somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রতি-নীরা,খুলনা । (নীরার কাছে খোলা চিঠি)

১২ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



নীরা,
আমি সেই--একলা ঘরে শুয়ে রইলে যার কথা তোমার মনে পরে না।বাহিরে-অফিসে যেয়ে যার জন্য সময় হয়না।বিশ্বাসী ভৃত্ত্বের মত আমি জানি তোমার হৃদয় করমচার মত সবুজ,সমস্ত বুক জুড়ে পুরাকালের গন্ধের মত ভেসে আসা সুদূরের ঘ্রান।আজকাল সেসব আমার জন্য নয়।এই মৌন জীবন,চোখের সীমা-প্রান্ত বেধে দিয়ে অনেক নির্ভার আছো।অস্থির অবগাহনে বুদ্ধের মূর্তির মতো আমার শান্ত দুই চোখ।যখন দেখি আমার চলার পথে জ্যোৎস্না ছিটকে পড়ে।তুমি দূরে থাকো ভুলে থাকো ।আমি একলা থাকি বিকেলবেলা,বিকেল তবু একলা থাকেনা।ঈশ্বর মহান,মনে হলেই ইচ্ছে করে ফেটে পরি অট্টহাসিতে।

ইয়োরোপের অন্যভুবন পেরিয়ে আসা আমার পান্থনিবাস এখন কারাবাস।জীবনের তিব্র চুপ তুমি উপহার দিলে হৈ হৈ জনসমুদ্রে,বাড়ি,জানালার কপাট,দরজা এমনকি হৃদয়ের অন্তঃপুরে। দিবাস রাতি,শুভ দিন , শুভ ক্ষন কখনও মনে পড়ে না ।আমার সব জলাঞ্জজলি-ভুলেও আমন্ত্রন দিলে না,তুমি সুচতুর সচেতন ভাবে এড়িয়ে গেছ সব পহেলা বৈশাখ,মাঘ সংক্রান্তির রাত, চৈত্রের দিন,কদম ফোটার দিন এমনকি কৃষ্ণ চুড়ার রঙ্গিন সব মুহূর্ত ।মাঝে মাঝে মনে হয় এই পথ চলা থমকে আছে,দু হাত নিচে-পা শূন্যে ।আমার মন কাঁদতে নেই,ছিঃ –চলার পথে হোঁচট বুকে বেতের মত পিটানো ব্যাথা।

মনে পড়ে এমন কোন দিন ? তুমি ডেকেছ-সারা পাওনি,আমার জানালা বন্ধ ছিল? ছিটকিনি খুলিনি ? আমার বুকে তোমার জন্য কেবল গোলাপ গাছ পুঁতেছি,সেই খানে তুমি থাকো অপার্থিবা ।আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি এলে যে রকম পাপ হয়,আমি তোমার তেমন । তুমি কাছে থাকলেই আমার সব থাকে-আমি যেন খুঁজে পাই শান্তিনিকেতন। তুমি নদীর মত দেবী কোমল, জ্যোৎস্নার মত শুভ্র আমার চোখে ।এক দিন প্রতিদিন কতদিন তোমার মুঠো ফোনে বেল বাজে। আশায় আমার মনে হাজার চোখ জ্বলে থাকে,একবার যদি তবু শুনি তোমার কন্ঠ! জানি তুমি অনেক বিলাসি,অন্তত আমার ফোন দেখেও ফেলে রাখায়।

আমাদের সাজানো বাগানে কিছু লোক প্রেতের মত আসে,পিশাচের মত বাতাস ভারী করে রাখে। এর চেয়ে অমোঘ মৃত্যু শ্রেয়তর সুখ। এরা আমার ভালো লাগা কেড়ে নেয়।আমার সময় উড়িয়ে নেয় বেপরোয়া দস্যুর মত,যেখানে আমার ইচ্চেরা বিধ্বস্ত,বাগানে কুসুমগুলি মৃত । কেবল থাকে দাবাদহ আমার বুকজুড়ে কিন্নরী ব্যাথা। এরা রুপচোর,গন্ধহীন কর্পূরের মত গুপ্তচর।এদের গ্রীবায় সভ্যতা ধ্বংসের নিপুন ছাপ,ভালবাসা ছিড়ে কুরে এরা দিয়ে যায় উচ্ছিষ্ট পাঁজর ও পঁচা গলিত রক্ত,এরা আমাকে খেয়ে নেবে।

কি ভাবছো?সব কিছু বদলানো দরকার? নতুন গধুলি রাত্রি সকাল বিকেল চাই? ঘরের পর্দা ,দরজা এমনকি মনের অন্তপুর বদলে নেবে? দেখতে চাও কতটা বাতাস নামে হৃদয়ের গহীনে ? সুখ নয় পাপ নয় ভয় নয় পুরাতন জন্মের কথা নয়,কালের স্মৃতি সব ভুলে যাবে? দুপুরের রাস্তায় হঠাৎ আমি, সকালের অফিস যাবার পথের আমি,পার্সেলের ঠিকানায় লেখা আমি,সেল ফোনের ডায়ালে আমি, ঘুমোবার আগে আমি,মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে আমি,অফিস ব্রেক এ আমি,অফিস শেষে পেছনে হলুদ গেইট ফেলে গেলে আমি! হিম সন্ধে বেলা, কি তপ্ত গরম, ফাকা বাড়ি,বাড়ীর চৌহদ্দি পেরিয়ে মনের সীমানায় যেখানেই দেখ দেখবে এক ঝলক আমি ।

কিছু মানুষ আশে পাশে ভিড় করে,যেন টুরিস্ট গাইড।বিনে পয়সার খিশ্তি। আশে পাশে দাঁড়িয়ে থাকে দেবদারু গাছের মত।যেন কিছু জানে না।আর যদি হয় রূপসী সুনয়না নারী? পরামর্শ দাতার অভাব হয়না। কথায় বলে কাঠের পুতুলও টাকা দেখলে হাত বাড়ায়। তেমনি গোলাপের বাগানে ধুতরা ফুল চাষি।শয়তানের ছায়া নিয়ে ঘিরে কাছে ভেড়ে ভাড়ারের মত।খুলনা আমার বুকে বিষম পাথর হয়ে আছে।এ শহর আমাকে ফুসলিয়ে নিয়ে যায় রূপসার কাছে। আমার হাত ছাড়িয়ে কোথায় যাবে তুমি?এই শহর ট্রাফিক বাতি বড় বাজার ডাকবাংলো কোথাও ভুলে থাকতে পারবেনা,এমন কি নিজের মনের ওলিতে গোলীতে একাকী হোঁচট খাবে। জানালা খুলে ভয় পাবে, মাঝ রাতে আলো জ্বলে বসে থাকবে জুবুথুবু হয়ে ঘুম ভেঙ্গে।

সুনয়না মেয়ে জানি সোনাডাঙ্গার আকাশে এখন ঝকঝকে রোদ। শান্তিধাম মোড়ে ফুলের পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানি,সাহেবের কবর আমার আফসোস আরও বাড়িয়ে দেয়।প্রেসক্লাব,শামছুর রাহমান, খান জাহান আলি রোড গুলো প্রতিদিনের মত ব্যাস্ততা নিয়ে মুখর হবে।সাতরাস্তা রয়েল জন্মভুমি ভবন জাতির সংঘ পার্কের আশপাশ আমার মনে কেবল ভুবনডাঙ্গার আকাশ ডেকে আনে।ডানা মেলে সেখানে মেঘলা আকাশে উড়ে নিঃস্বংগ চিল,নিচে ঝিলমিল নদী শুকিয়ে আছে বিষাদে।তোমার মন থেকে আমাকে কাটা ছাড়ানো মাছের মত আলাদা করার জন্য অনেক ওরাং ওটাং চারবেলা চারদিকে।

আমি চোখ বন্ধ করলেই দেখি তুমি রূপসা ব্রিজে রলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছো শান্ত ভাবে। ঝিরঝির মেঘলা বাতাসে তোমার খোলা চুল উড়ছে। গায়ের রঙ নিয়ে অনেক দুঃখ তোমার । রঙ টা একটু ময়লা,পদ্ম পাতার মত,কেউ বলবে না থির বিজুরি। একা ঘুমুতে তোমার অনেক ভয়। ঘুমের ভিতর তোমার আচমকা জেগে ওঠা কতদিন , সেল ফোনে তোমার ভারী নিঃশ্বাস-মাঝ রাতে পাশ ফিরে পানি খেতেও কত ভয় তোমার ! আজ তুমি কেমন শান্তভাবে কথা বল,আমার পৃথিবীতে ধিরে বৃষ্টি নামে।তোমার কাজল দীঘির মত ঘন কালো চোখে বিস্মৃতির মধ্যে শুনি এলাচের গন্ধমাখা হাসি। চোখ ও ভ্রুতে সে হাসি আরও শিল্প হয়ে ওঠে ।

(চলবে)
FB :https://www.facebook.com/sajid.e1.London

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:৩৫
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×