somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রবাসের দিনরাত্রি

১৭ ই মে, ২০১০ দুপুর ১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ সকাল থেকেই হাসানের মন খুব খারাপ। কাজে যেতে ইচ্ছে করছে না। কত কাল হয়ে গেছে দেশ ছেড়ে সে প্রবাসে পড়ে রয়েছে। এখন আর মাস বছর মনে থাকে না। পরিবারের লোকজনের চেহারাও এখন অনেকটা ঝাপসা হয়ে এসেছে।
কত দিন বাবা-মা, ভাই-বোনদের দেখে না। ছোট ভাই-বোনটা কত বড় হয়েছে। হাসানের কাছে তাদের বয়স বাড়েনি। সেই অনেক কাল আগে তাদের সেই ছোট্রটি দেখে এসেছে। এখনও তার চোখে তাদের সেই ছেলেবেলাটাই ভেসে উঠে।

দেশে এখন কোন কাল চলছে। শীতকাল নাকি বর্ষা কাল। এই মরুর দেশেও মাঝে মাঝে বৃষ্টি হয়। কিন্তু সেই বৃষ্টির পানিতে দেশের বৃষ্টির মত মন আকুলি বিকুলি করে না।

শরীরটা কয়েক দিন ধরে ভাল যাচ্ছে না। থেকে থেকে জ্বর আসে। কিন্তু কাজে না গিয়ে কোন উপায় নেই। যে মালিকের কারখানায় সে কাজ করে সেই মালিক নিজের দামী হাত ঘড়িটা হারিয়ে ফেললে যেটুকু দুঃখ পাবে হাসান মারা গেলে সেটুকুও পাবে না। মালিকের কাছে তার পাসপোর্ট আটকানো রয়েছে। মালিক যতদিন না চাইবে ততদিন হাসান দেশে ফিরে যেতে পারবে না। অনেক দিন দেশের সাথে তার যোগাযোগ বন্ধ। মাস শেষে শুধু নাম মাত্র বেতন আর তিন বেলা খেতে দেয়া হয়। বাকী বেতন মালিক কেটে রেখে দেয় । মালিক যখন তাকে দেশে ফিরতে দেবে তখন তাকে তার পাওনা টাকা বুঝিয়ে দেয়া হবে। হাসান জানে বেশির ভাগ শ্রমিকের ক্ষেত্রেই মালিক তাদের কথা রক্ষা করে না। কিছু বলতে গেলে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। অবৈধ বাঙালী শ্রমিকদের সাথে এই দেশের পুলিশ জন্তুর মত আচরণ করে।

মাঝে মাঝে রাতে হাসান চুপি চুপি কাঁদে। তার তখন চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে-বাবা ও বাব আমাকে তুমি দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাও। আমি আর এখানে থাকব না। এখানে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। ভাল চাকরির লোভে দেশে বাবার জমিজমা মার গহনা বিক্রি করে বিদেশে এসেছে। এখন ইচ্ছে করলেও খালি হাতে দেশে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। মাঝে মাঝে হাসান দেশে ফোন করলে মা ফোন ধরে কাঁদেন আর বলেন ও বাব তুই ভাল আছিস। হাসান কোন উত্তর দিতে পারে না। শুধু তার বুকের ভেতর কান্না দলা পাকিয়ে উঠে।

অনেক দেশে পোষা প্রাণীদের অধিকার সংরক্ষণের জন্যে অনেক মানবাধিকার সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের মতো অধিকার বঞ্চিত শ্রমিকদের জন্যে কেউ কি কখনও মাথা ঘামায়। তারাতো ঐ সব পোষা প্রাণীদের চেয়েও মানবেতর দিনযাপন করে থাকে।

হাসান সময় মতই অফিসে এসে পৌছে। আজ মালিক অফিসে আসেননি। প্রবাসীদের নিয়ে এখানে কি একটা অনুষ্ঠান হচ্ছে। দেশ থেকে বিভিন্ন মিডিয়া থেকে অনেক লোকজন এসেছে। পুরো অনুষ্ঠান যারা স্পন্সর করছেন, তার মধ্যে হাসানের মালিকও একজন। হাসানের মতো লোকদের ঐ সব অনুষ্ঠানে যাওয়ার সৌভাগ্য কখনই হবে না। সারাদিন অমানুষিক পরিশ্রমের পর রাতে বাড়ী ফিরে টিভিতে হাসান অনুষ্ঠানের পুনঃপ্রচার দেখতে পায়। অনুষ্ঠানের সবাই খুব আনন্দ করছে। চারদিকে চোখ ধাঁধাঁনো লেজার শো। আনন্দ শুধুই আনন্দ। হাসানের চোখ এক সময় ঝাপসা হয়ে আসে। এখন আর সে টিভিতে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না।

প্রতি বছর প্রবাসী বাঙালীদের নিয়ে এমনি আরও অনেক অনুষ্ঠান হবে কিন্তু তার মত লোকদের ভাগ্যের কখনও কোন পরিবর্তন হবে না। কারও কাছে এত সময় নেই যারা তাদের নিয়ে মাথা ঘামাবে। তাদের হয়ে সবার কাছে দুটি কথা বলবে। সবাই আছে অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত। দর্শকদের যে কোন ভাবে একটি উপভোগ্য বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান তাদের উপহার দিতে হবে। দেশের সব টিভি চ্যানেল ব্যস্ত হয়ে পড়বে কার আগে কে ঐ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। পত্রিকায় ফলাও করে ছাপা হবে-মরুর বুকে হয়ে গেল প্রবাসী বাঙালীদের নিয়ে আনন্দঘন এক জমকালো অনুষ্ঠান। প্রবাসীদের নিয়ে এ ধরনের অনুষ্ঠান আরও বেশী বেশী হওয়া দরকার। কারণ এরাই হচ্ছেন আমাদের দেশের চালিকা শক্তি। এদের পাঠানো কষ্টের উপার্জনের টাকা দিয়েই দেশে চলছে।

** কিছুদিন পূর্বে কুয়েতে বাংলাদেশী শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর আন্দোলনের পরবর্তী ফলাফল আমরা জানি। কয়েকজন শ্রমিকের ভুল সিদ্ধান্তের দায় দায়িত্ব নিতে হয়েছে শত শত শ্রমিকদের। প্রবাসী শ্রমিকরা যখন দেশে ফেরত আসে তখন এয়ারপোর্টে তাদের নামার ছবি ছাপা হয় বিভিন্ন দৈনিকে। সেখানে শ্রমিকদের পায়ে কোন জুতা নেই। যাদের আছে তাদের দুই পায়ে দুই ধরনের জুতা। এই ছবির পর আর কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রবাসে তারা কিরকম দীন হীন অবস্থায় বাস করে এটা হচ্ছে তার নমুনা।

কুয়েত সরকার তাদের প্রতি যে অন্যায় আচরণ করেছে তখন সেখানকার বাংলাদেশী দুতাবাসের কাজ কি ছিল। তারা কেন তখন একটি কার্যকরী ভূমিকা নেয়নি। প্রবাসে কখনও বাঙালীরা কোন সমস্যায় পড়লে বাংলাদেশী দূতাবাসের খুব ভাল সহায়তা পেয়েছে বলে আমার জানা নেই। যার জন্যে একই কাজের জন্যে একজন বাঙালীকে যে অর্থ দেয়া হয় সেই একই কাজের জন্যে একজন ইন্ডিয়ান কে তার তিন গুন অর্থ দেয়া হয়। তাহলে এত অর্থ অপচয় করে বিদেশে এই সব দূতাবাস রাখার দরকার কি। তাই এদের কাছ থেকে আমরা আজ আর কোন কিছু প্রত্যাশা করি না।

মিডিয়া প্রবাসে বেশ কিছু প্রশংসনীয় কাজ করছে। প্রবাসীদের নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তারা বিদেশে দেশের সংস্কৃতিকে সারা বিশ্বের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। পাশাপাশি তারা যদি ঐ সব হতভাগ্য প্রবাসী বাঙালীদের কথা সমগ্র প্রবাসীদের সামনে তুলে ধরতে পারে তবে তা অনেক বড় একটা কাজ হবে। মিডিয়ার শক্তি অনেক তবে সে যদি তার শক্তিকে শুধু মাত্র ব্যাবসায়িক কাজে না লাগিয়ে যথাযথ ভাবে তার শক্তিকে মানুষের প্রয়োজনে কাজে লাগায়।

** রিপোস্ট।

৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×