আমি কখনোই নিজেকে স্মার্ট করার ব্যাপারে সিরিয়াস হইনি।সবসময় খামখেয়ালি করতাম,নিজের জীবন নিয়েই যে সিরিয়াস হইনি তার কাছে আবার নিজের স্মার্টনেস!
একটা জিনিস আমি সবসময় এড়িয়ে গিয়েছি,কাউকে বলতে চাইনি,সেটা হচ্ছে আমার জন্ম চট্টগ্রামে হলেও ১৯৯২-২০০০ পর্যন্ত আমার সময় কেটেছে মাতুলালয়ে(ওখানে কেন ছিলাম সেটা আরেক কাহিনী)। আমার পরিবার চট্টগ্রামে শিফট হয় ২০০১ এ।অর্থাৎ আমার বাল্যকাল পুরোটাই কেটেছে গ্রামে,দুরন্তপনায়।মারামারি করা,হাত-পায়ের এখানে ওখানে কেটে যাওয়া,রৌদ্রের মধ্যে ক্রিকেট খেলা,বড়দের সাথে মাছ ধরতে চলে যাওয়া এইসব ছিলো কমন ঘটনা।সেই দুরন্তপনা হয়তো ভালোই ছিলো,তবে মা-বাবার কাছ থেকে পাওয়া সুন্দর চেহারাটা ওই শৈশবেই হারাতে হয়েছে।সৌন্দর্য নিয়ে এত চিল্লাচিল্লি করার কারণটা বলছি একটু পর.......
যাই হোক,চট্টগ্রামের হামজারবাগে আমরা উঠি "ভাড়া বাসায়"। ওখানেই একটা প্রাইমারি লাইফ শুরু করি ৪র্থ শ্রেণী থেকে।গ্রাম থেকে উঠে আসা একটা ছাত্রের পক্ষে শহরের ঝানু ছাত্রছাত্রীদের সাথে পেরে উঠা টাফ।তবু ৪র্থ স্থান নিয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হলাম।
শহরে এসে যে চমৎকার পরিবর্তন হলো আমার মধ্যে তা হচ্ছে দুরন্তপনা অর্ধেক কমে গেলো,পড়ালেখা আর টিভি দেখা নিয়ে,এই সময়টা জীবনের সুন্দরতম সময়!
এবার আসি গাত্রবর্ণের ব্যাপারে। স্কুল লাইফে আমি একটা মেয়েকে পছন্দ করতাম।সে জানত,বুঝত।সে অন্যজনকে দিয়ে বলালো যে আমার সব ঠিক আছে কিন্তু আমি দেখতে কালো তাই সে আমার সাথে রিলেশন জড়াতে চায়না!!
আমি এই প্রথম বুঝতে পারলাম যে কালো/সাদা হওয়াটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
আমার স্কুললাইফে ওই একটা মেয়েকেই আমি পছন্দ করেছিলাম।এরপর কলেজ-লাইফ,ভার্সিটি লাইফ।দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে একই ধরণের আরো কয়েকটা বাজে অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। আমি ভেবেছিলাম যে বিশ্ববিদ্যালয় একটা চমৎকার জায়গা,এখানকার মানুষগুলা লিবারেল হবে।আসলে কি তাই? এখানেও আছে বর্ণবাদ(apartheid)! ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দর মেয়েগুলার খাতির রাখে সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রগুলার সাথে।সত্যি বলতে কি আমি জীবনে যত স্মার্ট মেয়ের(গতানুগতিক সংজ্ঞানুযায়ী) সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে তার কারণ আমি মেধাবী,ব্যস এটাই! আর কোন কিছুই ফ্যাক্ট ছিলোনা।
একটা সময় ছিলো যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে জীবনে বিয়ে করবনা,কোন মেয়েকে নিজের সাথে জড়াবোনা।কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত বেশিদিন টিকলোনা।কারণ ততদিনে আমার জীবনে অনভিপ্রেতভাবে চলে এসেছে এমন একজন যে কিনা অন্যরকম,যে শুধুমাত্র আমার মেধার কারণেই কাছে টানেনি।সে আমাকে বুঝে,আমার মানবিক দিকগুলো দেখেই সে আমার কাছে আসে।আমি আগের যন্ত্রনা ভুলে যাই..........
ভূত এফএমের মতো বলতে ইচ্ছে করে গল্পটা এখানেই শেষ হতে পারত! শেষ হয়নি কারণ আবার সেই গাত্রবর্ণ সমস্যা!!! সে সুন্দরী! মোটামুটি তব্দাখাওয়ার মতোই সুন্দরী,তার পাশে আমাকে মানায়না,কারণ আমি স্মার্ট না।এটা নিয়ে তাকে কথা শুনতে হয়,শেষমেষ তার কথা অনুযায়ী তার কলেজে যাওয়াও অফ করতে হয়।
সে কথা থাক,পাস্ট ইজ পাস্ট,হোয়াট কামজ নেক্সট ইজ দ্য মাস্ট। ইদানিং তার বিয়ের কথা হচ্ছে,বেশ জোরেশোরেই।আমি এখনো পড়ালেখা করছি,বের হতে,চাকরি পেতে সময় লাগবে,এর চেয়েও বড় সমস্যা আমি স্মার্ট নই।আমি পুলিশ অফিসার হই কিংবা ব্যাংক কর্মকর্তা হই তাতেও কাজ হবেনা!
মেয়েরা সবসময়ই বাস্তববাদী।তাই সবকিছু বিবেচনা করে সে আমাকে সরিয়ে দিয়েছে।সে চায় আমি এখখন থেকে এটা মেনে নিই যে তার সাথে আমার বিয়ে হওয়াটা অসম্ভব।আমি তাকে দোষ দিইনা,কখনো দিবওনা।
কিন্তু,একটা ব্যাপার ঠিকই আমাকে যন্ত্রনা দিচ্ছে আমি শুধুমাত্র সুন্দর একটা শরীরের অভাবে তাকে বিয়ে করতে পারবনা,আমি যদি ভালো চাকরি পাই তবুওনা!
মেয়েদের গায়ের রং সুন্দর না হলে নাকি তাকে যন্ত্রণা পোহাতে হয়,অথচ একটা ছেলে কালো হলেও সমস্যা পড়ে,তাকে অবজ্ঞা করে সেটা কেউ দেখেনা!