somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পজিটিভ পাওয়ার অব কনফ্লিক্ট

২৭ শে জুন, ২০২০ দুপুর ২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমার এক কাজিন আছে। তাকে বুয়েট থেকে পাস করতে না করতেই বাবা মায়ের পছন্দে বিয়ে করতে হলো। কাজিনটি ছোট থেকেই খুব বেশি পড়ুয়া এবং বাবা মায়ের বাধ্যগত মেয়ে ছিলো। আর তাই বিনা বাক্যবায়ে বাবা মায়ের কথা মত বিয়ে করে ফেলতে দ্বিরুক্তি করলো না। তার হাসব্যান্ডটিও একজন ইঞ্জিনীয়র তবে স্বদেশ থেকে নয় বৈদেশ থেকে ডিগ্রীধারী। যাইহোক এই সোনার বা হীরার বা মনিমানিক্যসম পাত্র পাত্রীর একে অন্যের যোগ্য বা জুড়ি হবারই কথা ছিলো।

কিন্তু বাদ সাধলো কিছুদিন পরেই হয়ত এই যোগ্যতাই। একই সাথে একই শিক্ষাগত যোগ্যতা আবার দুই দেশের পড়ালেখার মান বা যোগ্যতা নিয়ে অযোগ্যতার ঠান্ডা লড়াই। হাসব্যান্ড বলে "ছিলে তো কুয়োর ব্যঙ। পুরো পৃথিবীর আর কি দেখেছো?" অন্যদিকে আজীবন ফার্ষ্ট হয়ে থাকা আমার বোনটি বলে "টাকা দিয়ে সার্টিফিকেট কেনা তোমার ঐ বৈদেশী ইউনিভার্সিটির সার্টিফিকেটের কি দাম আমার জানা আছে।" হাসব্যান্ড বলে "আহা বৈদেশী মেয়েরা কি স্মার্ট! কি তাদের ফ্যাশন! "অপরদিনে বোনটি বলে, "আসছেন, বৈদেশী মেয়ে নিয়ে, নিজের চেহারা আয়নায় দেখেছো? " সোজা কথা শুরু হলো দ্বন্দ, ঠান্ডা মাথায় লড়াই থেকে একে অন্যকে ছোট করা, হেয় করা, কথায় কথায় হীনমন্যতায় ভোগা ও হীনমন্যতার পরিচয় দেওয়া।

শুধু এ দু'জনই নয় এই দ্বন্দ্ব বা কনফ্লিক্ট, এই দুটি শব্দের অবস্থান নেই এমন কোনো মানুষের জীবনের গল্প বুঝি শোনাই যায় না। এ যেন মানুষের জীবনের অনাকাঙ্খিত অথচ অবিচ্ছেদ্য অংশ। স্বামী- স্ত্রী, ভাই-বোন, আত্মীয়- স্বজন, কর্মক্ষেত্রে কলিগদের সাথে অর্থাৎ ঘরে বাইরে বা কর্মক্ষেত্রে যখন তখন আমরা কনফ্লিক্টে জড়িয়ে যাই। শুরু হয় মানসিক যন্ত্রনা, কাজে অমনোযোগ, দক্ষতার ঘাটতি ও কাজের ক্ষতি আর সুন্দর ভালোবাসার সম্পর্কগুলো তো মুখ থুবড়ে পড়ে। তিলে তিলে ক্ষয় হয়ে যায় সুন্দর সম্পর্কগুলো। এই কনফ্লিক্টে কেউই যেতে চাই না তবুও কনফ্লিক্ট যেন পিছু ছাড়ে না।

কনফ্লিক্ট নানা রকম। সাইকোলজিক্যাল কনফ্লিক্ট বা মানসিক দ্বন্দ্ব, দু'জন বা অনেকগুলি মানুষের মাঝে চিন্তাধারা ও দৃষ্টিভঙ্গির অমিলের কারণে সৃষ্ট হয়। রিলিজিয়াস কনফ্লিক্ট বা ধর্মীয় দ্বন্দ্ব, দু'জন বা অনেকগুলি মানুষের মাঝে ধর্মীয় বিশ্বাসের অমিল ও মতবিরোধ এবং এর ফলে সৃষ্ট হয়। ইনটেলেকচুয়াল কনফ্লিক্ট বা ব্যাঙ্গীয় ভাষায় আঁতেল দ্বন্দ্ব যা নিয়ে কিছুদিন আগে মডুভাইয়া ঠাট্টার ছলে কিছুটা বিদ্রুপাত্মক পোস্ট দিয়েছেন। সোজা কথায় দুজন মানুষের মাঝে পান্ডিত্যের বিরোধ। তাদের ধ্যান ধারণা, সমাজ সংস্কৃতির পার্থক্য! পলিটিক্যাল কনফ্লিক্ট। রাজনৈতিক বিশ্বাস, স্বার্থ মোটকথা ক্ষমতা আরোহনের দ্বন্দ। এছাড়াও অরগানাইজেশ্যনাল বা প্রাতিষ্ঠানিক, স্যোশাল, বা সামাজিক, ফাইনান্সিয়াল বা অর্থনৈতিক নানা রকম দ্বন্দ্ব রয়েছে।

প্রতিষ্ঠানের কাজের ক্ষেত্রে এসব কনফ্লিক্টকে আবার কয়েকটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা যায়। যেমন- লক্ষ্য অর্জনের দ্বন্দ্ব , প্রশাসনিক দ্বন্দ, ফাংশনাল কনফ্লিক্ট, ডিসফাংশনাল কনফ্লিক্ট বা অকেজো দ্বন্দ্ব।এছাড়াও রয়েছে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্ব আসে মানুষের মনের ভেতর থেকে। অর্থাৎ কাজের ক্ষেত্রে তাদের নৈতিক মূল্যবোধ, ধরণ আর ব্যক্তিত্ব থেকে আসে মতবিরোধ এবং তা থেকে তৈরি হয় কিছু সম্ভাবনাময় দ্বন্দ্বের।

কনফ্লিক্ট বা দ্দ্বন্দ্ব কিছু ধাঁপ আছে-
সুপ্তাবস্থা- মানুষ যখন দ্বন্দের ব্যাপারে সচেতন থাকে না।
সচেতনতা শুরুর সময়- মানুষ যখন দ্বন্দের ব্যাপারে সচেতন হতে শুরু করে যে দ্বন্দ্ব বা কনফ্লিক্ট হতে পারে।
অনুভূত অবস্থা- মানুষ যখন দ্বন্দটা ফিল করতে শুরু করে এবং এংজাইটি, স্ট্রেসে ভুগে।
সুস্পষ্টাবস্থা- যখন কনফ্লিক্ট সবার সামনে চলে আসে এবং সবাই দেখতে পায়। বডি ল্যাংগুয়েজ, নেতিবাচক শব্দাবলীর ব্যবহারে দ্বন্দ বা ভবিষ্যৎফল- এটা আউটকাম দ্বন্দ্বের ফলে কি পাওয়া যায়। সুফল নাকি কুফল।

মানুষ যখন কনফ্লিক্টে জড়ায় তখন কেউ কেউ থাকে অমায়িক বা ইতিবাচক মনোভাবাপন্ন।
আবার কেউ কেউ ধরি মাছ না ছুঁই পানি।
কেউ কেউ সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসে।
আর কিছু মানুষ হয় এভোয়েডিং বা নৈর্ব্যক্তিক যারা দ্বন্দ্ব বা ঝামেলা দেখলে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করে, সমাধানের চেষ্টা করে না।
কেউ কেউ থাকে কমপিটিটিভ বা প্রতিযোগী মনোভাব বা টাফ বাটলার। যে কোনো মূল্যে নিজেরটাই বুঝে। কোনোভাবেই হার স্বীকার করে না।


বেশিভাগ ক্ষেত্রে অনমনীয়তা, অসহিষ্ণুতা, অবিবেচনা এসবই দ্বন্দ্বের কারন। এছাড়াও স্বার্থের সংঘাত, মানসিক সংকীর্ণতা, অসৎ উদ্ধেশ্য, অযৌক্তিক ধারণা, যুক্তিহীনতা, স্বেচ্ছাচারিতা, সত্যগোপন, অতি ব্যক্তিত্ব, জাজমেন্টাল হওয়া, অতি প্রতিযোগীতামুলক মনোভাব এসব কারণেও দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়ে থাকে। সহজ ভাষায় দ্বন্দ্বের কারণ আসলে একটাই যে আমরা প্রত্যেকেই আলাদা। প্রত্যেকের ভাবনা, চিন্তা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মাইন্ড সেট আপও আলাদা। আমাদের সকলের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন চাহিদা,মূল্যবোধ, উপলদ্ধি বা নীতি।কাজেই এক সাথে কাজ করতে গেলে এই ভিন্ন পরিবেশ ও ভিন্ন মানসিকতা থেকে আসা মানুষগুলোর মাঝে দ্বন্দ্ব লেগে যেতেই পারে।

তবে ম্যানেজমেন্ট আর এমপ্লয়ীদের মাঝে যে কনফ্লিক্ট সৃষ্টি হয় তার কারনগুলো মূলত Poor Communication বা যথার্থ যোগাযোগের অভাবে কর্মচারী এবং প্রতিষ্ঠান পরিচালকগনের সাথে ভুলবুঝাবুঝির কারণে হতে পারে। এ জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠ কমিউনিকেশন।
Different Interests বা ভিন্ন আগ্রহ বা চাহিদার কারণে প্রতিষ্ঠানের চাহিদা এবং ব্যাক্তি চাহিদার মাঝে দ্বন্দ বাঁধে। প্রতিটা কর্মচারীর মূল উদ্দেশ্য এবং চাহিদা হতে হবে প্রতিষ্ঠানের পক্ষে। Personality Clashes বা ব্যাক্তিত্বের সংঘাতের কারণে সমঝোতা, সহনশীলতা, সমস্যা সমাধানের ইচ্ছা ভিন্নতা পায়। তাই শুরু হয় কনফ্লিক্ট । Poor Performance বা কম দক্ষতা: যখন কোনো এক ব্যাক্তি বা একটি দল দক্ষতায় কম পারদর্শী হয় তখনও কনফ্লিক্টের সূচনা ঘটে। তাই কম দক্ষতা সম্পন্ন মানুষের উচিৎ কনফ্লিক্টে না গিয়ে পরবর্তী কাজের জন্য অপেক্ষা করা।


দ্বন্দ বা কনফ্লিক্টের ফলাফল বেশিভাগ সময়ই নেগেটিভ মনে হয় তবে দ্বন্দ বা কনফ্লিক্টের আসলে কিছু পজিটিভ দিকও আছে।
আর আমার পোস্টের মূল বক্তব্য এটাই। কারণ আমি পজেটিভ মাইন্ডেড এবং আশাবাদী মানুষ। কখনও আশা হারাইনা এবং লেগে থাকি। :) যাইহোক সে কথায় পরে আসছি...... :)

নেগেটিভ দিকগুলো হতে পারে আর্থিক ক্ষতি, সামাজিক বিপর্যস্ততা, মানসিক অস্থিরতা, নৈতিক অবক্ষয়, সংহিসতা সৃষ্টি, সম্প্রীতির ঘাটতি, প্রাণহানির সম্ভাবনা এবং সময়, সুযোগ আর সম্ভাবনার অপচয় ইত্যাদি

কিন্তু

পজিটিভ দিকগুলিতে দেখা যায় দ্বন্দ বা বিবেধের ফলে নানা রকম চেঞ্জ আসে সমাজে, পরিবারে এবং কর্মক্ষেত্রে। চেক এন্ড ব্যালেন্স সৃষ্টি হয়। নিরবিছিন্ন কর্মপ্রবাহ দেখা দেয়। দ্বন্দের ফলে আইডিয়া বাড়ে, ভালো কিছু সম্পর্কে জ্ঞানার্জন হতে পারে, একে অন্যের থেকে কিছু শেখা যায়, আরও ভালো বোঝাপড়া হতে পারে,ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে বা বিশ্বাস বাড়তে পারে। যেমন অনেক সময় অফিসিয়াল মিটিং এ দেখা যায়, এমনকি বর্তমানে ব্লগের নানা রকম আলোচনা, সমালোচনায় দেখা যাচ্ছে একেকটি বিষয় আলোচনার ক্ষেত্রে একেকজন একেক রকম মতামত দিচ্ছে। মতবিরোধ হয়, বিতর্ক চলে। অনেকগুলি মতপার্থক্য থেকেই উঠে আসে সবচেয়ে উপযুক্ত সিদ্ধান্তটি। :) :) :)

আমরা সমাধানের পথ না খুঁজেই দ্বন্দে জড়িয়ে পড়ি। আসলে দ্বন্দ নিরসন বা কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্টের কিছু প্রয়োজনীয় পন্থা রয়েছে যা জানা আমাদের সকলেরই জরুরী। যেমন-

১. ওপেন ডিসকাশন বা মুক্ত আলোচনা- মুক্ত আলোচনা দ্বন্দ বা বিরোধকে জীইয়ে না রেখে অনেকাংশেই মিটমাট করে ফেলতে পারে।
২. কর্মপ্রক্রিয়ায় ট্রানসপারেন্সি তৈরী করা- যে কোনো কাজে স্বচ্ছতা থাকলে দ্বন্দ, বিরোধ কম হয়।
৩. কর্মক্ষেত্রে অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিৎ করা- যে কোনো খটকার চাইতে অবাধ তথ্য প্রক্রিয়া যদি অব্যাহত থাকে তবে দ্বন্দ কম হয়।
৪. যত দ্রুত সম্ভব দ্বন্দের কারণ ও সমাধান বের করা- কারণ খুঁজে বের করে সেই মতাবেক সমাধানের পথ সহজ হয়।
৫. দ্বন্দ জিইয়ে না রেখে সমাধান বের করা- দ্বন্দ থাকলে কোনো কাজেই সুস্থিরতা আসে না কাজেই সমাধান বের করাই ভালো।
৬. দ্বন্দের প্রকৃত কারণ বের করা- সবার আগে জানতে হবে প্রকৃত কারণটি তবেই সমাধান সহজ হবে।
৭. সম্ভাবনার একাধিক দিক বিবেচনা করা - সমাধান সম্ভাবনার একটি নয় একাধিক দিক বিবেচনায় রাখতে হবে।
৮. একক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে না দিয়ে কালেকটিভ মতামত গুরুত্ব দেওয়া - কালেকটিভ মতামতে শক্তিশালী সমাধানটি বেরিয়ে আসে।
৯. ডিসিপ্লিন নিশ্চিৎ করা ও অভিযোগকারীকে গুরুত্ব দেওয়া - যে কোনো দ্বন্দে ডিসিপ্লিন নষ্ট হতে পারে। এ দিকে সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে। অভিযোগকারী এবং অভিযোগের প্রতি যথেষ্ঠ গুরুত্ব দিতে হবে।
১০. জুনিয়রদের মতামত বা আইডিয়া গ্রহন করা- জুনিয়রদের থেকেও অনেক সময় আপডেট সমাধান পাওয়া যেতে পারে।
১১. দ্বন্দ নিরসনে এক পাক্ষিক বায়াজড না হওয়া বা পূর্ব ধারনা দিয়ে শুরু না করাই ভালো - দ্বন্দ নিরসনে নিরপেক্ষতার দিকে সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে।
১২. জাজমেন্টাল না হওয়া- যে কারোরই ভুল হতে পারে। যে কেউ ভুল করতে পারে। জাজমেন্টাল না হয়ে কারণ ও প্রতিকারের ব্যাবস্থা গ্রহন করতে হবে।

দ্বন্দ্ব বা কনফ্লিক্ট সে ব্যাক্তিগত হলে নিজের কিছু করণীয় আছে কিন্তু কর্মক্ষেত্রে এই দায়িত্ব প্রতিষ্ঠান পরিচালকের উপরই বর্তায়।
প্রতিষ্ঠান পরিচালকের বিশেষ করে কনফ্লিক্ট সমাধানে দক্ষ হয়ে ওঠা খুব জরুরী। প্রতিষ্ঠানের সফলতা অনেকটাই নির্ভর করে
প্রতিটি কনফ্লিক্ট তৈরি হয় ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান আর মতামত থেকে। প্রতিটি মতবিরোধের আলাদা যুক্তি থাকে। দ্বন্দের মূল চাওয়াটা কি সেটা দেখতে হবে? কিন্তু সবার আগে যে প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্যকে প্রাধান্য দিতে হবে সে ব্যাপারে কোন দ্বন্দ্ব নেই। কিভাবে কনফ্লিক্টের সমাধান করা হচ্ছে তা লক্ষ্য অর্জনের ইচ্ছা এবং কোম্পানীর সাথে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক স্থাপনে প্রভাব ফেলে। মোট কথা কনফ্লিক্ট নিরসন বা নিয়ন্ত্রনের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ সবার আগে দেখতে হবে।


বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধুমাত্র ১০% বিরোধিতা সৃষ্টির জন্য ভিন্ন মতামত দায়ী। কিন্তু বাকি ৯০% বিরোধিতাই কেবল কথা বলার বিরূপ ধরণের জন্য হয়ে থাকে।এই জন্যই মুখ সামলে চলাটা জরুরী। কথা বলার ধরণ পাল্টে ফেলেই প্রায় ১০০% নিয়ন্ত্রণ করে ফেলা যায় যে কোনো রকম কনফ্লিক্ট। কনফ্লিক্টিং ওয়ার্ডস বা দ্বন্দ সৃষ্টিকারী শব্দ থেকে দ্বন্দের সৃষ্টি হতে পারে। তুমি এটা জীবনেও করোনি, আমার কিছু যায় আসে না, ভালো খুবই ভালো, বেশ করেছো এই সব শব্দ দ্বন্দ বাড়িয়ে তোলে। বরং ইতিবাচক শব্দাবলী আমার ধারণা এইভাবে হলে বা যদি এমন হত, বা আমরা তোমাকে সাহায্য করতে পারি, আচ্ছা আমি আগে ব্যাখ্যা করি, আমি তোমার সমস্যাটা বুঝেছি কিন্তু.... এসব শব্দ দ্বন্দ সৃষ্টির সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। কাজেই কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্টে বাচন ভঙ্গি, শব্দ ও বাক্যের ব্যবহার, অপরের প্রতি সন্মান রেখে কথোপোকথন বিশেষ জরুরী। মোটকথা মেন্টালিটি, এটিচ্যুড আর এপ্রোচ এই তিনটি ব্যাপার আসলে দ্বন্দ সৃষ্টি ও দ্বন্দ নিয়ন্ত্রনের মূলমন্ত্র। এই তিনের সুষ্ঠ নিয়ন্ত্রনই হলো কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্ট! আমাদের এই ব্যাক্তি ও সমাজ জীবনে নানা রকম আপেক্ষিক সত্য ও মিথ্যা বিদ্যমান। শুধু প্রয়োজন সহমর্মিতা, সমঝোতা, আপোষকামীতা এসব মেনে চলা তাহলে আর দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হবে না।

অতি সারল্যপনা ও সহকর্মীর ব্যক্তিত্ব উপলব্ধি করতে না পারার কারণে অনেকেই কর্মক্ষেত্রে নানা রকম মন্তব্য করে থাকে। এই সব মন্তব্য মাঝে মাঝে নিজের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে। অনেক সময় এমন পরিস্থিতিতে চাকরি চলে যাওয়ার কিংবা ছেড়ে দেয়ার পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে। তাই অফিসে কারো সম্পর্কে অন্যের কাছে মন্তব্য করতে গেলে বুঝেশুনে করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে কিছু সহকর্মী থেকে সতর্ক থাকতে হবে। পারলে এড়িয়ে চলা ভালো।

কর্মক্ষেত্রে কনফ্লিক্টে না জড়িয়ে পড়ার জন্য কিছু টিপস আছে। যেমন-
১) বাচাল সহকর্মী থেকে সাবধান থাকা বিশেষ জরুরী। বাচাল সহকর্মী কথা বেশি বলার কারণে নিজের কাজের ক্ষতি হতে পারে যেমনই তেমনি হাড়ির খবর টেনে বের করে তা আবার অন্যের কাছে প্রকাশ করার কারনে মান সন্মান শ্রদ্ধাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়তে পারে। কাজেই এমন সহকর্মী এড়িয়ে চলাই ভালো।

২) বিশ্বাসঘাতক সহকর্মী- কর্মক্ষেত্রে অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি হতেই পারে। বিশেষ করে টিম বা গ্রুপে কাজ করতে গেলে সেই ভুল ত্রুটি মেনে নিয়ে একে অন্যের সহায়তায় কাজ করতে হয়। কিন্তু কিছু সহকর্মী সেসব ভুলত্রুটি এখানে সেখানে লাগিয়ে দিয়ে বিপদে ফেলতে পারে। সাবধান থাকতে হবে তাদের ব্যাপারে।

৩)হতাশাবাদী সহকর্মী - পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছে চির হতাশাগ্রস্থ। সকল কিছুতেই তারা যেন আশাহীন। সবকিছুই তাদের কাছে নেতিবাচক। পৃথিবীর প্রতি হতাশ এবং বীতশ্রদ্ধ এই সহকর্মী দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আপনিও নিজের জীবন অথবা কাজ নিয়ে হতাশায় ডুবে যেতে পারেন। কাজেই সাবধান।

৪) সমালোচক সহকর্মী- অফিসে এমন মানুষ থাকেই যারা নিজের কাজ হোক না হোক, অন্যের সমালোচনা তার করা চাই-ই চাই। সেটা সহকর্মীর সামনে হোক বা পেছনে হোক। এমন সহকর্মী থাকলে কাজের পরিবেশ অবধারিতভাবেই হয়ে ওঠে দূষিত।

৫) অকর্মা সহকর্মী- ইনি হলেন সেই ব্যক্তি যিনি সুযোগ পেলেই কাজ ফাঁকি দেন এবং তার অতিরিক্ত কাজের বোঝা আপনাকেই নিতে হয়। আগে থেকে না জানিয়েই গুরুত্বপূর্ণ মিটিং এর দিন অনুপস্থিত থাকাতেও তিনি পটু। তার সাথে কাজ করতে গেলে প্রচণ্ড রকম বিরক্ত হতে হয়।

৬) ক্রেডিট-চোর সহকর্মী- নিজে কিছুই না করে সুযোগ মত অন্যের কাজ বা ক্রেডিটকে নিজের বলে চালিয়ে দেয়। ভীষন বিরক্তিকর ও ক্ষতিকর এসব মানুষেরা।

৭) রাজনীতিবিদ সহকর্মী- রাজনৈতিক ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কাজ কর্ম করে চলা সহকর্মী। কাজের চাইতে ক্ষমতার অপব্যবহার কর্মক্ষত্রের পরিবেশ নষ্ট করে।

হা হা হা যাইহোক টিপস গেলো.....একটা কথা বিশেষ জরুরী। কনফ্লিক্ট বা দ্বন্দ কথাটার মাঝেই নেতিবাচকতা রয়েছে কিন্তু ইতিবাচক উপায়েই এর নিয়ন্ত্রন বেশি কার্য্যকরী। কনফ্লিক্টে সদা ও সর্বদা শান্ত থাকাটাই সমীচীন। অন্যকে কথা বলতে দিতে হবে। কেউ যদি রাগে ক্ষোভে চিৎকারও করে তবুও সেই মুহুর্তে কোনো তর্কে জড়িয়ে পড়া ভুল। অপরপক্ষের কথা শুনতে হবে। অন্য মানুষটির দৃষ্টিভঙ্গি কি বুঝতে চেষ্টা করতে হবে ও তার কথা বিবেচনা করতে হবে। ইয়েস বা হ্যাঁ কথাটার অনেক শক্তি। হ্যাঁ তুমি কি বলতে চাইছো আমি বুঝতে পারছি। ব্যাক্তিকে বুঝতে দেওয়া সে আসলে তারই দিকে। কেউ অপ্রীতিকর বা কটাক্ষ করে কথা বললে সেখান থেকে সরে আসাই ভালো। নিজের সন্মান নিজে রক্ষা করতে হবে। যদিও কারো অধিকার নেই কাউকে অসন্মান করার। যদি কেউ ভুল করে থাকে তা স্বীকার করে নেওয়াই ভালো। দ্বন্দ নিয়ন্ত্রন বা কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্ট যেমনই জটিল মনে হোক না কেনো অসম্ভব কিছু নয়। সমাধানের ইচ্ছেটি মাথায় রেখে ঠান্ডা মাথায় চেষ্টা চালিয়ে গেলে সাফল্য অবশ্যসম্ভাবী। আর যারা এটা পারেন তারাই কর্মক্ষেত্রে সফলও হন।

এবার আবার ফিরে আসি আবার আমার কাজিন বোনটির কথায়, সেই দ্বন্দ এবং কনফ্লিক্ট নিয়ে সে প্রায়ই আমাদের কাজিন বোনদের সাথে বা ফ্যামিলীর সাথে আলাপ করতো। ইগোর লড়াই, যোগ্যতার লড়াই বা কনফ্লিক্ট তাকে কুরে কুরে খাচ্ছিলো। হাসব্যান্ডের ল্যাপটপ ধরা থেকে শুরু করে তার গাড়ি, বাড়ি, রান্না বান্নায় সময় না দেওয়া সব কিছু নিয়েই উত্তরোত্তর কনফ্লিক্ট বেড়েই চলেছিলো। আমরা তাকে সব সময়ই উৎসাহ দিতাম। নিজের মত চলার পরামর্শ দিতাম। তবে এই কনফ্লিক্ট তাকে একটা সময় পাওয়ারফুল করে তুললো, সে চাকুরীর সাথে সাথে বিদেশে পি এইচ ডি করবার জন্য প্রস্তুত হতে শুরু করলো। যেহেতু পড়ালেখায় সে সর্বদা ছিলো নাম্বার ওয়ান কাজেই বেশি বেগ পেতে হলোনা। এরপর নিজের যোগ্যতায় খুব তাড়াতাড়িই গাড়ি, বাড়ি সবই করে ফেলতে পারলো। পড়ালেখাতে ভালো হলেও সে ছিলো ভীতু প্রকৃতির তাই সে ড্রাইভিং, স্যুইমিং এসব কোনো কিছুতেই আগাতে পারতো না। তবে আমাদের মত কিছু কাজিন বোনদের উৎসাহ আর সাহসে সে সেসবও অনায়াসেই রপ্ত করে ফেললো। তবে সবকিছুর পিছেই ছিলো সেই দ্বন্দ বা কনফ্লিক্টের ধাক্কাটা। সে আজ নিজেও বলে যে দুঃখ বা ধাক্কাটা সে খেয়েছিলো একদিন এই কনফ্লিক্ট হতে তা তাকে পজিটিভ পাওয়ার দিয়েছে নইলে এত সব কিছু তার হত না।

আমার পারসোনাল লাইফে কনফ্লিকের কথা আপাতত বলছি না কিন্তু ব্লগের কিছু কনফ্লিক্ট বা বিরূপাচরণও আমাকে ইতিবাচক শক্তি যুগিয়েছে এবং আজও যোগায়। যখন আমি এই ব্লগে আসি তখন বড়ই অতি আবেগী ছিলাম। একরামুল হক শামীমভাইয়ু বলেছিলো আমি নাকি দিনে দিনে পরিচিত হবার সাথে সাথে আমার আবেগীয় সুন্দর লেখার ক্ষমতা হারিয়েছি। প্রায়ই আমার এ কথা মনে পড়ে। তবে যা বলছিলাম। ব্লগের কনফ্লিক্টের সাথে পরিচয় আমার বলতে গেলে সেই প্রথম থেকেই। সদা ও সর্বদা সকল কনফ্লিক্ট সযতনে এড়িয়ে চলতাম। কিন্তু কনফ্লিক্ট এমনই জিনিস তুমি না জড়াতে চাইলেও কই থেকে যেন ঘাড়ে এসে পড়বে। সেটাই হয়েছিলো আমারও।

প্রথম প্রথম চুপ থেকেছি। মিথ্যে বলবোনা কেঁদে বুকও ভাসিয়েছি। ব্লগে কিছু বাজে মানুষ আজীবন নোংরা ফ্লাডিং করেছে। আজে বাজে মন্তব্যও করেছে। কিন্তু যখন আমার সাথে এমন কিছু হয়েছে তখনই আমি বার বার এই সব নোংরা কার্য্যকলাপ বা দ্বন্দের লড়াই বা কনফ্লিক্ট থেকে পজিটিভ পাওয়ার প্রাপ্ত হয়েছি। এই কনফ্লিক্টগুলো না আসলে আমি হয়ত অনেক চ্যালেঞ্জই নিতাম না। আমি এত নিষ্ঠা ও সময় নিয়ে পেন্সিল স্কেচের চর্চা করতাম না। আমাকে আজ কেউ আকারে ইঙ্গিতে আমার নানারকম লেখাঝোকা, শখ, আমার লাইফস্টাইল বা আমার শিল্পচর্চা নিয়ে বিদ্রুপাত্মক মন্তব্য করলে আমার বড় হাসি পায়। কারন এসব ছোটলোকি কারবার থেকেও আমি আমার ভেতরে সামনে এগিয়ে যাবার এবং নিজেকে উন্নত করবার বড় চ্যালেঞ্জটাই পাই। কাজেই আবারও বলছি, দ্বন্দ বা কনফ্লিক্টের পজিটিভ পাওয়ার আছে যা আসলে নেতিবাচক তো নয়ই বরং দ্বন্দ বা কনফ্লিক্টের পরেই যুগে যুগে এসেছে বেশিভাগ সময়ই পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ইতিবাচক পরিবর্তনগুলো.........

কাজেইয নো মন খারাপ ইন কনফ্লিক্ট বরং কনফ্লিক্ট থেকে চ্যালেঞ্জ নাও। চিন্তা করো, সাহসী পদক্ষেপ নাও। পারলে ভুলগুলো শুধরে নিজের ও অন্যদের জীবনেও আনন্দের সুবাতাস নিয়ে আসো..... :)


The Power of Positive Thinking - Dr. Norman Vincent Peale

7 Core Lessons - #04 WHITEBOARD ANIMATION

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২৮
৬৭টি মন্তব্য ৭১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×