোভে পা দিয়ে চারটা চিপস , ১ টা পপকর্ন , আর তিনটা ফলের জুস কেনা হত । পাশের লোকটা কেমন নিলজ্জের মত উঁকিঝুঁকি দিয়ে আমার লেখা পড়তে চেষ্টা করছে । বিফল হয়ে মন খারাপ করে গালে হাত দিয়ে বাসের সামনের দিকে উদাসীভাবে তাকিয়ে আছে ।

সামনের ডানদিকের সিটে একটা দুষ্টুবাবু একবার বাবার কোলে আর একবার মায়ের কোলে ঝাপিয়ে পড়ছে । কার কাছে বেশি আদর সে বোধহয় ঠিক করতে পারছে না ? ও যখন ছিল আমার আম্মুটাও এরকম করত । একটু বয়স হবার পর ওর যখন বুদ্ধি হল তখন আমাদের দুজনকে একসাথে বসিয়ে কোলের উপর শুয়ে পড়ত । আমরা হাসতাম ওর বুদ্ধি দেখে ।

একটুর জন্য দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেলাম আমরা । একটু ঘুমের ঝাঁকুনি এসেছিল ,ঘুমিয়েও ছিলাম বোধহয় । বাসের হার্ডব্রেকের কারনে সামনের সিটে মাথায় বাড়ি খেয়ে তার খেসারত দিতে হল । হা হা , নেহা বারবার বারবার তোমার কথাই মনে আসে । তুমি যে আমার সাথে থেকে থেকে কখন যে আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিয়ে আমার সবটুকু সত্ত্বাকে দখল করে নিয়েছ আমি বুঝতে পারিনি । তোমাকে হারিয়ে আমি যে আমি আমাকেই হারিয়েছি তা আজও বুঝিনি বুঝতে চেষ্টাও করিনা । তুমি সবসময় জার্নির আগে বলে দিতে , “ তাড়াহুড়া করে বাস ধরবেনা, পকেট সাবধানে রাখবে , বাসে একদম ঘুমাবেনা , অপরিচিত লোক থেকে হুট করে এটা সেটা খাবেনা। ” বল এখন কে শাসন করবে ? ব্যাথা পেয়েছি কে দুঃখ পাবে ? কে রাগ করবে ? কে ভালবাসবে ? হু ! কে ? কে ?

মাঝে মাঝে আমার খুব কান্না পায় , চোখ লাল হয়ে যায় । চশমায় দৃষ্টি ঝাপসা থেকে আরো ঝাপসা হয়ে ওঠে , নিজেকে খুব অসহায় মনে হয় । চিৎকার দিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করে । আমি পারিনা , লোকলজ্জার ভয়ে পারিনা । আমাদের এখানে সব ছোটরা কাঁদতে পারবে , যখন খুশি চিৎকার দিয়ে কাঁদতে পারবে । কিন্তু বড়দের যে কাঁদতে মানা ! তাদের সব সময় লোক দেখানো হাসিমুখে থাকতে হবে । কেউ যদি কাঁদতে চায় গভীর রাতে পৃথিবী যখন ঘুমিয়ে যাবে তখন চুপি চুপি কাঁদতে হবে । শব্দ করে বড়দের কাঁদতে দেখলে নির্জন রাতও ভেংচি কাটবে ।

সবাই ছোট থেকে বড় হয় , বুড়ো হয় তারপর চলে যায় অজানায় । আর তুমি কিনা এত তাড়াতাড়িই আমাদের ছেড়ে গেলে ! বল আমরা কি তোমাকে কম ভালবেসেছিলাম ? একটু পরেই বাস পৌছে যাবে , আমি তোমাদের বাড়িতে যাব । মনে আছে তোমার এভাবে আমরা কতবার এসেছি ? কখনো কি ভেবেছি তোমাকে ছাড়া এভাবে যেতে হবে । তোমাকে ছাড়া আজ আমার কাছে সবকিছুই খালি খালি মনে হয় , অর্থহীন মনে হয় , মনে হয় বেঁচে থেকে আমি শুধু মিথ্যার পেছনেই দৌঁড়াচ্ছি ।

নেহা আমরা বাসস্ট্যান্ডে চলে এসেছি , তোমাদের বাড়ি যাব । তুমি পাশে নেই । তোমাকে ছাড়া আমি ভাল নেই । একটুকুও ভাল নেই । তুমি কি ভালো আছ ?

___d88888888b_____d88888888b
__d88?____d88b___d88b____`88b
_d8?_________d888b_________`8b
_8b_________________________d8
_b8__________________d8888b___d8888b
__d8________________d8?__d8b_d8b__`8b
___8ba_____________d8?_____d8b_____`8b
____`8da___________8b_______________d8
______`Y8b__________d8_____________8b
________`8b__________8ba_________ad8
__________`88_____88__`8da_____ab8?
____________8b___d8_____`Y8___8Y?
_____________`b_d?________`8_8?
______________`8?__________`8?
_______________"____________"

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:৩৩
৩৩টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×