somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বি আ বাডি নট আ বুলি----বুলিং ইন স্কুল ...

০৮ ই আগস্ট, ২০১৯ রাত ৯:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ইদানিং খুব শোনা যায় বুলি বা বুলিং কথাটা। আমার ছেলেবেলায় বা স্কুল, কলেজ লাইফে এমন বলতে গেলে শুনিইনি। বেশ বড় হবার পরে আমার এক আত্মীয়ার মেয়ে এসেছিলো বিদেশ থেকে আর সে তার কাজিনের সাথে গন্ডগোল লাগবার পরে আরেকজন কাজিনকে সাথে নিয়ে তাকে বার বার বিগ বুল্লী বিগ বুল্লি বলে উত্যক্ত করছিলো। সোজা ভাষায় নিজেই বুলি করছিলো। হ্যাঁ যে কোনো মানুষই যদি আমরা আমাদের পিছনে ফিরে দেখি তো দেখবো আমাদের পিছে সেই আজন্মকাল ধরেই দাঁড়িয়ে আছে হাজারও বিগ বুল্লি বা স্মল বুল্লিরা।

আমি ছোটবেলায় বেশ দুষ্টু আর কিউরিয়াস বাচ্চা ছিলাম। তবে দুষ্টুমী বলতে এমন না যে আমি মারদাঙ্গা বা অকারণে বন্ধুদের সাথে গন্ডগোলে জড়িয়ে যাবার মত কিছু করতাম। বরং আমি এই অকারণ গন্ডগোল বা অযথা ঝামেলা থেকে বেশ ভালোই দূরে থাকতে জানতাম। ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হবার পরে হঠাৎ একদিন আমার প্রিয় বন্ধু রুনি আমাকে সবার সামনে ডেকে বললো, এই নাও এই চকলেটটা তোমার জন্য। আমি হাত বাড়িয়ে নেবার সাথে সাথেই সে ঠাস করে এক চড় কষিয়ে দিলো আমার গালে আর তারপর হা হা করে হাসতে লাগলো। সাথে অন্যরাও। আমি হতভম্ব হয়ে হা করে দাঁড়িয়ে রইলাম। ঘটনার আকস্মিকতায় কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। তারপর সে হা হা করে হাসতে হাসতে আমার গলা জড়িয়ে ধরে বললো এটা ফান! আমি মেনে নিলাম বটে তবে ক্ষমা করলাম না বোধ হয়। তারপর সে প্রায়ই এটা সেটা নিয়ে দল বেঁধে হাসাহাসি করতো। যেমন আমার ছবি আঁকার অভ্যাস ছিলো। আমি কোনো ছবি আঁকলেই সে সেটা নিয়ে সে আজে বাজে মন্তব্য করে দলবল নিয়ে হাসতো। আমি ইগনোর করতাম। কিন্তু ক্রমাগত এই মেন্টাল এ্যটাকগুলি আমাকে বিদ্রোহী করে তুললো মনে মনে। তারপর আমি একদিন নিজেই সিদ্ধান্ত নিলাম প্রতিশোধের। আরেকদিন যখন রুনি যথারীতি আমার হ্যান্ড রাইটিং নিয়ে হাসাহাসি শুরু করলো আমি সবার সামনে সপাটে এক চড় কষিয়ে দিলাম ওর গালে এবং ওর বই খাতা টেনে ছিঁড়ে ফেললাম।

আমি জানতাম না বুলি বা বুলিং কাকে বলে। আমাদের আমলে এসব আমাদেরকে কেউ বলে দেয়নি। বুলিং বা সোজা ভাষায় কেউ যখন উত্যক্ত করে আমাদেরকে মা বাবারা শেখান সে সব ইগনোর করতে। নিজের মত থাকতে। কান না দিতে। পাত্তা না দিতে। কিন্তু উত্যক্তকারী মানুষগুলো প্রতিপক্ষ যতই এসব ইগনোর করে ততই শক্তিশালী হতে থাকে। ক্রমাগত চর্চায় এসব উত্যক্তকারীদের মাঝে পৈচাশিক উল্লাসের সৃষ্টি হয়। এই সব পৈচাশিক উল্লাস সীমা ছাড়িয়ে যায় মাঝে মাঝে। তাই প্রয়োজন সাবধানতার। আমাদের দেশে গ্রামে গঞ্জে, এমনকি শহরেও রাস্তাঘাটে মেয়েদেরকে বা দূর্বল মানুষদেরকে প্রায়ই এসব হেনস্থার শিকার হতে হয়। এইসব হেনস্থাকারী মানুষগুলো বেশিভাগ সময়ই দলবদ্ধ ভাবে এই অসুস্থ্য চর্চা গড়ে তোলে।

বুলিং ইন স্কুল বা স্কুল বুলিং ইদানিংকালের আমাদের সমাজের একটি বিশেষ সমস্যার নাম। তবে এই সমস্যার সুত্রপাতের ইতিহাস অনেক পুরোনো। তবে কালের পরিক্রমায় অভিভাবক ও শিক্ষকদের মাঝে এসেছে সচেতনতা। মনোবিদ বা সমাজবিদেরা নানা অপরাধের সূচনা সৃষ্টির কারণ হিসাবেও এই বুলিং টেন্ডেসীকে দাবী করছেন, যার প্রতি প্রকৃতপক্ষেই নজর দেবার সময় এসেছে।


কি এই স্কুল বুলিং ?

ইচ্ছাকৃতভাবে এবং বিনাকারনেই শক্তি প্রদর্শন করে স্কুলে এক বা একদল ছেলেমেয়েরা যখন দুর্বল কারো উপর হিংসাত্মক আচরন করে, উত্যক্ত করে, হেনস্থা করে তাকেই স্কুল বুলিং বলা হয়।
কারনগুলো থাকে এমন-
প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে নিজেদেরকে জাহির করবার ইচ্ছা
ভিক্টিমকে হাসির পাত্র হিসেবে উপস্থাপন করা
অন্যের দূর্বলতা বা অক্ষমতাকে গোপন না করে বরং সামনে এনে মজা করা।
যেমনঃ ব্যঙ্গাত্মক নামে ডাকা, সকলের সামনে অপদস্থ করা, ধাক্কা দেওয়া, লাথি মারা, সামাজিকভাবে বয়কট করা ইত্যাদি ।

বুলিং এর ধরনগুলি থাকে :

১)শারীরিক( Physical ) বুলিং : আচমকা বা অযথাই পা বাড়িয়ে বা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া, অকারণে মারা, খোঁচা দেওয়া, থুতু ছিটিয়ে দেওয়া, চশমা, ঘড়ি, টিফিনবক্স ইত্যাদি জিনিসপত্র জোর করে নিয়ে যাওয়া, লুকিয়ে রাখা, ভেঙে ফেলা, অসংলগ্ন অংগ ভংগী ইত্যাদি।

২) আবেগীয় (Emotional) বুলিং :
কাউকে একঘরে করে রাখা, তার সাথে না মেশা এবং অন্য সহপাঠীদেরকেও মিশতে মানা করা।

৩) মৌখিক (verbal) বুলিং : মিথ্যা অপমানজনক বিবৃতি, অভিযোগ বা গুজব ছড়ানো, ভেংচি কাটা, কটাক্ষ করা, খারাপ ভাষায় সম্বোধন করা।

৪) সাইবার(Cyber) বুলিং : ক্লাসের ফেসবুক গ্রুপ বা অন্য ভারচুয়াল সামজিক মাধ্যমে ভিক্টমের ছবি নিয়ে মজা করা, আপত্তিজনক মেসেজ বা ছবি পাঠানো, ক্লাসের মেসেঞ্জার/ হোয়াটস এপ গ্রুপ থেকে বের করে দেয়া, নিয়মিত বাজে কমেন্ট করা ইত্যাদি।

৫)সেক্সুয়াল(Sexual)বুলিং :অপ্রত্যাশিতভাবে শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্পর্শ করা বা করার চেষ্টা করা, ইংগিতবাহী চিহ্ন প্রদর্শন, কয়েকজন মিলে প্যান্ট খুলে দেয়া, বিভিন্ন আপত্তি জনক স্থানে পানি বা রং ঢেলে দেয়া।

৬)জাতিগত ( Racial) বুলিং : জাত, বর্ন, গোত্র, ধর্ম, পেশা, গায়ের রঙ নিয়েও বুলি করা হয়। এক্ষেত্রে বরিশাল, নোয়াখালী, কুমিল্লার শিক্ষার্থীরা বেশি ভুক্তভোগী। মুসলিম অনেক বাচ্চাদের বাসা থেকে বলা হয় সংখ্যালঘু বিশেষত হিন্দু সম্প্রদায়ের শিশুদের সাথে মিশলে তারাও হিন্দু হয়ে যাবে। এই ভ্রান্ত ধারনা কোমলমতি শিশুরা স্কুলের অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেয় ফলে হিন্দু বাচ্চাটির সাথে কেউ মিশে না। আমাদের দেশে ছেলেদের ক্ষেত্র শারীরিক ( Physical) বুলিং এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে মৌখিক(Verbal),আবেগময়(Emotional)ও সাইবার(Cyber) বুলিং এর হার বেশি।


অপরদিকে বাংলা মিডিয়াম স্কুল গুলোতে বুলিং এর হার সামগ্রিক ভাবে ইংলিশ মিডিয়াম থেকেও বেশি। বাংলা মিডিয়াম স্কুলে শারীরিক ও আবেগী এবং ইংরেজি মাধ্যম স্কুল গুলোয় মৌখিক,সেক্সুয়াল ও সাইবার বুলিং তুলনামূলক বেশি। বিশেষ করে ৯ম-১০ম শ্রেনীতে সাইবার ও সেক্সুয়াল বুলিংই বেশি দেখা যায়।



বুলিং বা বুলিং এর শিকার হয় যারা তাদের ক্ষেত্রে কি ঘটে-

বুলিংয়ে ভিক্টিম শিক্ষার্থী আত্মবিশ্বাস হারায়। ম্রীয়মান হয়ে পড়ে।
স্কুলে যেতে চায়না।
অনেকে আত্মরক্ষার জন্য ছুরি জাতীয় অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করে।
অনেকক্ষেত্রে প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে বুলিংকারীদের আক্রমণ করে।
প্রায়ই বাইরের দেশে দেখা যায় স্কুল গুলোতে গোলাগুলির মত ঘটনাও অনেকেই ঘটিয়ে থাকে।

আইদাহো স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন ক্লিনিকাল সাইকোলজির শিক্ষক ডক্টর.মার্ক ডমবেক এর মতে, বিষন্নতা, অবসাদ, আত্মহত্যা প্রবনতা, রাগ, প্রচুর দুশ্চিন্তা হল এর শর্ট টার্ম ইফেক্ট। এক্ষেত্রে ভুক্তভোগী নিজেকে আলাদা, অপ্রয়োজনীয়, মুল্যহীন মনে করে হীনমন্যতায় ভুগে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থার ভিতর দিয়ে গেলে ওই শিক্ষার্থী অতিরিক্ত সন্দেহপ্রবন হয়, নিরাপত্তাহীনতা ভুগে, অনিদ্রা দেখা দেয় সেই সাথে প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে ওঠে, যা অনেক সময় সাইকোপ্যাথে পরিনত করে ভুক্তভোগীকে। Post Traumatic Stress Syndrome এর মত মারাত্মক মানসিক রোগের দেখা মেলে এদের মাঝে। এমনকি প্রত্যক্ষদর্শীদের ক্ষেত্রেও অনেক সময় একই রকম সমস্যা দেখা দেয়।

মানুষ কেনো বুলি করে? কি মানসিক সমস্যার কারণ থাকতে পারে এর পিছে?

ডিউক ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের সাইকিয়াট্রি এন্ড বিহ্যাভিরিয়াল সাইন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উইলিয়াম কোপল্যান্ডের মতে বুলিংকারীদের ক্ষেত্রে Anti Social Personality Disorder এর হার অন্য যেকোনো গোষ্ঠীর থেকে বেশি। এরা অপরের প্রতি কম সহানুভূতিশীল হওয়ায় নিজেদের সামান্য স্বার্থে কারো ক্ষতি করতে দ্বিধা গ্রস্থ হয় না।ফলে অনেক ক্ষেত্রেই তারা ভয়ংকর ক্রিমিনাল হয়ে ওঠে।

ঢাকার বিভিন্ন স্কুল শিক্ষকদের মতে,এই বয়সের শিশুদের মাঝে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ বা হিরোইজম প্রমানের একটি প্রেরণা থাকে। ফলে স্কুলে বা অন্য কোথাও বুলিং এর শিকার ছাত্রটি অনেক ক্ষেত্রেই পরে স্কুলে অপর শিক্ষার্থীকে একইভাবে আক্রমণ করে বসে।



স্কুল বুলিং প্রতিরোধে কি করণীয়-

প্রথমেই স্কুল শিক্ষক, পিয়ন,আয়া, স্কুল বাস ড্রাইভার, দারোয়ান অর্থাৎ স্কুলের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে এর কুফল সম্বন্ধে পরিষ্কার ধারণা দিতে হবে।

বুলিংয়ের অভিযোগ পেলে অভিযুক্ত শিশুকে সহপাঠীদের সামনে মারধর বা শাস্তি প্রদান না করে তাকে বুঝাতে হবে নয়ত অভিযুক্ত নিজেকে প্রমান করতে আরো বড় ধরনের আক্রমণ করতে পারে।

প্রতি ছ'মাসে অন্তত একবার স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে এ বিষয় থেকে প্রতিকারের উপায় নিয়ে কাউন্সেলিং করা প্রয়োজন।যেমন বুলিংকারীরা সাধারণত প্রত্যক্ষদর্শীদের সামনে ভিক্টিমকে তাদের থেকে দুর্বল দেখতে চায়।ভিক্টিমের ফেসিয়াল এক্সপ্রেশনে ভিক্টিম কষ্ট পাচ্ছে বুঝতে পারলে তারা তা ব্যাপক উৎসাহে আবারো করে। তাই তাদের গুরুত্ব না দিলে তারা উৎসাহ হারিয়ে ফেলে,এমন ছোট ছোট বিষয়গুলো নিয়ে সেখানে শিশুদের সাথে আলোচনা করা হবে।

সেই সাথে টেলিভিশন, রেডিও ও অন্যান্য মিডিয়ার মাধ্যমে এ বিষয়ে আরো প্রচারণা প্রয়োজন। স্কুলে গ্রুপ এসাইনমেন্ট, সাইন্স ফেয়ার ইত্যাদি দলগত কাজ গুলোর ফলে বাচ্চাদের ভিতর বন্ধুত্ব তৈরী হয় যা বুলিং প্রতিরোধে ব্যাপক ভূমিকা রাখে।

উন্নত দেশগুলোতে স্কুল-কলেজ থেকেই ‘সোশ্যাল ইমোশনাল লার্নিং’ (এসইএল) শেখানো হয়। এতে থাকে আত্মসচেতন হওয়ার শিক্ষা; নিজেকে সামলানোর কৌশল; সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি; সম্পর্ক ও যোগাযোগ-দক্ষতা; দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা। এ বিষয়টি আমাদের জুনিয়র আর সিনিয়র ক্লাসগুলোতে শেখানো বিশেষ জরুরী।


এ ছাড়া তরুণদের শেখাতে হবে যেকোনো অনভিপ্রেত ঘটনা, দূর্ঘটনা, বিপর্যয়ের পর কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয় ও দুরূহ স্বাভাবিক অবস্থায় প্রত্যাবর্তন করা যায়। এর মধ্যে রয়েছে সহযোগিতাপূর্ণ ব্যক্তিগত সম্পর্ক; সমস্যা সমাধানে ভালো দক্ষতা; কখন, কোথায়, কার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা নিতে হবে তা জানা।

স্কুলের বিরতির সময়গুলোতে, স্কুল শুরু হবার আগে ও পরে তদারকি জোরদার করতে হবে,

স্কুল প্রাঙ্গণ, করিডোর ও শ্রেণিকক্ষ সিসিটিভির নজরদারিতে রাখতে হবে,

সচেতনতা ও সহমর্মিতা বৃদ্ধির জন্য বুলিংয়ের খারাপ দিক তুলে ধরে স্কুলে নাটক বা অভিনয় মঞ্চস্থ করা যেতে পারে,

বুলিংয়ের ভুক্তভোগীকে শিক্ষক ও স্কুলের কর্মীদের মানসিক সমর্থন দেয়া উঠিৎ

স্কুলের নিয়ম শৃঙ্খলা বজায় রাখতে শিক্ষকদের চাপমুক্তভাবে দায়িত্ব পালনের পর্যাপ্ত ক্ষমতা দেওয়া উচিৎ।

বুলিংকারী এবং বুলিংয়ের ভুক্তভোগীর কাছ থেকে লিখিত বিবরণ নেওয়া জরুরী। যদি সাক্ষী থাকে তাহলে লিখিত বক্তব্য গ্রহণ করা। তাদের আলাদা আলাদা বক্তব্য শুনবে প্রতিরোধ কমিটি। উভয়কে যত্নসহকারে কাউন্সেলিং করা উচিত, যাতে তাদের আচরণে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসে। কাউকেই দোষারোপ না করে এটি যে একটি ভুল বা সমস্যা এটা বুঝাতে সচেষ্ট হতে হবে।

কাউন্সেলিং বা মানসিক এসব প্রবনতাগুলো এর কুফল সম্পর্কে বা ভুক্তভোগীকে মানসিক সাহায্য প্রদানের জন্য প্রতিটা স্কুলে একজন সাইকিয়াট্রিস্ট থাকা বিশেষ জরুরী।

শিক্ষক শিক্ষিকাদেরকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করতে হবে।

স্কুলে এমন একটি বাক্স রাখা প্রয়োজন যেখানে ভুক্তভোগী যে কেউ লিখিতভাবে তার সমস্যার কথা জানাতে পারে। এতে ভীতু বা যারা সমস্যা ফেস করার দ্বিধা দ্বন্দ ভয় ভীতিতে ভোগে তারা কিছুটা হলেও উপকৃত হতে পারে।

সব কিছুর পরে পরিবারকে হতে হবে অকপট, খোলামেলা, সৎ যোগাযোগের আশ্রয়স্থল। তাদের ‘ক্ষমতায়িত’ করতে হবে যেন নিজ দায়িত্বে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে এবং পরিবারে যেন একটি ‘প্রযুক্তিমুক্ত’ (টেক-ফ্রি) সময় থাকে, তেমন সময় পরিবারের সবাই একত্র হয়ে নিজেদের মতন করে সময় কাটাতে পারেন। সোজা ভাষায় বাসাও হতে হবে বুলিং মুক্ত ও সৌহার্দ্য ও সহযোগী মনোভাবাপন্ন।

শিশুদের কোন অবস্থাতেই ক্লাসে কিংবা বাসায় অন্যদের সামনে শাসন করা যাবেনা,কারন তাও একপ্রকার বুলিং।অনেক ক্ষেত্র বাসার বেড়াতে আসা আত্ত্বীয়,সাবলেট ভাড়াটিয়া বা কাজের লোকদের সামনে আমরা শিশুদের শাসন করি। অধিকাংশ সময় আমাদের অনুপস্থিতিতে তারা সেগুলো বলে বাচ্চাদের উত্তক্ত করে। বাবা মাকে বাসায় শিশুদের সাথে আরো বন্ধুসুলভ হতে হবে যাতে সে অকপটে সব কথা আপনার সাথে শেয়ার করতে পারে।

স্কুল বুলিংয়ের দীর্ঘ মেয়াদী প্রভাবে আমাদের অনেকের মাঝে আজ আত্মবিশ্বাসের অভাব, হীনমন্যতা আর হাজারো মানসিক সীমাবদ্ধতা তৈরী হয়েছে।অনেক সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থী স্কুল ছেড়ে দিচ্ছে কিংবা খারাপ ফলাফল করে হারিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। অথচ হাসিখুশি মন ও সুস্থ্য সুন্দর শাররিক বিকাশ মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে বহুদূর। দেশ জাতি ও সমাজের উন্নয়নে বড় প্রয়োজন একটি সুস্থ্য সুন্দর প্রজন্মের।


সবশেষে কিছু কথা মনে রাখতে হবে আমাদের আজকের শিশু কিশোরদেরকে-

একজন বুলিং এর শিকার হওয়া শিশু বা কিশোর কিভাবে বুলিং হ্যান্ডেল করবে এটাই প্রথমে শিখতে হবে বা শিখাতে হবে তাকে। গবেষকেরা প্রথমেই নজর দিয়েছেন যেই শিশুটি বুলিং এর শিকার হয় তার প্রতি। খুব ছোটবেলায় শিশুরা মারামারি করে ঝগড়া করে এসব খুব স্বাভাবিক প্রবৃত্তি কিন্তু শিশুর ১১ থেকে ১৫ বছর বয়সটাতে একক বা দলবদ্ধ আক্রমন তা হতে পারে শাররিক বা মৌখিক তা তার মানসিক বিকাশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর পরবর্তিতেও শিশু কিশোর বা তরুনেরা বুলিং এর শিকার হতে পারে। কাজেই এসবে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে না ফেলে কিংবা ভেতরে ক্রোধ জমিয়ে না রেখে নিজের কাজে এগিয়ে যেতে হবে। তাই

গবেষক ও মনোবিজ্ঞানীদের এডভাইসে প্রথমেই বলা হয় ফরগিভ বা ক্ষমা ।

সেটা না পারলে এভোয়েড।

কিন্তু এ এভোয়েড বা এড়িয়ে যাওয়া বিষয়টা ভুক্তভুগী বা ভিকটিমকে মাঝে মাঝে আত্মবিশ্বাসহীন করে তোলে। অথবা তার মাঝে ক্ষোভ ক্রোধ বা প্রতিশোধের স্পৃহা জাগিয়ে তোলে।

কাজেই পরামর্শ -

১। কেউ যদি তোমাকে ব্যঙ্গ করে, উপহাস করে, তোমার অক্ষমতা নিয়ে হাসি তামাশা করে- মনে রেখো তোমার অক্ষমতা বা অদক্ষতা বা যে কোনো দূর্বলতা তোমার ফল্ট বা ভুল নয়।

২। আত্মবিশ্বাস বাড়াও।

৩। নিজেকেই রক্ষার ঢাল তৈরী করো। একটা কাগজে নিজের গুড কোয়ালিটিগুলোর তালিকা বানাও। তুমি কিসে ভালো? অংকে? ইংলিশে নাকি বাঁশি বাজনায়? নাকি তুমি খুব ভালো গাইতে পারো? সে বিষয়গুলি নিজেই বের করে আনো। এইবার তোমার যাদু। এটাই তোমার ঢাল। এটাই তোমার যাদুর দন্ড।

৪। অন্যের সাহায্যও নেওয়া যেতে পারে। খুঁজে বের করো তোমার মনের মত বন্ধুদেরকে যাদের তোমার মত সেইম ইন্টারেস্ট আছে। যারা তোমাকে প্রশংসা করবে। তুমি যাদের সাথে সুন্ডর সময় কাটাতে পারবে। শিখতে পারবে।

৫। ইগনোর দ্যা বুলি। সবাই এটাই বলবে। ইগনোর করা কঠিন আর তাই তুমি তোমার ভালো বন্ধুদের সাথে থাকবে।

৬। খুঁজে বের করো তোমার ওয়েল উইশার। তোমার বন্ধু, তোমার টিচার কিংবা মা অথবা বাবা। তাদের সাথে শেয়ার কোরো তোমার সমস্যা। তোমার মত বয়স তারাও পেরিয়ে এসেছে তারা তোমাকে সঠিক পরামর্শ দিতে পারবে।

৭। মনে রেখো "A bully will not win in the end." বুলি কখনও জিততে পারে না। তাদেরকে পরাজিত হতেই হয়। বুলি করে যারা তাদের কোনোই ক্রেডিড নেই। এটা ডিসক্রেডিট বা বোকামী বা নিজের অক্ষমতা ঢাকার চেষ্টা। A negative mind will never give you a positive life.

৮। দূর্বলের অস্ত্র গালি দেওয়া, মারপিট করা, নানা ভাবে অন্যকে ছোট করা। বুলি করার মাঝে কোনো বিশেষত্ব নেই।
B.A.D (Bullies Are Dumb)।

৯। একটা শ্লোগান দেখেছিলাম Bullies are thugs that need hugs. এ কথাটা চরম সত্য। বুলি করে যারা ভেতরে ভেতরে তারা আনহ্যাপী। তাদের প্রয়োজন ভালোবাসা, সহমর্মিতা। তাদের সত্যিকারের বন্ধু থাকে না।

১০। সবচাইতে বড় কথা, বুলি করে যারা তারা তোমার ভেতরের শক্তিকে ভয় পায় তাই জোর করে দমাবার ট্রাই করে। তাদের মাঝে হিংসা কাজ করে। বুলি করে যারা তারা তোমার থেকে মানসিকভাবে আসলেই দূর্বল কাজেই জাগিয়ে তোলো তোমার ভেতরের শক্তিকে। পায়ে দলে এগিয়ে যাও সকল বাঁধা। ক্ষমা করে দাও ওদেরকে। পারলে ভালোবাসো। ভালোবাসা দিয়ে বুঝিয়ে দাও ওদের ভুলগুলো। ওদেরকে প্রশ্ন করো
Have you asked yourself why you make others cry?

যাইহোক মনে রেখো তুমি স্পেশাল, তুমি ইউনিক। নিজেকে দূর্বল ভাবার বা নিজের দূর্বলতা প্রকাশের কোনো প্রয়োজন নেই। Be strong and don’t let your mind subject to the negativity.


সকলের প্রতি একটাই চাওয়া - বি আ বাডি নট আ বুলি


References

Houbre, B., Tarquinio, C., & Lanfranchi, J. (2010). Expression of self-concept and adjustment against repeated aggressions: the case of a longitudinal study on school bullying European Journal of Psychology of Education, 25 (1), 105-123 DOI: 10.1007/s10212-009-0005-x

Hutzell, K., & Payne, A. (2012). The Impact of Bullying Victimization on School Avoidance Youth Violence and Juvenile Justice, 10 (4), 370-385 DOI: 10.1177/1541204012438926

Jerome L (2006). Teaching children to ignore teasing: A cognitive behavioural family strategy for dealing with teasing and reactive bullying. Journal of the Canadian Academy of Child and Adolescent Psychiatry = Journal de l’Academie canadienne de psychiatrie de l’enfant et de l’adolescent, 15 (2) PMID: 18392201

Watson H, Rapee R, & Todorov N (2015). Forgiveness Reduces Anger in a School Bullying Context. Journal of interpersonal violence PMID: 26101439

https://www.dhakatribune.com/bangladesh/nation/2018/09/06/unicef-35-of-students-face-bullying-in-bangladesh

স্কুল বুলিং - আর নয় অবহেলা !

সকলের জন্য একটা গান.....
https://www.youtube.com/watch?v=uTU4__ORzDY


উৎসর্গ - হাসান মাসুম ভাইয়া
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১৯ রাত ৯:৪২
৫৯টি মন্তব্য ৭১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×