মিথ-১
❑
স্বর্গ হতে পতনের মুহূর্ত আদম’কে তাড়িয়ে নিয়ে গেছে সাড়ে তিন'শ বছর। তাঁর চোখ থেকে অশ্রু শুকিয়ে যেত। পিপাসায় কণ্ঠ খাঁখাঁ মরুভূমি হয়ে যেত। তিনি ভুলে যেতে চাইতেন গন্ধম ভক্ষণের স্মৃতি। প্রতিদিন আমি যখন হেঁটে যাই মৃত ঝর্নাটির পাশ ঘেঁষে, তখন মনে হয় এটিই আদমের সেই প্রাচীন অশ্রুধারা। দীর্ঘকাল ক্রন্দনের ফলে শুকিয়ে গেছে। প্রতিবার আমার স্ত্রী যখন আমার দিকে পাকা আপেলফল বাড়িয়ে দেয়; আমি তার পানে সন্দেহ ভরে তাকাই। ভাবি, এরপর সে আমাকে কোথায় নিক্ষেপের ষড়যন্ত্র করছে !
মিথ- ২
❑
আমাদের 'পিতা' ছিলেন ঈশ্বরের বাগানের মালি
'মা' ছিলেন ঈশ্বরের বাড়ির দাসী।
বাগান এবং বাড়ির মাঝখানে যে দূরত্ব
তার ভেতর বয়ে যেত একটি সরু-কটি-নদী।
একদিন একটি আপেল নদীর স্রোতে
একদিন একটি আপেল ভাসতে ভাসতে
পৌঁছে গেল মায়ের ঠিকানায়।
'মা' আপেল'টি খেলেন
আমি হাসতে হাসতে মা'র কোলে এলাম!
মিথ-৩
❑
স্বপ্নে পিতা আমাকে কোরবানি করার আদেশ
পান। বিশ্বাসী মানুষ তিনি। সারাদিন তসবীহ
হাতে খোঁদার নাম জপেন। আল্লা-বিল্লা করেন।
আমার দিকে তাকান। তার হৃদয় ভেঙে যায়।
তার চোখ টলমল করে। গাল বেয়ে অশ্রু নামে।
সেই অশ্রুতে ভিজে যায় পবিত্র কিতাব।
তিনি বিশ্বাসী মানুষ। রক্ত দেখে শিউরে ওঠেন।
সারাদিন ছুরিতে ধার দেন ।
ছুরি দিয়ে সবজি কাটেন।পাঁথরে আঘাত করেন।
তিনি বিশ্বাসী মানুষ। রক্ত দেখে ভয় পান।
আর আমাকে কোবারবানি করার জন্য,
উপযুক্ত স্বপ্ন তালাশ করতে থাকেন।
মিথ- ৪
❑
এখনো গড়াইতেছে জল
ওজুর সেই জল গড়াইতে গড়াইতে
ভিজতেছে মৃত্তিকামায়া
ভিজতেছে হৃদয়
তুমি চলেছো মেরাজে।
সাক্ষাৎ পেতে চলেছো সপ্ত আসমানে
বাঁশি বাজতেছে।
কার নামের সেই মোহন বাঁশি
বাজতেছে
নাম ধরে ডাকতেছে
তুমি চলেছো মেরাজে।
বলতেছো কথা মনেমনে।
কী কথা? কার সনে, কাহার সনে?
মিথ- ৫
❑
তোমাকে হাজরে আসওয়াদ জেনে
খেয়েছি অজস্র চুমু
করেছি কত তাওয়াফ
সাফা আর মারওয়া পর্বতে দৌড়ে গেছি
সম্মোহনী বার্তা শুনে
তোমাকে খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত ফিরেছি গৃহে
অসীম পরাক্রমশালী এই
সময়ের দরোজা
খুলতে গিয়ে
হাপিয়ে গেছি।ভেবেছি সেই সিংহ পুরুষের কথা
যার এক হাতে শোভা পেত তরবারি
অন্যহাতে ঢাল হিসেবে থাকতো সদর দরোজা
কিন্তু, হৃদয়ের কোথাও শুনতে পাইনি
প্রিয় স্পন্দন
কেপে উঠেছি ব্যথায়
কেপে উঠেছি লজ্জায়
তারপর ক্ষুধাতুর কুকুরের ন্যায়
ফিরে গেছি অপমানে;
সময়ের সদর দরোজা হতে !
মিথ- ৬
❑
অভাবে পিতা কাঠের নৌকাটি ভাসাতেন
স্বভাবে মাতা দুয়ারে দাঁড়ায়ে থাকতেন
অশ্রু ফেলতেন নিঃশব্দে ।
নৌকার তলদেশের ছিদ্রপথে বুদবুদ আকারে
জল ঢুকতো
নৌকাটি মৃদু দুলতো
দুলতে দুলতে নৌকাটি অল্প ডুবতো
দাঁড় টানতে টানতে পিতা নূহের নৌকার
কথা বলতেন
বলতেন অবাধ্য পুত্র কেনানের কথা
মাঝ নদীতে ঝড় উঠতো
তিনি দরুদ পড়তেন। বুকে ফুঁ দিতেন।
খোঁদার নাম জপতেন ।
আর দূর পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে
কেনান কেনান বলে চিৎকার করে উঠতেন ।
মিথ-৭
❑
নাকের ছিদ্রপথে একটি মশা ঢুকে যেতেই
নিজেরে নমরুদের বংশধর মনে হলো।
যেনো কেউ একজন মাথার পেছেন দাঁড়িয়ে আছে
হাতে নিয়ে শক্তপোক্ত লাঠি।
ভয়ে-শঙ্কায় পেছন ফিরে তাকাই
ফের সামনে তাকাই
এরপর ডানে-বায়ে তাকাই।
মাথার ভেতর প্রতি সেকেন্ড অন্তর অজস্রবার
ডানা ঝাপটানোর শব্দ শুনতে পাই।
মিথ -৮
❑
বৃক্ষের পাশে দাঁড়ালে চেরাই কলের শব্দ শুনতে পাই।
মনে হয় আমাকেই কেউ দ্বিখণ্ডিত করছে
কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলছে।
ক্ষত বিক্ষত বৃক্ষের পাঁশে
ছিন্নভিন্ন আমি
ছিন্নভিন্ন আমাদের দেহপল্লব
নিঃশব্দে ছড়ায়ে ছিটায়ে রই;
বায়তুল মুকাদ্দাসের
মৃত্তিকা মায়ায় ।
দ্বিখণ্ডিত বৃক্ষ
দ্বিখণ্ডিত আমি, নত মস্তকে তাকাই ।
ছিন্নভিন্ন আমার কায়া
টুকরো টুকরো আমার ছায়া;
কেউ জুড়ে দিচ্ছেন পরম নিবিড় ।