somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতীয় প্রচারণা, জয়ের নিবন্ধ এবং ওয়ালিউরের গবেষণা একই সূত্রে গাঁথা

২১ শে এপ্রিল, ২০০৯ সকাল ১০:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভারতীয় প্রচারণা, জয়ের নিবন্ধ এবং ওয়ালিউরের গবেষণা একই সূত্রে গাঁথা

বাংলাদেশের সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীতে ৩৫ শতাংশ মাদ্রাসার ছাত্র তত্ত্ব ভারতীয় প্রচারণা, প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজিদ জয়ের প্রবন্ধ এবং সাবেক কূটনীতিক ওয়ালিউর রহমানের গবেষণার ফলাফল একই সূত্রে গাঁথা। পার্থক্য শুধু সময়ের। ৪ বছর আগে ২০০৫ সালেই ভারতের সরকারি সূত্রের বরাতে সে দেশের সংবাদপত্রগুলো এই মর্মে অপপ্রচারণা চালায় যে, বিডিআর ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে পরিকল্পিতভাবে ভারতবিরোধী কওমী মাদ্রাসার ছাত্র ঢুকানো হচ্ছে। এর ৩ বছর পর ২০০৮ সালের নভেম্বর সজীব ওয়াজেদ জয় এবং ইরাক ও সৌদি আরবে দায়িত্ব পালনকারী মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা কার্ল জে. সিওভাক্কোর এক যৌথ নিবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ২০০১ সাল পর্যন্ত শতকরা মাত্র ৫ ভাগ মাদ্রাসার ছাত্র ঢোকার সুযোগ পেত। ২০০৬ সাল নাগাদ এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে শতকরা ৩৫ ভাগে। জয়ের নিবন্ধ প্রকাশের প্রায় ৫ মাস পর গত ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ ইনসিল্টটিউট অব ল’ অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সে (বিলিয়া) আয়োজিত এক কর্মশালায় ওই প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক সাবেক কূটনীতিক ওয়ালিউর রহমান তার গবেষণা থেকে জানান, চারদলীয় জোট সরকার আমলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে নতুন নিয়োগ প্রাপ্তদের ৩৫ শতাংশই এসেছে কওমী মাদ্রাসা থেকে। এদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনাদের মনে রাখতে হবে এরা সবাই কওমী মাদ্রাসা থেকে এসেছে। কওমী মাদ্রাসায় আধুনিক শিক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। এখন হয়তো এরা সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে একটি ভিন্ন পরিবেশে দেশ সেবার চাকরি করছে। কিন্তু আমি খুব একটা অবাক হবো না, যদি এদের বড় একটি অংশ জঙ্গিবাদের সঙ্গে যুক্ত থাকে। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের তথ্য, জয় ও কার্ল জে. সিওভাক্কোর নিবন্ধ এবং ওয়ালিউর রহমানের গবেষণার তত্ত্ব বিশ্নেষণে দেখা যায়, ভারতীয় প্রচারণায় যে কওমী মাদ্রাসার ছাত্রদের কথা বলা হয়েছে, তাকে ওয়ালিউর রহমানের গবেষণার তথ্য সমর্থন করে। যদিও কওমী মাদ্রাসার বিষয়টি গতকাল ওয়ালিউর রহমান প্রত্যাহার করে নিয়ে বলেছেন, ওটা স্লিপ অব টাং। মুখ ফসকে বের হয়ে গেছে। আসলে কওমী মাদ্রাসার ছাত্রদের সেনাবাহিনী বা বিডিআরের নিয়োগ পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আবার জয় ও কার্ল জে. সিওভাক্কোর নিবন্ধে যে ৩৫ শতাংশের হিসাব, ওয়ালিউর রহমানের গবেষণাতেও সেই একই হিসাব। এ হিসাবটি যে নিজের গবেষণা থেকে পাননি, জয়ের তথ্যটিই সেদিন জানিয়েছিলেন-গতকাল সেটিও স্বীকার করেছেন তিনি। ১৭ এপ্রিলে ‘কারেন্ট অ্যান্ড ইমার্জিং ট্রেন্ডস অব টেরিজম : সেফগার্ডিং দি ন্যাশনাল সিকিউরিট’ শিরোনামের যে লিখত বক্তব্য ১৭ এপ্রিলের কর্মশালায় তিনি উপস্থাপন করেছিলেন, সেই লেখা সংশোধন করে ওই তথ্যটি যে জয়ের তা সংযোজন করেছেন। বিলয়া থেকে ওই সংযোজিত কপিই গতকাল আমার দেশকে দেয়া হয় এবং জানানো হয়, সেদিন ওয়ালিউর রহমানের মূল লেখা থেকে জয় সংকদ্ধান্ত একটি প্যারা বাদ পড়াতেই কর্মশালায় সেটা জানানো সম্ভব হয়নি।
এছাড়া ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী নিয়ে ওই গবেষণাটি বিলিয়া ও বাংলাদেশ হেরিটেজ ফাউন্ডেশন যৌথভাবে করেছে জানানো হলেও গতকাল ওয়ালিউর রহমান এ প্রতিবেদককে জানান, গবেষণাটির সঙ্গে বিলিয়ার তেমন কোনো সংশ্নিদ্বতা নেই। কর্মশালাটি বিলিয়া মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় বলে বিলিয়ার নামটি এসেছে। তাছাড়া গবেষণাটি এখনো শেষ হয়নি বলেও তিনি জানান। বিলিয়ার এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ হেরিটেজ ফাউন্ডেশন বলতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে সংস্থার কথা বোঝায় সেই সংস্থা ওই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত নয়। বাংলাদেশ হেরিটেজ ফাউন্ডেশনও মূলত কাজ করে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও শিল্প-সাহিত্য নিয়ে। নিরাপত্তা বা সামরিক বিষয়ে কাজ করে না। আসলে বাংলাদেশ হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন ব্যক্তিই এটা করছেন।
এদিকে বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক বাহিনী সম্পর্কে এ ধরনের তথ্য, বিশেষ করে দুটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা সংস্থার গবেষণার ফল হিসেবে এই স্পর্শকাতর তথ্য উপস্থাপন কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে সে বিষয়ে অনেকই উদ্বিগ্ন। অনেকেরই প্রশ্ন, ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানা হত্যাযজ্ঞের পর সরকারি পর্যায় থেকে জঙ্গি তত্ত্ব প্রচারের পরিপ্রেক্ষিতে এ ধরনের খবরও প্রকাশ হয় যে, বিডিআর ও সোনাবাহিনীতে জঙ্গি অনুপ্রবেশ ঘটেছে-এই কারণ দেখিয়ে সুসান রাজগোপাল নামের এক ভারতীয় জাতিসংঘের কাছে গত ১৫ মার্চ এক চিঠিতে এই দাবি জানিয়েছেন যে, শান্তি মিশন থেকে বাংলাদেশীদের প্রত্যাহার করা হোক। যদিও এ খবরের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি, তবুও সেনাবাহিনীতে মাদ্রাসার ছাত্রতত্ত্বে যে ওই ধরনের দাবি সত্যি সত্যিই উঠবে না সে নিশ্চয়তা কোথায়? এছাড়া যে তথ্য প্রচার হচ্ছে, তার সত্যতাইবা কতটুকু? বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করার জন্য, সেনাবাহিনীতে আসলেই ৩৫ শতাংশ মাদ্রাসার ছাত্র নিয়োগ দেয়া হয়েছে কিনা-এ প্রশ্নে সেনাবাহিনীর বক্তব্য প্রয়োজন হলেও তা পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে গত শনিবার আইএসপিআরের পরিচালক লে. কর্নেল কাজী মোঃ কবিরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজের অসুস্থতা ও অপারগতার কথা জানান। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের তথ্য : ২০০৫ সালের ১৮ আগসল্ট ভারতের প্রভাবশালী বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকায় ‘জঙ্গি প্রসঙ্গে পুরানো সতর্কতাই ঢাকাকে ফের শোনালো দিল্লি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে সেদেশের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্বৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘ইসলামী মৌলবাদীদেও ডেরা হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে বাংলাদেশের মাটি। প্রায় ৪০ হাজার কওমী মাদ্রাসায় ভারতবিরোধী নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এই মাদ্রাসাগুলোর উপর সরকারের কোন নিয়ল্প্পণ নেই। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এ-ও বলছে যে, গত দেড়-দু’বছরে সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ রাইফেলস্‌-এ যাদের নিয়োগ করা হয়েছে, তারা সবাই ওই মাদ্রাসা (যেগুলো চলে সৌদি আরবের অর্থে) থেকে পাশ করা।’
একই দিনে আনন্দবাজার পত্রিকায় ‘বাংলাদেশ একটা থ্রেট, বোঝাতে চাইছি দিল্লিকে’ শিরোনামে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের একটি সাক্ষাৎকার ছাপা হয়। তাতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশে মৌলবাদীরা যেভাবে মাথাচাড়া দিয়েছে, তার প্রত্যক্ষ প্রতিফলন হচ্ছে সরকারে, সেনাবাহিনীতে। সেখানে ‘ইসলামিক ফান্ডামেন্টালিজম’ একটা জটিল জায়গায় চলে গেছে। বাংলাদেশ আগে মিলিটারি থ্রেট না হলেও এখন একটা থ্রেট।
২০০৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর ভারতের দি স্টেটসম্যান পত্রিকায় ‘কনসাস পলিসি টু ইসলামিক বাংলা মিলিটারি’ বা ‘ইসলামিক বাংলা মিলিটারি তৈরির সচেতন পরিকল্পনা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এতে নাম প্রকাশ না করে কয়েকজন বাংলাদেশী বুদ্ধিব্জীবী, যারা ভারতে গিয়ে সেখানকার সাংবাদিকদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন, তাদের বরাতে জানানো হয়, সেনাবাহিনীতে পরিকল্পিতভাবে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠনের কর্মীদের ঢোকানো হচ্ছে। তারা ক্রমশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে চলে আসছে। সেনা সমর্থিত ফখরুদ্দীন সরকার আমলেও ডিজিএফআই’র বিরুদ্ধে অপপ্রচারমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ হতে থাকে ভারতীয় বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়।
২০০৭ সালের ১৪ জুলাই স্টেটসম্যানে এ ধরনের একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। তার আগে ওই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি ভারতের আসাম থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক আসাম ট্রিবিউন ডিজিএফআইকে অভিযুক্ত করে ‘বাংলা’ডিজিএফআই ফোমেন্টিং ট্রাবল ইন এন ই’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এসব বিষয় বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও উল্ক্নেখ করা হয়। প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়, সেনাবাহিনী, বিডিআর ও ডিজিএফআইকে জড়িত করে দিল্লি ও কলকাতার বিভিন্ন টিভি চ্যানেল এবং ভারতীয় বিভিন্ন বাংলা ও ইংরেজি দৈনিক, বিশেষ করে আনন্দবাজার,
স্টেটসম্যান, টেলিগ্রাফ, টাইমস অফ ইন্ডিয়া-এসব পত্রিকায় নানামুখী অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। প্রকাশিত এসব সংবাদের বেশ কয়েকটিতে ভারতের সরকারি সূত্রের উল্ক্নেখ করা হয়েছে। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, এসব অপপ্রচারের পেছনে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা কাজ করে থাকে। দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সরকারি পর্যায়ে অনেক উন্নতি হলেও এ ধরনের অপপ্রচার কার্যত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্টস্ন করবে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে এটি উপস্থাপনের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।
জয়ের নিবন্ধে যা বলা হয় : গত বছর ১৯ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত হার্ভার্ড ইন্টারন্যাশনাল রিভিউতে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশে ইসলামী উগ্রবাদের উত্থান-দমন’ শীর্ষক নিবন্ধে জয় ও কার্ল জে. সিওভাক্কোর যৌথ নিবন্ধে জানানো হয়, সেনাবাহিনীতে ইসলামপন্থী বা ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের সংখ্যা বাড়ায় দেশে ইসলামী মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটেছে। বলা হয়, বাংলাদেশে ‘ইসলামী জঙ্গিবাদ বিস্তার লাভ করছে সামরিক বাহিনীতে ইসলামপন্থীদের সংখ্যা বাড়ার কারণে। অত্যন্ত চতুরতার সঙ্গে সেনাবাহিনীতে ঢোকার ভর্তি পরীক্ষার প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে মাদ্রাসায়। সেনাবাহিনীতে ঢোকার ভর্তি পরীক্ষার সঙ্গে মাদ্রাসায় প্রশিক্ষণের মিল আছে। সম্মানজনক সল্ট্যাটাস ও প্রচুর সুযোগ থাকায় সেনাবাহিনীর চাকরি বাংলাদেশে আকর্ষণীয়। সেনাবাহিনীতে ঢোকার প্রশিক্ষণ দেয়ার আগে ২০০১ সাল পর্যন্ত শতকরা মাত্র ৫ ভাগ মাদ্রাসার ছাত্র সেনাবাহিনীতে যেতে পারত। ২০০৬ সাল নাগাদ এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে শতকরা ৩৫ ভাগে।
ওয়ালিউর রহমান যা বললেন : গতকাল দুপুরে ধানমন্ডির ৭ নম্বর রোডে বিলিয়া অফিসে কথা হয় ওয়ালিউর রহমানের সঙ্গে। প্রথমে তিনি নিজের ব্যস্ততা দেখিয়ে সময় দিতে রাজি হননি। পরে কয়েক মিনিটের আলাপে তিনি জানান, সেনাবাহিনীতে শুধু নয়, অন্যান্য সশস্ত্র বাহিনী, বিডিআর, পুলিশ ও আনসার বাহিনীতেও কত সংখ্যক মাদ্রাসার ছাত্র নিয়োগ পেয়েছে তা নিয়েও গবেষণা করছেন তারা। তাদের গবেষণা এখনো শেষ হয়নি। এই বছরের শেষ নাগাদ শেষ হতে পারে। এই গবেষণার খরচ যোগাচ্ছে কে-এ প্রশ্নের তিনি বলেন, আমাদের কমন ফ্রেন্ডস রয়েছেন, তারাই। এ গবেষণা কাজের পুরোধা হচ্ছেন মেজর (অব.) এএসএম শামসুল আরেফিন। আরো অনেকে আছেন।
সেনাবাহিনীতে ওই সময়ের মধ্যে কতজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কি ছিল, সংশ্নিষ্ট দফতর থেকে এই সব তথ্য কি সংগ্রহ করেছেন? কিভাবে করেছেন-এ প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের গবেষণার মেথডলজি পরে জানানো হবে। এখন কিছুই বলা যাচ্ছে না। এ ধরনের গবেষণার পেছনে আপনাদের উদ্দেশ্য কি-এ প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশের মূল সংবিধানের চেতনায় আমরা একটা সেকুলার সমাজ চাই।
আপনারা এখন যে তথ্য জানাচ্ছেন তা তো চার বছর আগে থেকেই ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো বলে আসছে-এ তথ্যে ওয়ালিউর রহমান বলেন, আনন্দবাজার পত্রিকায় ৪০ হাজার কওমী মাদ্রাসার কথা বলা হয়েছে। এটা সত্য নয়। বাংলাদেশে কওমীসহ মাদ্রাসার সংখ্যা সাড়ে চার হাজারের মতো। তাছাড়া আমরা জেনেছি কওমী মাদ্রাসার ছাত্র সেনাবাহিনী ও বিডিআরে নিয়োগ পায় না। সেনাবাহিনী-বিডিআরের সৈনিক পদে নিয়োগ পেতে হলে নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় পাস। কওমী মাদ্রাসায় এ ধরনের শিক্ষা সনদ পাওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু ১৭ এপ্রিল ওয়ালিউর রহমান খুবই স্পষ্টভাবে কওমী মাদ্রাসার কথাই বলেছিলেন। এ বিষয়ে বিলিয়ার একজন কর্মকর্তা বলেন, সেদিন তিনি সচেতনভাবে তা বলেননি। ওটা স্লিপ অব টাং। ওই অনুষ্ঠানেই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলে তিনি তা সংশোধন করেন। কিন্তু তারপরও সংবাদপত্রে কওমী মাদ্রাসার কথাই লেখা হয়।
এদিকে গবেষণা যখন শেষ হয়নি তখন এত আয়োজন করে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কেন ওই স্পর্শকাতর তথ্য উপস্থাপন করা হলো-এ প্রশ্নের সরাসরি জবাব পাওয়া যায়নি ওয়ালিউর রহমানের কাছে। তবে সংশ্নিদ্ব একজন বলেন, পিলখানায় সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা তদন্তের এটি কাজে লাগতে পারে ভেবেই এ গবেষণার তথ্য আগেভাগে প্রকাশ করা হয়েছে।
ওয়ালিউর রহমানের পিতার মাদ্রাসায় উদ্বেগ : আমাদের শৈলকূপা (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি সোহাগ কুমার বিশ্বাস জানান, ১৯৯৬ সালে ওয়ালিউর রহমানের পিতা ডাক্তার হাবিবুর রহমান শৈলকূপার কাঁচেরকোল গ্রামে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার সময় ওই মাদ্রাসার জন্য ১৪ বিঘা ভূসম্পত্তি দান করেন তিনি। বর্তমানে এর ভূ-সম্পত্তির পরিমাণ ৯ একর ৬২ শতক। মাদ্রাসাটি এখন কাঁচেরকোল ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা নামে পরিচিত। মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠার সময় ছাত্রছাত্রী ছিল ২৫ জন, আর বর্তমানে ৮৬২ জন। এর মধ্যে ৩০০ ছাত্রী। মাদ্রাসার হোস্টেলে থাকে ১৫০ জন ছাত্রছাত্রী। প্রথম শ্রেণী থেকে ফাজিল পর্যন্ত পড়ানো হয়। ছাত্রছাত্রীদের ৪০/৪৫ জন বাদে সবাই স্থানীয়। শিক্ষক রয়েছেন ২২ জন আর শিক্ষিকা রয়েছেন ২ জন। ২০০৪ ও ২০০৫ সালে ভালো ফলের জন্য মাদ্রাসাটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পুরস্কৃত হয়। প্রতিষ্ঠাতা ডাক্তার হাবিবুর রহমানের অপর পুত্র ডা. শহিদার রহমান এখন মাদ্রাসাটির দেখভাল করেন। পরীক্ষার ফলের দিক থেকে এ মাদ্রাসাটি পরপর কয়েক বছর ঝিনাইদহ জেলায় প্রথম স্থান অধিকারী। গতবার এ মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীদর মধ্যে দাখিলে ৯৬ শতাংশ, আলিমে ৯৭ শতাংশ এবং ফাজিল পরীক্ষায় ১০০ শতাংশ উত্তীর্ণ হয়। কিন্তু সম্প্রতি সেনাবাহিনীতে ও অন্যান্য চাকরিতে মাদ্রাসার ছাত্র নিয়োগকে যেভাবে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে, তাতে ওই মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীরা উদ্বিগ্ন।

সূত্রঃ আমার দেশ, ২০.০৪.০৯
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×