somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

**মৃত্যু পুরী থেকে মৃত একজন**

২৭ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ৯:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



হুম আজ আমি চলে গেছি তোমাদের ছেড়ে অনেক অনেক দূরে বহুদূরে।না ফেরার দেশে। চলে গিয়েছি বললে হয়ত ভুল হবে অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমাকে তোমরা পাঠিয়ে দিয়েছো নাম না জানা দেশে। কিন্তু তোমরা কি জানো আমি যে এতটা তাড়াতাড়ি যেতে চাইনি।বিন্দু মাত্রও ইচ্ছা ছিলো না এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে কিংবা প্রিয় মানুষদের ভালোবাসাগুলোকে ভুলে গিয়ে একা একা থাকার। চেয়েছিলাম আরও অনেক দিন তোমাদের মাঝে তোমাদের ভালো বাসায় মিশে থাকতে।তবে কোন অপরাধে তোমরা এত বড় শাস্তি দিলে !! কোন দোষে এতটা হিংস্র ভাবে আগুনের তেজে পুরিয়ে ঝলসে দিয়ে পৃথিবীছাড়া করলে!!শুধুমাত্র তোমাদের এই নির্মমতার জন্যই বাকি জীবন এইভাবেই একা একাই থাকতে হবে!!

তোমরা কি জানো আজ আমি বাতাসের সাথে মিশে গিয়ে দেখে এসেছি আমার সেই ছোট্ট বাচ্চাটাকে যে কিনা একটা রাতও আমাকে ছাড়া ঘুমোয়নি।দেখলাম তার চোখ দিয়ে যেন সমুদ্রের জল বাধাহীন ভাবে গরিয়ে গড়িয়ে পরছিলো। আমি ছিলাম তার অনেক কাছেই। অনেক আদর করেছিলাম আমার মানিকটাকে। চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে দিয়েছিলাম।সে যেন আমার স্পর্শ টের পেয়ে কান্না থামিয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিলো। বিশ্বাস করবে তোমরা খুব ইচ্ছা হচ্ছিলো আমি ঐ মৃত্যুপুরী থেকে ফিরে আসি।মানিকটাকে কোলে তুলে বলি দেখো -'তোমার মা আবারও তোমার মাঝে ফিরে এসেছে, মা আজ তোমায় কথা দিচ্ছে আর কখনই তোমায় ছেড়ে যাবেনা..." তোমরা কি বলতে পার কেন তোমরা এই বাচ্চাটাকে এতিম করে ফেললে?এই বাচ্চার মত আরও কত শত বাচ্চাকে বাবা মা হারা কেন করলে?? তোমাদেরও তো বাচ্চা আছে।এই মা বাবা ভালোবাসা ভুলে থাকা যে কত কষ্টের তোমরা কেন একবারও চিন্তা করলেনা? কেন তোমাদের মন পশুর চেয়েও অধম হয়ে গেছে???


বাচ্চার সেই মায়াবী মুখের দিকে ছিলাম বেশ অনেকটা সময়। ইচ্ছা হচ্ছিলো চিৎকার করে কান্না করি।কিন্তু মৃত মানুষ রা কি আর কান্না করতে পারে বল? দেখলাম আমার বাচ্চার বাবাটার অস্থিরতা।একটু পর পর এসে বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে আদর করছে আর বিলাপ করছে-'কেন চলে গেলে?কি করে থাকবো তোমায় ছাড়া?' জানো তোমাদের একটা মজার কথা বলি এই লোকটার সাথে আমার সবসময়ই ঝগড়া হত। টানাটানির সংসারে কি আর আহ্লাদ করলে চলে?? ভোর হলেই পেটের সন্ধানে দু জনই ছুটে যেতাম যে দিকে সুযোগ হত সেইদিকে। আজও আমি তার সাথে অনেক ঝগড়া করে বের হয়েছিলাম। কারন আর কিছুই না। ঘরে চাল নাই টাকা নাই। বাচ্চার খাবার নেই আরও কত কিছু। কিন্তু জানিনা আজ কেন যেন সে আমার সাথে এত টুকুও রাগারাগি করেনি। শুধু বলেছে একটু ধৈর্য ধর একটা চাকরী হবার কথা ।ওখানে চাকরী হলেই তোমাকে আর গার্মেন্টে যেতে দেবোনা। তুমি বাচ্চাকে দেখা শোনা করবে আর আমি শধু দু হাতে টাকা এনে তোমার হাতে দেব। আমাদের অনেক ঝগড়া হলেও এই ছোট্ট সংসারটা ভালোবাসা মাখামাখি হয়েছিলো। তার মাঝ থেকে চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার তার পাগলের মত কান্না করতে দেখে ইচ্ছা হচ্ছে দু হাত দিয়ে মুখটাকে আগলে ধরে বলি আমাকে ক্ষমা করে দিও...!!!শুধুই একটাই আফসোস যে মানুষটাকে এতটা ভালোবাসি তাকে আজ পর্যন্ত ভালবাসার কথা বলতে পারলাম না...!!

এবার আমার কথা রেখে বাকিদের কথা বলি।তোমরা আমার সাথে আরও যাদেরকে নিকৃষ্টভাবে পুড়িয়ে হত্যা করেছ তাদেরই এক জন আমার কাছে এসে হাউ মাউ করে কান্না জুড়ে দিল।বেচারা কাদতে পারছিলো না তারপরও শুধু বিলাপ করছিলো।তাকে শান্ত করে জিজ্ঞেস করলাম কেমন দেখে এসেছে পরিজনদের। নির্বাক হয়ে বলা শুরু করে মাত্র কয়েকমাস আগে নাকি তার বিয়ে হয়েছিলো। তার বউটা বার বার স্বামীর শোকে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে।আর তার বাবার অবস্থাও নাকি খুব খারাপ।হায়রে!! কি বলে তাকে সান্তনা দেবো আমার নিজেরও জানা ছিলোনা। তাকে শুধু এটুকুই বললাম 'আমাদের যে কিছুই করার নেই' !!

শুনলাম আমাদেরই একজনের ২ মাসের বাচ্চা যার কিনা এখনও কোন বুঝ হয়নি মাকে মনে রাখার মত সেও আজ আমাদের সাথে একই পথের পথিক।আরেকজন এসে বলল তার ছোট্ট মেয়েটার সাথে আজ কথা বলার সময় মেয়েটা অনেক আহ্লাদ করে বলছিলো আব্বু তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।হয়ত মেয়েটা বুঝতে পেরেছিলো খুব শীঘ্রই বাবাটা তার কাছ থেকে হারিয়ে যাবে।!! আরও কত কিছু শুনলাম।সবার আকুতি মিনুতি শুনলাম। শুনে শুনে নিজের কষ্টের পাল্লা ভারি করলাম! এইটা করা ছাড়া এখন আর কি করার আছে বল !!

ওহ শুনলাম আজ নাকি তোমরা শোক দিবস পালন করছো?? জানো এই খবরটা শুনে আমাদের এত দুঃখের মাঝেও প্রচন্ড হাসি এসেছিলো।আর সেই সাথে ক্রোধ আর ঘৃনাও কাজ করছিলো।কি হবে এই শোক পালন করে??? তোমরা কি ফিরিয়ে দিতে পারবে আমাদেরকে আমাদের ভালোবাসার মানুষদের কাছে??ফিরিয়ে দিতে পারবে হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে তার বাবা মায়ের কাছে??আদর স্নেহ মমতা দিয়ে ঘুচিয়ে দিতে পারবে নিষ্পাপ এতিম বাচ্চাগুলোর বাবা মার ভালোবাসার জায়গাটা?পূর্ন করে দিতে পারবে ভাই বোনের সেই মধুর সম্পর্কের বাঁধন?? পারবেনা কিছুই পারবেনা !! তবে কেন শুধু শুধু লোক দেখানো শোক দিবস পালন করছো? কেন আমাদের কষ্টের আগুনটা এই দিবস টিবস পালন করে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছো? কেন তোমরা যারা আমাদের পুড়িয়ে কয়লা করেছে তাদের খুঁজে বের করছোনা? কেন তাদের শাস্তি দিচ্ছোনা??? তবে কি ধরে নেবো আমরা যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে শরীরের রক্ত পানি করে দেশের উন্নতিতে নিজেদের সঁপে দিচ্ছি তাদের মৃত্যুতে তোমাদের কিছুই যায় আসেনা!!!

ধিক তোমাকে। ধিক তোমাদের মত পাষন্ড মানুষদের যারা আজ পশুর চেয়েও অধম হয়ে গেছো !!

শুধু অপেক্ষায় রইলাম যারা আজ আমাদের পুড়িয়ে মেরেছো তাদের ভবিষ্যতের করুন অবস্থা দেখার জন্য...!!!



*** আশুলিয়ায় যারা আগুনে পুড়ে মারা গেছে তাদের ভেবে ছোট্ট কিছু লিখার চেষ্টা করেছি।জানিনা কতটুকু পেরেছি শুধু মাত্র তাদের এই করুন দশা দেখে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারিনি।এতটা নির্মম কি করে হয় মানুষ!! আল্লাহ সবাইকেই ভালো রাখুক***
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:৫৬
৪০টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×