somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ্যাডভেঞ্চার!!!! উইথ আব্বুজী।

০৩ রা এপ্রিল, ২০১১ রাত ৩:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




আব্বুকে অফিস থেকে ৩ দিনের ট্রেনিং পাঠানো হলো ঢাকার সড়ক ও জনপদ বিভাগে।
আম্মুকে বলতে শুনলাম_আমার মেয়ের কয়টা কাপড় গুছিয়ে দাও তো, এইবার আমি আর আমার মেয়ে যাবো, দাদার বাসায় উঠবো।
তখন আমার বয়স কত হবে ৮/৯।এত্ত খুশি কোথায় রাখি।

জীবনে প্রথম ঢাকা যাচ্ছি।পথে পথে কত রোমাঞ্চকর জিনিস।
বাসের জানালা দিয়ে দেখছি.....উচু নীচু কত পাহাড়....সাদা সাদা মেঘ :D
আব্বু বললেন আমরা এখন শীতাকুন্ড পার হচ্ছি।
আমাদের বাস গ্রামগঞ্জ পার হয়ে চলতে লাগলো।
একসময় খেয়াল করলাম বাসটি খুব ধীরে চলছে।
আব্বুকে জিঞ্জেস করলাম_ আব্বু বাস এভাবে চলছে কেন???
আব্বু বললো_ চলো আমরা বাস থেকে নেমে যায়।
অনেকক্ষন বসে থাকায়,আমারও মনটা ছটপট করছিলো কখন যে বাস থেকে নামবো।
বাস থেকে নেমে আরেক এ্যাডভেঞ্চার।:-*
বাস চারকোনা একটা পাথরের উপর আর পাথর নদীর উপর চলছে।:P
আব্বু বললেল _ এই চারকোনা পাথরটাকে ফেরী বলে।
ফেরীতে দাড়িয়ে ঝালমু্ড়ি আর আমড়া খেলাম।
বড়আব্বুর বাসায়( আশকোনা) যেতে যেতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো।
পথের ক্লান্তি চোখের পাতায় ঘুম জুড়িয়ে দিলো।
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে আব্বুকে দেখতে না পেয়ে খুব কেঁদেছিলাম।
বড়আব্বু কান্না থামানোর জন্য আমাকে কোলে নিয়ে বাইরে বের হলেন।
কিছু চকলেট নিয়ে ফেরার পথে দেখলাম .... অনেক বড় নদী, সেখানে শুধু শাপলা আর শাপলা।
বড়আব্বুকে বললাম_ আমি নদী থেকে শাপলা নিবোওওওওওওও।:((
বড়আব্বু বললেল_ বোকা মেয়ে!!! এটা নদী না, এটাকে ঝিল বলে। আচ্ছা তুমি এখানে দাঁড়াও। আমি দেখি কোন নৌকা পাওয়া যায় কিনা।
দাড়িয়ে দেখলাম বড়আব্বু কার সাথে কি কি কথা বলে আমাকে নিয়ে একটা নৌকায় উঠলো। দাঁড় টেনে শাপলা তুলে আমাকে বললো _ধরোতো।
আমি ধরতে গিয়ে দিলাম দৌড়। বড়আব্বুর কাছে যেতেই নৌকা গেলো উল্টে।:-/
দুজনে মিলে পানি খেয়ে পেট পুড়িয়ে কয়েকগাছি শাপলা হাতে বাসায় এলাম।
যাক একটা জিনিস শিখলাম! ঝিল মানে হলো ডুববো কিন্তু মরবো না।:P
বিকেলে আব্বু এলো, আব্বুকে কঠিন শাস্তি দিয়েছি। একদম কথা বলিনি।
আব্বু প্রমিজ করলো আর এমন করবে না, আমাকে রেখে আর কোথাও যাবে না। তারপর আমরা এয়ারপোর্ট দেখতে গেলাম।কয়েকটা বিমান উড়াউড়ি দেখে আব্বুর কোলে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

পরেরদিন .....আব্বুর অফিস।
আব্বুর পাশে চুপচাপ বসে রইলাম ঠিকই, কিন্তু ট্রেনিংতো দেখছিনা।
আমার স্কুলের মত এক টিচার আবোলতাবল কি কি যেনো বলাবলি করছিলো আর সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে।:-/
ঐ লোকটার বকবকানিতে আমার খুব ঘুম পাচ্ছিলো।কিন্তু ঘুমাই কি করে ট্রেনিং যদি এসে চলে যায়।/:)
দুপুরে অফিসে লান্স করে বেড়িয়ে পড়লাম।:)
আব্বুকে বললাম _ আব্বু ট্রেনিংতো দেখলাম না।
আব্বু বললেল_ কোন কিছু শিখানোকে ট্রেনিং বলে।আমাদের সামনে যে লোকটি দাঁড়িয়ে থেকে কথা বলছিলো তিনি আমাদের কাজের কিছু উপায় শিখিয়ে দিয়েছেন।আমরা এতক্ষন কোথায় ছিলাম! ট্রেনিং-এইতো ছিলাম।
আব্বুকে আবার জিঞ্জেস করলাম_ আচ্ছা আব্বু! তাহলে আমাদের স্কুলটা কি ট্রেনিং?
আব্বু বলেছিলেন_ হুমম! ওটা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনিং।আচ্ছা এখন বলো! বাসায় যাবে নাকি কোথাও ঘুরবে?
সাথে সাথে বলে ফেললাম_ না ঘুরবো।
তারপর গেলাম একটা পার্কে (রমনাপার্ক)।দোলনায় চড়লাম।আব্বু ধীরে ধীরে দোল বাড়াতে লাগলো। একসময় খুব ভয় পেলাম, আব্বুঊঊঊঊঊ করে চিৎকার করে উঠলাম। আব্বু তাড়াতাড়ি দোলনা ধরে থামালো।
আব্বু কোলে নিয়ে বলেছিলো_ পাগল মেয়ে।
হঠাৎ শুনতে পেলাম_ ঐ.. বাতাসা বাতাসা ৫ টাকা।
আব্বুকে বললাম_ বাতাসা কি?
আব্বু বলল_ তুমি যে চম্পাআপড়ি খাও,ঐ ওগুলো।
আব্বু দুটো বাতাসার স্টিক নিয়ে দিলো।
আমি মুখে দিতেই সব হাওয়া হয়ে গেলো। মেজাজটা কেমন লাগে?
আব্বু আমরা অন্য কোথাও যাই, আমার এখানে ভালো লাগে না।
আব্বু বললো_ চলো আমরা শিশুপার্কে যাই।
আমিও বলেছিলাম_ হ্যাঁ হ্যাঁ শিশুপার্ক।:)
নাগোরদোলায় উঠেছিলাম মনে আছে।এযেনো আরেক বিশ্বয়।আমার তখন মনে হয়েছিলো পুরো পৃথিবী আমার চোখের সামনে।
এদিক সেদিক ঘুরাঘুরির পর আব্বু আর আমি দুটো কোণআইসক্রীম নিয়ে একটা বেঞ্চে বসলাম।আরেকটি কথা বলেনি আমি এরআগে ইগলোআইসক্রীম খেয়েছি কিন্তু কখনো কোণআইসক্রীম খাইনি।
আমার কোণটা শেষ হওয়া মাত্র আব্বু বললেন_ হায়!হায়! তুমি কোণটাও খেয়ে ফেললে?:-*
আমিতো ভয়ে শেষ,এ কি করলাম!:-/ কিন্তু আব্বুকে বললাম আব্বু ঐটাতো বিস্কুটের মত ছিলো!:D
আব্বু খুব হেসেছিলেন আর বলেছিলেন_ হ্যাঁ কোণটাও খাওয়া যায়। তুমিতো কখনো কোণআইসক্রীম খাওনি আবার আব্বুকেও কিছু না বলে কিভাবে খেলে?
আমি তখন কিছু না বলে হেসেছিলাম।
এখন বুঝতে পারছি আমার ছোট ছোট প্রশ্নের উত্তর দিতে আব্বু খুব মজা পেতো।:D
আস্তে আস্তে কখনযে সন্ধ্যা হলো টেরই পেলাম না, ঢাকার রাস্তায় নিয়ন আলো জ্বলে উঠেছে।পার্ক থেকে বাহির হওয়ার পথে দেখলাম অনেক বড় বড় বেলুন ।আব্বুর দিকে তাকাতেই তিনি বুঝে গেলেন_ বেলুনের লোভ সামলানো বড় দায়।B-)আমার থেকেও বড় এমন একটা বেলুন কিনে দিলেন।:D
দিনটা খুব ভালো কাটলো।মনে ভিষন খুশি।দু/তিন কদম হেঁটে খেয়াল করলাম আমার গায়ের লাল সাদা জামাটা কিভাবে যেনো পাল্টে গেলো/:)
সাথে সাথে চোখ দিয়ে পানি পড়ে গেলো_ আব্বুঊঊঊঊঊঊ আমার জামাটা কে যেনো চুরি করেছে..ঊঊঊঊঊঊঊঊ:((:((:((:((
আব্বু আমাকে কোলে নিয়ে জামার রহস্য উম্মোচন করলেন।
দেখো কাঁদে না, তোমার জামা কেউ নেয়নি।এইযে রাস্তায় লাইট দেখছো, ঐটার জন্য এমন দেখাচ্ছে।
তারপর পরিক্ষানিরিক্ষা শেষে কান্না থামালাম।B-)

এরপর কতবার চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসা-যাওয়া করলাম,কিন্তু সেইবারের মত এত রোমাঞ্চকর অনুভব আর পাইনি।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৫৯
৩৮টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×