আমাদের কলোনীর সবার অত্যন্ত প্রিয় আংকেল শাকিল আংকেলের দুই সন্তান এবং তারা যমজ।ফলে ওরা দুজনই আমার ক্লাসমেট এবং খুবই ক্লোজ ফ্রেন্ড।একজন হল শাহেনশাহ বিন শাকিল (যারা আমার লেখা আগে পড়েছেন তারা তাকে শেকি শাকিল নামে চিনেন।আর একজন তার বোন শেরিলিন শাকিল।আমার জীবনে আমি এখন পর্যন্ত যত যমজ দেখেছি সবগুলা বদের হাড্ডি!
এরা দুজনও ব্যতিক্রম নয়।কিন্তু এরা যেমন ট্যালেন্ট তেমন সুন্দর দেখতে। শেরিলিনকে দেখেছে কিন্তু দীর্ঘশ্বাস ফেলেনি এমন পুরুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না! যে দেখেছে সেই সাথে সাথে বুঝে গেছে তারা বাংলাদেশের সবচে সুন্দরী মেয়েটিকে দেখছে!
ইন্টারমিডিয়েটে থাকতে আমি একদিন ক্লাশে ওকে বললাম,”মেরিলিন!
(একমাত্র আমিই ওকে মেরিলিন ডাকি।আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট কেনেডির প্রেমিকা মেরিলিন মনরোর সাথে মিলিয়ে।)
তুই হচ্ছিস বিশ্বের সবচে সুন্দরী!”
-দ্যাখ সুমন মানুষকে হাসানোর কিছু ক্ষমতা তোর আছে এটা মানি কিন্তু আমার সবচে বেশী হাসি পায় কখন জানিস?
-কখন?
-আমার সবচে হাসি পায় যখন তুই আমাকে পটাতে আসিস!
-তাহলে তো খুব ভাল হল! আরো বেশি করে হাসবি! হাসলে তোকে আরো বেশি সুন্দর লাগে! তুই হাসলে “লাভ” তো আমারই!
-আমি হাসলে তোর লাভ মানে?
-তোর মিতা আমেরিকার মেরিলিন মনরো বলেছিল,"আপনি যদি একটি মেয়েকে হাসাতে পারেন তবে তাকে দিয়ে যে কোন কিছুই করিয়ে নিতে পারবেন!”
-তুই তো আমাকে অনেক হাসিয়েছিস কিন্তু কোনদিন কী কিছু করাতে পেরেছিস?
-আফসোস! কিছুই করাতে পারিনি! এমনকী পরীক্ষার সময় আমার হিসাব বিজ্ঞান খাতায় একটা ভুল ডেবিট এন্ট্রিকে ক্রেডিটও করাতে পারিনি! মেরিলিন মনরো এত বড় ভুল কথা বলল কীভাবে?
-তার কারণ হল সে কথাটা বাংলাদেশের মেয়েদের জন্য বলেনি। বলেছে তাদের সম কালচারের দেশের মেয়েদের জন্য।বাংলাদেশের মেয়েদের দিয়ে কিছু করাতে হলে তাদের শুধু হাসালে “কিছছু” হবে না! নেসেসারি রিকয়ারমেন্টগুলো পূরণ করতে হবে।
-দেন হোয়াট আর দ্যা নেসেসারি রিকয়ারমেন্ট?
-এটা তোকে কেন বলব? যাকে বলার তাকেই বলব হোয়াটস আই ওয়ান্ট।নাও গো টু ইওর সিট এন্ড প্রে!
-প্রে হোয়াট?
-প্রে … এ পরী মে ফল ফ্রম দ্যা স্কাই এন্ড বিকাম ইওর গার্লফ্রেন্ড! আদারওয়াইজ আই ডোন্ট সি এনি পসিবিলিটি অফ হ্যাভিং বিন এবল টু সি ইউ হ্যাভ এ গার্লফ্রেন্ড!(শেরিলিনের স্ট্রাকচার জটিল প্রকৃতির! আমি ইংরেজী বাক্যের স্ট্রাকচারের কথা বলছি…)
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেঞ্চে ফিরে গেলাম।ইতিমধ্যে বাংলার দুষ্ট রোমান্টিক আলমগীর স্যার ক্লাশে এসেছেন। তিনি রোল কল করছেন আর আমি ভাবছি “আহা! শেরিলিন তুমি কেন মেরিলিন নও!” ইত্যাদি ইত্যাদি।
রোল কল শেষে স্যার বললেন,” শেরিলিন এবং সুমন প্রায়ই একই সাথে অনুপস্থিত থাকে? ঘটনা কী? ওরা কী যুক্তি করে কলেজ ফাঁকি দেয় না কী?
(পুরো ক্লাশ হাসিতে ফেটে পড়ল)
শেরিলিন দাঁড়িয়ে বলল.”স্যার আমি আছি! প্রেজেন্ট দিতে ভুলে গেছি!”
এবার আমি দাঁড়িয়ে বললাম,”স্যার আমিও আছি!প্রেজেন্ট দিতে ভুলে গেছি!”
স্যার বললেন,”তোরা দুজন কী আকাশ থেকে এইমাত্র নেমে এলি নাকী? আমি তিনবার করে রোল কল করলাম! (ততক্ষণে আমি বুঝলাম আমাকে শাকিল কনুই দিয়ে গুঁতো দিচ্ছিল কেন! শাকিল যদি জানত আমি কী ভাবছিলাম তাহলে যে কী হত!)
স্যার এর বোধহয় সেদিন মুড ছিল না। তা নইলে স্যার সেদিন একইসাথে প্রেজেন্ট দিতে ভুলে যাওয়াকে কেন্দ্র করে পুরো ক্লাশকে হাসাতে হাসাতে শেষ করে দিতেন!
ক্লাশ শেষে আমি শেরিলিনকে বললাম,” আই প্রেড ফর এন এনজেল টু ফল ফ্রম স্কাই।বাট দ্যা স্কাই সে’স দেয়ার ইজ অলরেডি এন এনজেল ইন ইউর ক্লাশ।শি ইজ এনাফ! নো নীড টু সেন্ড দ্যা সেকেন্ড এনজেল…”
-দেন আই এ্যাম এফ্রেইড টু সে মাই ডিয়ার ফ্রেন্ড, ইউ উইল নট হ্যাভ এ গার্লফ্রেন্ড!
শি ওয়াজ কারেক্ট।আই ডিডন’ট হ্যাভ গার্লফ্রেন্ড টিল দেন।
একসময় শেরিলিন স্কলারশীপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে গেল।ও যাওয়ার মাসখানেক পরে একদিন আমি ওকে ফোন করে বললাম,”আই মাস্ট কনগ্র্যাচুলেট এ্যামেরিকা! বিকজ দে হ্যাভ এ নিউ মেরিলিন! বাট হু ইজ দ্যা নিউ কেনেডি?
আমার কথা শুনে শেরিলিন অনেক্ষণ হাসল!
(আচ্ছা ও তো এখন যুক্তরাষ্ট্রে! এখন যে ওকে হাসাচ্ছি তাতে কী কোন ফায়দা হবে? উত্তর পাওয়া গেল ওর জবাবে…)
অত্যন্ত প্রতিভাবান এবং বাকপটু শেরিলিন জবাব দিল,”আই লেফট হিম মেনি ইয়ারস এগো ইন বাংলাদেশ এন্ড মোর ইম্পরট্যান্টলি… এ্যাট মাই ফার্স্ট সাইট!
বহুবছর আগের কলেজের সেই ডায়লগ আবার স্মৃতিতে এল,”আহা! শেরিলিন তুমি কেন মেরিলিন নও?”
----------------------------------