somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাম্প্রদায়িকতা, দেশ ভাগ আর ১৫ই আগস্ট

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শ্রাবন মাস কি বিরহের মাস ?? তা আমি জানি না। তবে বর্ষাকাল যে রবীন্দ্রনাথের প্রিয় ঋতু ছিল্ তা তার কাব্যেই প্রতীয়মান। শুধু রবীন্রনাথ নয় কালীদাস থেকে শুরু করে কম বেশি সব কবিই বর্ষাকে নিয়ে বিরহ গাথা রচনা করেছেন। শ্রাবন মাস বিরহের মাস কিনা এটা নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ থাকলেও শ্রাবনের অনেকটাই ইংরেজী রুপ আগস্ট মাস যে নিঃসন্দেহে সমগ্র বাংগালী জাতির জন্য দুঃখগাথা । আরেকটু স্পষ্ট করে বললে ১৫ই আগস্ট বাংগালী জাতির জন্য এক মহাকাব্যিক ট্রাজেডি। ১৫ই আগস্ট বংবন্ধুর প্রয়ান দিবস। ১৫ই আগস্ট ভারতের স্বাধীবতা দিবসও। বংগবন্ধু শেখ মুজিবের মৃত্য যেমনি একটি শিশু জাতির বেড়ে উঠার পথে অন্তরায় ও কতিপর স্বপ্নের অপমৃত্য ঠিক তেমনি ভারতের স্বাধীনতাও ভেঙ্গে দিয়েছিল অগনিত মানুষের ঘর। বাস্তু হারা হয়েছিল হাজারো মানুষ। কথা সাহিত্যক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর ভাষায় এই স্বাধীনতা হল পথ ভ্রষ্ট,নষ্ট,কষ্টের স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতার জন্যি অনেকের কাছে নিজের জন্মভুমি হয়ে গিয়েছিল পরভূম,বিদেশ। ইতিহাসের বিয়োগাদান্ত ঘটনাগুলোর একটা হচ্ছে এই দেশভাগ। যার পরিনতি সাম্প্রদায়িকতা। যা আমরা আজও যীশুর যেই ক্রুশের মতই বহন করে চলছি। লিখতে বসেছিলাম ১৫ই আগস্ট নিয়ে। চলে গেলাম দেশ ভাগে। আসলে এই দুটো ব্যাপারই পরষ্পরে সম্পুরক। প্রবন্ধের শেষ ভাগে যা পাঠকের কাছে পরিষ্কার হবে। আমরা বংবন্ধুর ভাষা আন্দোলোনের সময়কার ভুমিকার কথা জানি, ৭১ এর বংবন্ধু সবার কাছে পরিচিত। কিন্তু ৪৭ এর বংবন্দুর অবদান কি ছিল তা কি আমরা জানি?? তিনি কি চেয়েছিলান এই খন্ডিত বাংলা?? তিনি কি চেয়েছিলেন এই দেশ ভাগ??

নেতাজী সুভাস চন্দ্র বসু যতদিন ছিলেন ততদিন যেন মনে হচ্ছিল ভারত অখন্ড থাকবে। ভারত পুরো এক জাতি হিসেবে থাকবে। ভারতের অগনিত মানুষের হৃদয়ে ছিল নেতাজী। ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে নেতাজী ছিলেন গন মানুষের নেতা। নেতাজীর বিখ্যাত আজাদ হিন্দ ফৌজের তিন প্রধান সেনাপতি ছিল হিন্দু,মুসলিম ও শিখ। নেতাজীর কৌশল ঠিক থাকলে হয়ত ভারতের পরবর্তী ইতিহাসই বদলে যেতে পারত। দেশ ভাগ কিম্বা পাকিস্তানের প্রশ্নটিও হয়ে যেন অবান্তর। পাকিস্থান নামক রাষ্ট্রটির জন্মই হত না। ১৯৪৬ সালে ইংরেজ সামরিক আদালতে আজাদ হিন্দ ফৌজ এর সেনাপতি রশীদ আলীর সাত বছর সশ্রম কারাদন্ড হয় তখন যেন সাধারন মানুষ ক্ষোভে ফেটে পরে। কংরেস-মুসলিম লীগের পতাকার নীচে হিন্দু-মুসলিম ছাত্ররা এক হয়ে যায়। নাজিমুদ্দিন নামের এক শহীদের কবর ছুয়ে মুসলিম লীগের এক নেতা বলে উঠল শহীদের রক্তে এই বন্ধন চিরদিনের জন্য এক হয়ে যাক। ১৯৪৬ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারী কলকাতার হিন্দু ও মুসলিমদের এক সাথে হাত মেলানোর মধুর দৃশ্য আর দেখা যায়নি। ঠিক তার আটা মাস পরেই শুরু হল দাঙ্গা । ইতিহাসের বীভৎস দাঙ্গা। ধর্মের বীষ সরিশা দানার চেয়ে ছোট হলেও তার ব্যাপ্তি বট গাছের চেয়েও বিশাল তা এই দাঙ্গার মাধ্যমে প্রমানিত হয়।

জিন্নাহ সাহেব ৪৬ এর ১৬ই আগস্ট ডাইরেক্ট একশন ডে হিসেবে ঘোষনা করল। বাংলায় তখন মুসলিল লীগ মিনিস্ট্রি। সোহ্রাওয়ার্দী সাহেব তখন বাংলার প্রধান্মন্ত্রী। তিনি বলে দিলেন শান্তি পুর্ন ভাবেই যেন দিনটা পালন করা হয়। ১৬ই আগস্ট সরকারী ছুটির দিন ঘোষনা করা হল। বংবন্ধুর ৬ ভাই বোনের ভিতর পাচ জনই তখন কলকাতার শ্রীরামপুরে। দাঙ্গার প্রথম দু একদিন হিন্দুরা প্রস্তুত ছিলনা। ফলে তারা মার খেয়েছে বেশী। পরে শুরু হয় প্রতিশোধ নেয়া। বংবন্দু তখন কলকাতার ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র। তি তার আত্নজীবনীতে লিখেছেন “ অনেক হিন্দু যেমন মুসলমানদের রক্ষা করতে গিয়ে বিপদ গ্রস্ত হয়ে পড়েছিলান ঠিক তেমনি অনেক মুসলমানো হিন্দুকে রক্ষা করতে গিয়ে বিপদে পড়েছিলেন।“ দাঙ্গা শুরু হয় কলকাতায়। কলকাতার রাস্তায় তখন ছিল শুধু লাশ আর লাশ। ক্রমশ দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে চতড়্গ্রাম, নোয়াখালী, ময়মনসিংহ, বরিশাল, পাবনা। আরো ভয়াবহ অবস্থা হয় পাঞ্জাবে। নিহতের সংখ্যা ৬ লাখ। ১ লাখ তরুনীকে পুরুষ নামের কিছু পশু ছিন্ন ভিন্ন করেছিল। কিন্তু কিসের জন্য এই দাঙ্গা?? ধর্মের জন্য মানুষ নাকি মানুষের জন্য ধর্ম?? গুটি কয়েক রাজনীতিবিদের ভুল সিদ্ধানের ফসল এই ভয়াবহ দাঙ্গা।


১৯৪৭ সালের জুন মাসে ঘোষনা করা হল ভারতবর্ষ ভাগ করা হবে। কংগ্রেস ভারতবর্ষ ভাগ করতে রাজী আছে এই মর্মে যে, বাংলা ও পাঞ্জাব ভাগ হবে। মাওলানা আকরাম খা সহ মুসলিম লীগের কিছু নেতা তার বিরোধীতা করল। কংগ্রসের শরৎ বসু এর চরম বিরোধিতা করলেন। এই সময় সোরোয়ার্দী সাহেব, হাশিম সাহেব, এবং কংগ্রেসের শরৎ বসু ও ও কিরন শংকর রায় এক আলাদা কমিটি ঘঠন করেন এই ভেবে যে-- বাংলা ভাগ না করে আলাদা কোন পন্থা অবলম্বন করা যায় কিনা। বেংগল মুসলিম লীগের ওয়ার্কিং কমিটির এক ফর্মুলা সর্বসন্মতি ক্রমে গ্রহন করে। তাতে বলা হয়েছিল বাংলাদেশ এক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র থাকবে। জন সাধারনের ভোটে একটা পরিষদ হবে। সেই পরিষদ ঠিক করবে বাংলাদেশ হিন্দুস্তানে যাবে নাকি পাকিস্তানে যাবে নাকি স্বাধীন দেশ হিসেবে থাকবে। বংগবন্ধু তার তাত্ত্বিক গুরু আবুল হাশিম উনারা ছিলেন যুক্ত বাংলার সমর্থক। তাই অনেক গঞ্জনাও তাদের সইতে হয়েছিল সেই সময়। বংবন্ধু তার আত্নজীবনীতে তাই আক্ষেপ করে বলেছিলেন “ সমস্ত বাংলা এক সাথে থাকলে কি ক্ষতি হত তা আজো বুঝতে পারি না” তবে কি কারনে মুসলীম লীগের সেই ওয়ার্কিং কমিটি ঠিক মত কাজ করতে পারেনি তা আজো অচে না। তবে পাকিস্তানের অন্যতম দাবিদার ছিলেন মুসলীম লীগের বাংগালী নেতারা। তখন পর্যন্ত কি তারা অনুধাবন করতে প্রেছিলান তারা স্বাধীন হচ্ছেন না। তারা নতুন একটি দেশের দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক হচ্ছেন না। দুর্ভাগ্য তাদের । শুধু ধর্মের ভিত্তিতেই যে দেশ হয় না এই সহজ সত্যটা বুঝতে তাদের আরো বেশ কিছু সময় লেগেছিল। ১৫ই আগস্ট স্বাধীন হল ভারত। র‌্যাডক্লিফ সাহেব ছুরি মেরে কেটে দিল বাংলাকে। কিছু লোক দেশ হারাল। কিছু লোকের জন্মভুমি হয়ে গেল বিদেশ।

ভাষা, সংস্কৃতি ও ভৌগলিক অবস্থান ভিন্ন হোয়া সত্ব্বেও শুধুমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে মানুষ এক হয়ে বাচতে পারে না তা পাকিস্তান সৃষ্টির পরই সাধারন মানুষ উপলবব্ধি করেছিল। এমনকি জিন্নাহ সাহেব নিজেই তা বুঝতে পেরেছিলান। তবে কি শুধু ক্ষমতার মোহেই জিন্না সাহেব মুসলিমদের অধিকারের কথা বলত?? আর তাই যদি না হয় তবে এমন পাকিস্তান তিনি কেন চেয়েছিলেন?? জিন্নার নিজেরই উক্তি “” এমন পোকায় খাওয়া পাকিস্তান দিয়ে আমি কি করব”” আসলে পাকিস্তান ধংসের বীজ তার সৃষ্টির মধ্যেই নিহিত ছিল।

বংবন্ধুর তাত্বিক গুরু ছিলেন আবুল হাশিম সাঝেব আর রাজনোইতিক গুরু ছিলেন সোরোয়ার্দী সাহেব। উনারা দুই জনই ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ। সেই সুবাদে বংবন্ধুর চরিত্রেও অসাম্প্রদায়িকতার বীজ বুনা হয়ে যায় অনেক আগেই। পাকিস্তান সৃষ্টির পর পূর্ব বাংলার সাধারন মানুষের মনে একটা ধারনার সৃষ্টি হয় যে এবার তাদের অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে। কিন্তু বাস্তব অবস্থাটা ছিল সম্পুর্ন বিপরীত। পূর্ব বাংলা তথা পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানীদের কাছে সব সময়ই ছিল অবহেলিত। তারা বাঙ্গালীদের সাচ্চা মুসলমানও মনে করত না। তার উপর মুসলিম লীগ ক্রমশই শুরু করল কুশাসন, জুলম, অত্যাচার। জিন্নাহ সাহেব যতদিন বেচে ছিলান প্রকাশ্য ষড়যন্তের কেউ সাহস পাননি। কিন্তু পাকিস্তানের হয়ত দূর্ভাগ্য যে জিন্না বেশিদিন বাচলেন না।

মুসলিম লীগের বাংগালী নেতাদের চরম অস্নতোষের ফলেই ১৯৪৯ সালে গঠিত হল আওয়ালী মুসলিম লীগ। এই সময় অবশ্য বংগবন্ধু জেলে ছিলেন। আওয়ামী মুসলিম লীগ হওয়ার কয়েকদিন পর উনি জেল থেকে মুক্তি পান। জেল গেটে উনাকে অভর্থনা জানাতে এসেছিলেন মাওলানা ভাসানী।

বংবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন ছিল পুরোটাই বর্ন্যাঢময়। শরতের আকাশ যেমন ক্ষনে ক্ষনে রঙ বদলায় ঠিক তেমনিও বংবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন ছিল নাটকীয়তায় পরিপুর্ন। ৫২ এর ভাষা আন্দোলনের সময় বংবন্ধু জেলে যায়। জেলে থাকা অবস্থায় অনশন করেন তিনি। একদম অন্তিম অবস্থায় মুক্তি পান তিনি। পরবর্তীতে ২৮শে এপ্রিল ১৯৫২ আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি। বংগবন্ধুর জীবন বিশাল ক্যানভাসে আকা কোন ছবির মত। ছোট প্রবন্ধে তা হয়ত আসবে না। অসংখ্য মানুষের স্নেহ ,ভালবাসা পায়েছিলেন তিনি। আবার কখনো রক্ত চক্কুও পেয়েছিলেন কারো কারো । মাওলানা ভাসানী যেমন বংগবন্ধুকে স্নেহ করতেন ঠিক তেমনি তিনিও মাওলানা সাহেবকে শ্রদ্ধা করতেন। মাওলানা ভাসানী যখন জেলে তখন অর্থাভাবে উনার কেবিনা থাকাটা দুরহ হয়ে পড়েছিলে। বংগবন্ধু বহু কষ্টে পার্টি থেকে ধার করে প্রতিদিন ১৫০ টাকা করে কেবিন ভাড়া দিতেন। ইত্তেফাকের তৎকালীন সম্পাদক মানিক মিয়া একবার আক্কেপ করে বংবন্দুকে বলেছিলেন “ মুজিব । আর ত পারি না। বিজ্জাপনের অভাবে ইত্তেফাকতো বন্দ করে দিতে হয়। “ ইত্তেফাক তখন ছিল বাংগালীদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় পত্রিকা। বংবন্দু তখন সাথে সাথে সোরোয়ার্দী সাহেবের কাছে চিঠি লিখলেন।

১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চীন সরকারের আমন্ত্রনে বংগবন্ধু একবার চীনে যান। চীনে তখন সমাজতন্তের জোয়ার। ধনী-গরীবের বৈষম্যহীন সমাজব্যাবথা দেখে মুগদ্ধ হয়ে যান তিনি। তাই তিনি তার আত্নজীবনীতে লিখেছিলেন “ চীনে সব কিছু নিয়ন্ত্রন করে কমিউনিস্টরা। আমি নিজে কমিউনিস্ট না কিন্তু সমাজতন্তের অর্থনীতিতে বিশ্বাস করি। পুজিবাদী অর্থনীতি বিশ্বাস করি না। একে আমি শোষনের যন্ত্র হিসেবে মানি। এই যন্ত্র যতদিন থাকবে ততদিন দুনিয়ার মানুষের উপর শোষন বন্ধ হবে না।“

বংবন্ধু শেরেবাংলা ফজলুল হককে ডাকতেন নানা। মুসলিম লিগকে না করার কারনে হক সাহেব নানা বিদ্বেষের শিকার হন। বংবন্ধু হক সাহেবকে খুব শ্রদ্ধা করতেন। উনাদের দুজনের ভিতর সবচাইতে বড় মিল ছিলেন উনারা দুই জনেই যুক্ত বাংলার সমর্থক ছিলেন। যুক্ত ফ্রন্টের নির্বাচনের পর পশ্চম পাকিস্তানীরা মন্ত্রী সভা বাদ দিয়ে দেয়। যুক্তি হিসেবে দেখায় হক সাহেবের কলকাতা বিবৃতি। তিনি বলেছিলেন “ দুই বাংলা আবার এক হতে হবে “।


২২শে মে ১৯৫৪ সালে হক সাহেব আর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মিলিত হলেন। বৈঠকের পর হক সাহেব ঘোষনা দেন তিনি পূর্ব বাংলার স্বাধীনতার পক্ষপাতী। পুর্ব ও পশিচম পাক্সতানের ভিতর যে ১ হাজার মাইলের ও বেশী ব্যাবধান তিনি তা তুলে ধরেন। সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক পার্থক্যের কথাও তিনি তুলে ধরেন। নিউইয়র্ক টাইমসে ২৩শে মে ১৯৫৪ সালে এটা প্রকাশিত হয়। বংগবন্ধু মনে মনে ভাবলেন নানা আমার সঠিক সময়ে সঠিক কথাটি বলেননি বটে কিন্তু যা বলেছেন তা আমার মনের কথা।

৫৪ থেকে ৭১ সাল। বাংগালী জাতির ইতিহাসে অন্যতম ক্রান্তি লগ্ন সময়। প্রতি পদে পদে যেন উত্তেজনা, পট পরিবর্তন। অসহিষুতা, বঞ্চনার ইতিহাস। পুরোটাই যদি লিখতে হয় তাহলে হয়ত একটা বই হয়ে যাবে। তবে বিশেষ কিছু ঘোটোনা উল্লেখ না করলেই নয়।

যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রি সভা ভেঙ্গে দেবার কিছু দিন পরেই করাচী গন পরিষদে পূর্ব বাংলা নামের পরিবর্তে পূর্ব পাকিস্তান নাম হয়। উত্তর বং রইল, দক্ষিন বং রইল, পশ্চিম বং রইল কিন্তু পূর্ব বং নামটা বিলীন হয়ে গেল। বংগবন্ধু কোনদিনই পূব্ব পাক্সিতান কথাটা উচ্চারন করতে পারতেন না। তিনি বলতেন পূর্ব বাংলা। তিনি মনে করতেন বাংলা নামটার একটা ইতিহাস আছে। আছে ঐতিহ্য। তিনি ব দ্বীপ্টাকে অবিহিত করতেন বাংলা নামে। এর কিছু দিন পরেই আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে মুসলিম শব্দটা বাদ দেয়া হয়। মাওলানা ভাসানী ছিলেন যার প্রবর্তক।

বংগবন্ধু ছিলেন বিশাল ক্যানভাসে আকা কোন ছবির মতন। যার শুরু আছে কিন্তু শেষ নাই। যিনি নিজে স্বপ্ন দেখতেন আবার মানুষ্কে স্বপ্ন দেখাতেও পারতেন। কিশর বেলায় নাতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর আদর্শে উজ্জীবিত ছিলেন তিনি। তারপর মুসলিম লীগের রাজণিতি শুরু করার প্রাক্কালে মুসলিম লীগের প্রগতিশিল নেতা আবুল হাশিমের সংস্পর্শে আসেন। পরবর্তীতে সোরোয়ার্দী সাহেবের সাথে গিয়ে উনি গান্ধীজির সাথেও দেখা করেন। গান্ধীজি নাকি উনাকে আপেল খেতে দিয়েছিলেন।

এরপর ৬৬ এর ৬ দফা, ৬৯ এর গন অভভুথ্যান, ৭০ এর নির্বাচন ও ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা আমরা কম বেশি সবাই জানি। তার ভিতর ৬৬ এর ৬ দফা খুব গুরত্ত্বপূর্ন ছিল। কারন এর মধ্য দয়েই বাংগালী জাতির জাতীয়তাবোধ জাগ্রত হয়। এই প্রসংগ গুলো নিয়ে অন্যসময় লিখব। ৭৫ এর ১৫ই আগস্ট কিছু কাপুরুষ বংগবন্ধুর প্রান নাশ করে। শুরতেই বলেছিলেম ৪৭ এর ১৫ই আগস্ট ও ৭৫ এর ১৫ই আগস্ট এর ভিতর এক অদ্ভুত মিল রয়েছে। দুটোর ভিতরেই রয়েছে সাম্প্রাদায়িকতার বীজ। গনতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা, সমাজতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতা ছিল মুক্তিযুদ্দের চেতনা। এর ফলেই আমরা পেয়েছিলাম আমাদের বাংলাদেশকে। কিন্তু ৭৫ এর পর যেভাবে সনবিধান কাটাকুটি, রাষ্টধর্ম ইসলাম যোগ করা, ধর্ম নিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র বাদ দেয়া হয়েছে যা সাম্প্রদায়িকতার উস্কানি দেয়া ছাড়া আর কিছুই না। ঠিক যেভাবে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করা হয়েছিল ৪৭ এর ১৫ই আগস্ট। কারন ভারত দ্বিখন্ডিত হয়েছিল দ্বিজাতিতত্ত্ব তথা ধর্মের ভিত্তিতে। কংগ্রেসের এককালীন সভাপতি মাওলানা আবুল কালাম আজাদ সাহেব তার বইতে উল্লেখ করেছেন” পাকিস্তান হয়ে সাম্প্রদায়িক সমস্যা মিটাতো দূরের কথা আরো তীব্র ও সর্বনাশ হয়েছে। কারন দেশ ভাগের গোড়াটা ছিল হিন্দু ও মুসলিল এর শত্রতার সম্পর্ক। ১৫ই আগস্ট দিনটা তাই আআর কাছে অনন্ত সাম্প্রদায়িক বীজ বপনের দিন।

আমাদের দেশের এক শ্রেনীর মানুষ বংবন্ধুকে পূজনীয় দৃষ্টিতে দেখা। আবার এক শ্রেনীর মানুষ বংবন্ধুকে দেখে বিদ্বেষের দৃষ্টিতে। আমি এই উভয় শ্রেনীর মানুষের বিষেদাগার করব। বংবন্ধু একজন রক্ত মাংসের মানুষ ছিলেন। শাসক হিসেবে তার দীষ ত্রুটি থাকা স্বভাবিক এবং ছিলো ও। হহুদলীয় অনতন্তের বিপক্ষে এক দলীয় শাসন ব্যাবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, ধর্ম নিপ্রঈখ রাষ্ট্র প্রতিশঠা করেও ওআইসি সম্নেলনে যাওয়া , স্বাধীন দেশে সর্ব প্রথম ছাত্র ইউনিয়নের মিছিলে গুলি চালানো এগুলোর জন্য তার সমালোচনা অবশ্যি করা যেতে পারে। তবে আমার মনে হয় এতে তার সন্মানহানি হবে না এতটুকুও। যৈক্তিক স্মালোচনা মানুষকে মহৎ করে তোলে। আমরা কেন ভুলে যাই মহাপুরুষ হয়েও মানুষের দোষ ত্রটি থাকা অবাস্তব কিছু নয়।

স্বাধীনতার এত বছর পর ধর্মের নামে আজো দেখি সন্ত্রাস। এটা পুরো উপমহাদেশ জুড়েই। এর কারন ককি তবে ৪৭ এর দেশভাগ?? দেশ ভাগ আমাদের কি দিয়েছিল?? জিন্না সাহেব কেন মুসলিম দের পৃতক জাতি হিসেবে আখ্যা দিলেন?? জাতির সংগা তবে কি??কেন আমরা পাকিস্তানের মত রাষ্ট্রের সাথে জ়ুড়লাম এত ভৌগলিক পার্থক্য থাকা সত্বেও? ভারতের ভৌগলিক ঐক্য কেন এক থাকল না?? বংবন্ধু বেচে থাকলে কি সাম্রদায়িকতার কবর রচিত হত?? এই প্রশ্ন গুলো প্রায়ই মনে উকি দেয়। মাঝে মাঝে ভাবি বংগবন্ধু বোধহয় ঠিক সময় তেই চলে গিয়েছিলেন। মাঝে মাঝে মৃত্যু মানুষকে মহান করে। জয়ী করে। যেমনটা করেছেন তাকে। যে মৃত্যু ছোয়া যায়না, যে মৃত্যু ধরা যায় না।

সূত্রঃ অসমাপ্ত আত্নজীবনীঃ শেখ মুজবর রহমান, উষার দুয়ারঃ আনিসুল হক, অর্ধেক জীবনঃ সুনীল গাঙ্গুলী, ভারত স্বাধীন হলঃ মাওলানা আবুল কালাম আযাদ।

লেখকঃ আসিক সাজিল
ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্ট

ইমেইলঃ [email protected]





০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিপ্লবের নিঃশব্দ মূল্য: অর্থনৈতিক বৈষম্য ও বাংলাদেশি ছাত্র আন্দোলন

লিখেছেন মুনতাসির, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৯:২৫

এ লেখাটি বেশ বড়ো। এখানে ছোট করে দেয়া হল। পুরো লেখাটি যদি কেও পড়তে চান, তবে নীচের লিঙ্ক থেকে পড়তে পারবেন।


সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন পর্যালোচনা চলছে। জাতিসংঘের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিরহ

লিখেছেন গোধুলী বেলা, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৯:৪৪

একটি কবিতা লিখা হবে বাদে কিছুক্ষণ
মেঘমালারা বারি পাত করিছে ক্ষণে ক্ষণ।
গগনভেদি কামান গোলা পরিছে মুহুর্মুহু
দুরুদুরু ভয়েতে কাপিছে বুক বাদ যায়নি কেহ।

জানালার পাশে  প্রেমিকার ছলছল চোখ
বৃষ্টিরো সাথে সে কেঁদে  ভাসাইছে বুক।
হাজারো... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিছু কিছু মানুষ বলার শুরু করেছে, "আমরা আগেই ভালো ছিলাম"।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ২:০২



একাধিক কারণে মানুষ ইহা বলার শুরু করেছেন: (১) সাধারণ মানুষ কোমলমতিদের ক্রমেই চিনতে পারছেন, ইহা ভীতি ও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করছে; কোমলমতিরা সরকারের গুরুত্বপুর্ণ অনেক পদে আছে ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি - একাল সেকাল

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮



টানা বৃষ্টির মধ্যে মরিচের দাম বেড়ে হয়েছে ৪০০ টাকা কেজি । অন্যদিকে ফার্মের মুরগির এক পিছ ডিমের দাম বেড়ে হয়েছে ১৫ টাকা।শুধু মরিচ নয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কমলা যদি পরাজিত হয়, "দ্রব্যমুল্য"ই হবে ১ নম্বর কারণ

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৭



দ্রব্যমুল্য হচ্ছে অর্থনৈতিক সুচকগুলোর ১ টি বড় প্যারামিটার; ইহা দেশের অর্থনীতি ও চলমান ফাইন্যান্সের সাথে সামন্জস্য রেখে চলে; টাস্কফোর্স, মাস্কফোর্স ইহার মুল সমাধান নয়; ইহার মুল সমাধন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×