যারা প্রথম পর্ব মিস করেছেন তাদের জন্য ক্লাসমেটের সাথে প্রেম !! বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোচনা (সম্পূর্ণ নিজস্ব মতামত)পর্ব-১
এবার আসি আসল প্রসঙ্গে । আপনাদের মধ্যে যারা ক্লাসমেটের সাথে প্রেম করেন শুরুতেই তাদের উদ্দেশ্যে HATS OFF . কারন এর জন্য প্রচুর ধৈর্য্য আর সাহসিকতার প্রয়োজন । আমাদের বাংলাদেশের রক্ষণশীল সমাজের মানুষেরা শুরুতে কখনই প্রেম মেনে নেয় না । আর তার উপর যদি হয় ক্লাসমেট... তাহলেই সেরেছে !!! আত্মীয়-স্বজন সবাই রীতিমত আক্কেল দাঁত তোলার মত এই প্রেম ছুটানোর জন্য লেগে পড়েন । তাই ক্লাসমেট-প্রেমীদের সাধারন প্রেমীদের তুলনায় অনেক বেশি কাঠ-খড় পোড়াতে হয় । এছাড়া নিজেদের মধ্যে জটিলতাগুলো তো রয়েছেই । ক্লাসমেটের সাথে প্রেমের অনেকগুলো সমস্যার মধ্যে কয়েকটি নীচে দেয়া হল ।
১. একটি সার্বজনীন ধারনা হচ্ছে, ক্লাসমেট বা সমবয়সীদের মধ্যে understanding বা বোঝাপড়ায় সমস্যা হয় ।
২. সমবয়সীদের মধ্যে domination জিনিসটা অনেক বেশী কাজ করে । ছেলে মেয়ে উভয়ই চায় একে অপরকে dominate করতে । একে অপরের উপর নিজের মতামত চাপিয়ে দিতে ।
৩. বাবা-মা চায় তার ছেলে পাশ করে বের হয়ে, চাকরি পাওয়ার ২-৩ বছর পর established হয়ে তারপর বিয়ে করবে । পক্ষান্তরে, মেয়ের বাবা- মা তাদের মেয়ে অনার্সে বা ডিগ্রিতে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই তার জন্য ভাল চাকুরিজীবি পাত্র খোজা শুরু করে । তাই, ক্লাসমেটের সাথে প্রেমের কথা শোনার পর মেয়ের বাবা-মা প্রথমেই নাকচ করে দেয় । তাদের যুক্তি ছেলে কিছু করে না, মেয়েকে খাওয়াবে কি? (আরে বাবা , মেয়েরে যদি জামাইয়ের পয়সাতেই খাওয়ানোর প্ল্যান থাকে তাহলে এত টাকা খরচ করে মেয়েকে পড়ালেখা করানোর দরকার কি ছিল ? এমন হলে কি সমস্যা যে তারা একসাথে চাকরি খুজবে, পাবে, এবং দু’জনের টাকায় সংসার চালাবে )।
৪. “ইনভার্স হৈমন্তী সিচুয়েশন”... প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা যায় । অর্থাৎ “বরের বাপ সবুর করিতে পারিতেন, কিন্তু কনের বাপ সবুর করিতে চাহিলেন না” টাইপের অবস্থা বিরাজ করে । বেশী দেরি করলে ভাল পাত্রটি হাতছাড়া হয়ে যাবে, বা পরে ভাল পাত্র পাওয়া যাবে না বলে মনে করেন বেশীরভাগ বাবা-মা । ফলে পাশ করার সাথে সাথেই মেয়েকে বিয়ের জন্য প্রেসার দেয়া শুরু করেন । আর মেয়ে চাকরি করার জন্য প্রেসার দেয় ছেলেকে । এর ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় মেয়ে ও ছেলের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হওয়া শুরু করে । ঝগড়া লাগে একটু পরপরই ।
৫. পাশ করার পরপরই যেখানে প্রধান লক্ষ্য হওয়া দরকার ক্যারিয়ার, সেখানে তারা বিয়ের জন্য পাগল হয়ে যায় ।
৬. অনেক বাবা-মার BNCC এর প্রতি বিশেষ বিদ্বেষ আছে । বরিশাল, নোয়াখালি, কুমিল্লা, চাঁদপুর এই চার জায়গার পাত্র-পাত্রী হলেই এক বাক্যে না বলে দেন ।
...... খুজলে এরকম হাজারো সমস্যা বের করা যাবে । বলে শেষ করা যাবে না । তাই এবার সমস্যা সমাধানের দিকে যাই । সমাধানগুলো পুরোপুরি আমার মতামত । কারো দ্বিমত থাকলে জানানোর অনুরোধ করছি ।
সমাধানঃ
১. আমার মতে understanding জিনিসটা বয়সের গ্যাপের উপর নির্ভর করে ঠিক, কিন্তু তার চেয়ে বেশি নির্ভর করে ছেলে ও মেয়ের উপর । পুরো ভার্সিটি লাইফ, মানে ৪-৫ বছর প্রেম করে কাটানোর জন্য তাদের মধ্যে যথেষ্ট understanding থাকা প্রয়োজন । আর ক্লাসমেট হলে সেই understanding এর মাত্রা আরও বেড়ে যায় । কারন সেক্ষেত্রে প্রতিটি পদেই একসাথে decision নেয়া লাগে । আরেকটা কারন হল ক্লাসের মধ্যে কোন couple থাকলে অন্যান্য ক্লাসমেটরা প্রায়ই একটা বাধা হয়ে দাঁড়ায় (কারন জানিনা, তবে কাথা সত্য)। তাই দরকার হল নিজেদের মধ্যে understanding টা বজিয়ে রাখা এবং নিজেদের পরিবারকে তা বোঝানো ।
২. ধরেন একটি মেয়ের তার চেয়ে ৪ বছরের বড় এক ছেলের সাথে বিয়ে হল । বিয়ের পর একদিন ছেলেটি মেয়েটিকে বলল সকালে নাস্তায় রুটির সাথে আলু ভাজি খাবে না, ডিম ভাজি খাবে । মেয়েটি সেটাই বানালো । এটাকে কি বলবেন ? Domination ? আবার দুপুরে মেয়েটি ভাতের সাথে নিজের পছন্দমত তরকারি রাঁধল । ছেলেটির তরকারি পছন্দ না হলেও চুপচাপ কেয়ে নিল ? এটাকে কি বলবেন ? Domination ? আসলে Domination সবক্ষেত্রেই থাকবে । কখনও ছেলেকে ছাড় দিতে হবে, কখনও মেয়েকে । এর নামই তো সংসার । একজন আরেকজনের উপর নিজের decision চাপিয়ে না দিয়ে প্রয়োজন সঙ্গীর মতামতের ব্যপারে শ্রদ্ধাশীল হওয়া । সঙ্গীর পছন্দ-অপছন্দ বোঝার চেষ্টা করা । কারন কিছু ব্যপার থাকে যা সবসময় বুঝিয়ে বলা যায় না, বা বারবার বুঝিয়ে বলতেও ইচ্ছা করে না ।
৩. বাংলাদেশে অধিকাংশ পরিবারে সন্তানের সাথে বাবা-মার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নেই । যার ফলে বাবা-মার সাথে তারা কিছুই শেয়ার করে না । ফলে তাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে । পরে যখন ক্লাসমেটের সাথে প্রেমের কথা জানতে পারে তখন স্বাভাবিকভাবেই তারা তাদের সন্তানের এই decision এর উপর ভরসা পান না । কারন তারা জানেন না যে তাদের ছেলে বা মেয়ে নিজের ভাল নিজেই বুঝে decision নিতে শিখেছে ।জানবেই বা কিভাবে ? বাবা-মাকে তারা কখনই কিছু বলে না যে । তাই বাবা মার উচিৎ ছেলে-মেয়ের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি করা । আর ছেলে মেয়েদের উচিৎ একেবারে মরার আগে ওষুধ না খেয়ে আগে থেকে তার পছন্দের কথা বাবা-মাকে জানানো । যাতে তারা আগে থেকে তাদের পছন্দ যাচাই করে দেখতে পারে ।
৪. ধৈর্য্য যেকোন সম্পর্কের একটা খুটি হিসেবে কাজ করে । আর এ ধৈর্য্য যেমন প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন বাবা-মায়েরও । আমি বলছি না যে ছেলে- মেয়ে যার সাথেই প্রেম করুকনা কেন, চোখ বন্ধ করে তার সাথেই বিয়ে দিতে হবে । ছেলে মেয়েরা যাতে নির্ভূলভাবে নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারে সেই শিক্ষা তাদেরকে ছোটবেলা থেকেই দিতে হবে । বলাই বাহুল্য, এই দ্বায়িত্ব বাবা-মার । আর যদি তারা নিজের জন্য পাত্র/পাত্রী নিজেই পছন্দ করে সেক্ষেত্রে না জেনেই একবারে “না” বলা থেকে বিরত থাকতে হবে । দেখে শুনে খোঁজ-খবর নিয়ে যদি মনে হয় সেই ছেলে/মেয়ে বা তাদের পরিবার তাদের সন্তানের জন্য একেবারেই অযোগ্য, সেক্ষেত্রে তাদেরকে শান্তভাবে বুঝাতে হবে । তা নাহলে তারা ভেগে যেতে পারে, এমনকি আত্মহত্যার পথও বেছে নিতে পারে । তখন তো সবই শেষ ।আর প্রেমিক-প্রেমিকার জন্য আমার পরামর্শ, নিজের commonsense বাড়াতে (প্রেম করার সময় এই জিনিসটা ভয়াবহ রকম লোপ পায়)। বিয়ে শুধু ২টি মানুষের নয় ২টি পরিবারের ব্যপার । তাই চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে । বাবা-মায়ের উচিৎ নিজের সন্তানের সুখকে প্রাধান্য দেয়া, আর সন্তানের উচিৎ নিজের ভবিষ্যৎ ও পরিবারের শান্তি উভয় দিকে ভারসাম্য বজায় রাখা ।
৫. বাচ্চারা !!! বিয়ের জন্য এত উতলা হইয়ো না । সবকিছুর একটা নির্দিষ্ট সময় আছে । সময়ের আগে বা পরে কোন কিছুই ভাল না । আজকাল শুধু একজনের ইনকামে সংসার চালানো প্রায় অসম্ভব । তাই দু’জনেরই নিজ নিজ ক্যারিয়ারের দিকে মনোযোগী হতে হবে ।
৬. শ্রদ্ধেয় আব্বু-আম্মুরা । বুকে হাত দিয়ে বলেন তো, সারা জীবনে আপনারা এমন কি একজনও ভাল মানুষ পাননি যারা বরিশাল, নোয়াখালি, কুমিল্লা, চাঁদপুর এই চার জায়গার বাসিন্দা ? বা যতজন ভাল মানুষ আপনারা দেখেছেন, আপনি কিভাবে নিশ্চিত যে তাদের কারো বাড়ি এই চার জায়গায় না ?ভাল খারাপ সবখানেই রয়েছে । তাই be practical .
৭. ক্লাসমেটের সাথে যারা প্রেম করেন, তাদের গ্র্যাজুয়েশন শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত সময় যেন উড়ে চলে যায় । কিন্তু তাদের মধ্যকার সম্পর্কে ভাটা আসে গ্র্যাজুয়েশনের পর, বাসায় মেনে না নেয়া পর্যন্ত এবং ভাল একটা চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত ।কথায় কথায় ঝগড়া-ঝাটি, কথা বলা বন্ধ ।আমার কাছে এই সময়টা ভয়াবহ মনে হয় । বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, এই অন্তর্বর্তীকালীন সময়েই ব্রেক আপ হয়ে যায় । এ থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় আমার কাছে যেটা মনে হয় তা হল, সবসময় একে অন্যের সাথে থাকা (physically নয় mentally ) । পরস্পরের উপর আস্থা বা বিশ্বাস যেন লাদেনের বোমাও ধ্বংস করতে না পারে । কেউ একজন হতাশ বা frustrated হলে তাকে বলুন “ সব ঠিক হয়ে যাবে, আমি তো আছি তোমার সাথে” । দেখবেন শুধু এই কথাটাই সঙ্গীর মুখে হাসি ফোটাবে । এই ভয়াবহ সময়টুকু যদি প্রচন্ড ধৈর্যের সাথে পার করতে পারেন, আমি নিশ্চিত, ইনশাল্লাহ আপনাদের দু’জনেরই ৩ বার করে “কবুল” বলা লাগবে শীঘ্রই ।
আমি প্রেমবিশারদ নই । শুধু আমি যা জেনেছি, দেখেছি, বুঝেছি তাই এই লেখার মাধ্যমে বহিঃপ্রকাশ করলাম । আজাইরা জ্ঞান দিতে আসি নাই । শুধু নিজের মনের কথা যখন কাউকে বলতে পারিনা, তখনই লেখতে বসি । অগোছাল আর বিরক্তিকর লেখা পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ , একই সঙ্গে ক্ষমাপ্রার্থী ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



