লোকটির স্বাস্হ্য ভালো, মুখে চাপ দাঁড়ি। চোখ দুটো কিছুটা ঘোলাটে, একটু এলোমেলো আর হতাশা ভাব নিয়ে দাঁড়িয়েছিল মসজিদের রাস্তার ওপারে। অনেক পুরনো পান্জাবী আর লুঙ্গি পড়ে আছে, শরীর থেকে আতর লোবানের গন্ধ ভুর ভুর করে বের হচ্ছে।
আমি ওনার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় একটু কাঁচুমাচু করে আমার দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করছিল। দাঁড়িয়ে একবার ভালো করে দেখে জিজ্ঞেস করলাম, সমস্যা কি? ছিনতাইকারী তাদের সব টাকা পয়সা নিয়ে গেছে। তাদের বাড়ি ফেরার জন্য কোন টাকা নাই।
এতক্ষণ পর বোরকা পরা হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে তার সাথে দাঁড়ানো মহিলাটিকে দেখলাম। তিনিও তার স্বামীর সাথে গলা মিলালেন । তাদের যেন বাড়ি যাওয়ার জন্য কিছু টাকা পয়সা দিই। আমি বললাম , টাকা দিতে পারব না আমার সাথে চলুন আমি আপনাদের ট্রেনে টিকেট কেটে উঠিয়ে দিই।
আমাদের লাকসাম থেকে তাদের বাড়ি চাঁদপুর যাওয়ার জন্য ট্রেনই সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি। না তারা যাবেনা, হাম তাম কাছিরাং বলে বলে আমাকে বুঝানর চেষ্টা করছে। এক সেকন্ডের মধ্যে তাদের প্রতি যে মমতা দেখিয়ে ছিলাম তা চলে গেল। আমি যেখানে তাদের স্টেশনে নিয়ে ট্রেনের টিকেট কিনে কিছু খাবার কিনে দিতাম সেখানে সামান্য একটা এমাউন্ট দিয়ে চলে আসলাম। আসার সময় সে বৃদ্ধের ছল ছল চোখের জল দেখি।
আহা কি করলাম! মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল। সে চোখের জল তো আর মিথ্যে নয়। এর পর তাকে আরো দেখেছি কিন্তু তার মুখোমুখি হওয়ার সাহস হয়নি। অন্য একজনকে দিয়ে আরেকবার সাহায্যও পাঠিয়েছি।
হয়তো তার ছেলে-মেয়ে বিয়ের পর নিজ নিজ সংসারে চলে গেছে। বাবা-মায়ের প্রতি কোন খেয়াল রাখার সময় তাদের হয় না। হয়তো তারা পথে নেমেছে মিথ্যে বলছে দুমুঠো ভাতের জন্য, বৃদ্ধ বয়সে কাজ করতে পারেনা বলে। হয়তো তারা উদ্বাস্তু হয়েছে কোন এক নদীর ভাঙ্গনে। হয়তো তারা প্রতারণা করছে এরকম বৃদ্ধ বয়সেও আমাদের সামাজিক কোন নিরাপত্তা পায়নি বলে।
আচ্ছা তারা যদি প্রতারক হয় (প্রতারকই তো!) তাইলে ঠিক কোন বড় প্রতারকের কাছে বিচার চাইব এ প্রতারণার? অন্যায় দেখেও বিচার না চাওয়াটা কি কোন খুবই অযৌক্তিক?
আমার দৃষ্টিতে আমি বলতে পারি আমি ঠিক কাজটিই করেছি। আমার কাছে তাদের প্রতারণা খুব বেশি অযৌক্তিক মনে হয় নি। (যদিও প্রতারণা প্রতারনা ই)
লেখার সময়ঃ জুন মাস , দিনগুলি মোর।