ব্লগার একটি দু পা ও দু হাত বিশিষ্ট প্রাণী! ইহাদের একটি নাসিকা ও দুটি কর্ণ থাকে। আপাতদৃষ্টিতে দুটি মনে হলেও ইহাদের অন্তরে সৃষ্টিশীলতার বাড়তি দুটি চোখ বিদ্যমান থাকে! ইহারা নানা প্রকারের হইয়া থাকে এবং সেই প্রকারভেদ নিম্নে তুলে ধরা হইল:
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
হিটখোর ব্লগার!
হিটখোর ব্লগারেরা বড়ই বিপদজনক! ইহারা একেকটি পোস্ট লিখিয়া প্রতি ১০ মিনিটে ১০০ বার চেক করিয়া যান তাহার পোস্টটি কতবার পড়া হইলো, কোন মন্তব্য পড়িল কিনা? অন্য সহব্লগারদের পোস্টে যাইয়া তাহাদের পোস্ট নিয়া কিছু না বলিয়া, নিজের পোস্টের লিংক বিলি করিতে থাকেন এবং অতি বিনীত কন্ঠে মতামত চাইতে থাকেন। এত কঠোর পরিশ্রমের পরেও পোস্ট হিট না হইলে, "জয়য়য় বাবা রিলোড" বলিয়া ঝাপাইয়া পড়েন! মাথার ঘাম পায়ে ফেলিয়া, নানা কারসাজি করিয়া একটি হিট পোস্ট প্রসবের করিবার পরে এসব ব্লগারদের প্রতিক্রিয়া নিম্বরূপ:
সেন্সিটিভ ব্লগার!
ইহারা ব্লগে পোস্ট প্রকাশ করিয়া আশা করিতে থাকেন সবাই তাহাকে প্রশংসাই করিয়া যাইবে। কেউ গঠনমূলক সমালোচনা করিয়া ফেলিলে তাহারা লেখালেখি ও ব্লগ ছাড়িয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়া ফেলেন! তাহারা নিজের পোস্টকে সন্তানের মতো আগলে রাখিবার প্রয়াস করেন, কেউ কিছু বলিলেই তপ্ত তেলের স্বরূপ ছ্যাৎ করিয়া ওঠেন! উহাদের মন্তব্য ও প্রতিক্রিয়া হয় নিম্বরূপ!
"আমার লেখা আপনার ভালো না লাগতেই পারে, একটি লেখা সব পাঠকের ভালো লাগবে না। যদি আমার লেখাটি একটি মানুষকেও ভালো কিছু শেখাতে পারে, আনন্দ দিতে পারে তবে আমার পোস্ট সফল মনে করি। নবীন লেখক হিসেবে সহব্লগারদের কাছে উৎসাহ না পেয়ে সমালোচনা পেলে কি সামনে লিখতে ইচ্ছে করবে? আপনি অনেক ভালো লেখেন, অনেক ভালো ব্লগার। আমি অতো দামী ব্লগার নই, আমার পোস্ট এমনই। ------------------------------" আরো আধাঘন্টা চলিতে থাকিবে উহাদের বকবক!
মাই ডিয়ার ব্লগার!
উনারা সকলের সহিত সুসম্পর্ক বজায় রাখেন। ব্লগে আসা ১০ টি পোস্টের ১১ টিতেই কমেন্ট করিয়া প্রশংসার বাণীতে সহব্লগারদের ভাসাইয়া নিয়া ফেলেন মাঝসমুদ্রে! তৈলাক্ত হাসি ইহাদের মুখে সর্বদা বিদ্যমান! লেখা যেমনই হোক উহারা কিভাবে যেন হজম করিয়া ফেলান, সবকিছুতে এনারা সদা মুগ্ধ! ক্ষমতা থাকিলে এনারা সকল ব্লগারকে নোবেল ছুড়িয়া মারিতেন! কিছু কিছু ব্লগার নিজ ব্লগীয় স্বার্থ অর্জনে এমন রূপ ধরেন, কেউবা বাস্তবিক ভাবেই এই রূপ লইয়া পৃথিবীতে পদার্পন করিয়া থাকেন। ইহাদের মুগ্ধতার প্রতিক্রিয়া নিম্নরূপ:
কঠোর ব্লগার!
প্রকৃতি ভারসাম্যের ওপরেই চলে বৎস! সামুতে মাই ডিয়ার ব্লগারদিগকে ব্যালেন্স করিতে কঠোর ব্লগারদের আগমন ঘটে যুগে যুগে। পোস্ট যেমনই হোক, উহারা সমালোচনা করিবেনই। রবীঠাকুরের গীতাঞ্জলি পড়িয়াও উহারা নানামুখী সমালোচনার বাণী দিতে দ্বিধাবোধ করেন না, সহব্লগারেরা তো কিছুই নহে! সহব্লগারদের প্রতিনিয়ত সমালোচনার আগুনে পোড়ানোর আশায় ইহাদের মন ব্যাকুল থাকে, নিম্নের স্বরূপ!
বিনয়ী ব্লগার:
যেসব জ্ঞানী গুণীরা বলিয়া থাকেন, বিনয় অতি মহৎ গুণ, সামুর বিনয়ী ব্লগারদের দেখিলে তাহারাও হতাশ হইতে পারেন।
এসব ব্লগারেরা কথায় কথায় বিনয়ে গলিয়া পড়েন আইসক্রিমেরও অধিক দ্রুতগতিতে। ইহাদিগকে কোন ব্লগার প্রশংসা করিলে সেই প্রশংসা নিতে কুন্ঠা বোধ করেন। পুরো কৃতিত্বই পাঠককে দান করিয়া ভারমুক্ত হন।
"আমার মতো নবীন, তুচ্ছ ব্লগারের বাড়িতে আপনার মতো বড়, বিখ্যাত, সেলিব্রেটি, গুণী, মেধাবী ব্লগারের চরণের ধূলা পড়বে ভাবতেই পারিনা! কোথায় যে আপনাকে বসতে দেই! আমার এই মূল্যহীন লেখার মূল্য বেড়ে গেল আপনার আগমনে। নতমস্তকে কৃতজ্ঞতা জানাই!"
নিখোঁজ ব্লগার:
উক্ত ব্লগারেরা হুটহাট উধাও হইয়া যান ব্লগ হইতে বিনা নোটিশে। ইহাদের দেহে স্প্রিং নামক যন্ত্রটি জন্মের পূর্বেই প্রতিস্থাপিত হইবার দরূণ ইহারা এক স্থানে বহুক্ষন থাকিতে পারেন না। বেচারা পাঠককূল তো এতো ইতি ও পাতিহাস জানেন না, তাহারা প্রিয় লেখকের বাকি লেখা পড়িতে উদগ্রীব হইয়া অপেক্ষা করিয়া যান চিন্তিত মনে! ওদিকে নিখোঁজ ব্লগার চিন্তাহীনভাবে এদিক সেদিক মনের আনন্দে ঘুড়ির মতো উড়িতে থাকেন এবং কোন একদিন মনের ভুলে আবারো ব্লগ এলাকায় অবতরণ করেন সহব্লগারদের ভালোবাসায় সিক্ত হইতে! এই লেখাটি পাঠ করিবার সময়কালে তাহাদের প্রতিক্রিয়া হইবে নিম্বরূপ:
ক্যাচালবাজ ব্লগার!
কোন ব্লগারের প্রকারভেদ লিস্ট এসব প্রাণীদের বাদ রাখিয়া পূরণ হইবে না। ইহারা ব্লগের কোন উপকারে না আসিলেও ব্লগের অবিচ্ছেদ্য অংশবিশেষ! ইহারা একাধিক মাল্টি নিয়া ঘোরাফেরা করেন এবং তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে টার্গেট খুঁজিতে থাকেন। টার্গেট ব্লগারের বিপক্ষে বেশ কটি মাল্টি ও সাথী নিয়া ঝাপাইয়া পড়েন। পুরো ব্লগ দুভাবে বিভক্ত হইয়া যায়। কেউ টার্গেট ব্লগারের পক্ষে তো কেউ মাল্টির! কেউ নিরপেক্ষ থাকিয়া সকল পক্ষকেই খুশি করিতে ব্যতিব্যস্ত থাকেন। ব্লগে একের পর এক পোস্ট আসিতে থাকে ক্যাচালের বিষয়টিকে কেন্দ্র করিয়া। যেন ব্লগ সৃষ্টিশীলতার নয়, ক্যাচালের দৌড় প্রতিযোগিতা! পুরো ব্লগময় নিজ মস্তিষ্ক হইতে আগত প্যাঁচ ছড়িয়ে দেবার পর ক্যাচালবাজ ব্লগারদের মুখভংঙ্গিমা নিম্নরূপ:
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
লেখাটিকে কেউ ব্যক্তিগতভাবে নেবেন না, জাস্ট ফর ফান। ব্লগারেরা যেমনই হোক, হাতের পাঁচটি অসমান আঙ্গুল ছাড়া যেমন হাত অপূর্ণ, রং বেরং এর ব্লগার ছাড়া সামুও অপূর্ণ! লাভ ইউ অল!
লেখিকার কথা: আমি সাধারণত যখন মজার কোন পোস্ট লিখি ,একেকটি লাইন লিখি আর নিজেই হেসে কুটিপাটি হই। অন্যকেউ হাসুক না হাসুক, নিজের জোকে আমাকে হাসতে দেখা যাবেই সবসময়। ব্লগে শিশুদের নিয়ে মাঝেমাঝেই পোস্ট দেই, কেননা শুধুমাত্র ওদের মধ্যেই সত্যিকারের নিষ্পাপ সরলতা ও ভালোবাসা দেখতে পারি। বাচ্চাদের সঙ্গ আমার ভীষন ভীষন পছন্দের। কিন্তু আজকে বাচ্চাদের ছবি সিলেক্ট করার সময়ে একটা মন খারাপ ও অস্বস্তি বারবার ঘিরে ধরছিল। পেপারে যখন পড়ি চার বছরের, দু বছরের শিশুরা শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতিত এবং খুন হচ্ছে হতবাক হয়ে যাই! আমি জানিনা কিভাবে সম্ভব কারো পক্ষে মাসুম শিশুদেরকে আঘাত করা! কিভাবে সম্ভব তাদেরকে নোংরা চোখে দেখা? কিভাবে সম্ভব একটি জীবন শুরু হবার আগেই শেষ করে দেওয়া? এরা মানুষ কিনা সে প্রশ্ন করবনা, ক্লিয়ারলি দে আর ফার ফ্রম হিউম্যান! জানোয়ারও নয়, কেননা জানোয়ারেরাও প্রয়োজনের বাইরে কারো ক্ষতি করেনা। পেটে খিদে থাকলে ততটুকুই শিকার করে যতটা প্রয়োজন। এরা একধরণের জিনিস, কোন প্রাণী নয়। এই জিনিসগুলোর জন্যে ডিকশনারিতে আলাদা কোন নাম থাকা দরকার। অবশ্যই বিচার শুধু নয়, এধরণের মানুষদের এমন কঠিন বিচার হওয়া উচিৎ সবার সামনে, যেন যে কারো মন কেঁপে ওঠে শিশুদেরকে আঘাত করার আগে! পোস্টটি লেখার শুরুতে এমনকিছু লিখব বা চলে আসবে মাথায় আসেনি, কিন্তু পুরোটা সময়ের অশান্তি না লিখতে পারলে স্বস্তি পেতাম না, তাই লিখব কিনা ভাবতে ভাবতে কথাগুলো লিখেই ফেললাম।
ছবিসূত্র: অন্তর্জাল!
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:২৪