somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিয় সহব্লগার! আপনিও কি ২ টি কমন এডিকশনে অর্থ/সম্পর্ক/স্বাস্থ্য হারাচ্ছেন? তবে এক্কেরে ফ্রি ;) এপস গুলো আপনার জন্যে!

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আজকালকার গতিময় জীবনযাত্রায় আমরা অনেক খারাপ অভ্যাস গড়ে ফেলি যা কখন আমাদের আসক্তি হয়ে যায় নিজেরাও বুঝতে পারিনা। সময়ের সাথে সাথে এসব আসক্তি নানা ধরণের ক্ষতিতে আমাদের জীবনকে বিষাক্ত করে ফেলে। কথায় বলে, কোনকিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়। আজকে দুটি কমন আসক্তি এবং সেগুলো থেকে বাঁচার উপায় নিয়ে লিখব। আশা করি পোস্টটি সবার কাজে লাগবে।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
১) সেল ফোন এডিকশন!

এযুগে চারিদিকে মানুষ এই আসক্তিতে ভুগছে। রাস্তাঘাট, বাস রিকশা, ক্লাস ক্যাম্পাস, অফিস মিটিং এমনকি অনেকে বাথরুমে পর্যন্ত ফোন নিয়ে ঢোকেন। সকল মানুষ ঘাড় নিচু করে, ছোট্ট একটি স্ক্রিনের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে ২৪ টা ঘন্টা। এতে করে স্বাভাবিক বসার দেহভঙ্গি নষ্ট হয়ে নানা ধরণের ব্যাধি বাসা বাঁধে শরীরে। আর চোখের কথা কি বলব? সকালে উঠেই প্রথমে ফোন হাতে নিয়ে নোটিফিকেশনস চেক করেন বেশিরভাগ মানুষ। সে তো তাও একরম, রাতে ঘুমাতে যাবার আগে অন্ধকার রুমে বেশ কয়েক ঘন্টা ফোন টেপাটেপি না করলে অনেকের ঘুমই আসেনা। অন্ধকারে স্ক্রিনের দিকে তাকানো চোখের জন্যে আরো খারাপ।
তাছাড়া ফোনে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটু পরে পরে সুখী মানুষগুলোকে চেক করে অনেকেই ডিপ্রেশন সহ নানা প্রকার মানসিক ব্যাধিতেও ভুগছেন।



এসব ক্ষতির পাশাপাশি ফোন আসক্তি আপনাকে আপনজনদের থেকেও দূরে নিয়ে যাচ্ছে। যখন বাবা মা কোন কথা বলছেন, আপনি ইউটিউবে ভিডিও সার্চ করছেন। বন্ধুদের আড্ডায় এক কোণে ফোন নিয়ে ভার্চুয়াল ফ্রেন্ডদের নিয়ে মেতে আছেন যারা চাইলেও আপনার বিপদে ছুটে আসতে পারবেনা।
ল্যাপটপ/টিভির স্ক্রিনও অনেক ক্ষতিকর তবে সেগুলো সবসময় আমাদের হাতের মুঠোয় থাকেনা। যেমন ক্লাসে/বাসে চাইলেই ডেস্কের নিচে ল্যাপটপ চালাতে পারবেন না। উপরন্ত, সেগুলোর দূরত্ব চোখ থেকে আরো দূরে থাকায় এবং স্ক্রিনের লেখা বড় হওয়ায় চোখের ক্ষতি কম হয়। তাই সহজেই বলা যায়, ফোন এডিকশন এযুগের সবচেয়ে বড় প্রযুক্তিগত আসক্তি। আজ থেকে অনেক বছর আগে ৫ বছরের বাচ্চার চোখে হাই পাওয়ারের চশমা দেখা যেত না, ৬০ বছর বয়সেও আমাদের নানা/দাদারা কর্মঠ ছিলেন/আছেন। কিন্তু আমরা মাত্রাতিরিক্ত ভাবে প্রযুক্তির কাছে হার মেনে, নিত্যদিন ক্ষতি করছি স্বাস্থ্য ও সম্পর্কের। তো এই সমস্যার সমাধান কি?

সল্যুশন: QualityTime!



এপের নামটা একেবারে পারফেক্ট! এপটি ইন্সটল করার সাথে সাথে দেখতে পারবেন যে, আপনি দিনে/সপ্তাহে/মাসে কোন এপে কতটা সময় স্পেন্ড করেছিলেন এবং করছেন! সারাদিনে কতবার ফোন ওপেন করেন সেই সংখ্যাও ভেসে উঠবে চোখের সামনে। রেজাল্ট দেখে থ হয়ে যেতে পারেন। হয়ত দৈনন্দিন ব্যবহার দেখে হুট করে উপলব্ধি করবেন যে আপনিও একজন ফোন এডিক্ট! রিয়ালিটি জানার পরে আপনার মধ্যে আপনা আপনি সচেতনতা তৈরি হবে। আপনি বুঝবেন যে অপ্রয়োজনীয় এপেও অনেক সময় দিয়ে ফেলছেন। কিছু মানুষের জন্যে এটুকু জানাই যথেষ্ট, তারা সাথে সাথে আজেবাজে এপের নোটিফিকেশন বন্ধ করে নিজেকে আসক্তি থেকে বাঁচাবেন।
কিন্তু অনেকের জন্যে এই মোটিভেশনটা আনা কঠিন। কেননা প্রথমে এপ শুধু এটুকু জানাচ্ছে যে আপনি কত সময় ফোন ব্যবহার করছেন, আপনাকে বাঁধা তো দিচ্ছে না।



কিন্তু আপনি চাইলে বাঁধাও দেবে! হ্যাঁ! এর মধ্যে "Take a break!" নামের অসাধারণ একটা ফিচার আছে। এই ফিচারটি ব্যবহার করে আপনি একটি সময়কাল নির্ধারণ করবেন। উদাহরণ হিসেবে বলছি ৩ ঘন্টা! ধরে নিলাম, ৩ ঘন্টায় আপনার কোন জরুরি ক্লাস/মিটিং আছে এবং আপনি ডিসট্র্যাক্টেড হতে চান না। এপটি আপনাকে সেই তিন ঘন্টার মধ্যে অন্য কোন মোবাইল এপে ঢুকতে দেবে না!
নিশ্চই ভাবছেন, যদি হুট করে জরুরী কল করতে হয় তাহলে? একদমই চিন্তা করবেন না, এটি কল করার ফিচারটি অন রেখে বাকি সব এপ অফ করে দেয়।



এটা যদি আপনার মোবাইল এডিকশন না ঠিক করে তবে কে করবে? :)

একটা প্রশ্ন, মন্তব্যে জবাব দিতে পারেন - আপনি দৈনন্দিন কত ঘন্টা ফোন ব্যবহার করেন?
ব্লগারদের মধ্যে একটা হালকা সার্ভে হয়ে যাক।


২) স্মোকিং!

সময়ের সাথে সাথে প্রচুর সচেতনতা তৈরি হয়েছে ধূমপানের ব্যাপারে। আজকাল নাটক/সিনেমায় যেকোন ছোট্ট একটা ধূমপানের দৃশ্যেও সচেতন বার্তা দেওয়া হয়। কিন্তু চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী।



ইয়াংদের মধ্যে মাদক সহ নানা ভয়ংকর ড্রাগসের হাতেখড়ি হয় সিগারেট দিয়েই। অনেক ভার্সিটি গোয়িং ছেলে/মেয়েরা মনে করে, স্মোকিং ইজ কুল! সেখান থেকে আসক্তির শুরু, তারপরে বুড়ো কাল পর্যন্ত বয়ে বেড়ানো! সিগারেটের কারণে শরীরে হাজার প্রকার রোগ বাসা বাঁধতে পারে, অন্যদিকে অর্থ অপচয়ও হয়।
আমি বুঝিনা, এত সুন্দর পৃথিবীতে কত ভালোবাসার মানুষ রয়েছে! মানুষ একেকটা সেকেন্ড করে আয়ু কমাতে চায় শুধুমাত্র একটা টানের জন্যে?

সল্যুশন: Smoke Free!



প্রথমেই আপনাকে চাইতে হবে সিগারেট ছাড়তে। এই এপটি সেসব মানুষদের জন্যে যারা অনেক চেষ্টা করেও সিগারেট ছাড়তে পারছেন না, এক বেলা ছাড়েন তো দুই বেলা ধরেন। যারা সিগারেটের ক্ষতিকর দিক মানতেই চান না, তাদের জন্যে এই এপটি কিছু করতে পারবেনা সেটা আগেই বলে রাখলাম বাপু! :)

এই এপটির প্রাথমিক সুবিধাগুলো ফ্রি কিন্তু আপনি চাইলে টাকা দিয়ে আপগ্রেড করে বিশেষ সুবিধা পেতে পারেন। যদিও যেসব ফিচারস ফ্রিতে পাবেন তাও আপনাকে স্মোকিং ছাড়তে বাধ্য করবে!

এপটি প্রথমেই আপনাকে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবে, যেমন আপনি কত প্যাকেট সিগারেট খান, এক প্যাকেটে কতগুলো থাকে, দাম কত এবং আপনাকে কারেন্সিও সিলেক্ট করতে বলবে। কারেন্সিতে বাংলাদেশী টাকা চুজ করতে ভুলবেন না। এই কয়টি সাধারণ তথ্য নেবার পরে নিচের মতো একটি স্ক্রিন দেখাবে। তাতে আপনি কতক্ষন স্মোক ফ্রি ছিলেন এবং তাতে কি কি হেলথ বেনেফিটস হয়েছে সেটা আপডেট হতে থাকবে।
শুধু তাই নয়, সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে আপনি সিগারেট না খেয়ে প্রতি দিন/সপ্তাহ/মাস/বছরে কত টাকা বাঁচাচ্ছেন সেটাও জানিয়ে দেবে। এমনিতে আপনি জানেন যে সিগারেটের কারণে টাকা অপচয় হচ্ছে, কিন্তু এমাউন্টটি যখন প্রতিদিন চোখের সামনে ভেসে উঠবে সিগারেটের জন্যে পকেট থেকে টাকা বের করতে দ্বিধা হবে।



বিশদে ধূমপানে স্বাস্থ্যের লাভ/ক্ষতি তুলে ধরবে।



যখনি সিগারেট খাবেন প্লাস সাইনে ক্লিক করে "Add a new craving" লিখে তথ্য আপডেট করলে, ওরাও সেভাবে অন্যসব ডাটা মানে সিগারেট খেয়ে আপনার স্বাস্থ্যগত ও অর্থনৈতিক ক্ষতির ডাটা আপডেট করবে। আবার টিপসও দেবে যেন আপনি পরের বার নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

এই এপটির একটি সুন্দর ফিচার হচ্ছে সিগারেট খেয়ে আপনার জীবনের কতটা সময় হারালেন বা পেলেন সেটিও দেখাতে থাকে! নিচে Life regained অংশটিতে যেমন দেখছেন!




এতকিছুর পরেও যদি আপনি সিগারেটের নেশা ছাড়তে না পারেন তাহলে আপনি পচা লোক! ;) :D

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

শেষ কথা: পোস্টটি প্রিয়তে নিয়ে রাখুন, সেটা না চাইলে পোস্টের লিংকটি কোথাও সেভ করে রাখুন। এই দুটোই এপই খুব কাজের, কোন না কোন দিন আপনার বা আপনার কোন আপনজনের কাজে লাগবেই। প্লিইইইজ সকল প্রকার নেশা হতে দূরে থাকুন এবং আমি আশা করি এই এপগুলো আপনাদের জীবনে ভালো পরিবর্তন আনবে। :)

ছবিসূত্র: অন্তর্জাল!
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:২২
২৪টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×