somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সম্প্রতি দেখা কলকাতার তিনটি ভাল লাগার মুভি রিভিউ

১৪ ই অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কলকাতার মুভি???ধেত্তেরি...।।সত্যি কথা বলতে কি এই নাক সিটকানো ভাবটা আমার কিছুদিন আগেও ছিল।পরে অবশ্য খুব ভাল করে ভেবে দেখলাম যে আসলে এর জন্য খুব একটা দোষ দেওয়া যাবেনা আমাকে।ছোটবেলা থেকে মা খালাদের সাথে বসে বসে যেইসব কলকাতার মুভি মহানন্দে গিলতাম,একটু বোঝার বয়স হওয়ার পরেই মুভিগুলোকে বেশ ঘরকেন্দ্রিক মনে হত,কাহিনীর বৈচিত্র্য অনেক কম পেতাম আর মুভির পর মুভি হচ্ছে সেই শাশুড়ির ষড়যন্ত্র,বৌয়ের ভোগ করা অসহ্য কষ্টের চিত্রায়ন আর নায়কের গৎবাধা লায়েকি দেখতে দেখতে মুভিগুলোর প্রতি বেশ একটা অনীহা চলে আসল।তবে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি মুভি দেখলাম ওদের,বেশ অনেকখানি ধারনা পাল্টে গেল।যে কথাটা খুব করে মনে হল ওরা আসলে আমি তুমি,তুমি আমির বাইরে মুভি বানাতে শিখে গেছে।ও ভাল কথা আমি কিন্তু এসব মূলধারার মুভিগুলোকে গোনায় ধরে বলছিনা।



১।অন্তহীনঃ

আজো আছে গোপন
ফেরারি মন......
এই মুভিটির গানের দুটি লাইন,কিন্তু পুরো মুভি জুড়ে দুটি লাইনের প্রচণ্ড প্রভাব খেয়ালে এল।আমরা মানুষরা কেন জানি বড্ড বেশি অপেক্ষা করি,সবসময় আমরা নিজেরাও ধরতে পারিনা কেন,কিসের জন্য??আমাদের ভেতরকার সত্তাটা বেশিরভাগ সময় গোপন ই থাকে।

অভিক বেশ সফল একজন পুলিশ অফিসার,মা বাবা হারা,পিসির কাছে মানুষ।রাত জেগে চ্যাট করে বৃন্দার সাথে,কিন্তু নিজেদের পরিচয় দেওয়া নেওয়ার ব্যাপারে কেউই তেমন আগ্রহী নয়।অভিকের দাদা আর তার বউদি একসাথে থাকেনা,যদিও এতটুকু ভালবাসার ঘাটতি নেই কার মধ্যে,কিন্তু নিজেরা কখনই নিজেদের চাওয়া পাওয়া নিজেদের কাছে বলতে পারেনি বলে প্রচণ্ড একটা কমপ্লেক্সিটি কাজ করে তাদের মধ্যে।অভিকের বউদির হাত ধরেই বৃন্দার সাথে অভিকের পরিচয় হয়।অবশেষে অনেক চরাই উতরাই পার হয়ে যখন তারা নিজেদের মধ্যে দেখা করবে বলে ঠিক করে তখন ই নিয়তি তাদের কে আবার অন্তহীন একটা অপেক্ষায় রাখল।দেখা আর হলনা।জীবন হয়তো এমন ই,কেন যেন একটা রহস্য রেখে দেয় সবসময়।

অন্তহীন ডাউনলোড লিঙ্ক





রঞ্জনা আমি আর আসবনাঃ

মুভিটি দেখে চোখ ছানাবড়া হয়ে গিয়েছিল।যে অঞ্জন দত্তের গান শুনে শুনে বড় হয়েছি তার ই লিখা,ডিরেক্টিং আর অভিনীত মুভি-একটু গা ছমছমে অনুভুতি তো হবেই।তবে এতটুকু বলতে পারি মুভিটি যেমন ফাটিয়েছে,অঞ্জন দা তার চেয়ে বেশি।

কাহিনি বলতে গেলে এতটুকু-অবনি বাবুদের ব্যান্ডের সদস্যরা বয়সের ভারে ন্যুব্জ হলেও সারাদেশে সমানে কনসার্ট করে বেড়াচ্ছে,বিশাল নাম জশ তাদের।অবনী বাবু লোকটার গান হাজার হাজার মানুষকে বেঁচে থাকার সপ্ন দেখায় তেমনি তার বাস্তব জীবন প্রচণ্ড ভঙ্গুর আর হতাশারা সেখানে সারাক্ষন আনাগোনা করে।লোকটি প্রচণ্ড একগুঁয়ে আর প্রচলিত অরথে বদ বলা চলে।একদিন এক কনসার্টে রঞ্জনাকে ভাল গান গাইতে দেখে নজর পড়ল ওর উপর।অবশেষে ওকে দিয়ে রেকর্ডিং করাবেন বলে কলকাতা নিয়ে আসলেন।অবনীবাবুর নিজের মধ্যে ভাল মন্দ মিলিয়ে দ্বৈতসত্তার খুব প্রভাব।আর এই রকম একটা মানুষের সাথে রঞ্জনা নামের মেয়েটির মান অভিমানের মধ্যে দিয়ে কাহিনী এগিয়ে যায়।বাইরের দিকটাতে অবনী বাবুকে কদাকার দেখানো হলেও শেষ পর্যন্ত সে ভেতরে ছিল প্রচণ্ড মানবিক।

কাহিনী পুরোটা বলছিনা তবে মধ্যবিত্ত বাঙ্গালির জীবন আর শিল্পীর চোখে গান আর গানের জন্য ভালবাসার সবটুকুই মুভিটিতে এসেছে।সব কিছু মিলিয়ে মুভিটি আমার অসাধারন লেগেছে।


ডাউনলোড লিঙ্ক





আবহমানঃ

এক পরিচালকের গল্প,যিনি সাধারন মানুষের জন্য নয় ভদ্র সমাজের জন্য মুভি বানান।তার বউ ছেলে সবাইকে নিয়ে সবই ঠিকঠাক চলছিল কিন্তু সমস্যা হল তখন যখন পরবর্তী মুভির জন্য নতুন একেবারে আনকোরা নায়িকা নেবেন বলে ঠিক করেন।এই নায়িকাটিকে কোথায় যেন একটু আলাদা পান অন্য সবার থেকে একেবারে প্রথম দিন থেকেই।অবশেষে যা হবার তাই বাঙ্গালির ভাষায় বুড়ো বয়সে ভীমরতি।কিন্তু তার পরিবার,প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে আর সমাজ কেউ সেটা ঠিকভাবে নিতে পারলনা।ঠিক স্ক্যান্ডাল ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারলনা কেউই।কিন্তু বাবার প্রতি প্রচণ্ড অভিমান থেকে হোক আর ভালবাসা থেকেই হোক তার ছেলেই পুরো ব্যাপারটাকে শুধু স্ক্যান্ডাল ছাড়াও a part of life হিসেবে ভাবতে শুরু করল।এটিকেই আমার পুরো মুভির কোর মনে হল যে ঘটে যাওয়া সব কিছুই জীবনের অংশ,কোন কিছুই scandal নয় ,কোন অংশ বাদ দিয়ে জীবন নয়।পরিচালকের মৃত্যু কাছাকাছি ঘনিয়ে এলে শেষ দিনগুলোতে বাবা ছেলের সংলাপের মধ্য দিয়ে এই ব্যাপারগুলো আরও স্পষ্ট হয়ে উঠে।

মুভিটির কাহিনী sequencing বলবনা খুব একটা মনে ধরেছে তবে মেকিং-এ প্রথম থেকেই বেশ মুন্সিয়ানার ছাপ পাচ্ছিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:০৬
৪২টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×