সালটা ২০০৭।
তখনো ক্রিকেট সম্পর্কে জ্ঞান মাত্র শুরু হয়েছে।যদিওবা পাড়ায় ক্রিকেট খেলতাম সেই পাঁচ ছয় বছর বয়স থেকে।কিন্তু তখন যেন ফুটবলটাই গ্রামে বেশি প্রিয় ছিল।২০০৭ সাল। সব স্মৃতি ভালোভাবে মনে নেই।আগে পরে হতে পারে।ভারতকে যেদিন হারায় বাংলাদেশ,সেদিন থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভক্ত হই। এরপর বোধ হয় সাউথ আফ্রিকার ম্যাচটা ছিল।সেটাও আমরা জিতলাম। তবে যেই ম্যাচটার কথা না বললেই নয় সেটা হল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষের ম্যাচটা।আমার স্পষ্ট মনে আছে সেদিনটার কথা।বাবা ঢাকা গিয়েছিল।তাই রাত ৩ টা পর্যন্ত জেগে খেলা দেখতে কোনো সমস্যা হয় নি।ম্যাচটা হেরেছিলাম আমরা।এখনো স্পষ্ট মনে আছে সেদিন হারার পর প্রচন্ড কষ্ট পাইসিলাম।২০০৭ এর ই আরেকটা ঘটনা।ভারত বনাম বাংলাদেশ।ভারতের বেস্ট টিমটা ছিল।মাশরাফি এক ওভারে ২৫ রান নিসিল।৪ টা ছক্কা।সেবারে আমি শ্রীলঙ্কা সাপোর্ট করেছিলাম বিশ্বকাপে,ছোটোভাই অস্ট্রেলিয়া।অস্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়ন ছিল।পরের ঘটনাটা ২০১১ সালের।সেই বিশ্বকাপে ইন্ডিয়া সাপোর্ট করেছিলাম।শচীনের জন্য।আমার একমাত্র ফেভারিট প্লেয়ার ছিল টিমটাই সে।তার শেষ বিশ্বকাপ হিসেবে বাংলাদেশ নক আউট হওইয়ার পর ভারতকেই সাপোর্ট করেছিলাম।ঐ একবারই প্রথম,একবারই শেষ।কিন্তু ২০১১ বিশ্বকাপের ১ম ম্যাচটা আজো মনে আছে।প্রত্যন্ত এক গ্রামে বিয়ে খেতে গিয়েছিলাম।কারেন্ট নাই ,টিভি নাই,মোবাইলের নেট অন অফ হচ্ছে।এক বন্ধুর সাথে অনেক কষ্টে যোগাযোগ করে জানলাম ইন্ডিয়া ৩৭৫ রান করেছে।সত্যি কথা বলতে কি সেদিনও আমার কাছে টার্গেটটা রিচেবল মনে হয়েছিল।ক্রিকেট সম্পর্কে জ্ঞান কম ছিল বলেই হয়তবা।কিন্তু আবেগ একফোঁটাও কম ছিল না।সেই বিশ্বকাপে ইংল্যাণ্ডকে হারানোর ঘটনাটাও মনে আছে।শফিউল ইসলাম সুহাসের ২৪ রানের ইনিংসটা।এরপর চড়াই উতরাই অনেক দেখল আংলাদেশ ক্রিকেট।ভারত নামক একটা দল আইসিসিকে নিজের বশে করে আনার ঘটনা যেমন দেখল,তিন মোড়লের আধিপত্যও তেমন দেখল।যার ফসল বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম ইংল্যান্ড,অস্ট্রেলিয়া,ভারতে খেলার সুযোগই পেল না।আমাদের ট্যালেণ্ট খেলোয়াড়গুলো যথাযথ গাইডেন্স ,সুযোগ সুবিধা-পারফর্মের প্লাটফর্ম পেল না।তামিম ইকবাল নামের ছেলেটা লর্ডসে গিয়ে আরেকটা সেঞ্চুরী হাকানোর সুযোগ পেল না,সাকিব আল হাসান ছেলেটা বেশি ম্যাচ খেলতে না পারায় বারবার অল রাউন্ডার র্যাংকিং এ এক থেকে সরে যাচ্ছিল। মুশফিক নামক ক্লাসিক ব্যাটসম্যানটা তার গড় বাড়ানোর সুযোগ পাচ্ছিল না।এমন সময় বাংলাদেশের কাল হয়ে এল ২০১৪ সাল।টি২০ বিশ্বকাপে ঘরের মাটিতে হংকং এর কাছে হার।ইন্ডিয়া বি টিমের সাথে হার।সময়টা যেন কারোরই ভালো যাচ্ছিল না।আমরা অপমানিত হতে থাকলাম বিশ্ব দরবারে।আমাদের টেস্ট স্ট্যাটাস কেড়ে নেবার মত সময় চলে এসেছিল।এমন সময় দলের হাল ধরলেন কমান্ডার মাশরাফি বিন মোর্তজা।কমান্ডার বললাম এই কারণে তার অধিনায়কত্বে যে নৈপুণ্য তা আলাদা দ্যুতি ছড়িয়ে দেয়।কোচ হিসেবে আসলেন চাণ্ডিকা হাতুরুসিঙ্গহে আর বোলিং কোচ হিসেবে হিথ স্ট্রিক। তখনো কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটের সুসময়টা আসা শুরু করে নি।জিম্বাবুয়ের কাছে সিরিজ হারলাম আমরা। কোচ দলের মনোবল বাড়ালেন।আর মাশরাফি খেলাটার ধরণটাই পালটে দিলেন।বিশ্বকাপে গেলাম আমরা।অপরিচিত পরিবেশে খেলতে হবে।স্যুইং থাকবে পেসে।কিন্তু আমাদের কি তেমন স্যুইং করা পেসার আছে? এরপর বিশ্বকাপে কি ঘটল,আমাদের পেসাররা কি করল সবাই দেখল।বেশি দূর চিন্তা করব না,বিশ্বকাপ পাওয়ার ও না, শুধু একবার চিন্তা করুন সেদিন যদি ইন্ডিয়ার সাথে ম্যাচটা ফেয়ার হতো তাহলে আমরা হয়তবা সেমি ফাইনালিস্ট হিসেবে হলেও বিশ্বকাপটা শেষ করতে পারতাম।এরপর যেন ক্রিকেটারদের মনোভাবই বদলে গেল।পাকিস্তানকে দেশে আমন্ত্রণ জানিয়ে হোয়াইট ও্য়াশ করল।ইন্ডিয়ার মত দলকে ২০০ রানে প্যাকেট করে সিরিজ লুফে নিল।সাউথ আফ্রিকাকে হারাল।জিম্বাবুয়েকে হারাল।এই সফরে আমরা পেলাম তামিম ইকবালের ডাবল সেঞ্চুরী করা,পেলাম মুস্তাফিজুর রহমান নামের একটি নতুন রত্নের।২০১৬ এর শুরুটাই আমরা জিম্বাবুয়ের সাথে সিরিজ সমতা করলেও আমরা কিন্তু এশিয়া কাপের ফাইনালিস্ট।মুস্তাফিজ সেদিন থাকলে হয়তবা চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেতাম।ব্যাপার না।বিশ্বকাপে মাত্র তো দ্যুতি ছড়ানো শুরু হয়েছে।বাঘের গর্জন দেখার জন্য বিশ্ব প্রস্তুত।প্রিয় রবিচন্দন অশ্বিন ,খেলাটা মাঠে দেখাও,টুইটারে না।এশিয়া কাপের ফাইনালের দিন আমাদের কান্নাটাকে তোমরা ট্রল করেছো। পাকিস্তানও করেছিন ২০১২ এর কান্নাটাকে।ফলটা দেখতেই পাচ্ছো।তবে আশা করি তোমাদের আগামী এশিয়া কাপ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না।এই বিশ্বকাপেই "ধরে দিবানে"। আর হ্যা আইসিসি উইথ ডিউ রেস্পেক্ট উই ডোন্ট গিভ এ ড্যাম টু ইউ।তাসকিনকে আটকাইতে পারবা ভাবসো,সানিরে আটকাবা।বাঘের থাবার মুখে তো পড় নাই,জানো না কি জিনিস। তোমার এইসব দালালী শীঘ্রই শেষ হবে।বাঘ জাগছে,শিকার পরিবর্তন হচ্ছে।এই থাবা থেকে ইন্ডিয়াকে বাঁচাইতে পারবা না।শেষ করব অতুল নামক এক ইন্ডিয়ার সম্মানিত "কুত্তা"র কথা দিয়ে। এশিয়া কাপের ফাইনালের আগের দিন একাত্তর টিভি আর টাইমস নাও একটি টক শো র আয়োজন করেছিল।সেখানে অতুল বলল,বাংলাদেশ দুদিন ভালো খেলছে।বাংলাদেশ বিশ্বমানের ক্রিকেটার দিতে পারে না।শামীম চৌধুরী সাথে সাথেই বলসিল,"ইন্ডিয়া,ইংল্যান্ডের মত টিম গুলা যদি আমাদেরকে তাদের দেশে খেলতে না দেয় তাহলে লেজেন্ড বের হচ্ছে কি হচ্ছে না তারা কেমনে বুঝবে"। অতুল সেদিন বলসিল ম্যাচটা ওয়ান সাইডেড।বাংলাদেশ জিতলে তার মোবাইলটা সে ভেঙে ফেল্বে।ডিয়ার অতুল,পাকিস্তানে অলরেডি অনেক টিভি ভাঙ্গা হয়সে।সেই ম্যাচে না হইলেও বিশ্বকাপে তোমার মোবাইলটা ভাঙার সম্ভাবনা যে কত তুমি নিজেও জানো না।বাঘের গর্জন দেখবা এইবার,বাঘের গর্জন। ধরে দিবানে.........
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:০১