somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিথগুচ্ছ

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১০:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মিথ-১

স্বর্গ হতে পতনের মুহূর্ত আদম’কে তাড়িয়ে নিয়ে গেছে সাড়ে তিন'শ বছর। তাঁর চোখ থেকে অশ্রু শুকিয়ে যেত। পিপাসায় কণ্ঠ খাঁখাঁ মরুভূমি হয়ে যেত। তিনি ভুলে যেতে চাইতেন গন্ধম ভক্ষণের স্মৃতি। প্রতিদিন আমি যখন হেঁটে যাই মৃত ঝর্নাটির পাশ ঘেঁষে, তখন মনে হয় এটিই আদমের সেই প্রাচীন অশ্রুধারা। দীর্ঘকাল ক্রন্দনের ফলে শুকিয়ে গেছে। প্রতিবার আমার স্ত্রী যখন আমার দিকে পাকা আপেলফল বাড়িয়ে দেয়; আমি তার পানে সন্দেহ ভরে তাকাই। ভাবি, এরপর সে আমাকে কোথায় নিক্ষেপের ষড়যন্ত্র করছে !

মিথ- ২

আমাদের 'পিতা' ছিলেন ঈশ্বরের বাগানের মালি
'মা' ছিলেন ঈশ্বরের বাড়ির দাসী।

বাগান এবং বাড়ির মাঝখানে যে দূরত্ব
তার ভেতর বয়ে যেত একটি সরু-কটি-নদী।

একদিন একটি আপেল নদীর স্রোতে
একদিন একটি আপেল ভাসতে ভাসতে
পৌঁছে গেল মায়ের ঠিকানায়।

'মা' আপেল'টি খেলেন
আমি হাসতে হাসতে মা'র কোলে এলাম!

মিথ-৩

স্বপ্নে পিতা আমাকে কোরবানি করার আদেশ
পান। বিশ্বাসী মানুষ তিনি। সারাদিন তসবীহ
হাতে খোঁদার নাম জপেন। আল্লা-বিল্লা করেন।
আমার দিকে তাকান। তার হৃদয় ভেঙে যায়।
তার চোখ টলমল করে। গাল বেয়ে অশ্রু নামে।
সেই অশ্রুতে ভিজে যায় পবিত্র কিতাব।
তিনি বিশ্বাসী মানুষ। রক্ত দেখে শিউরে ওঠেন।
সারাদিন ছুরিতে ধার দেন ।
ছুরি দিয়ে সবজি কাটেন।পাঁথরে আঘাত করেন।
তিনি বিশ্বাসী মানুষ। রক্ত দেখে ভয় পান।
আর আমাকে কোবারবানি করার জন্য,
উপযুক্ত স্বপ্ন তালাশ করতে থাকেন।

মিথ- ৪

এখনো গড়াইতেছে জল
ওজুর সেই জল গড়াইতে গড়াইতে
ভিজতেছে মৃত্তিকামায়া
ভিজতেছে হৃদয়
তুমি চলেছো মেরাজে।
সাক্ষাৎ পেতে চলেছো সপ্ত আসমানে
বাঁশি বাজতেছে।
কার নামের সেই মোহন বাঁশি
বাজতেছে
নাম ধরে ডাকতেছে
তুমি চলেছো মেরাজে।
বলতেছো কথা মনেমনে।
কী কথা? কার সনে, কাহার সনে?

মিথ- ৫

তোমাকে হাজরে আসওয়াদ জেনে
খেয়েছি অজস্র চুমু
করেছি কত তাওয়াফ
সাফা আর মারওয়া পর্বতে দৌড়ে গেছি
সম্মোহনী বার্তা শুনে
তোমাকে খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত ফিরেছি গৃহে
অসীম পরাক্রমশালী এই
সময়ের দরোজা
খুলতে গিয়ে
হাপিয়ে গেছি।ভেবেছি সেই সিংহ পুরুষের কথা
যার এক হাতে শোভা পেত তরবারি
অন্যহাতে ঢাল হিসেবে থাকতো সদর দরোজা
কিন্তু, হৃদয়ের কোথাও শুনতে পাইনি
প্রিয় স্পন্দন
কেপে উঠেছি ব্যথায়
কেপে উঠেছি লজ্জায়
তারপর ক্ষুধাতুর কুকুরের ন্যায়
ফিরে গেছি অপমানে;
সময়ের সদর দরোজা হতে !

মিথ- ৬

অভাবে পিতা কাঠের নৌকাটি ভাসাতেন
স্বভাবে মাতা দুয়ারে দাঁড়ায়ে থাকতেন
অশ্রু ফেলতেন নিঃশব্দে ।
নৌকার তলদেশের ছিদ্রপথে বুদবুদ আকারে
জল ঢুকতো
নৌকাটি মৃদু দুলতো
দুলতে দুলতে নৌকাটি অল্প ডুবতো
দাঁড় টানতে টানতে পিতা নূহের নৌকার
কথা বলতেন
বলতেন অবাধ্য পুত্র কেনানের কথা
মাঝ নদীতে ঝড় উঠতো
তিনি দরুদ পড়তেন। বুকে ফুঁ দিতেন।
খোঁদার নাম জপতেন ।
আর দূর পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে
কেনান কেনান বলে চিৎকার করে উঠতেন ।

মিথ-৭

নাকের ছিদ্রপথে একটি মশা ঢুকে যেতেই
নিজেরে নমরুদের বংশধর মনে হলো।
যেনো কেউ একজন মাথার পেছেন দাঁড়িয়ে আছে
হাতে নিয়ে শক্তপোক্ত লাঠি।
ভয়ে-শঙ্কায় পেছন ফিরে তাকাই
ফের সামনে তাকাই
এরপর ডানে-বায়ে তাকাই।
মাথার ভেতর প্রতি সেকেন্ড অন্তর অজস্রবার
ডানা ঝাপটানোর শব্দ শুনতে পাই।

মিথ -৮

বৃক্ষের পাশে দাঁড়ালে চেরাই কলের শব্দ শুনতে পাই।
মনে হয় আমাকেই কেউ দ্বিখণ্ডিত করছে
কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলছে।
ক্ষত বিক্ষত বৃক্ষের পাঁশে
ছিন্নভিন্ন আমি
ছিন্নভিন্ন আমাদের দেহপল্লব
নিঃশব্দে ছড়ায়ে ছিটায়ে রই;
বায়তুল মুকাদ্দাসের
মৃত্তিকা মায়ায় ।
দ্বিখণ্ডিত বৃক্ষ
দ্বিখণ্ডিত আমি, নত মস্তকে তাকাই ।
ছিন্নভিন্ন আমার কায়া
টুকরো টুকরো আমার ছায়া;
কেউ জুড়ে দিচ্ছেন পরম নিবিড় ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ১১:৫৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×