somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালবাসায় বিসর্জন

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ ভোর ৪:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :






এই মাত্র কেনা খবরের কাগজে চোখ আঁটকে যায় জুনায়েদের। তিন বছরের একটা মেয়ের ছবি দিয়ে হেডলাইন করা হয়েছে"হারানো বিজ্ঞপ্তি! শিশুটি আজ সকালে তার মায়ের সাথে শপিং মলে গিয়ে হারিয়ে গেছে! শিশুটির সন্ধান দিতে পারলে একলক্ষ টাকা পুরষ্কার দেয়া হবে!”এই পর্যন্ত পড়ে জুনায়েদ ঠোঁট বাঁকা করে হাসে। পাশে বসা নিজের মেয়েটাকে কোলে তুলে আদর করে। মেয়েটা মা ছাড়া যেন কিছুই বোঝে না। বাবার কোলে এসেও কাঁদছে! ওকে চুমু দিয়ে জিজ্ঞাসা করে- মামনি তুমি আইসক্রিম খাবে? মেয়েটা ফুঁপিয়ে কাঁদে বলে -মাম্মির কাছে যাব! জুনায়েদ নিজের হাত ফোন বানিয়ে কানে ধরে- হ্যালো তুমি কেন এখনও আসো না। দীপ্তি সোনা কাঁদছে...তাড়াতাড়ি এসো! এবার দীপ্তি হেসে দেয়! মাথা ঝাঁকিয়ে আধো স্বরে বলে-"মাম্মি আসছে?" জুনায়েদ ওকে আবার আদর করে দেয়।
-হ্যাঁ মা আসছে। মেয়েটাকে চুমুতে চুমুতে ভরে দেয়। ওর কথা বলা,ওর তুলতুলে গাল। ওর ছোট্ট ছোট্ট হাত পা সবকিছুতে আদর বুলিয়ে দেয়-"দীপ্তিসোনা বল আব্বু!"দীপ্তি ছোট্ট মাথাটা দুইদিকে নাড়িয়ে বলে "না"! জুনায়েদ মেয়েকে কাতুকুতু দেয়। এবার দুজনেই হেসে দেয়।

আজ সারাদিন মেয়েটাকে নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে। জুনায়েদ নিজের ভালো কাজের জন্য পাওয়া অর্থ দিয়ে,মেয়েকে বেশকিছু খেলনা আর ড্রেস কিনে দিয়েছে। সে মেয়েকে আজ একটা জিনিষ শিখিয়েছে। ঠোঁট দুটো একসাথে করে মুখের ভীতর দিয়ে জোরে বাতাস দেয়া। আর এতে ফ্রো ফ্রো করে একটা আওয়াজ হয়। থুতু ছিটে ঠোঁট ভরে যায়। এই খেলাটা দীপ্তি ভীষণ পছন্দ করেছে। অথচ এই খেলাতে ওর মায়ের ভীষণ বিরক্ত। যতবার জেনি রাগ করত জুনায়েদ ওকে হাসানর জন্য খেলাটা খেলত। আর সে রাগে একেবারে ওকে মারতে আসত। জুনায়েদ খপ করে ওকে ধরে বুকের মাঝে নিয়ে আদর করে রাগ ভাঙাত। এখন অবশ্য জেনির কাছে এসব খেলা শুধু বিরক্তির না,রীতিমত সে ঘৃণা করে এসব ছেলে মানুষী! কথাটা মনে হতেই আবার হাসে জুনায়েদ। ড্রাইভারকে বলে " ভাই একটু জোরে গাড়ী চালাও...।"

মনে পড়ে একটা সময়ে বেশকিছু টিউশনি করে জুনায়েদকে নিজের খরচ চালাতে হত। জেনি হল তার একমাত্র কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী। পড়াতে এসে এক সময় ওদের ভালবাসা হয়। দুজনের মাঝে বাড়ে ঘনিষ্ঠতা। শরতের নীল আকাশে পেঁজা পেঁজা মেঘে ওরা দুজন ভেসে বেড়ায়। জুনায়েদ কাশফুলের নরম পরশ এঁকে দেয় জেনির ভেজা ঠোঁটে। ঝিরঝির হাওয়ার আবেশে দুজন অনেক কাছে আসে। এতটাই কাছে যে,হেমন্তেই ভাদরের আলোড়ন তোলে জেনি'র গর্ভধারণ! ওদের দৃঢ় ভালবাসায়,ওরা সিদ্ধান্ত নেয় বিয়ে করবে। কিন্তু জেনির ধনী বাবা গ্রাম্য কৃষকের ছেলের সাথে নিজের একমাত্র সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে দিবেন না। আর তাই বাবার সিন্দধান্তের বিরুদ্ধে কাজ করে জেনি! একদিন মধ্যরাতে এক কাপড়ে বের হয়ে আসে জুনায়েদের মেসে! জুনায়েদ ওকে বারবার বুঝায়
- জেনি প্লিজ তুমি বাসায় যাও। আমি তোমার বাবাকে রাজী করিয়ে তারপর বিয়ে করব।
কিন্তু ও কোন কথা শুনতে রাজী হয় না। হুহু করে কেঁদে যায়। বলে
-আজ যদি বিয়ে না কর তাহলে আর তোমার সাথে আমার বিয়ে হবে না। বাবা আমাকে অন্য ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দেবে!
-“কিন্তু তুমি আমার সন্তানের...”ওর কথা শেষ না হতেই জেনি বলে
-জুনায়েদ আমার বাবা সব জেনে শুনেই ধনী ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করেছে। প্লিজ চল আমরা বিয়ে করি।
জুনায়েদ এখন কী করবে? গরীব বাবা অনেক কষ্টে ওর লেখাপড়ার খরচ দিয়েছে। সে কোন চাকুরী করে না। এখন বিয়ে করলে কীভাবে চলবে!? তাছাড়া একটা শিশুকেও লালন পালন করতে হবে! এটা সত্যি যে,ওরা দুজন দুজনকে অনেক ভালবাসে। দুজনেরই ভাবনা -"অন্যায় ওরা করেছে ওদের শিশুটি নয়।" তাই তাকে খুন করার চিন্তা ওরা করতে পারে না। জেনির বাবা সব কিছু শুনে জুনায়েদকে রীতিমত অপমান করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। "আমার মেয়ের আশেপাশে যেন না দেখি! তাহলে গলা কেটে নদীতে ভাসিয়ে দেব!" এভাবে শাসাতেও ছাড়লেন না বিশিষ্ট শিল্পপতি ফখরুদ্দিন জিলানী। কিন্তু এই ঘটনার বার ঘণ্টা না যেতেই তার মেয়ে এসে জুনায়েদের মেসে হাজির! জুনায়েদ ভাবে- "একটা ভুলের জন্য আরও কিছু ভুল ভালো কোন সমাধান আনবে না। কিন্তু সে জেনিকে এভাবে একা করতেও পারবে না! তা আরও অন্যায় হবে।" নানা রকম ভাবনা ভাবতে ভাবতে এক সময় ভোর হয়ে যায়। জেনির বাবা বেশকিছু গুণ্ডা ধরণের ছেলেকে সাথে করে নিয়ে এসে জেনিকে মেস থেকে ধরে নিয়ে যায়। এবং তারপর থেকে জুনায়েদকেও আর কোথাও দেখা যায়নি।

"ক্র্যাককক..." জোরে ব্রেকের শব্দ হতেই ভাবনার তার ছিঁড়ে যায়। জুনায়েদ সামনে তাকিয়ে দেখে পুলিশ বেরিকেট! বেশকিছু পুলিশ আর একজন সুন্দরী মেয়ে! মেয়েটাকে দেখে বুক চিরে গভীর দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে...! ওর কাঁধে হাত রেখে সাথে সাথে হেঁটে এগিয়ে আসে সুঠাম দেহের একযুবক। জুনায়েদ দীপ্তিকে খুব করে আদর করে নেয়। "একবার আব্বু বল মা!" দীপ্তি কেঁদে যায়। আবার চুমু দেয় ওর কপালে,মুখে। জুনায়েদ তারপর পাশের দরজা খুলে বের হতে যাবে শুনতে পায় "আব্বু...!" ওর যে কী হয়! সমস্ত শরীরে একটা শীতল অনুভূতি খেলে যায়! দীপ্তি ওকে আব্বু ডাকছে! মেয়ের মুখটা এবার দুহাতের মাঝে নিয়ে আদর করে। চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা পানি পড়তে চায়। কচি হাতে মুছে দেয় দীপ্তি। জুনায়েদ আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা। ঝড়বেগে গাড়ির দরোজা দিয়ে বের হয়ে একটা গাছের আড়ালে লুকায়।
সুঠাম দেহের ছেলেটি গাড়ির দরোজা খুলে কোলে তুলে নেয় দীপ্তিকে-"দীপ্তিসোনা মামনি...আমার জান!" দীপ্তি মাম্মি মাম্মি ডাকতে ডাকতে হাত বাড়ায় সুন্দরী মেয়েটার দিকে। মেয়েটা দীপ্তিকে কোলে নিয়ে আদর করে। মায়ের কোলে গিয়ে দীপ্তি ফ্রো ফ্রো শব্দ করে ঠোঁটে! ওর মায়ের বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠে! ভেজা চোখ ঘুরে বেড়ায় চারিদিকে। আড়াল থেকে জুনায়েদ সবকিছুই দেখতে পায়। ওর বুকের ভেতরটাও ব্যথা করে উঠে! ও দেখতে পায় হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে বিশিষ্ট শিল্পপতি ফখরুদ্দিন জিলানী। উনি ড্রাইভারকে একটা খাম এগিয়ে দিয়ে কি যেন জিজ্ঞাসা করে মাথা ঘুরিয়ে চারিদিকে দেখে! দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাঁটা শুরু করে,দুদিন আগে জেল থেকে মুক্তি পাওয়া চুল দাড়িতে ঢাকা জুনায়েদ।


!!শেষ!!











সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ ভোর ৪:২২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×