somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্কুল জীবনের খন্ডচিত্র

২৮ শে জুলাই, ২০০৬ রাত ৯:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যখন শৈশবের কথা মনে পড়ে তখন তার প্রায় অনেক খানি থাকে স্কুল জীবনের কথা। সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময়ে গবঃ ল্যাবরেটরি হাই স্কুলে ভর্তি হই। সে সময়েই এই স্কুলে ভর্তি হতে গিয়ে প্রায় এখনকার মতই প্রতিযোগিতার মধ্যে পরতে হয়েছিল। তখনকার সময়ে 'ভাল স্কুল' এ বৈশিষ্ট্য ছাড়াও স্বল্প আয়ের সরকারী চাকুরের সন্তান হিসাবে স্কুলের বেতন এখানে মূখ্য ছিল। আমার মনে আছে ক্লাস থ্রিতে তখন বেতন ছিল ৩ টাকা, টিফিনসহ প্রায় 8টাকা। এই টিফিনের কিছু কথা মনে পড়ছে। টিফিন হিসাবে থাকতো লুচি-মিষ্টি, লুচি-বুন্দিয়া, লুচি-সুজি, কলা-সিঙাড়া, ক্রিমরোল (আচ্ছা এ জিনিস কি পাওয়া যায় এখন) ? ঐ সময়ে দুপুর ১/২টার দিকে খিদাপেটে এগুলি অমৃত লাগতো। ক্লাসের ক্যাপ্টেন (মনিটর)রা মাঝে মধ্যেই ক্লাসের উপস্থিতির সংখ্যা বাড়িয়ে অতিরিক্ত টিফিন উদোরপুর্তি করতো। পরবর্তীতে ঢাকা কলেজে পড়ার সময় এই টিফিনের লোভে স্কুল দিবসে (স্কুলের জন্মদিন), বাৎসরিক স্পোর্টসে স্কুলে চলে আসতাম আর অনুষ্ঠানের শেষে প্রাক্তন ছাত্রদের লাইন করে দাড়িয়ে যেতাম টিফিন সংগ্রহের জন্য।
আজিমপুর কলোনী থেকে স্কুলে বাসে যাওয়া আসা করতাম। তখন ২৫পয়সা লাগতো। মাঝে মধ্যে বাস না পেলে হেটে বাসায় চলে আসতাম। হেটে আসার সময় ঢাকা কলেজ, নিউ মার্কেটের ভিতর দিয়ে দু-একজন বন্ধু দের সাথে গল্প-গুজব করতে করতে বাসায় ফিরতাম। নিউমার্কেটের ভিতর দিয়ে আসায় দুটি সুবিধা ছিল, গাড়ি-ঘোড়া, ট্রাফিকের সমস্যা থেকে নিস্তার পাওয়া আর বোনাস হিসাবে ঢাকার সুন্দরীদের চলতি অবস্থা explore করা। আমাদের সময়ে বড় বড় আমলারা এবং শিক্ষিত ব্যবসায়ীরাও তাদের সন্তানদের জন্য এই স্কুল প্রেফার করতো। এদের অনেকেই বিদেশে ভ্রমন করতো। বিদেশ থেকে তারা আমার স্কুল বন্ধুদের জন্য অনেক গিফ্ট আনতো। কিন্তু আমার বন্ধুরা তাতে মোটেই সন্তুষ্ট থাকতো না। তাদের লক্ষ্য ছিল বিদেশ থেকে আনা বাবাদের গোপন সম্পদের উপর। সুতরাং স্কুল ছুটির পর ঢাকা কলেজের পুকুরের ধারে, টিচার্স ট্রেনিং কলেজের নির্জন স্থানে কিংবা নজরুলইসলাম স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়ে আবাহনী মাঠের গ্যালারীতে বাবাদের এ গোপন সম্পদগুলি অবাক বিস্ময়ে আবিস্কার করতাম। আসলে খুব কম বয়সে এসব কুখ্যাত ম্যাগাজিন আর ফ্লিম কেটে এনে ভিউমাস্টারে ভিতরে ঢুকিয়ে দেখাটা বিরাট এডভেঞ্জার ছিল। মনে পড়ে, একবার এ রকম একটা ফিল্ম স্ট্রিপ ভিউমাস্টারের ভিতরে আটকিয়ে যাওয়ায়, অনেক চেষ্টার পর সেটা বের করতে ব্যর্থ হয়ে ওটার মালিক আমার বন্ধুকে ভিউমাস্টারটা ভেঙে ফেলে দিতে হয়।
তখন স্কুলে স্যাররা ভালই মারামারি করতো। অনেকে মনে করতো ঢাকার ভাল, সম্ভ্রান্ত স্কুল নিশ্চয়ই স্যাররা ছাত্রদের পিটায় না। কিন্তু বাস্তবে তা নয়, তবে আমরা সাধারনত বাসায় এটা প্রকাশ করতাম না। আমি সর্তক ছিলাম যে সব স্যারদের বেশী হাত চলতো তাদের পড়াগুলি যত্ন করে করতাম। তবে আনিস সিদ্দিকি স্যারের পেটে দেয়া চিমটি, খায়ের স্যারের টিফিন পিরিয়ডে নামায না পড়ার জন্য বেতের বাড়ি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারিনি। তবে স্কুল জীবনের সবচেয়ে বড় মার খেয়েছি একেবারে শেষের দিকে, ক্লাস নাইনে। ঘটনাচক্রে ক্লাস নাইনে রোল ১ হওয়ার মনিটর হতে হয়েছিল। আমি নির্দিষ্ট করা মনিটরের সিটে বসতাম, আর সাথে আমার ক্লাস নাইনের নিয়মিত সাথী আশফাক আর রিয়াজুলের সাথে স্থান-কাল-পাত্র ভুলে দেশ-রাজনীতি উদ্ধার করতাম। সেদিন আজম খান স্যারের (আজম খানের মত চেহারা আর দাড়ি থাকাতে আসল নাম ভুলে গেছি) মুড অফ, তার উপর ক্লাসে আমার কিছু মাস্তান দোস্তদের মাস্তানি; তারও উপর আমাদের (আমি, আর নিকটস্থ দু বন্ধু) সশব্দ আলাপচারিতায় স্যারের ধর্যের বাঁধ ভেঙে পড়ে। 'হারামজাদা ক্যাপ্টেন হইয়া ক্লাসের মধ্যে হাইকাউ করস, তোর একদিন কি আমার একদিন' বলেই আমার কান ধরে হির হির করে টেনে এনে পিঠের উপর অবিরত কিল। ওফ! এখনও মনে হলে পিঠ টনটন করে উঠে।
প্রতি বৎসর খুব ৩রা সেপ্টেম্বর স্কুল দিবস বেশ ধুমধামে পালন করা হতো। বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই পড়ালেখা লাটে তুলে মহা আনন্দে ক্লাসরুম সাজাতাম। ক্যাসেট ডেক নিয়ে আসতো তারেক বা ওয়াহাব, অবসরে তা বাজিয়ে ভালই নাচানাচি করতাম। আমরাই প্রথম ক্লাস নাইনে এটা শুরু করেছিলাম, (এই গান বাজিয়ে নাচানাচি)। এই ক্লাসে আমার তিন বন্ধুর কথা বলে আজকে শেষ করি। এরা হলো ওয়াহাব, তাপস আর তারেক, এই তিন জনই ক্লাস নাইনে শাহীন স্কুল থেকে এখানে ভর্তি হয়েছিল। ওয়াহাব এখন ঢাকার নামকরা চার্টাড এ্যাকাউটেন্ট, তাপস ব্যারিস্টারী পাস করে ঢাকায় একজন বিরাট লইয়ার। এরা দুজন ভাল করেই আমাকে মনে রেখেছে, মাঝে মধ্যে যোগাযোগও হয়। তবে তৃতীয় জন অর্থাৎ তারেক এখন তারেক জিয়া নামে লন্ডনে নির্বাসিত (?) নেতা , এত সব প্যাচাল তার মনে থাকার কথা নয়।
দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায়...
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ৩:০৯
১২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস শুধু দেশের রাজধানী মুখস্ত করার পরীক্ষা নয়।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:১৪

"আমার বিসিএস এক্সামের সিট পরেছিলো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ, প্রিপারেশন তো ভালোনা, পড়াশুনাও করিনাই, ৭০০ টাকা খরচ করে এপ্লাই করেছি এই ভেবে এক্সাম দিতে যাওয়া। আমার সামনের সিটেই এক মেয়ে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×