somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড টাকো আর এক গাদা ফ্রেঞ্চ ফ্রাইজ খেলাম। যেটা আমার মোটেও ভালো লাগলো না। কেনো মানুষ এসবকে ভালো বলে আল্লাহ জানে । হয়ত সস্তা তাই মনে ধরেই নেয় যে আহা কি মজাদার খাদ্য! নতুন বাসার গোছগাছ ও কেনা কাটা করতে করতেই পার হয়ে গেলো আরও দুই তিন দিন।

১৪ তারিখে চললাম আমি লুনা পার্কে। সেদিন সকাল থেকেই টিপিস টাপিস বৃষ্টি পড়ছিলো। আমি চিন্তায় পড়লাম যাবো কি করে! তবুও মনে মনে ঠিক করে ফেললাম বৃ্ষ্টি পড়ুক আর ঝড় আসুক যাবোই যাবো। সেজে গুজে চললাম লুনা পার্কের উদ্দেশ্যে। এই পার্কটা একেবারেই বাচ্চাদের জন্য আর তাই আমি নিজেও সেজে ফেললাম বাচ্চাদের মতই একটা ইয়াব্বড় নেট নেট ক্লিপ মাথায় পরে।


এমন অনেক ক্লিপ পরে আমার ক্লাসে আসে মেয়ে বাবুরা আমার অনেক ভালো লাগে। আমি তো সেই বেবিদেরই টিচার আমি অমন একটা পরলেই দোষের কি বলো মিররমনি?


লুনা পার্ক যাবার আগে চিজি ক্রেপ দিয়ে ব্রেকফাস্ট সারলাম। আমি তো বাংলাদেশের শেফস টেবিলে নিউটেলা ক্রেপ খেয়ে তওবা করেছি তবে হ্যাঁ সেই ক্রেপ মজারই ছিলো। ঝাল ঝাল কি সব পাতা টাতা দেওয়া নোনতা স্বাদের।

বাইরে বের হয়ে দেখি জোরে সোরে বৃষ্টি আরম্ভ হয়েছে। তাতে কি তারই মাঝে চললাম আমি! ট্রেন বদলে যখন লুনা পার্কের পথে। ট্রেনটা দেখি একটু টিকটিক করে হাপিয়ে হাপিয়ে চলছে। আমার সন্দেহ হলো ট্রেইনে কোনো সমস্যা। ঠিক তাই। হঠাৎ ট্রেইন থেকে বললো, ট্রেন লাইনে সমস্যা হয়েছে ট্রেন আর যাবে না। কানেকটিং বাস ছিলো তাই নো প্রবেলমো! সেই কানেকটিং বাস ধরতে গিয়ে ভুল ভাল পথে দুই দুইবার বাস বদলে শেষে উবার নিয়ে পৌছুলাম লুনা পার্কে। সেদিন এমন বাতাস বইছিলো। চুল উড়ে ঝুড়ে ভূত হয়ে যাচ্ছিলাম। বদমাইশ বাতাস একেবারেই আমার ছবি তোলার বারোটা বাঁজিয়ে দিলো।


লুনা পার্কের হা করে থাকা হাসিখুশি জোকার গেটের মুখের ভেতরে ঢুকে পড়লাম আমরা। প্রথমেই ঢুকলাম যেখানে সেখানে মানুষগুলোকে এমনই ঘুরপাক খাওয়াচ্ছিলো যে তারা উপরে উঠে পড়ছিলো। রোটোর তার নাম।বাপরে!! কাজ নেই তো আর আমার সেখানে উঠি! অনেকেই সেই বন বন চরকীতে চেপে উপরে উঠে আটকে ছিলো দেওয়ালের সাথে।


এই যে সেই রোটর মোটরের ছবি।

কি সুন্দর সোনালী রঙে রাঙ্গানো মেরি গো রাউন্ড!


রুপকথার পঙ্খীরাজ ঘোড়াদের দল।

এরপর দেখা হলো স্বপ্নলোকের ক্যারকটারদের সাথে।



একটা মজাদার রাইডের দরজায় দেখলাম পপাই দাড়িয়ে....আরও কি কি সব রাইড আল্লাই জানে ঢুকিনি এখানে।


জাহাজের উপর এই পাটাতনে ছবি তুলছিলো অনেকেই। তাই আমিও তুলতে গিয়ে চুল নিয়ে হিমশিম! :( আমি খুবই চুল আঁচড়ে বেঁধে ছেদে রাখা পরিপাটি মানুষ। কিন্তু এই বদমাইশ বাতাস আমার চুল উড়িয়ে সাগর ধারের সাগরিকা বানিয়ে দিলো।


তবে আজীবন ইতিবাচক মানুষ আমি। বাতাসের উপর কৃতজ্ঞ হয়ে গেলাম। চুল উড়িয়ে সে আমাকে একটু নায়িকা লুক দিয়েছে মনে হচ্ছে। :)


এরপর চললাম আমরা খানাপিনা খেতে। খেলাম সেই স্যুপ ডাম্পলিং। এটাই আমার একমাত্র পছন্দ হয়েছে অস্ট্রেলিয়া এসে। একা একাই ছবি তুললাম বসে বসে।


আমি আবার খুব একটা সেল্ফি পারদর্শী নহি। তাই কারো না কারো হেল্পী নিতেই হয়। এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে আমার বেবিক্লিপটা ঠিকঠাক।
যাইহোক তারপর ফিরলাম ট্রেনে করে।বাসার সামনের পার্কেই বসে থাকলাম কিছুক্ষন। ফিরে যেতে হবে কিছুদিন পরেই। আমার মন কেমন করছিলো তাই। ঐ যে বিদায় বেলা যত সন্নিকটে আসে তত মন খারাপ হতে থাকে আমার। এই সমস্যা সারাজীবনই দেখা দেয়। বাসায় যেতেই ইচ্ছা করছিলো না আমার।


তাই বসে থাকলাম পার্কে। সন্ধ্যে পেরুতে বাসায় ঢুকলাম সেদিনের মত।

এরপর ফেরার আগের দিনে এতই চকলেট কিনলাম যে আমাকে এক বিশাল স্যুটকেসই কিনতে হলো।


প্রান ভরে খেলাম আইসক্রিম। যেটা এমনই এক আইসক্রিম ছিলো যে আমার দুপুরের লাঞ্চই হয়ে গেলো। পারফিউম, সুন্দর সব থালাবাটি আউলফাউল কিনে বোঝা বাড়ালাম।


সন্ধ্যায় খেলাম চিজ কেক।


আর রাতে জাপানিজ স্টিকী রাইস এন্ড চিকেন।
সারারাতই আমার ঘুম হলো না। প্রায় জেগেই কাটিয়ে দিলাম সারারাত্রী। খুব ভোরে উঠে রেডী হয়ে চললাম এয়ারপোর্টের পথে। উবারের লোকটা তো আমার এত ভারী স্যুটকেস দেখে অবাক হয়ে জিগাসা করলো। এর ভেতরে কি আছে ভাই? হা হা
যাইহোক প্লেনে হাত পা ছড়িয়ে বসতে বড়ই সাধ আমার তাই পাশের সিটে কাউকে পছন্দ হয় না আমার। আল্লাহ আল্লাহ করছিলাম যেন কেউ না আসে। কিন্তু বিঁধি বাম। তাকিয়ে দেখি ইয়া লম্বু এক ছেলে দাঁড়িয়ে সামনে। আমি জিগাসা করলাম তোমার সিট এটা? সে বললো হ্যাঁ। এমন রাগ লাগলো ভেতরে ভেতরে কিন্তু হাসি মুখে বললাম ওকে বসো।

সে খুবই সাবধানে বসে রইলো। কিছুক্ষন পর আমাকে জিগাসা করলো আমি একা একা কোথায় যাই? আমি বললাম ফিরে যাই নিজের দেশে। সে জানালো সে দিল্লী থেকে পড়তে এসেছে। তার নাম আনীশ। বাড়ি যাচ্ছে তার জন্মদিন ২২শে জানুয়ারী । বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। আমি বললাম মায়ের জন্য কি নিয়ে যাচ্ছো? সে বললো পারফিউম। দিল্লীর কোনো এক ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টের ছেলে সে। এমনই লম্বা যে প্লেনের ছাঁদ ছুই ছুই। আমি বললাম তুমি দেখছি অস্ট্রেলিয়ানদের মত লম্বা। সে বলে অস্ট্রেলিয়ানদের চাইতেও বেশি লম্বা আমি।
তার থেকে বিদায় নিলাম মালায়শিয়া এসে।

একা একা দুই ঘন্টা বসে থাকতে হবে। তাই শপিংস্টোরগুলো দেখতে লাগলাম অকারণে। হঠাৎ চোখে পড়লো এক সত্যিকারের বিশাল পিয়ানো। বাচ্চারা কেউ কেউ যাওয়া আসার পথে টুং টাং করছিলো। আমিও বসে পড়লাম সুযোগ পেয়ে। এক হাতে ফোন আরেক হাতে পিয়ানো বাঁজিয়ে গাইলাম- আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।


কেউ ছিলো না ভিডিও করে দেবার জন্য তাই নিজেকেই করতে হলো। দুইহাতে পিয়ানো বাঁজানো হলো না.....

তারপর......
মালায়শিয়া টু ঢাকা। প্লেন গিজ গিজ মানুষে মানুষে। এত দলে দলে মানুষ কই থেকে যে আসছে আমি অবাক। সবাই বাংলাদেশী। কর্মজীবি মানুষজন। প্লেনে মনে হচ্ছে জায়গায় হবে না এত মানুষ। আর সাথে হাউ মাউ খাউ জোরে জোরে কথা বলছিলো তারা। সিট খুঁজে পাচ্ছিলো না পড়তে পারে না নাম্বার এমনও ছিলো। খেয়াল করে দেখলাম একটাও এয়ার হোস্টেজ মেয়ে আসছে না তাদের কাছে। সব ছেলে ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট আসছেন তাদেরকে হেল্প করতে।

এমন সময় হে হে করতে করতে এক তেল চকচকে চুলের, গায়ে জাম্পার চড়ানো হাতে কম্বলের ছোটখাটো এক পোটলা নেওয়া লোক। দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বললেন আপনার পাশের সিটখানা আমার। আমি কোনো কথা না বলে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। কারন আমি বুঝতে পারছিলাম কথা বাড়ালেই আমার খবর আছে তিনার সাথে। তিনি জাঁকিয়ে বসেই তার গ্রামে কল দিলেন। ঐ দিকে তার বউ ধরলো। ঐ এক প্লেন হাউ মাউ খাউ লোকজনের মাঝে তিনি তারস্বরে গল্প জুড়ে দিলেন বউ এর সাথে।
- উঠছি প্লেনে....
- এহন উঠলাইন?
- হ, এই দেহ, চারিদিকে লোকজন ( বেটা ইচ্ছা করে তার ফোনখানা এইদিক ঐদিক ঘুরিয়ে আমাকেও দেখাতে লাগলেন)
- (বউ তাজ্জব বনে) আপনের পাশে কেডা? বেডা ছইল না বেডি ছইল?
- (সেই লোক গুরুগম্ভীর চালে আমার দিকে ফোন তাক করে ) নিজেই দেহ...
এরপর বউ আমাকে দেখে যাহা করিলেন মানে বলিলেন, তাহা শুনিলে একজন হাসতে হাসতে চেয়ার থেকে পড়ে যেতে পারেন ও খুশিতে ডিগবাজীও খাইতে পারেন। :) যাইহোক বউ নিজে দেখতেই। মুখ থেকে তার বের হলো এক অক্ষরের ইকারযুক্ত একখানা শব্দ যা শুনে আমার পিত্তি জ্বলে গেলো। বউ বললো-
- ছিহ!!!
আমি তো অবাক! আমাকে উনার হাসব্যান্ডের পাশে দেখে ঐ বদমাইশ বউটার ছিহ বলার কি হলো! তার কান্ডে মানে বাক্যে আমি বাকরোধ হয়ে গেলাম কিন্তু রাগে কটোমটো করে তাকিয়ে রইলাম ঐ লোকের দিকে। সাথে সাথে মিঃ বেক্কল ভয় পেয়ে ফোন অফ করে দিলো।

আমি কিছুই বুঝলাম না তিনার হাসব্যান্ড সুপুরুষ মিঃ বেক্কল আলীর সিট আমার পাশে পড়ায় তাকে ছিহ বলতেই হবে কেনো!!!
এরপর সেই লোক নানা ছুতায় নাতায় আমার সাথে কথা বাড়ানোর চেষ্টা করলো কিন্তু আমি একদম কান কালা হয়ে বসে রইলাম।

যাইহোক ঢাকা পৌছে বুক ভরে শ্বাস টেনে নিলাম। মনে মনে গুন গুন সেই প্রিয় গান-
ও আমার দেশের মাটি তোমার পরে ঠেকাই মাথা......
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬
৫৩টি মন্তব্য ৫৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×