যুদ্ধাপরাধ ঃ
যুদ্ধাপরাধ শব্দটির ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। তবে আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে যুদ্ধাপরাধের সংজ্ঞা ও নির্দিষ্ট পরিচিতি রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত( আইসিসি) সনদ অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধকে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়।
প্রথমত, যেসব ক্ষেত্রে বিদ্যমান চারটি জেনেভা কনভেনশন গুরুতরভাবে লঙ্ঘিত হয়, যেমন- যুদ্ধাহত সইনিক-নাবিক , যুদ্ধবন্দি এবং দখলকৃত ভূখণ্ডের বেসামরিক লোকজন হত্যা, নির্যাতন বা তাদের ওপর জৈবিক পরীক্ষা- নিরীক্ষা চালানো ইত্যাদি।
দ্বিতীয়ত, হেগ রেগুলেশন, জেনেভা কনভেনশনগুলোর প্রথম প্রটোকল ও অন্যান্য প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইনে বিধান লঙ্ঘন জনিত অপরাধগুলো। যেমন--
# আক্রমন করা যাবে না এমন ব্যক্তি ,স্থাপনায় আঘাত হানা।
#নিরস্র ও অসহায় ব্যক্তির ওপর কৃত অপরাধ।
# যুদ্ধের কিছু প্রতিষ্ঠিত রীতিনীতি লঙ্ঘন। ইত্যাদি....
এছাড়া আন্তঃরাষ্ট্রীয় যুদ্ধের ক্ষেত্রে যেসব বিষয় যুদ্ধপরাধ বলে স্বীকৃত সেসব অপরাধ যদি সামরিক অপরিহার্যতা না থাকা সত্ত্বেও করা হয় তবে অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ক্ষেত্রেও তা যুদ্ধাপরাধ বলে গণ্য হবে।
কনভেনশন অনুচ্ছেদ ৬ এ বলা হয়েছে-- গণহত্যা কিংবা এই কনভেনশনের অনুচ্ছেদ ৩ এ বর্ণিত অন্য কোন অপরাধীর বিচার হতে হবে, হয় যে রাস্ত্রের ভৌগলিক সীমার মধ্যে গণহত্যা ঘটেছে সেই রাষ্ট্রের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত কোন ট্রাইব্যুনাল অথবা সনদদ্বারা প্রতিষ্ঠিত কোন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দ্বারা।
আইসিসি সনদ অনুযায়ী যেসব বিষয় মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বলে গণ্য হতে পারে সেগুলো হলো--
# নির্বিচারে হত্যা।
# জাতিগত বা গোষ্ঠীগত নির্মূল করন।
# দাসত্ব বা জোরপূর্বক শ্রমে স্থানন্তর;
# কোন গোষ্ঠীকে নির্বাসন বা জোরপূর্বক স্থানন্তর করা।
# হেফাজতে থাকা কোন বাক্তির উপর দৈহিক বা মানসিক নির্যাতন।
#ধর্ষণ, যৌন দাসত্ব , যৌন পেশায় নিয়োজিত হতে বাধ্য করা।
#কোন গোষ্ঠীকে স্বাভাবিক মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা।
# বর্ণবৈষম্য। ইত্যাদি.......
এসব সংজ্ঞার আলোকে ৭১ -এ সংঘটিত কর্মকাণ্ড মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের প্রকৃষ্ট উদাহরন।বাংলাদেশে যুদ্ধ অপরাধের দায়ে যাদের ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ও যাদের বিচার চলছে তারা প্রকৃতই অপরাধী এ নিয়ে জনমনে কোন শঙ্কা নেই।
আর যারা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বিচার হচ্ছে না বলে গলা ফাটাচ্ছেন তারা তাদের দোসরদের বাঁচাতেই শুধু জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন ! বাংলাদেশ সরকার বিচার প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ীই সম্পন্ন করতেছে এবং এ বিচার ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে আন্তর্জাতিক মানে।
অপরাধ করে পার পেয়ে জাওয়া,অপরাধির বিচার ও শাস্তি না হওয়ার কারনে বাংলাদেশ পরিনত হয়েছে এক অন্যায়, বিচারহীন সমাজে। ন্যায় বিচারের উদ্দেশ্যই হলো, শান্তি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করা। যুদ্ধাপরাধের বিচার হলে আমরা , এর মধ্য দিয়ে সমাজ সহিংসতা- পরবর্তী মর্মাঘাত থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো।