somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

___________ ইয়াবা সোহেলের একদিন ___________

১৮ ই মে, ২০১৫ সকাল ৮:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘুম থেকে দেরি করে ওঠা নিত্যদিনের অভ্যাস, তবে আজকে একটু তাড়াতাড়ি উঠে পড়ল সোহেল । বেশি দেরি না করে চটপট ফিটফাট হয়ে বেরিয়ে পড়ল , নাস্তাটা করার সময় ও নেই হাতে ... অবশ্য থাকলেও যে করতো তাও না, তার আসলে রুচি ও নেই মুখে ! থাকবে কি করে ?? আগের দিন রাতেই ৪ বন্ধুর মিলে দেয়া ইয়াবা পার্টির নেশা এখনো যে রয়ে গেছে , এমনই এক বস্তু নাকি ইয়াবা ! রুচি , ঘুম , ক্ষুধা , আহার , শান্তি সবই কেড়ে নেয় । সবই জানে ও বোঝে সোহেল , কিন্তু নীতিকথাই এতো পাত্তা দেয়ার মত বিকাশ ঘটেনি তার অন্তর আত্নার ।
সম্ভবত পৃথিবীতে সিগারেট ছেড়ে দেয়ায় সব চেয়ে সহজ , কারণ বেশিরভাগ ধূম্পায়ীই এই কাজটা হাজারবার করেছে ! অনেকে তো নাকি প্রতি সপ্তাহ পর পর ছেড়ে দেয় । সোহেল অবশ্য সিগারেট যে খুব বেশি নিতো তা নয়, বছর চারেক আগেও সোহেল সারাদিনে ৩ টা সিগারেট এর বেশি নিতো না , সারাদিনে পকেট মানি ২০-৩০ টাকা হলেই বেশ চলে যেত। দিনটা ছিলো বৃষ্টিস্নাত দিন, যেদিন সে প্রথম ইয়াবা নামক এই জিনিশ এর দিকে পা বাড়ায় । এখন পরিস্থিতি এমন যে, পরিচয় তার ইয়াবা সোহেল !! ( মতান্তরে গুটি সোহেল )।

"এই রিক্সা" ডাক দিতেই কাছে এসে দাড়ালো রিক্সাওয়ালা , জায়গার নাম বলেই উঠে পড়ল সোহেল । এলাকার কয়েকজনের উৎসুক দৃষ্টি পড়ল তার রিক্সায় , এতো ভোরে তো তাকে কেউ আগে দেখেনি ! কিছুটা বিব্রতও হচ্ছে সোহেল । কিছুক্ষণ পরেই রিক্সা থেকে নেমে ফোন দিলো রতনকে ,রতন হলো সোহেলদের লিংক। মোবাইল, ল্যাপটপ সহ যে কোনো কিছু নগদে বিক্রির জন্য রতনের চেয়ে ভালো এই এলাকায় কেঊ নেই । তাই গুটিপ্রেমি/ ইয়াবাপ্রেমিদের কাছে রতন একজন জনপ্রিয় চরিত্র !। আজকে সোহেল রতনের কাছে একটি দামি গ্যালাক্সি গোত্রের স্মার্টফোন ও একটা দামি হাত ঘড়ি নিয়ে এসেছে । দেখেই রতনের মুখে এক চতুর হাসি ফুটে উঠল । "এতো দামি জিনিশ , ভালোই ধান্ধা হইসে তাইলে , হ্যাঁ ??"... "হুম" বলে সায় দেয় সোহেল । কাল রাতে অফিস ফেরত এক লোককে সুবিধামতো জায়গায় পেয়ে এইসব ছিনতাই করে নেয় সোহেল, নগদ ৭ হাজার টাকা ও ছিলো কিন্তু সেগুলো কাল রাতেই শেষ ! । কালকের বিষয়টা এতো খারাপ লাগে না সোহেলের , কারণ যাকে ছিন্তাই করে নেয়া সে সম্ভবত অনেক টাকার মালিক, তার কাছে জীবনের মূল্যই বেশি , কিন্তু কিছুদিন আগে এক লোকের ৯০০০ টাকা নিয়ে ফেলেছিলো তারা... পরে জানতে পারে যে ওই টাকাটা তার পুরো মাসের বেতন ছিলো ! এছাড়াও টুকটাক ছোট ভাইদের থেকে মোবাইল নিয়ে ফেলা , তাদের ভাষায় ' কট' করে দেয়া , চাদাবাজি ইত্যাদি করেই দিনাতিপাত করে সোহেলেরা । তাদের এলাকার পাতি গুন্ডা হিসেবেও জানে সাধারনেরা ।

টাকাটা হাতে নিয়েই আবার রিক্সায় উঠে পড়ে সোহেল, সরাসরি ফোন দিলো তুহিনকে । "দোস্ত , ম্যানেজ হয়ে গেছে , তাড়াতাড়ি আয় " বলেই ফোনটা রেখে দেয় সে । কোথায় আসতে হবে তা ভালোই জানে তুহিন । এলাকার মধ্যে কিছু পরিত্যাক্ত গোডাউন আছে , এইগুলোতেই তারা তাদের ইয়াবার আসর জমিয়ে তোলে প্রতি রাতে । মোবাইল ও হাতঘড়ি নিয়ে রতন তাকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছে , যদিও এর দাম অনেক বেশি কিন্তু গুটিখোরদের কাছে তার আপাত মূল্যই মূখ্য । এদিকে যাওয়ার পথে এলাকার মাদক ব্যাবসায়ী রাজু থেকে পর্যাপ্ত পরিমান ইয়াবা কিনে নেয় সোহেল এবং সাথে দোকান থেকে সরঞ্জাম এবং কয়েক প্যাকেট সিগারেট কিনে নেয় সে । গোডাউনে ঢুকে দেখে সবাই সেখানে উপস্থিত ।

কিভাবে যে দেখতে দেখতে দুপুর হয়ে গেলো টের পেলো না সোহেল, আস্তে আস্তে সবাই বের হলো গোডাউন থেকে । সবার চোখেই অনিদ্রার ছাপ , একেকটা শরীর যেন আবর্জনার স্তূপ ।
সবাই যার যার মতো বাসায় চলে গেছে তাই বাসায় ফিরে এলো সোহেল , গোসল দিয়ে লন্ড্রী থেকে আনা পাঞ্জাবীটা গায়ে দিলো সোহেল , ঠিক ৪ টায় লাখা ভাইয়ের মিটিং আছে , সেখানে যেতে হবে তাকে । তাদের মধ্যে আফছার ই রাজনীতিতে সবচেয়ে সক্রিয়, তার আগপিছ ঘুরে সোহেলরাও মোটামুটি পলিটিক্সের তকমা গায়ে মেখে নিয়েছে । তাদের সকল বিপদ আপদে পাশে থাকে লাখা ভাই । তাই সব গুটিখোররা আজকে এক হবে লাখা ভাইয়ের অফিসের সামনে।
অবশ্য কয়েকদিন পর পরই তারা এরকম মিছিল মিটিং করে অভ্যাস্ত। যেদিন বড় প্রোগ্রাম থাকে সেদিন রাতে পার্টিও বড় হয় লাখা ভাইয়ের বড় দিলের সৌজন্যে !

আজকে তেমন বড় কোনো মিটিং না, তাই হাত খরচ এর পয়সা ছাড়া তেমন কিছু পায়নি সোহেলরা ! কিন্তু রাতের খোরাক যোগাড় করতে হবে ! । এই চিন্তা করতে থাকে সোহেল কিন্তু এরইমধ্যে সন্ধ্যা হয়ে গেছে ... তাই সবাইকে ফোন করে আবার আগের জায়গায় আসতে বললো সোহেল...সবাই যথারীতি উপস্থিত এবং অপেক্ষা করছে তারা , আরো একটি বাবা কিংবা ভাইয়ের কষ্টের সম্বল ছিনিয়ে নিতে !

এভাবেই কেটে যায় সোহেলের প্রতিটা দিন ... এভাবেই প্রতিনিয়ত অগনিত সোহেল অপেক্ষা করছে অন্ধকার গলিতে ... এভাবেই কতো সোহেল পাতি গুন্ডা থেকে বড় সন্ত্রাসী হচ্ছে , এই সোহেলদের থামানোর জন্য জন্ম হচ্ছে আরেক সোহেলের কিন্তু সোহেল গুষ্টি তথা গুটিখোরদের এই একদিন আর কতোদিন ! ??

বিঃদ্রঃ সমস্ত ঘটনা ও চরিত্র কাল্পনিক, কারো সাথে মিলে গেলে আমি ই দায়ী থাকবো !

~~~>>> সাজিদ এক প্রবাহমান দাবানল <<<~~~
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×