somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতের টাকা ও পরামর্শে নির্বাচনে আ’লীগের জয়লাভ : ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন

০৫ ই আগস্ট, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্রিটেনের প্রভাবশালী সাপ্তাহিক দ্য ইকোনমিস্টের সর্বশেষ সংখ্যায় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৮ সালে ভারতের পরামর্শ ও অর্থসহায়তা নিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনে জয়লাভ করে ক্ষমতায় এসেছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দেয়াসহ যেভাবে ভারতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, তাতে বাংলাদেশ ভারতের বিভিন্ন বিদ্রোহী গ্রুপের হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারে। কারণ ধারণা করা হচ্ছে, ট্রানজিট সুবিধা ব্যবহার করে ভারত সরকার তার বিদ্রোহীদের দমন করতে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে অস্ত্র পরিবহন করতে পারে।
ইকোনমিস্টের এই প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পত্রিকাটির লন্ডন কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদলিপি পাঠানো হয়েছে। এদিকে এই প্রতিবেদন সম্পর্কে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বীণা সিক্রি বিবিসিকে বলেছেন, এ প্রতিবেদনে যেসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে তা সঠিক নয়। ভারত সরকার বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো প্রতিবাদলিপিতে প্রতিবেদনটিকে ‘ভিত্তিহীন ও মিথ্যাপূর্ণ’ মন্তব্য করে বলা হয়, দ্য ইকোনমিস্টের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রকাশনার জন্য প্রতিবেদনটি লজ্জাজনক। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং ২০০৮ সালের নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচনকে খাটো করা হয়েছে।
নির্বাচনে অর্থ নেয়া প্রসঙ্গে গতকাল বিডিনিউজকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেন, কোনো দেশের কাছ থেকে অর্থ বা পরামর্শ পেয়ে যে সরকার নির্বাচিত হয়নি তা জনগণ জানে। বরং জনগণই সরকার গঠনের জন্য [আমাদের] নির্বাচিত করেছিল। তাই বাংলাদেশের জনগণও এ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে।
বাংলাদেশ এবং সরকারের বিরুদ্ধে দ্য ইকোনমিস্ট সূক্ষ্ম আন্তর্জাতিক প্রচারণা চালাচ্ছে অভিযোগ করে দীপু মনি বলেছেন, সাম্প্রতিক আরেকটি প্রতিবেদনে পত্রিকাটি মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিরোধিতা করেছিল। তিনি বলেন, ওরা বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্ব এবং ২০০৮ সালের স্বচ্ছ ও স্বাধীন নির্বাচন নিয়েও বাজে মন্তব্য করেছিল। সবকিছু মেলালে মনে হয়, ওরা বাংলাদেশ এবং সরকারের বিরুদ্ধে সূক্ষ্ম আন্তর্জাতিক প্রচারণা চালাচ্ছে।
একটি গোষ্ঠী ১৯৭১ ও ১৯৭৫ সালের হত্যাকাণ্ড এবং ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় জড়িতদের রক্ষার চেষ্টা করছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পত্রিকাটি তাদের মুখপত্র হিসেবে কাজ করছে। ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে ট্রানজিট বিষয়ক বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
চলতি সংখ্যার ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনাবাহিনীর লোকজনসহ ঢাকার অনেকেই সন্দেহ করেন, ট্রানজিট ভারতের জন্য একটি নিরাপত্তা করিডোর তৈরির জন্যই হচ্ছে এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে দমনের জন্য বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারত অস্ত্র পরিবহন করবে। যার ফলে বাংলাদেশ ভারতের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারে।
সম্প্রতি ভারতের দুই প্রভাবশালী মন্ত্রীর ঢাকা সফর এবং আগামী মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের ঢাকায় আগমন সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার স্বৈরাচারী হয়ে উঠছে। ২০১৩ সালে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে বর্তমান বিরোধী দল বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা হয়েছে। এদিক বিবেচনা করে ভারত সরকারের বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলা উচিত বলে ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে যদি সুসম্পর্ক বজায় রাখা না হয়, তাহলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য যেসব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, তার বাস্তবায়ন আগামী দিনগুলোতে বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
এদিকে ইকোনমিস্টের ওই প্রতিবেদন নিয়ে ভারতের কূটনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা চলছে। অনেকেই প্রশ্ন করছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে গিয়ে ভারত কি কোনো একপেশে নীতির দিকে অর্থাত্ আওয়ামী লীগের দিকে অতিমাত্রায় ঝুঁকে পড়ছে না? বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক হাইকমিশনার বীণা সিক্রি এ বিষয়ে গতকাল বিবিসিকে বলেন, কূটনৈতিক, রাজনৈতিক এবং বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে বর্তমানে সম্পর্কের উন্নতি ঘটেছে। তবে বিগত বিএনপি আমলেও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এ সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ অব্যাহত ছিল। ভারত শুধু আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখছে—এ অভিযোগ সঠিক নয়। তিনি আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়া যখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখনও সম্পর্ক উন্নয়নের সত্ প্রচেষ্টা হয়েছিল ভারতের পক্ষ থেকে। বেগম খালেদা জিয়া দিল্লি সফর করেছিলেন এবং ভারতীয় শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনাও করেছিলেন। তবে ওইসব আলোচনায় খুব বেশি ইতিবাচক ফল হয়েছিল তেমনটি নয়।
আমার দেশ
১০টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×