
দুইটি বছর পরে আবার খুলেছে স্কুল ভাই
সেই খুশিতে আজকে মোদের খুশির সীমা নাই.....
লিখছিলাম করোনা তথা লকডাউন পরবর্তীকালীন পাপেট শো অর্থাৎ আমার বাৎসরিক অত্যাবশ্যকীয় কাজের একটি কাজ শিশুদের জন্য পুতুলনাচের স্ক্রিপ্ট "যাচ্ছে গাবু স্কুলেতে দুইটি বছর পরে"। হ্যাঁ উদ্দেশ্য ছিলো স্কুলে গিয়ে বাচ্চারা কি কি সাবধানতা অবলম্বন করবে, দূরত্ব রেখে বসবে, মাস্ক পরবে, হাত স্যানিটাইজ করবে ইত্যাদি ইত্যাদি এবং ইত্যাদি।
মানুষ তার অভিজ্ঞতালদ্ধ জ্ঞানের উপর নির্ভর করেই জ্ঞান দিতে পারে বা লিখতে পারে বা কিছু বলতে পারে। মানুষ অবশ্য অভিজ্ঞতা ছাড়াও শুধুই কল্পনার ডানায় ভেসেও লিখতে বা বলতে পারে কাল্পনিক কাহানী। সেও আমি বেশ ভালোই পারি। কিন্তু আমার জীবনের সকল অভিজ্ঞতা, সকল কল্পনা বিলাস বা সকল কাল্পনিক সত্য মিথ্যা মিলায় গাল-গপ্প করার, বলার, লেখার বিদ্যা বা প্রতিভা সবই মাঠে মারা গেলো যখন আমি স্বশরীরে দুইটা বছর পর স্কুল চত্বরে পা রাখলাম।
আমি নার্সারীতে পড়াই। স্কুলের প্রথম ক্লাসটাই প্লে গ্রুপ আর দ্বিতীয়টা নার্সারী। কিন্তু এ বছর প্লে গ্রুপ না করা জীবনেও স্কুলে না আসা ডিসিপ্লিনের নাম গন্ধ না জানা বা মা বাবা ছেড়ে জীবনেও এক মুহুর্ত না থাকা বাচ্চাগুলোই দুই দুইটা বছর পর নার্সারীতে আসলো। তাদের কান্ড কীর্তি চালচলন কি হতে পারে এবং তারা আমাকেশুদ্ধ পুরো স্কুলকেই কি কি বিপদে ফেলতে পারে তাতে আমার এত বছরের অভিজ্ঞতা এবং কল্পনা শক্তিও বিফলে গেলো।
গাধার কান ও প্রথম দিন ক্লাসে আমি এবং বাচ্চারা

আগের দিনের পাঠশালাতে পন্ডিৎমশাইরা নাকি ছাত্রদের কান ধরে টান দিত, কান মুলে দিত, কান টেনে প্রায় ছিঁড়েই দিত। এমনই শুনেছি কত। গল্পের বই এ পড়েছিও কত। পাগলাদাশুর কান তো মনে হয় পন্ডিৎমশায়ের টানে অর্ধেক ছিড়েই গিয়েছিলো। সেসবও ঢের শুনেছি। কিন্তু ছাত্র ছাত্রীরাই টিচারের কান টেনে দেয় এবং কান টেনে প্রায় ছিড়েই ফেলে সে এবারে দেখলাম। তাও আবার নিজের জীবনে।
স্কুল খুলেছে দুইটা বছর পরে। এতদিন যে সব লক্ষীসোনা চাঁদের কনা নান্নে মুন্নে বাচ্চাগুলোকে মনিটরের মাঝে দেখেছি তারাই এখন চোখের সামনে। এ এক অন্য রকম এক্সাইটমেন্ট বটে। কাউকে মনিটরে মুখ বড় সড় লাগতো তাকে তো চোখের সামনে দেখে চেনাই যায় না সেই মানুষটাই যে এতটাই রোগা পটকা, নিরীহ বান্দা। আবার গুল্লু মুল্লু ছোট্টু বাবুটাও যে এত বড় সড় লম্বা চওড়া দশাসই সেও বুঝিনি ঠিকঠাক মনিটরের মাঝে এতদিনের অনলাইন ক্লাসে।
তাদেরকে দেখে আমিও চমকিত এবং আমাকে দেখেও তারাও চকমিত এবং বিস্মিত! চোখের পলক পড়ে না। শরীর নড়ে না। আমিও তাদেরকে দেখে অবাক! তবে চোখের পলক ফেলি। বারে বারে পিটিপিটি চাই। সে যাইহোক তারা অবাক হয়ে চেয়ে চেয়ে আমাকে শুধু দেখেই না দেখা শেষ হতে হাত ছুঁয়ে দেখে। হাতের চুড়ি ব্রেসলেট নেড়ে দেয়। নখের নেইলপলিশ ছুঁয়ে দেয়। চুলে টান দিয়েও দেখে রিয়েল চুল না উইগ পরেছি অথবা আমি মনিটর থেকে সত্যিই বেরিয়েছি কিনা।
সবচেয়ে ভয়ংকর ঘটনা ঘটলো তখনই যখন একটা পুচ্চি আমার কানের দুল ধরে দেখছিলো। তাই দেখে আরেকজন আরেকটু টান দিয়ে দেখলো তারপর আরেকজন কানশুদ্ধু দুল টান দিলো, এরপরের এক জন না দুইজন তো দুইদিন থেকে দুই কানই টান!!!!!!! মাগো মা ..... আমি ওদের ছোট চেয়ারেই বসে ছিলাম ওদের লেভেলেই। সেই ছোট চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠে দৌড়িয়ে তাড়াতাড়ি দুল খুলে ব্যাগে ঢুকিয়ে কান বাঁচালাম। নইলে গাধার কানের মত আমার কানও সেদিন গেছিলো আর কি আর একটু হলে নিন্দুকেদের বদদোয়ায় আমার সাধের কানের ভবলীলা সাঙ্গ হত বাচ্চাদের হাতে।।
হায়রে কি কলিকালই না আসলো। সবই উল্টা দিকে ঘোরে!!!

বহুদিন পরে মনে পড়ে আজ পল্লীমায়ের কোল ওপস না না ছোটবেলার খেলা কাঁঠাল গাছ কাঁঠাল গাছ-
আমরা আজীবন বলে এসেছি আমাদের প্রিয় কলিগদেরকে মানে প্লে গ্রুপের বাচ্চাদের টিচারগুলোকে "এ্যাই তোমরা আর কি পড়াও হ্যাঁ? সারাদিন ট্যা ভ্যা বাচ্চাদেরকে নিয়ে খেলাধুলা আর বড়জোর অং বং রং করা। এসব কিছু হলো? এসব তো কিছুই না সারাদিন শুধু খেলা আর খেলা। ওরে কতই না খেলা ইনডোর গেম, আউটডোর গেম। কিচেন সেট, ব্লক সেট, ডক্টর সেট নিয়ে অভিনয়, টি সেট নিয়ে টেবিল ম্যনার ! ছ্যা ছ্যা এসব তো ছোটবেলার পুতুল খেলার বড় ভাই স্কুল খেলা আর কি বড় জোর। এসব করতে আবার স্কুলে আসা লাগে!!! ফুহ ফাহ .... আমরা নার্সারী টিচারেরাই বাচ্চাদের হাতে ধরে লেখা শিখাই, গালে ধরে পড়া শিখাই, নাচা গানা কত্ত কি শেখাই। সোজা কথায় আমরাই ওদের শিক্ষাগুরু, শিক্ষার কারিগরের শুরু হেন তেন কত কি.... "
তো এবারের বুঝলাম এই সব বড়াই এর ফল এক্কেবারে হাতে নাতে। দুইটা বছর পর আজ নার্সারীর শেষ প্রান্তে আসা বাচ্চাগুলো যখন উইদাউট এনি ডিসিপ্লিন কেমনে লাইনে দাঁড়াবে, কেমন সেল্ফে ব্যাগ রাখবে, কেমনে পেগে ওয়াটার বটল ঝুলাবে কিছুই তো জানেই না। এমনকি অবাক হয়ে দেখলাম সবগুলোকে যে জড়ো করে লাইন করে একে অন্যের কাঁধে হাত রেখে মাঠ থেকে জোটবদ্ধ সুশৃংখলভাবে ক্লাসে আনবো সে উপায়ও আমার জানা নেই। তখনই মনে মনে প্লেগ্রুপ টিচারদেরকে পায়ে পূজার নৈবদ্য দিয়ে ফেললাম।

একটা যায় এই দিকে তো আরেকটা ঐ দিকে। একটা পূর্বে তো আরেকটা পশ্চিমে, উত্তরে দক্ষিনে মানে পূর্ব পশ্চিম উত্তর দক্ষিনসহ যে দশ দিগন্তের নাম আছে যা প্রায় ভুলতে বসেছিলাম সবই মনে করিয়ে দিলো এবারের লকডাউনের পরে স্কুলে আসা বাচ্চারা। যাইহোক অতি কষ্টে ক্লাসে ঢুকিয়ে যেই না টয়েস দিয়েছি একটু সেটেল করার জন্য। ওমা ওমনি দেখি হুমড়ি খেয়ে পড়ে সবগুলা টানাটানি ধাক্কা ধাক্কি শুরু করে দিলো। এমনকি চুল টানা বিবিয়ানা, জামা কাপড় ছিড়ে বসা কিছুই বাকী রইলো না। কেউ কাউকে দেবেইনা। সব তাদের একার একার।
এক একজন তো সারা টেবিলে ছড়ানো টয়েসগুলি দু হাতে যতটা সম্ভব আগলে নিয়ে টেবিল ও টয়েস এক সাথে করে বুকের সাথে লাগিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো যে যতটা কেড়ে নিতে পারে আগে আগে। কাউকেই দেবে না। অর্থাৎ স্কুলের খেলনাগুলি যে তার বাড়ির না এবং সে সবের একছত্র অধিকারী যে তারা নয় সেসব তারা জানেই না। জীবনে কেউ তাদেরকে শেখায়নিও। সোজা কথা শেয়ারিং জিনিসটাই তারা এ দুবছর স্কুল মিস করায় শিখেই উঠতে পারেনি।

যাইহোক এবার নিলাম আউটডোরে। সেখানে স্যান্ডবক্স ছিলো, প্লে হাউজ ছিলো, সি সো, স্লাইড। সেসব সামলাতেও হিমশিম খাচ্ছিলাম আমরা। এর মাঝে একটা বাচ্চা সে ভলিবল স্ট্যান্ড দেখে ভলিবল খেলতে চাইলো। স্ট্যান্ডটা ছিলো বড়দের কিন্তু আমি তাতে দয়া পরবশ হয়ে একটা বাচ্চাদের ভলিবল এনে দিলাম। একবার ছুড়ে দেখালাম দেখো বাচ্চারা এইভাবে। তারপর যে বলবো এইভাবে বলটা মাটিতে পড়লে যে পাবে সেই সেটা ছুড়বে। সেই কথা বলার আর অবকাশ রইলো না। তার আগেই দেখি সাত/আটজন সেই মাটিতে পড়া বলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মাটিতেই গড়াগড়ি দিচ্ছে। আমি তখন কিংকর্তব্যবিমুঢ়ঃ।
অবশেষে বহু কষ্টে ওদের থেকে বলটা উদ্ধার করে বল সমেত এক হাত উপরে উঠিয়ে দাঁড়ালাম। উদ্দেশ্য ওদেরকে রুলটা বুঝিয়ে বলবো। তার আগেই দেখি আমি কাঁঠালগাছ হয়ে গেছি। হ্যাঁ কাঁঠাল গাছ। আমি কাঁঠালগাছ আর হাতটা আমার কাঁঠালগাছের ডাল আর সেই ডালের আগায় বল আর ৭/৮ বাচ্চারা আমার হাত নামক ডালে হেইয়ো করে ঝুলে আছে। আমি কিংকর্তব্যবিমুঢ়েরও বড় ভাই বা বোন যদি থাকে তাই হয়ে গেলাম। সেই ভয়ংকর বেদনার কথা লিখতে গিয়ে এখনও আমার কান্না পাচ্ছে।

এমন স্বপ্ন কখনও দেখিনি আমি- লাল নীল প্রিন্টেড বেবি মাস্ক

সে যাইহোক দাঁড়ি পরুক বাড়ি পরুক এমনকি গাড়ি মার্কাও মাস্ক পরুক আমার নো সমস্যা। কিন্তু সমস্যা বাঁধলো তখনই যখন স্কুল ছুটি হতে বাচ্চার বাবা ছেলের হাত ধরে এসে মাস্ক খুলে দেখালো, এই যে মিস আমার বাচ্চার যে দাঁতে লেগে ঠোঁট কেটে রক্ত বেরিয়ে মাস্কেও লেগে গেছে আপনি তো দেখেনওনি। আমার চক্ষু তো চড়কগাছ! সারাজীবনের অতি কেয়ারিং সনদপ্রাপ্ত নিজেকে বিশ্ব বিখ্যাত না হোক স্কুল বিখ্যাত টিচার ভাবা এই আমি কিনা বাচ্চার ঠোঁট তার নিজের দাঁতে লেগেই মাস্কের মাঝে রক্তারক্তি আর আমি দেখতেই পাইনি!!!!!!!!!! আমার তখন ধরনী দ্বিধা হও!!!!!!!! আর একটু হলে অজ্ঞান হয়েই পড়ে যেতাম হয়ত। আমার অবস্থা দেখে বাচ্চার বাবাই ভয় পেয়ে গেলো। না না মানে বলছিলাম কি আমার ছেলেটাও অনেক দুষ্টু। ঐ ছেলে তুই মিসকে বলবি না আমাকে বললি কেনো হ্যাঁ?

এই দিকে এসব দেখে আমাদের প্রিন্সিপ্যালও এগিয়ে এসেছে।(কই থেকে যে আসলো ঐ সময় আল্লাহ জানে) যাইহোক তারা আহা উহু করলো ওকে ওকে এখুনি ডক্টরস রুমে নিয়ে গিয়ে একটু মেডিসিন লাগায় দাও। বাচ্চা বলে না না মেডিসিন জ্বলবে, চিনি দাও, চকলেট দাও। ওরে !!! শয়তান পিচকা নিজের দাঁতে নিজে লাগায় ঠোঁট কেটেছিস। আমাকে ফাঁসিয়েছিস আবার এখন চকলেট না!!!!!!! মনে মনে বলছিলাম অবশ্য। যাইহোক ভেবেই পাচ্ছিলাম না আমি কেনো বুঝলাম না এই ঘটনা আমার ক্লাসেই আমার চোখের সামনে থাকতেও। এমন রেকর্ড তো লাইফে নাই।
শেষে বাচ্চার বাবাই সমাধান করে দিলো হে হে আসলে লাল ছোপের প্রিন্টেড মাস্ক তো মিস তাই আপনি বুঝতে পারেননি এই আর কি? কোনো সমস্যা নাই কোনো চিন্তা নাই। আমার তখন মনে মনে যত দোষ প্রিন্টেড মাস্ক ঘোষ। যত দোষ প্রিন্টেড মাস্ক কিনে দেওয়া বাপ মা ঘোষ!

স্বরে ও তে অজগর ঐ আসছে তেড়ে মনিটর হতে- আমাদের নান্নে মুন্নে বাচ্চাগুলো এতদিন মনিটরের ভেতর দিয়ে ভালোই লিখছিলো। এ বি সি ডি বা ওয়ান টু থ্রী ফোর সবাই সবাই। আমি মুগ্ধ হয়ে যেতাম। বাহ অনলাইন ক্লাসে তো বাচ্চাদের রেজাল্ট অফলাইন থেকেও ভালো। নিজের মনকে বুঝাতাম মায়েদের এই অবদান ভুলে যাবার নয় আহা। প্রতিটা বাচ্চাকে সময় মত কম্পুটারে বসাচ্ছেন, লেখো লেখো বলছেন আহা। আমি ধন্য হয়েছি ওগো ধন্য আমার প্যারেন্ট মায়েদের জন্য। মানে যারা সর্বদা বাচ্চাদের পাশে থাকতেন। কিছু মায়েরা যারা জব করেন তাদেরকে ছাড়া অন্য মায়েরা সব সময় বাচ্চাদের সাথেই থাকতেন।
সে যাইহোক ইন পারসন স্কুলে এসে যাই লিখতে দেই দেখি বেশিভাগ বাচ্চারাই কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং চাইনিজ এরাবিক কি সব টাইপ অক্ষর লিখে দিচ্ছে। আমার তো চক্ষু কর্ণের বিবাদ ভঞ্জন হয়ই না হ্য়ই না। এই বাচ্চাগুলাই না অনলাইনে মুক্তাক্ষরে লিখতো! পরে বুঝলাম আর কি অনলাইনে আসলেই কেমনে তারা মুক্তাক্ষরে লিখতো।
অনেক হলো আমার আর আমার নান্নে মুন্নেদের গল্প। এবার আসি আমাদের অভিভাবকদের কথায়। দুই দুইটা বছর বাড়িতেই ছিলো বাচ্চাগুলি। যে বয়সে স্কুল মাঠে দৌড়াবে, ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠবে, একে অন্যের সাথে শেয়ারিং কেয়ারিং শিখবে সে বয়সে তো তারা ভোর পেরিয়ে সকাল গড়িয়ে দুপুরে উঠেছে। দৌড়াদৌড়ির মাঠ কোথায়? ঘরের মধ্যে ট্যাবে মোবাইলে বা স্ক্রিনে আটকে থেকেছে। বডি ফিটনেসের বারোটা। সেই বাচ্চাগুলোকেই এখন ভোরে উঠিয়ে খাইয়ে পরিয়ে ঢুলু ঢুলু চোখে জ্যাম পেরিয়ে স্কুলে আনা হচ্ছে। মা বাবাদেরও কষ্ট, বাচ্চাদেরও কষ্ট। তাদের কষ্ট দেখে বুক ফেটে যায় প্রান জ্বলে যায় বাবা মায়েদের। কথায় আছে মানুষ অভ্যাসের দাস। এই দু বছরে আমরা হয়েছি কুভ্যাসের দাস!
আর তাই স্কুলের বারান্দাগুলিকে আমাদের অনেক বড় বড় লাগে। হাঁটলে পা ধরে আসে। দাঁড়ালে পায়ে খিল ধরে যায়। আর স্কুলের মাঠে দাঁড়িয়ে থাকে যখন বাচ্চারা এসেম্বলীর জন্য তখন বাবা মায়েরা ভুলে যান তারাও স্কুলের এসেম্বলীতে মাঠে দাঁড়াতেন। দু একটা বেতের বাড়ি খেয়ে বড় হননি এমন মা বাবারাও বিরল। সে সব তাদের বাবা মায়েরা কোনোদিন দেখতেও আসতেন না কিন্তু স্কুল গেটে ভীড় করে দাঁড়িয়ে থাকা বাবা মায়েরা বাচ্চাদেরকে মাঠে এসেম্বলীর জন্য দশ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেও বড়ই কষ্টিত হন। হাউ কাউ শুরু করে ডেন। হায়রে কলিকাল থুক্কু করোনা কাল আর এই কুভ্যাসের প্রতিফল।
এবার আসি আরেকটি অভিযোগ নিয়ে। বর্তমানে আমাদের স্কুল তথা বিশ্বের কোনো স্কুলেই বাচ্চাদের শাররিক, মানসিক, মৌখিক কোনো ভাবেই আবিউজ করা সম্ভব না। আগের দিনের কান টানা, বেতের বাড়ি এসবও গ্রামেগঞ্জেও নেই বললেই চলে। আর আমাদের স্কুল!!!!!!!!!
ও মাই গড! সেখানে তো বাচ্চাদেরকে ব্যাড বয় এই কথাটাও উচ্চারণ করা যাবে না। যাইহোক এতদিন অনলাইনে মনিটরের সামনে টিচারদের গলার ভয়েস ছিলো সর্বোচ্চ নিম্নস্তরে রঙ্গে ঢঙ্গে ভালোবাসা এবং আদরে। আর এই বাচ্চারা তো জন্মের পরে স্কুলেই যায়নি কাজেই এই মনিটরকেই স্কুল ভেবেছে আর মনিটররের মাঝে থাকা ছবিটাকেই টিচার।
তো যখন স্কুলের হলরুমে গেলো আর অবাধ আনন্দে হাউ মাউ খাউ মানুষের গন্ধ পাও বলে ঝাঁপিয়ে পড়লো ক্লাসরুমের হলরুমে। তখন তো টিচারের ভয়েসটা একটু বাড়াতেই হলো মানে মাইক দিলেও হয়ত কম শুনতো বাচ্চারা তবুও রক্ষা মাইক ছাড়াই একটু চড়া গলায় চিলড্রেন সিট ডাউন, সিট ডাউন প্লিজ বা কোয়ায়েট কোয়ায়েট বলতে হলো। আর সেটাই কাল হলো। বাড়ি ফিরতেই অনুসন্ধিৎসু কৌতুহলী ভেতরে কি হলো জানার জন্য উন্মুখ মায়েদের মুহুর্মুহু জেরার কারণে বাচ্চাদেরকে সারাদিনের ইতিবৃত্ত বলতে হলো আর তখনই মায়েদের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।

কি ঐ বাচ্চা ঐ বাচ্চার চুল টেনেছিলো বলে মিস স্যরি বলতে বলেছে!!! রাগ করেছে!! চুল টেনে দিলো বলে আদর করে দেয়নি উলটা না করেছে!!!!!!!! ও মাই গড আমার বাচ্চা মনে কষ্ট পেলো না?? ও যে কখনও না কথাটা শুনতেই পারে না। সহ্যই করতে পারে না!!!
কি!!! তুমি লিখবে না বলে পেনসিল ছুড়ে মেরেছো আর টিচার তোমাকে সেই পেনসিল তুলে আবার লিখতে বলেছে !!!!!!!! কেনো কেনো কেনো !!! তোমার ইচ্ছা হলে লিখবে ইচ্ছা হলে লিখবে না। টিচার বলার কে?? ????????????????
ক্রিং ক্রিং ক্রিং ........ এই যে মিস হ্যালো হ্যালো!!! আপনারা কিসের টিচার হইসেন হ্যাঁ জানেন আমি মানবাধিকারে জব করি আমার বাবা নারী অধিকারে!!! আমার দাদা শিশু অধিকারে !!!!!!!!!!!! আমার নানা টিচিং দ্যা ইয়ং চাইল্ড স্পেশালিস্ট আবার নানী শিশু মনোবিজ্ঞানে ..... বাচ্চাদের মনের উপর চাপ দিতে হয় হ্যাঁ!!!!!!!! সে পেনসিল ছুড়ে ফেললো লিখবে না আপনারার ওকে আবার লিখতে বলবেন কেনো?? সেদিন দরকার পড়ে সে লিখবেই না! পরদিন লিখবে না হলে তারপর দিন না হলে তার পরের পরের দিন। আপনারা জানেন কি হ্যাঁ !!!!
ভাবখানা এমন তার বাচ্চা অন্যের বাচ্চার চুল ছিড়ে দিলে বলতে হবে, বাহ বাবু তুমি ওর চুল ছিড়ে দিয়েছো??? খুব ভালো করেছো তো??? এই বাচ্চা দেখেছো কি সুন্দর করে ও তোমার চুল ছিড়ে দিলো?? তোমার অনেক মজা লেগেছে না?? অনেক আনন্দ পেয়েছো তাই না বাবু????
অথবা
বাচ্চা লিখবো না বললে বলতে হবে। বাহ!! লেখালিখি খুবই খারাপ কাজ!! কে করে এইসব!! তুমি খুবই খুবই ভালো কথা বলেছো লিখবে না তো লিখবেই না। আজকে না কালকে না পরেরদিনও না কোনোদিনই না। কি মজা!!! তুমি শুধুই খেলবে আর খেলবে আর মনে যা আসে তাই করবে। দূর পড়ালেখা কেউ করে নাকি!! তুমি তো স্কুলে এসেছো শুধুই বেড়াতে। কত্তদিন স্কুলে বেড়াতে আসতে পারোনি আহারে বাবুটা ! ওলে কুটু কুটু!!!
আসলেই করোনা আর এই লকডাউন আমাদেরকে ভুলিয়ে দিয়েছে আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা আচরণ ইত্যাদি ও ইত্যাদি। তবুও আমি আশাবাদী মানুষ আশা রাখি এই এফেক্ট কাটতে বেশি সময় লাগবে না। গত দু বছরের কু অভ্যাসগুলো কাটিয়ে মানুষ আবার ফিরে যাবে সু অভ্যাসগুলোতেই।
সবার জন্য ভালোবাসা......
ছবি-
https://ellenbuikema.com/young-childrens-views-on-sharing/
https://www.alamy.com/mother-teaching-her-kid-son-how-to-write-pen-concept-online-learning-quarantine-image355533282.html
https://www.google.com/search?q=printed+baby+mask&rlz=1C1CHBD_enBD905BD905&sxsrf=APq-WBsDWVhP8HtXW3JMzvMmrBbpQRErlQ:1650721290294&source=lnms&tbm=isch&sa=X&ved=2ahUKEwjS9IWBqKr3AhUnxTgGHTRXCLIQ_AUoAXoECAEQAw&biw=1280&bih=601&dpr=1.5
আজকের কিছু ছবি নেট থেকে নেওয়া আর কিছু ছবি আমার আর আমার বাচ্চাদের কার্টুন ছবি বানালাম বসে বসে আজকে থেকে ছুটি পেয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ৮:৩৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




