somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৫ বছর ৭ মাস ৯ দিন

২৯ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৫ বছর ৭ মাস ৯ দিন । অনেক লম্বা সময় । দেখতে দেখতে কেটে গেল । দিয়ে গেল অসংখ্য স্মৃতি । খারাপ – ভাল মেশানো । পরিমান হিসেব করলে খারাপের সংখ্যা ভালোর তুলনায় বেশী । আবার গুরুত্ব বিবেচনায় একটি সুখস্মৃতি কয়েকশ’ খারাপকে আড়াল করে দেয় । একবার মনে হয় ... ইশ্‌ ... দিনগুলো কেন শেষ হল । পরক্ষণেই বাস্তবে ফিরে আসি... নিজেকে বলি ... শেষ হয়েছে আল্লাহর রহমতে, বেঁচে গেলাম ।
১৫ই এপ্রিল, ২০০৬ । ভীত, সন্ত্রস্ত পদক্ষেপে অনার্স লাইফের প্রথম ক্লাস করতে আসি এ ক্যাম্পাসে । কেমন না কেমন হয় ক্লাসের সবাই ? ভাল বন্ধুর সন্ধান পাবো তো ? শুনেছি, স্কুল আর বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক বেশি দৃঢ় হয় । স্কুলে তেমন বন্ধু হয়নি আমার । কলেজে ভাল কিছু বন্ধু পেয়েছিলাম, কিন্তু ভার্সিটির ফ্রেন্ডরা কেমন হয় সে নিয়ে ছিল সংশয় । সব সংশয় দূর করে বেশ কিছু তথাকথিত ভালো (!!!) বন্ধু পেয়েছিলাম । আল্লাহর অশেষ রহমতে তাদের মধ্যে এক জন ছাড়া আর কারো সাথে এখন আর কথাবার্তা হয় না । এদের মত বন্ধু থাকলে শত্রুর অভাব হয় না ।
দেড় বছর অনেক মজায় কাটানোর পর স্বার্থপর বন্ধুদের প্রকৃত চেহারা দেখতে পেলাম । স্বান্তনা একটাই । আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু, ভালোবাসার মানুষটি , যে না থাকলে বাকি বছরগুলো এখানে কাটানো আসলেই অসম্ভব হয়ে দাড়াত আমার জন্য । পৃথিবীতে সবচেয়ে খারাপ জিনিসটারও একটা না একটা ভাল দিক থাকে । এই অভিশাপের ন্যায় ভার্সিটি লাইফেও একমাত্র যে মানুষটির জন্য গর্ববোধ করি, আল্লাহর শোকর করি , এই মানুষটিই আমার ভার্সিটির বলতে গেলে একমাত্র প্রাপ্তি । অবশ্য এছাড়া ২-৩ জন ভাল বন্ধুর দেখা পেয়েছি , যারা এ ৫ বছর আমার অনেক উপকার করেছে । তাদের কথা কখনওই ভুলব না ।
একজন আরেকজনের উপর ভরসা করে ধীরে ধীরে অনার্স পাশ করলাম । এবং মাস্টার্স পরীক্ষা দিলাম । এতদিনে এই ক্যাম্পাসে অনেক কিছুই সহ্য করেছি । এই তো , আর বেশিদিন না ... এই বলে দাঁতে দাঁত চেপে পার করেছি ৫টি বছর । সেই পাচটি বছর অবশেষে শেষ হয়ে গেল । অভিশপ্ত সেই ডিপার্টমেন্টে আর যাওয়া লাগবে না । কলঙ্কিত কিছু মুখ আর দেখা লাগবে না । খুবই খুশি লাগছে ।
বিদায় উপলক্ষে আয়োজন করা হল ক্লাসের সকলকে নিয়ে আড্ডা । সবকিছু কিছুক্ষনের জন্য হলেও ভুলে গিয়েছিলাম সেদিন সকলের সাথে দেখা করতে শেষ বারের মত । বিকালের নাস্তা করে সবাই মিলে পুরো ক্যাম্পাস ঘুরলাম । খুব যে ভাল লাগছিল তাও না , তবে খারাপ লাগছিল না । তখন পর্যন্ত একবারের জন্যও খারাপ লাগেনি ক্যাম্পাসটা ছেড়ে যাবো বলে । খারাপ লাগল একটু পরেই । টিএসসির পেছনে যকলে মিলে গল্প করছিল , আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলাম । হঠাৎ ক্লাসের বাশার নামে একজন এসে জড়িয়ে ধরল আমাকে । বুঝে উঠতে পারলাম না হলোটা কি । আজ তো ঈদও না যে কোলাকুলি করবে । চেয়ে দেখি ওর চোখে জল । আমি কিছু বলার আগেই বলল, “আর তো দেখা হবে নাকি ঠিক নেই, যদি কোন ভুল করে থাকি মাফ করে দিস”... অবাক হয়ে গেলাম । যে ২-৩ জন বন্ধুর কথা বলেছিলাম এই বাশার তাদের একজন । অনেক ভাল ছাত্র । ক্লাসের সবচেয়ে ভদ্র ছেলেদের একজন । যারা এ পাঁচ বছর অনেক ক্ষতি করেছে, তারা কিছু বলল না , আর মাফ চাইল বাশারের মত একটা ছেলে । পড়ালখায় অনেক সাহায্য করেছে আমাকে । অনেক উপকার করেছে । আর সবচেয়ে বড় উপকারটা করে গেল এই বিদায়ের সন্ধ্যায় । মনে করিয়ে দিল, এতগুলো বছরে আমার খারাপ জিনিসের পাওয়াটা হয়ত অনেক বেশি, কিন্তু কিছু ভাল জিনিসও আমি পেয়েছি । যা অমূল্য । ২-৩ জন ভাল বন্ধু, একজন ভালবাসার মানুষ ... সত্যিই আর কিছুই চাওয়ার নেই । নেই কোন অপ্রাপ্তির হতাশা । একটা বড় শিক্ষা দিয়ে গেল আমাকে । জীবনে ভালোর চেয়ে খারাপ ঘটনা ঘটে বেশি । কিন্তু খারাপ থেকেও যে ভালোটা খুজে নিতে পারে সেই সফল মানুষ ।
বাশার চলে যাওয়ার পরই প্রথমবারের মত একটু মন খারাপ করে উঠল এই ক্যাম্পাসের জন্য । যদিও সেটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি কিছু অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য । তারপরও বাশারের কাছে আমি কৃতজ্ঞ থাকব শেষ মুহূর্তে বোধদয় করানোর জন্য । দোয়া করি সে ভাল থাকুক, অনেক সফল হোক । আসলে ওর জন্য দোয়া করা ছাড়া আর কোন কিছু করার সামর্থ নেই আমার । এ জন্যই এই লেখা ।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×