আমি বর্তমান যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সাথে দুবার হ্যান্ডশেক করার সুযোগ পেয়েছি। প্রথমবার যখন হাত মিলাই তখন আমি খুব ছোট। খুব সম্ভবত আমি তখন ক্লাস সেভেনে বা এইটে। উপলক্ষ পৌরবৃত্তি গ্রহণ। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র আমি ছিলাম না। পৌরবৃত্তি পেতে যেহেতু অত মেধ
াবী হওয়ার দরকার ছিল না তাই আমি ওটা আমি পেয়েছি।
কিন্তু আমি শুনেছি জনাব ওবায়দুল কাদের অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। আমাদের রাজনীতিতে যে অল্পকিছু মেধাবী রাজনীতিবিদ আছেন তিনি অবশ্যই তাদের একজন। তাই মেধা ও মেধাবী রাজনীতিবিদ শিরোনামের লেখায় তার কাছাকাছি আসার স্মৃতি শেয়ার করছি। শুরুতে যা বলছিলাম তার সাথে দুবার হ্যান্ডশেক করেছি। দ্বিতীয়বার করেছি আরেকটু বড় হবার পর যখন আমি নোয়াখালী অনুর্ধ্ব-১৯ দলের কম বয়সী সদস্যদের একজন। নোয়াখালী স্টেডিয়ামে সেদিন তিনি আমাদের উদ্দেশ্যে কিছু একটা বলেছিলেন। ঠিক কী বলেছিলেন তা আজ আর আমার মনে নেই।
কিন্তু মজার ব্যাপার হল আমি যখন আরো ছোট তখন নোয়াখালী পৌরহলে পৌরবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে তখনকার যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কী বলেছিলেন তা আমার এখনো মনে আছে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আমি গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো মনে রাখতে পারি। পৌরহলে বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রদের পাশাপাশি তাদের অভিভাবকরাও ছিলেন। জনাব ওবায়দুল কাদের তাদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন," আপনারা আপনাদের মেধাবী ছেলে মেয়েদেরকে রাজনীতিতে আসতে দেন না বলেই আমাদের দেশের রাজনীতি মেধাশূণ্য হয়ে পড়ছে। আমি তো রাজনীতি করেছি, কই ভাল রেজাল্ট করতে আমার তো কোন সমস্যা হয়নি। সুতরাং আমি আপনাদের আহ্বান জানাই আপনাদের মেধাবী সন্তানদেরকে রাজনীতিতে আসতে দিন।
... এরপর এরকম আরো কিছু বলার পর তার বক্তব্য শেষ হয়েছিল তুমুল করতালির মধ্য দিয়ে। কিন্তু অভিভাবকরা ও ছাত্র-ছাত্রীরা (যারা কিছু না বুঝেই হাততালি দিয়েছিল!) হাততালি দিয়েই খালাশ। বেশিরভাগ অভিভাবকরা তাদের মেধাবী সন্তানদেরকে এরকম সংঘাতময় ছাত্র রাজনীতির দেশে কোনমতেই রাজনীতি করতে দিতে রাজি নয়। সুতরাং শ্রদ্ধেয় ওবায়দুল কাদেরের প্রথম দু লাইনের সাথে আমি একমত। মেধাবীরা রাজনীতিতে না আসলে রাজনীতি অবশ্যই মেধাশূণ্য হয়ে পড়বে। কিন্তু মেধাবীরা যাতে রাজনীতিতে আসতে পারে তার পরিবেশ তৈরী করা বর্তমান রাজনীতিবিদদেরই দায়িত্ব।
তারা তা না পারলে বেশিরভাগ মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীই সক্রিয় রাজনীতিতে আসবে না। যা দেশের উন্নতির পক্ষে বিশাল অন্তরায় হয়েই থাকবে। কিন্তু এখনকার ফেসবুক প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা রাজনীতি না করলেও তারা রাজনীতি সচেতন। ওবামার বিজয় ও আমেরিকার ইলেকশানের খবর আপনি ঢাকার যে কোন স্কুলের ছাত্রের কাছে পাবেন। আর কলেজ বা ভার্সিটির ছেলেরা তো রাখেই।
সুতরাং তারা এটাও জানে ওবামা কেন জিতেছেন আর রিপাবলিকানরা কেন হেরেছে। তাই বিশ্বের এই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে ওবামার বিজয় প্রতিটা দেশের রাজনীতি চিন্তক ও রাজনীতি সচেতন ব্যক্তিকে ভিন্ন ভাবে চিন্তা করতে বাধ্য করছে। মেধা যে রাজনীতিতে কতটা প্রয়োজন তা ওবামার বিজয় সবাইকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।তার বিজয়ে মেধা ও মেধাবী রাজনীতিবিদদের জয়গান বিশ্ববিখ্যাত কলাম লেখকদের লেখায় ভিন্নমাত্রায় শুরু হয়েছে।
কারণ আমেরিকার পত্র পত্রিকাই বলছে,"ওবামার দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হবার কথা ছিল না"। ঠিক এ জায়গায়ই ওবামার এ বিজয়টা খুবই স্পেশাল। ঠিক এ জায়গায়ই মেধা ও মেধাবী রাজনীতির জয়গান শুরু হয়েছে। আমি রাজনীতি বিশ্লেষক নই। রাজনীতি খুব একটা ভাল বুঝিও না। তাই এ লেখা আর বড় করার যোগ্যতা আমার নেই। শেষ করব একটা প্রার্থনা দিয়ে।
আমরা আশা করি না যে আগামীকালই আমাদের দেশে একজন ওবামা বা একজন মাহাথির মোহাম্মদ চলে আসবেন কিন্তু আমার প্রার্থনা অনেক ওবায়দুল কাদের ও অনেক মির্জা ফখরুল এসে আমাদের রাজনীতিকে সমৃদ্ধ করুক। তাদের পথ ধরেই একদিন আমরা বাংলাদেশে একজন ওবামা বা একজন মাহাথির মোহাম্মদ পেয়ে যাব ইনশাআল্লাহ্।