আহ! আইসক্রিম ইয়াম্মী!! ইয়াম্মী!!
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
টুনটুন টুনটুন
আইসক্রিম। আইসক্রিম। টুনটুন টিনটিনা টিনাটুন.......
ঠিক দুপুরবেলা মা ঘুমাবার পরপরই শোনা যেত সেই মনোহর ডাক। আইসক্রিম কেনা হোক আর না হোক, দৌড়ে যেতাম জানালায়। আইসক্রিমওয়ালা আর তার চাকা লাগানো, মাথায় ছাতা বসানো গাড়িটা রুপকথার সিনডেরেলার কুমড়ো গাড়ীর চেয়ে কোনো অংশেই কম আকর্ষনীয় ছিলোনা আমার কাছে। সেই দুপুরগুলোয় প্রায়ই ঘুম থেকে ডেকে উঠাতাম মাকে। এই ডাকাডাকিতে কাঁচা ঘুম ভেঙে ডেকে তোলায় মায়ের হাতে মাঝে মধ্যেই আইসক্রিমের বদলে দুচার ঘা জুটে যেতো কপালে। তাতে কি ? শঙ্কটে ডরেনা বীর।
ঠান্ডা হিমশীতল, ঐ কাঠিওয়ালা চকবার বা গোলাপী স্ট্রবেরী কাপে কি যাদু লুকানো ছিলো জানিনা । সেই রঙ, রুপ গন্ধ আজো চোখ বুজলে দেখতে পাই, ঘ্রান পাই সেই হৃদয় জুড়ানো, মন মাতানো। আমাদের পাড়াতেই থাকতেন এক চাইনীজ মহিলা। তিনি বাসায় আইসক্রিম বানাতেন আর পাতলা স্লাইস আলুর চিপস। কাগজের সাবানের প্যাকেটের মত বড় বাক্সে করে তিনি বিক্রি করতেন সেসব আইসক্রিম আর সেলোফন পেপারের প্যাকে আলুর চিপস। মাঝে মাঝে আমাকে ডেকে গান শুনাতে বলতেন আর আমি আমার নাচ,গান আর ছড়ার বদৌলতে ঐ মহিলার উপহার গুলো হস্তগত করতাম। এই নিয়ে বাসায় আমাকে সবাই বেহাইয়া উপাধি দিতেও অবশ্য ছাড়তোনা তবে সেসব আমি কিছুই কেয়ার করতাম না।
তখন থেকেই মনে মনে এক সুপ্ত বাসনা ছিলো আমি বড় হয়ে ঐ চাইনীজ মহিলার মত আইসক্রিম বানাবো আর যদি কোনোভাবে আইসক্রিমওয়ালা চাচুর মত একটা গাড়ী যোগাড় করা যায় তাহলে কে ঠেকায় আমাকে আইসক্রিমওয়ালা হওয়া থেকে?
সে যাইহোক, এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবেনা এই বিশ্বে যে এই লোভনীয় খাবারটি একেবারেই পছন্দ করেননা। যদিও ঠান্ডা লাগালাগি, টনসিল, ফ্যারেনজাইটিস এসবের ভয়ে বা গান গাওয়া, গলা বসে যাবার কারনে আমরা অনেকেই আইসক্রিমের লোভ সংবরন করি বা এড়িয়ে চলি এই মজাদার খাবারটি।
শুনেছি রোমান রাজা নীরো, আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট উনাদেরও নাকি খুব খুব প্রিয় ছিলো আইসক্রিম। খুব জানতে ইচ্ছে করে তারা যখন ছোটো ছিলেন তখনও কি তাদের বাড়ীর সামনে দিয়ে হেঁকে যেত কোনো আইসক্রিম পসারী? টুন টুন টিনা টুন, আইসক্রিম।
সেই ৪০০ খ্রীষ্টাব্দে নাকি পারস্যের মানুষজন শরবৎ, বরফ, ময়দা, গোলাপজল, জাফরানে তৈরী করতো মজাদার সব আইসক্রিম। ধীরে ধীরে আরবরা এই রেসিপির পরিবর্তন আনে। দূধ, চিনি ব্যাবহারে স্বাদ আরো বাড়িয়ে দেয়।
চীনের প্রাচীন কবি ইয়াং ওয়ানলী কবিতায় লিখেছিলেন মুগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা কুবলাই খানের গোপন রেসিপির প্রিয় খাবার ছিলো এই আইসক্রিম। মারকো পোলো তার ভ্রমনকালে এই গোপন রেসিপি শিখে ফেলেন ও নিজ দেশে প্রচলন করেন এই মজাদার খাবারটির।
ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম চার্লসও নাকি গোপন রেখেছিলো এই রেসিপি। কি হিংসুটেই না ছিলো এসব রাজারা। তাও যদি সেসব হতো আজকে দিনের আইসক্রিমের মত মোলায়েম ও সুস্বাদু।
শুনেছি মজাদার আইসক্রিমের প্রচলন শুরু আঠারো শতক থেকে।১৭১৮ সালে প্রথম আইসক্রিমের রেসিপি প্রকাশিত হয় লন্ডনের একটি বইএ। প্রথম আইসক্রিম পার্লার খোলা হয় নিউইর্য়কে ১৭৭৬ সালে। আইসক্রিম বানানোর যন্ত্র নাকি প্রথম আবিষ্কার করেন ফিলাডেলফেলিয়ার ন্যান্সি জনসন নামক এক মহিলা।
যাইহোক প্রথম আইসক্রিম কারখানা বানান জ্যাকব ফুসেল নামক একজন দুধের ব্যাবসায়ী ১৮৫১ সালে। জমাট বাঁধা আইসক্রিমকে পাত্র থেকে তুলাতুলির সুবিধার্থে উইলিয়াম কলেওয়েল প্রবর্তন করেন আইসক্রিম স্কুপের।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার কোন আইসক্রিম তৈরীর আইডিয়াটা। ইতালীর মার্কিওনী ছিলো আমার সেই ঠেলাগাড়ি আইসক্রিমওয়ালা চাচুর মতনই একজন। তার আইসক্রিম খেয়ে অনেকেই নাকি পরিবেশন করা পাত্রটি আর ফেরৎ দিতোনা বা ভেঙে ফেলতো। তাই তিনি বিস্কিট দিয়ে বানালেন এমন পাত্র যেটা ভাঙাচুরা কিছুই করা যাবেনা সোজা পেটের মাঝে চালান দিয়ে দেওয়া যাবে।
তবে কোন আইসক্রিমের কৃত্বিত্তের দাবী নিয়ে নানা দাবীদার আছেন।
আর কাঠীয়ালা আইসক্রিম নাকি একটি বাচ্চার ললিপপ ও আইসক্রিম দুই এর মাঝে একটি বাছাই করার দুশ্চিন্তা দেখেই মাথায় এসেছিলো আইসক্রিম বিক্রেতা ক্রিশ্চিয়ান নেলসনের।
সে যাইহোক এত কিছু আইসক্রিমের সাত কাহনের পর আমি আপনাদেরকে জানাতে চাই একটি সুসংবাদ। শেষ পর্যন্ত আমিও বানিয়েছি আইসক্রিম তবে আমি মোটেই আগের দিনের হিংসুটে রাজাদের মত তার রেসিপি গোপন করতে চাইনা। তাই সবার জন্য জানিয়ে দিলাম আমার বিখ্যাত শায়মা,স আইসক্রিম রেসিপি।
মাত্র তিনটি ধাপে বানিয়ে ফেলুন মজাদার যেমন খুশী তেমন ফ্লেভারের আইসক্রিম।
লাগবে দুধ ১লিটার, কনডেন্সড মিল্ক আধা টিন,ডিম ২টি , চিনি ১কাপ
আইসক্রিম পাউডার ২ টেবল চামচ, খাবার লাল রঙ,লিকুইড গ্লুকোজ,
স্ট্রবেরী এসেন্স আধা চামচ, হুইপড ক্রিম এক প্যাকেট।
১)ডিম চিনি, দুধ ও আইসক্রিম পাউডার একসাথে মিশিয়ে জ্বাল দিতে হবে। চুলায় দিয়ে নেড়ে নেড়ে ঘন কাস্টার্ড বানাতে হবে।
২)কাস্টার্ড ফুটে ঘন হলে নামিয়ে নিয়ে গ্লুকোজ মেশাতে হবে এরপর এসেন্স দিতে হবে।
৩) হুইপড ক্রিম পাউডার ঠান্ডা দুধে বিট করে ক্রিম বানিয়ে এ্যাড করতে হবে।
এবার রেফ্রিজারেটরে রেখে দুঘন্টা পর পর বের করে বিটার দিয়ে ৩০ মিনিটস বিট করতে হবে। ৪ বার বিট করার পর আইসক্রিম খাবার জন্য ১০০% রেডি হয়ে উঠবে।
পড়তে যত কঠিন মনে হচ্ছে বানাতে আসলেই খুব খুব খুবই সোজা।
এখন স্ট্রবেরী এসেন্সের বদলে ভ্যানিলা আর চকোলেট আইসক্রিম বানাতে চাইলে ভ্যানিলা ও কোকো পাউডার মেশাতে হবে।
চেখে দেখুন , কেমন মজা হলো আমার ইয়াম্মী ইয়াম্মী আইসক্রিম?
১২৬টি মন্তব্য ১২৪টি উত্তর
পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন
আলোচিত ব্লগ
ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি
পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন
বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।
ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন
মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?
কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।
এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন
একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!
ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন
ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...
ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।
মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন