somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আরিত্রিকা- দ্যা গার্ল অব শ্যাডো

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আরিত্রিকার সাথে যখন প্রথম আমার দেখা হলো তখন সে বছর উনিশের একটি মেয়ে। হ্যাংলা পাতলা তবে দোহারা গড়ন, চৌকোনো মুখ, একটু ইন্ট্রোভার্ট গম্ভীর লুক, ছোট কপালে এলোমেলো চুলগুলো মাথার উপরে ক্লিপ দিয়ে সাটা।ওর তীক্ষ ও কিছুটা ভেতরে বসা দুচোখের মাঝে জমে থাকা এক গভীর অভিমান ও হতাশা দৃষ্টি এড়ালোনা আমার। কি এক অপরিসীম জেদ আর ক্রোধের মিশেল ছিলো সেখানে অথবা যাকে ঠিক হয়তোবা ক্রোধ বা জেদ বলা যায়না তবে কেনো যেন তাতে এক নির্মম ক্রুয়েলটির অস্পষ্ট ছায়া দেখতে পেয়েছিলাম আমি।

যে কাউকে দেখলেই প্রথমেই তার চেহারা নিয়ে তার ব্যাক্তিত্বের চুলচেরা হিসেবে বসে যাওয়া এ আমার এক বদভ্যাস।এ নিয়ে আমার হেড অফ দ্যা ডিপার্টমেন্টের কাছে ছাত্রজীবনে কম কথা শুনতে হয়নি আমাকে। কোনো রকম কেইস হিস্ট্রি ছাড়া, রোগীকে পর্যবেক্ষন,পর্যালোচনা ছাড়াই প্রথম দর্শনেই তার চেহারা দেখেই তার ব্যাক্তিত্ব বা তার সমস্যা নিয়ে মোটামুটি ৮০% নিশ্চিৎ হয়ে যাওয়া মূলত বাজে অভ্যাস ছাড়া আসলে কিছুই নয়। তবুও সেটাই আমি সচরাচর করে থাকি।

সে যাইহোক, ৪০১ নং কেবিনের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই চোখ তুলে তাকালো আমার দিকে আরিত্রিকা।সাথে সাথেই ফের মুখ ঘুরিয়ে নিলো জানালায়।খুব গম্ভীর মুখে বসে ছিলো সে। সন্ধ্যা নামছে তখন বাইরে । জানালার ধারে একটা চেয়ারে একটু পাশ ফিরে বসেছিলো ও। দুহাত অগোছালে কোলের উপর রাখা। খুব উদাস দৃষ্টিতে দূরে কোথাও আবদ্ধ ছিলো তার দৃষ্টি। । আমি ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। ও তখনও বাইরে তাকিয়ে। অনেকটা শিশুসুলভ দুষ্টুমীতে বাচ্চারা যেমন একটা হাসি লুকিয়ে অন্যদিকে ফিরে থাকে। অদ্ভুতভাবে ওর ঠোঁটে ঝুলে ছিলো ঠিক সেরকমই এক আহলাদী কৌতুক। আমি আবারও চেহারা দেখেই পোস্টমর্টেম করে ফেলার মত আমার বাজে অভ্যাসজনিত কারণে খেয়াল করে ফেল্লাম ওর পুরো মুখের নাক, চোখ, কপাল আর ঠোঁটের বিচারে সব সৌন্দর্য্যটুকুই বিধাতা ঢেলে দিয়েছেন ওর ঠোঁটে। ওর সেই বাঁকানো অঁধরের খুব অজানা অদ্ভুত হাসিটুকু আমার মনে গেঁথে গেলো চিরদিনের জন্য।

চেয়ার টেনে বসলাম ওর সামনে .....
আমিঃ আরিত্রিকা কেমন আছো?
চকিতে ওর মুখ থেকে হাসি সরে গেলো। দুচোখ জ্বলে উঠলো ক্ষুব্ধ বাঘিনীর মত। ক্রোধে হিস হিস করে উঠলো আরিত্রিকা ......
আমি অনন্যা। অনন্যা রাহমান। ডোন্ট কল মি আরিত্রিকা। নেভার এভার... নে.....ভা.....র......... নে....ভা....র...........চিৎকার করে উঠলো ও। এক ঝটকায় উঠে দাঁড়ালো চেয়ার ছেড়ে। বুঝি এখুনি ঝাঁপিয়ে পড়বে সে আমার উপর.......
আমিঃ ওপস স্যরি অনন্যা রাহমান। ভুল হয়ে গেছে। আই এ্যাম এক্সট্রিমলি স্যরি ডিয়ার। প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড। আর কখনও এমন ভুল হবেনা। প্লিজ সিট ডাউন। আই এ্যাম স্যরি। ফরগিভ মি প্লিজ!
আরিত্রিকার দুচোখে তখনও জ্বলছিলো আগুন। ধপ করে চেয়ারের উপর বসে পড়লো সে। জোরে জোরে নিশ্বাস পড়ছে ওর। নাকের পাটা ফুলে উঠেছে রাগে, ক্রোধে ও হতাশায় । এরপর ঝর ঝর করে কেঁদে ফেললো সে। আমি ওর কাঁধে হাত রাখলাম। দুজন নার্স এ মুহুর্তে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো। একজনের হাতে ইনজেকশন সিরিন্জ। আরিত্রিকা চিৎকার করে উঠলো.....

আরিত্রিকাঃ না না ইনজেকশন দেবেন না প্লিজ!! প্লিজ় বিলিভ মি।আই এ্যাম ১০০% ওকে। আমি অনন্যা। আমি অনন্যা রাহমান। আমার বয়স ৩১, আমি মঞ্চে অভিনয় করি। টিভিতে নিয়মিত । সবাই জানে, সবাই চেনে আমাকে। প্লিজ ইনজেকশন দিয়ে আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দেবেন না। লিসেন টু মি প্লিজ়! বিলিভ মি। আমার হাসব্যান্ড নিলয় রাহমান। প্লিজ় কল হিম। সে আপনাদেরকে সব বলবে।অনলি হি লাভস মি অর নোবডি এলস। নোবডি লাভস মি, নোবডি বিলিভস মি। অনুনয় ফুটে উঠলো ওর দুচোখে। চিৎকার করে কাঁদতে থাকে আরিত্রিকা।
প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ.....নোবডি লাভস মি। এক্সসেপ্ট হি। আর কেউ আমাকে দেখতে পারেনা । তারা সবাই আমার বিরুদ্ধে ষড়.........

ততক্ষনে আরিত্রিকাকে পুশ করা হয়েছে। নার্স দুজন ওকে বেডে শুইয়ে দিচ্ছে । কড়াডোজের স্লিপামের তীব্র কার্যকরী প্রভাবে শিথিল হয়ে আসছে তার কন্ঠের দৃঢ়তা। ঢলে পড়লো আরিত্রিকা গভীর নিদ্রার কোলে। সেদিকে তাকিয়ে কেনো যেন বুকের ভেতরটা হঠাৎ মুচড়ে ওঠে আমার। জানিনা কখন নিজের অজান্তে চোখ ভরে উঠেছে জলে। চশমাটা খুলে সকলের অলখে চোখ দুটো মুছে বেরিয়ে এলাম দরজা ঠেলে।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

আমিঃ গুড মরনিং, অনন্যা রাহমান।।কেমন আছেন আজ?
আরিত্রিকাঃ ভালো আছি। খুব ভালো আছি।
ওর চোখে মুখে ঝলমল জ্বলে উঠলো আনন্দ। দৌড়ে এসে হাত ধরে আমাকে টেনে নিয়ে বসালো চেয়ারে। হাসপাতালের সাদা গাউনে এই ভোর সকালে ওকে দেখাচ্ছে একটি সদ্যফোটা শুভ্র ফুল বা ইনোসেন্ট এ্যান্জেলের মত।খানিক থমকালাম আমি। হাতের প্যাড বের করে বললাম।
আমিঃ আজ আপনার ইন্টারভিউ নিতে এসেছি জানেন তো?
আরিত্রিকাঃ হ্যাঁ হ্যাঁ জানি। খুব জানি। বলুন কি জানতে চান, বলুন বলুন। উচ্ছলতায় অস্থির হয়ে উঠলো আরিত্রিকা। ওর হাইপার এ্যাকটিভ এ্যাটিচিউডটাও বেশ খেয়াল করছিলাম আমি।
আমিঃ অনন্যা আপনি কবে থেকে মঞ্চে অভিনয় করছেন?
আরিত্রিকাঃ গালে হাত দিয়ে একটু ভেবে নিয়ে বললো, প্রায় বছর বারো। যখন আমি ইউনিভার্সিটিতে ফার্স্ট ইয়ার তখনই নিলয়ের সাথে প্রথম পরিচয় আমার টি এস সিতে একদিন। আর তারপর ( এ মুহুর্তে লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠলো ওর মুখ) বলা যায় লাভ এ্যাট ফার্স্ট সাইট। আমরা দুজন প্রেমে পড়লাম। হা হা হা জানেন, নিলয় প্রায়ই সেদিনটার কথা বলে।
প্রহর শেষে আলোয় রাঙ্গা সেদিন চৈত্র মাস
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ!
জানেন নিলয় যা কাব্যিক না!!! ওর আবৃতিতে মুগ্ধ হয়েই তো ওর প্রেমে পড়লাম আমি।ওর দরাজ গলার মুক্তকন্ঠের আবৃত্তি শোনেননি তো, শুনলেই বুঝবেন। খিলখিল হাসিতে ভেঙ্গে পড়ে আরিত্রিকা।
আমিঃ নিলয়কে অনেক ভালোবাসেন তাইনা?
আরিত্রিকার চোখ বিস্ময়ে গোলাকার হয়ে যায়!
আরিত্রিকাঃ বাসি মানে!!!! জীবনের যে কোনো কিছুর বিনিময়ে ওকে চাই আমি। দেখেন না আমার বাবা মা, আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব কেউ মানতেই চায়না আমি যে ওকে নিজের পছন্দে ভালোবেসে বিয়ে করেছি। সব সময় তারা লেগেই আছে আমার পিছে। আমাকে ঘরে আটকে রাখে জানেন? বলে আমাকে নাকি ওর কাছে যেতে দেবেনা। বিমর্ষ হয়ে পড়ে হঠাৎ আরিত্রিকা। আমি তাড়াতাড়ি ওর কথার মোড় ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসা করি।
আমিঃ আচ্ছা আপনার জন্মদিন কবে?
আরিত্রিকাঃ ৭ই অগাস্ট!
আমিঃ ওওও দ্যাট মিনস ইউ আর লিও! আর তাইতো আপনি এত দৃঢ়চেতা, সৃজনশীল,কল্পনাপ্রবন আর সফল।
খুব খুশীতে উচ্ছল হয়ে ওঠে আরিত্রিকা।মুখে ফুটে ওঠে ফের সেই রক্তিমাভা আর ঠোঁটের কোনায় সেই শিশুসুলভ আহলাদী সৌন্দর্য্যটুকু। আর এই ফাঁকে আমি মিলিয়ে নেই কয়েকমাস আগে সিনে ম্যাগাজিনে দেওয়া অনন্যা রাহমানের সাক্ষাৎকারটির সাথে আরিত্রিকার দেওয়া সাক্ষাৎকারের হুবুহু মিলগুলি।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

রাত ২টা বেজে ৪৫ মিনিট। আমার বেডরুমের এক কোনে রিডিং ল্যাম্পের আলোয় পড়ছি আরিত্রিকার ডায়েরী।যতই পড়ছি ততই অবাক হচ্ছি! মানুষের জীবন, মানব মনের বৈচিত্রতা, জটিলতা, রাসায়নিক ক্রিয়াকান্ডগুলোর হের ফের সত্যিই আশ্চর্য্যজনক! সিনেমার ঘটনাগুলোকেও বুঝি হার মানায় সেসব।

আরিত্রিকার ডায়েরীর বিশেষ কিছু অংশ-
৩.১১.২০১২
আজ আমার চরম চরম চরম আনন্দের একটা দিন! আমি বিশ্বাসই করতে পারছিনা! আমার প্রিয় মঞ্চ, টিভি ব্যাক্তিত্ব অনন্যা রাহমান আজ আমাদের পাশের ফ্লাটে বাসাটায় উঠলো! উফ দম বন্ধ হয়ে আসছিলো আমার।
এতদিন যাকে টিভি নাটকে চারকোনা বাক্সটার মাঝে দেখেছি। যার সাজ, চোখের আঁকা কাজল, হাঁটা, চলা, কথা বলার স্টাইলে বলতে গেলে পাগল আমি, যার হাত দুটোর কোমলতা, ভঙ্গিমা, ম্যুভমেন্ট দেখে আমি সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারি, সেই অনন্যা রাহমান তাকে আমি রোজ রোজ দেখতে পাবো আমার চোখের সামনেই। উফ ভাবতেই আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। ওহ গড! ইউ আর সো সুইট!! থ্যাংক ইউ গড ! থ্যাংকস আ লট!

১১.১১.১২
আজ কি যে এক আশ্চর্য্য ঘটনা ঘটলো!! কিভাবে তা ভাষায় প্রকাশ করবো জানিনা। আমি কলেজ যাবার জন্য তড়িঘড়ি সিড়ি ভেঙ্গে নামছি নীচে হঠাৎ আমার মুখোমুখি অনন্যা রাহমান। সাথে তার হাসব্যান্ড। এত হাসিখুশি প্রানবন্ত একটা কাপল আমি আমার জীবনে আর কখনও দেখিনি। উফ কি যে সুন্দর লাগছিলো উনাকে!! টিভিতে, নাটকেও কখনও তাকে এত্ত এত্ত সুন্দর লাগেনি কক্ষনও! আঁকাশী রঙটা আমার মোটেও পছন্দ নয়। তবুও উনাকে আজ আঁকাশী শাড়ি্তে দেখবার পর মনে হচ্ছে ঐ রঙটাই আমার সবচাইতে প্রিয়। এমন আঁকাশী রঙ শাড়ি আর কমলা ব্লাউজে আমি নিশ্চিৎ আর যে কাউকেই একটা জ্যান্ত পেত্নীর মত লাগতো। কিন্তু শুধু উনি পরেছেন বলেই তাকে দেখাচ্ছিলো যেন রুপকথার রাজকন্যা। নাহ আজ থেকে আমি আমার সব জামা কাপড় শুধু আঁকাশী রঙই চুজ করবো। ওহ বলতে ভুলেই গেলাম উনি আমাকে দেখেই কি মিষ্টি করে যে হাসলেন!!! সাথে সাথে তার পেছন থেকে আবার উঁকি দিলো তার হাসব্যান্ডটাও! আমি তো লজ্জায় শেষ! কত ইচ্ছে ছিলো তাকে বলবো যে আমি তার একজন বিশাল বিশাল বিশাল ফ্যান!!! কিন্তু শেষে লজ্জায় আর তা বলাই হলোনা।:(

১.১২.১২
ও মাই গড! আজ সকালে কার মুখ দেখে যে উঠেছিলাম আমি!!! কলেজ থেকে বাড়ি ফিরেই দেখি অনন্যা রাহমান আমাদের বাসার ড্রইং রুমে। মার সাথে কথা বলছে। আমি তো পুরোই থ! এ দেখি মেঘ না চাইতেই জল! মার অফিস আজ ছুটি ছিলো।আমাকে ঢুকতে দেখে মা কাছে ডাকলেন। উনি আমাকে পাশে বসিয়ে বললেন, কি যে মিষ্টি মেয়ে!! জানতে চাইলেন আমি কি পড়ছি। ছি ছি কি লজ্জা !!! আমি তো জবাব দিতেই পারছিলাম না।উনার গা থেকে কি যে মিষ্টি একটা পারফিউমিক এ্যারোমা আসছিলো!! আমি নিশ্চিৎ জানি সেটা তার নিজের গন্ধ!! পৃথিবীর কোনো পারফিউমেই তা হয়না। আমি মনে মনে অবাক হয়ে ভাবি একটা কথা, যদিও জানি যে কেউ সেটা জানলেই ঠিক ঠিক আমাকে বদ্ধ উন্মাদ ভাববে। তবুও আমি জানি সেটাই সত্যি। সত্যিটা হলো,আমার কেনো যেন মনে হয় আমি বড় হয়ে ঠিক তার মত হয়ে যাবো! মানে এখন যেমন আছি তা না। আরও বড় হতে হতে আমার এক আশ্চর্য্য রুপান্তর হবে।একদম পূর্নাঙ্গ তরুণী হবার সাথে সাথে আমি বদলে গিয়ে ঠিক তার মত অনন্যা রাহমান হয়ে যাবো। ঠিক তার মত! কথা বার্তায়, মননে, সৃজনশীলতায়, চলনে বলনে, কাজে কর্মে।সব কিছুতে!!! সব!!! আঁকাশনীল শাড়ি পরবো আমি আর কমলা ব্লাউজ অথবা আজ যে সবুজ হলুদে মোটা পাড়ের তাঁতের শাড়ি পরেছেন উনি। ঠিক তেমনি। আমি ঠিক তার মত হতে চাই। আমার হঠাৎ খুব মন খারাপ লাগছে। কেনো আমি এমন একজন সাদামাটা আমি হলাম! কেনো আমার জীবনে নেই কোনো বৈচিত্র! অনন্যা রাহমান ! চারপাশে ঘিরে চলে তাকে মন্ত্রমুগ্ধ ভক্তের দল!! আর আমি নিজেই কি তার কম ফ্যান!!! কেনো বিধাতা আমাকে অনন্যা রাহমান করে বানালেন না!:(

২২.১২.১২
আমার কিচ্ছু ভাল্লাগেনা। কেনো যে এত রেগে যাই হুট হাট! সব্বার উপর মেজাজ খারাপ হয়। সেদিন মায়ের সাথে কি বাজে বিহেবটাই না করলাম! আচ্ছা অভিনয় কি খারাপ! তাহলে অনন্যা রাহমানের এত নাম ডাক হলো কিভাবে? এত শত মানুষ যে তাকে চেনে, তাকে এত সন্মান দেয় সেতো তার অভিনয় ব্যাক্তিত্বের জন্যই! নাকি অন্য কিছু! তা না মা এমন ভাব করলেন আমার অভিনয় শেখার শখটা শুনে যে এটা পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য্য মার্কা কোনো বিশাল অপরাধ! ধ্যাৎ আমাকে কেউই বোঝেনা। কোথাও কেউ নেই আমার মনের একটা কথাও শুনবার জন্য। মাঝে মাঝে মনে হয় সুইসাইড করি! তাহলেই ঠিক শিক্ষা হবে সবার! বিশেষ করে মা বুঝবেন আমাকে কষ্ট দেবার মজা।

৭.১.১৩
হা হা হা আজ তো আমি হাসতে হাসতেই শেষ! এটা আমার এক মহা সেক্রেট ! জীবনেও কাউকে বলা হবেনা হয়তোবা ! হা হা হা হা একা একা আজকে লুকিয়ে যে কত্ত হেসেছি! এত মজার একটা ঘটনা অথচ শেয়ার করার কেউ নেই। বিধাতা অনেক দিক থেকেই আমাকে বঞ্চিত করেছেন। আমার যদি একটা ছোট বোন থাকতো।তার সকল চাওয়া পাওয়া আর ইচ্ছেগুলো আমি পূরণ করতাম!!! অথবা একটা বড় বোন যার কাছে আমি মনের অর্গল খুলে দিতে পারতাম! আহা অথবা একটা ভাই ! এই একা একা সব অনুভুতি শেয়ার করার জন্য কেউ নেই আমার !! কেউ না!! কেউ না!!! মাঝে মাঝে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে আমার!

৯.১.১৩
সে যাইহোক সেদিনের মজার ঘটনাটা আমার ডায়েরীর সাথেই শেয়ার করে ফেলি। অনেক অনেকদিন পর কখনও ডায়েরীর পাতা খুলে ঠিক ঠিক অনুভব করতে পারবো এই মজার মুহূর্তগুলি। হা হা হা ভাবতেই হাসি পাচ্ছে! সেদিন দুপুরে ঘুম ঘুম চোখে ফোন ধরে নিলয় রাহমানের হ্যালো হ্যালো করার মজাটুকু ভুলতেই পারছিনা আমি। হা হা হা হা ! আননৌন কল দেখে নিশ্চয় খুব ভাবনায় পড়েছে সে তারপর!!! হা হা হা !!! এত্ত হাসি হেসেছি আজ!!! মনে পড়ছে স্কুল থেকে ফিরেও এমনি সব নিঝুম দুপুরে ছোট থাকতেও বুয়ার ভাতঘুমের সুযোগে কত যে কান্ড ঘটাতাম একসময়! সেসব এখন সোনালী স্মৃতি! থ্যাংক গড! অন্যদের মত আমার মা বাসায় থাকেনা। নইলে সব কিছুতেই থাকতো তার পই পই বারণ অন্য আর দশটা ছেলেমেয়েদের বাবা মায়ের মত! যাক বাবা, অন্তত আমার একা থাকার দুষ্টুমীর সময়গুলোতে অফিসে থাকেন মা।
সকাল সন্ধ্যা ব্যাংকের জব নিয়েই হিমসিম খান তিনি আর বাবার দেখা পাওয়া তো ভাগ্যের ব্যাপার! দিনরাত টাকার পেছনে ছুটতে ছুটতেই ক্লান্ত তিনি! হা হা হা নিলয় রাহমান, কেমন মজা! কি ভেবেছিলে তুমি আমার কল পেয়ে? নিশ্চয় ভেবেছিলে তোমার কোনো প্রাক্তন প্রেমিকা ! হা হা হা! ভাগ্যিস অনন্যা রাহমান দেশের বাইরে গেছে নইলে এই মজার ঘটনাটুকু ঘটাতে সাহসই পেতাম না আমি। হা হা হা , হা হা হা !!!!!

২৫.১.১৩
রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে আমার! মা ঠিকই বলেন নাটুকে মেয়েরা আসলেই নাটুকেই হয়! সবকিছুতে ঢঙ। আজ বিকেলে এমন ঢং করে তিনারা দুজন বারান্দায় বসে চা খাচ্ছিলেন! দেখে যেন মনে হয় উনারা নাটক করছেন! যত সব আদিখ্যেতা! আরে বাবা এত প্রেম তো বাইরে এসে দেখানোর কি আছে রে! তোদের ঘর দুয়ার নেই! যা না ঘরে গিয়ে দুয়ার এটে ঢং দেখা! আমাকে বারান্দার ফুলগাছে পানি দিতে দেখেও দেখিয়ে দেখিয়ে হেসে হেসে গান গেয়ে দুজনের রং ঢং দেখানোর দরকার কি? যত্তসব!

১৩.২.১৩
কাল ভ্যালেনটাইন ডে! আমার ভীষন মন খারাপ! আমার সব বান্ধবীরা কাল সারাদিন কত প্লান করছে! আমার কোনো ভ্যালেনটাইন নেই। আমার খুব কান্না পাচ্ছে! কিন্তু আমার কান্না দেখবার, আমাকে সান্তনা দেবার কেউ নেই।
মরে যেতে ইচ্ছে করছে আমার। আমার কেউ নেই কেনো? কেউ আমাকে ভালোবাসে না । কেউ না । কেউ না । কেউ না।

১৪.২.১৩
উফ!! আজকের এই ভ্যালেনটাইন ডের সকালটা এইভাবে শুরু হবে কে জানতো? উফ! উফ! কি যে ভালো লাগছে! আনন্দে চিৎকার করতে ইচ্ছে হচ্ছে আমার! ভাবতেই পারছিনা আমার ভেতরে এত প্রেম, এত ভালোবাসা, এত কেয়ার কোথায় লুকিয়ে ছিলো! কাল রাত ১২টা বেজে এক মিনিটে আমি আবারও ফোন দিয়েছিলাম নিলয় রাহমানকে! অনেক সাহস করে উইশ করেই ফেলেছি তাকে!!! ইশ যদি না করতাম। ভয়ে যদি কথাই না বলতাম সেদিনের মত তো সারাজীবনের আক্ষেপ থেকে যেত আমার! কখনও জানাই হতনা ভালোবাসা কত সুন্দর! নিলয় তুমি অনেক অনেক ভালো ! অনেক অনেক লক্ষী একটা ভালোবাসার মানুষ তুমি! কত্ত সুন্দর করে এক্সেপ্ট করলে আমার উইশ তুমি! আমি তোমাকে ভালোবাসি নিলয়! তুমি আর কারো নও শুধুই আমার! নোবডি ক্যান টেক ইউ এ্যওয়ে ফ্রম মি!
অনন্যা রাহমান এখন কি একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে সুইডেন গেছেন। আমি চাইনা সে আর কখনও ফিরে আসুক! হে খোদা তুমি তাকে ফেরার পথে প্লেন ক্রাশ করে মেরে ফেলো! প্লিজ প্লিজ প্লিজ!!!! খোদা আমি জানি এমন চাওয়াটা খুব খারাপ! কিন্তু তুমি তো জানো আমি খারাপ মানুষ না আমি শুধু এই একটা চাওয়াই চাইছি তোমার কাছে। প্লিজ খোদা আমার উপর একটু সদয় হও।

২৮.২.১৩
আমি জানি আমি নিলয়কে কতটা ভালোবাসি আর নিলয় সেও আমাকে ঠিক আমার মতই ভালোবাসে। ইয়ে হি রিয়েলী ফিলস ফর মি। নইলে ভ্যালেনটাইন ডে তে সে আমাকে ওমন একটা লাল টুকটুকে গোলাপ উপহার দিলো কেনো? কেনো সে সিড়িতে আমাকে দেখা মাত্র ওমন সুর করে উইস করলো হ্যাপী ভ্যালেনটাইন ডে? আর তাছাড়া সেদিন সে আমাকে লিটল প্রিন্সেস বলেও ডেকেছিলো। আমি ওর চোখের ভাষা ঠিক ঠিক পড়তে পারি। আই নো ইউ অলসো লাভ মি আ লট নিলয়! আই লাভ ইউ টু নিলয়! মাই সুইট হার্ট। আই লাভ ইউ আ লট!

৯.৩.১৩
আমার সবকিছুই আজকাল অনেক রঙ্গীন লাগে! হা হা হা মানুষ বলে প্রেমে পড়লে নাকি মনে রঙ লাগে! আমার হয়েছে তাই। হা হা হা । আমি খুব গোপনে টাকা জমাচ্ছি। কেনো সেটা কাউকে বলবোনা।কখনও না।

১৪.৪.১৩
আজ খুব ভোরে ওদের বাসায় পারসেল এলো। মানে কাল বিকালেই এসেছিলো কিন্তু সে সময় ওরা বাসায় না থাকায় দারোয়ান আজ ওদের বাসায় পারসেলটা সকালে পৌছে দিয়েছে।নিলয় নিজেই দরজা খুলেছে। আমি আমাদের বাসার ছোট্ট কি হোলটা দিয়ে সব দেখেছি। পারসেলটা পেয়ে ওর মুখটা কি একটু অবাক হয়েছিলো? নাকি ভয়ে আৎকে উঠেছিলো! ধ্যাৎ কিহোলটা একদম ভালোনা । পরিষ্কার কিছুই দেখা যায়না। ধ্যাৎ! কিন্তু সবচাইতে মজা ছিলো যখন বেলের শব্দ পেয়ে নিলয়ের পিছে অনন্যা রাহমানকেও দেখা গেলো! হা হা হা যখন তারা দেখবে পারসেলটা খুলে যে একটা মেরুন লালরঙ পান্জাবী, খুব খুব যত্ন করে কেনা, খুব বেছে বেছে, ওর চেয়ে আর একটাও ভালো ঢাকা শহরে নেই আর শুকনো গোলাপের পাপড়ি আর সেই চিঠি। যে পাপড়িগুলো এক দুঃখিনী রাজকন্যার গোপন ভালোবাসায় তিলে তিলে শুকিয়েছে। যে চিঠিতে সে উজাড় করে দিয়েছে তার সকল ভালোবাসার কথা! আজ অনন্যা নিজেই বুঝে যাবে তার নিলয় আসলে আর তার নেই। সে এখন অন্য অনন্যার! আমি সেই অনন্যা রাহমান!

২০.৫.১৩
হ্যাঁ আমিই অনন্যা! নিলয় আর কারো নয়। শুধুই আমার। ওর জন্য আমি প্রয়োজনে বাড়ি, ঘর আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব সব ছাড়তে পারি। আজ নাকি আমার বার্থ ডে। কি আশ্চর্য্য ! খুব ভোরে আমার বাবা নর্থ কোরিয়া থেকে ফোন দিয়ে উইশ করে জানালো! আমি তো অবাক! আমি বললাম, বাবা তুমি কি পাগল হলে! বিজনেস বিজনেস করে করে তোমার মাথা গেছে বাবা। আমার বার্থডে ৭ই আগস্ট! বাবা সেটা শুনে হো হো করে খুব হাসলেন। বললেন আমার উপর খুব রাগ করে আছিস তাইনা মা?আমি ঠাস করে ফোন রেখে দিলাম! ওরা কেনো এমন করে! ওরা কেনো বুঝতে পারছেনা আমার বার্থডে আসলেই ৭ই অগাস্ট।
ফেসবুক খুলে মাথাটা আরও আরও গরম হলো। এত এত নোটিফিকেশন। দুদিনের চেনা। জন্মে যাদের সাথে দেখাও হয়নি চর্মচক্ষুতে তারাও সব হ্যাপী বার্থডে লিখে লিখে ওয়াল ভরে ফেলেছে। রাগে গা জ্বলে গেলো আমার। নিজের উপর বিরক্তও হলাম একটু। কেনো যে এতদিন ঠিকঠাক বার্থডেটা রিচেক করলাম না। যাক যাইহোক এবার আর ভুল হবেনা । আমার বার্থডেটা ঠিক করে পালটে দিয়ে ৭ই অগাস্ট ক্লিক করে ওকে করে দিলাম।

১২ই জুন ২০১৩
আজ পাশের বাসার পেত্নীটার সাথে মহা ঝগড়া হয়ে গেলো আমার। কত্তবড় সাহস! আমাকে বলে ............. ও মাই গড! জীবনে কেউ কোনোদিন আমাকে এমন কথা বলার সাহসই পায়নি আর সে কিনা! সে কিনা বলে আমাকে এতটুকু মেয়ে! সে কিনা অবাক হয়ে বলে আমার নাকি অধঃপাত হয়েছে! সে নাকি আমার বাবা মাকে জানাবে তার হাসব্যান্ডকে আমি ডিস্টার্ব করি! কতবড় কথা! আরে তোর হাসব্যান্ড কিরে ! সে তো আমার ! আমার হাসব্যান্ড নিলয়। তোমাকে আমি আর একটাবারও আমাকে এত খারাপ ভাষায় ট্রিট করার সুযোগ দেবোনা ভূতনী সুন্দরী। আমার পথের কাঁটা আমি সরিয়ে ফেলবো। বাই হুক অর বাই ক্রুক! প্রয়োজনে ভাড়াটে খুনী, গুন্ডা জোগাড় করবো আমি। ইশ আমাদের বাসায় একসময় একটা ঠিকা বুয়া ময়নার মা বলেছিলো তার চেনা জানা কে নাকি আছে যে টাকা দিলেই যে কারো মাথা এনে দিতে পারে। কোথায় যে পাই তাকে! আমি আমার ভালোবাসার জন্য সব পারি। সব করতে পারি আমি। নিলয় জানু ডোন্ট ওয়ারী এ্যাট অল। তোমাকে ঐ পেত্নীর হাত থেকে রক্ষা করবো আমি। নিলয় আই লাভ ইউ মাই জান!


এমন হাজারও কিশোরি মনের কাল্পনিক ভালোবাসা, অক্ষম, অপ্রস্ফুটিত আবেগ, ভালোলাগা, মন্দলাগা, রাগ দ্বেষ, হিংসা ও চাপা চপলতায় ভরা লেখনী। পড়তে পড়তে মাথা ঝিমঝিম করছে আমার। খুব সন্তর্পনে বন্ধ করি ডায়েরীর পাতা। দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে । আহারে হতভাগিনী! আমি কি পারবো ওকে সম্পূর্ন সুস্থ করে তুলতে? পারবো কি আমি ওকে ওর স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দিতে? নাহ আমাকে পারতেই হবে। পারতেই হবে আমাকে। মাত্র উনিশ বছরের একটি ফুলের মত মেয়েকে এইভাবে হারিয়ে যেতে দেওয়া যায়না। হেরে যেতে দেবোনা আমি ওকে।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

আমার জীবনপাত্র উচ্ছলিয়া মাধুরী করেছো দান ...............
রাবিন্দ্রিক সুরের রিংটোনটা থামতেই ওপাশ হতে ভেসে আসে, অনন্যা রাহমান স্পিকিং... আমি আরিত্রিকার মনোচিকিৎসক জানতেই রাগে ফুসে ওঠে অনন্যা রাহমান!
জানায় লাস্ট কয়েকটা মাস তার জীবন হেল করে তুলেছে এই বদ্ধ উন্মাদ মেয়েটা।যখন তখন তার স্বামীকে ফোন দিয়ে, তাকে হুমকী দিয়ে, তার জানা অজানা বিভিন্ন মানুষের কাছে তার কুৎসা রটিয়ে, এমনকি ফেসবুকে তার নামে ফেইক আইডি খুলে নিজে সেজে বসেছে যে সে অনন্যা রাহমান। তার বার্থডে, ম্যারিজ এ্যানিভারসারি, তার লাইফ ইভেন্টের হুবুহু কপিক্যাট এই বদ্ধ পাগল মেয়েটা। আরও নানা অভিযোগে তটস্থ করে তোলে সে আমাকে। অনেক কষ্টে শেষ পর্যন্ত তাকে বুঝাতে সক্ষম হই যে, কৈশোরের ভালোলাগা প্রিয় নাট্যব্যাক্তিত্ব ও তার প্রতি তীব্র আকর্ষন ও তার নিজস্ব কিছু গোপন এ্যামবিশান বা ভালোলাগার সফল প্রয়োগ না ঘটায় আর সাথে বাবা মায়ের ব্যাস্ততা, একাকীত্ব ও কল্পনায় ভেসে আরিত্রিকা ভুলেছে আজ নিজেকেই।
শেষ পর্যন্ত চরম মনোবৈকল্য ডুয়েল পারসোনালিটি ও এমনেশিয়ায় পর্যবশিত হয়েছে তার অসুস্থ্যতা। অনেক বলে কয়ে অনন্যাকে বুঝানো গেলো যে, মেয়েটাকে সুস্থ্য করে তুলতে তার এবং বিশেষ করে তার হাসব্যান্ড নিলয় রাহমানের সহযোগীতা একান্ত প্রয়োজন!

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
দীর্ঘ সতেরো মাস মেডিকেশন, কাউন্সেলিং, ফিজিও থেরাপী ও পরিবার পরিজন বিশেষ করে অনন্যা রাহমান ও তার হাসব্যান্ড নিলয় রাহমানের সহযোগীতায় আরিত্রিকা আজ মোটামুটি সুস্থ্য।প্রিয় ব্যাক্তিত্বের প্রতি কৈশোরকালীন তীব্র আকর্ষন, নিজ ইচ্ছার প্রতি বাবা মায়ের বাঁধা দান, অব্যার্থতা, অক্ষমতা, হতাশা সব মিলিয়ে আরিত্রকা যে অসুস্থ্যতার শিকার হয়েছিলো আজ সেসব থেকে সে মুক্ত।
আজ বাড়ি ফিরে যাবে আরিত্রিকা। আমার সামনে চেয়ারে মুখ নীচু করে বসে আছে সে। এতগুলো দিন নিবিড় পরিচর্যা ও ওর কাছাকাছি থাকার কারণে কেমন এক অকারণ মায়া জন্মেছে মেয়েটার উপর আমার। বিদায় কালে ওকে বুকে টেনে নিয়ে মাথায় চুমু খেলাম আমি। বললাম, ভালো থেকো আরিত্রিকা।আরিত্রকা তবুও চুপ করে মাথা নীচু করে রইলো। চলে যাবার সময় দেখলাম ওর চোখ ভরে উঠেছে জলে। এ কদিন ওকে যতবার বলতে গেছি অনন্যা রাহমান বা নিলয়ের কথা ও লজ্জায় মাথা নীচু করে থেকেছে। ও আসলে সুস্থ্য হবার পর এটা নিয়ে খুবই লজ্জিত সে আমি বুঝতে পারি। যাক তবুও শেষ পর্যন্ত ওর সঠিক উপলদ্ধির বিকাশ ঘটেছে তাতেই আমি খুশী। চলে গেলো আরিত্রিকা।বিষন্ন এক গোধুলীতে আমাকে অধিকতর বিষন্ন করে দিয়ে। ওর যাত্রাপথের দিকে তাকিয়ে ওর জন্য কেনো যেন মনটা হু হু করে উঠলো আমার তবুও যে কোনো রোগীর রোগমুক্তি একজন চিকিৎসকের জন্য পরম আনন্দের, কথাটা ভেবে নিজেকে সান্তনা দিলাম আমি।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
পরদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গলো সেলফোনে আরিত্রিকার মায়ের কান্নাজড়িত কন্ঠে একটি দুঃসংবাদ পেয়ে "খুব ভোরে আরিত্রিকার রুমে সিলিং ফ্যানের সাথে আরিত্রিকার ঝুলন্ত লাশ পাওয়া গেছে।"





নেট থেকে পাওয়া আইডেন্টিটি ডিজঅর্ডার বিষয়ক কিছু তথ্যসুত্র-
Click This Link

Click This Link

Click This Link

https://soundcloud.com/thedualpersonality

Click This Link


এই লেখাটা আমার অনেক অনেক অনেক প্রিয় একটা পুচ্চি গল্পকার ভাইয়া অপু তানভীরকে উৎসর্গ করলাম! অনেকদিন আগে তার সাথে কোনো এক কারণে "ডুয়েল পারসোনালিটি" বিষয়ক আলাপ হয়েছিলো, তখন থেকেই আমার মাথায় ঘুরছিলো ডুয়েল পারসোনালিটির ব্যাপারটা।ভাইয়া তুমি অনেক বড় গল্পকার হয়ে ওঠো সেই প্রার্থনা করি।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৪
১৮১টি মন্তব্য ১৮৭টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×