somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধারাবাহিক উপন্যাস ।। ‘গুহা’ তৃতীয় পর্ব ।। সানাউল্লাহ সাগর

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তিন

শুক্রবার
১১ জুন ২০১০ খ্রি:
শেষ বিকেল
মোল্লা কুটির
পটুয়াখালি।


শুভ্র
আজ আমাদের অফিস নাই। সে তার বড় দুই কন্যাকে নিয়ে বেড়াতে গেছে। আমাকেও বারবার যাওয়ার বলছিলো। আমি বলেছি শরীর খারাপ। সে জন্য আর টানাটানি করেনি। ছোট মেয়েটা কাজের মেয়ের কোলে অচেনা ভাষায় গান করছে। আমি লালনের গান শুনছিলাম। হঠাৎ মনে হলো তোমাকে লিখি। তোমার চিঠিটা পেয়েছি কুড়ি দিনের বেশি হবে। তারিখটা মনে নেই। খামটা দেখলে বলতে পারতাম। সেটা গম্বুজের ভয়ে ছিঁড়ে ফেলেছি। গম্ভুজ হলো আমার জামাইয়ের নতুন নাম। এই নামটা আমার সেই সুদর্শন কলিগ দিয়েছে। এখন যার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি ।
তোমার সেতুর কি খবর? আরে শোনো—প্রেমের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি হবেই। তাই বলে কি দূরে থাকতে হবে? ঝগড়া মিটে গেলেই বরং ভালো। রাগের জমিতে কখনো ভালো ফসল ফলে না। তোমাকে ফোন দিয়ে তো পাওয়াই যায় না। তুমি কি নতুন কোনো নম্বর নিয়ে আবার নতুন করে কোনো প্রেমটেম শুরু করেছো? কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। তোমার সাথে কথা বলতে ভালো লাগে। তোমার কাছে সব খুলে বলতে পারি। তোমার সারপ্রাইজ তো সত্যিই বড় ধরণের সারপ্রাইজ। বেয়াদব! আমি দুষ্টমি করে বলেছিলাম। তাই বলে তুমি সত্যি সত্যিই এরকম কিছু একটা পাঠাবে তা আমি কখনো ভাবতে পারিনি। আমি শুনেছি বাংলাদেশেও এসব জিনিস এখন পাওয়া যায়। কোথা থেকে জোগার করলে ? মালটা কিন্তু দারুণ। যদিও এখনো কাজে লাগানোর সুযোগ হয়নি। কি যন্ত্রণা বলো—এটা যে কোথায় লুকিয়ে রাখি! কে যে কখন দেখে ফেলবে—সেটা নিয়ে সব সময় ভয়েই আছি। হাতে পাওয়ার পর থেকে ভ্যানিটি ব্যাগের মধ্যে নিয়ে নিয়ে ঘুরছি। তবে দু চারবার হাত বুলিয়ে দেখেছি। এক্কবারে খাঁটি মাল। হাহাহা। উপবাস থাকা মানুষের দুঃখ তুমি আর কি বুঝবে। তোমার তো মালের অভাব নেই। আজ এখানের মধু। কাল ওখানের মধু। এতো মধু খেয়ো না বাপু। কোন্ মধুতে যে বিষ থাকবে টেরও পাবে না। শেষে বিষের জ্বালায় জ্বলতে জ্বলতে হারিয়ে যাবে। চোখের সামনে ওমন তাগড়া জোয়ান হারিয়ে যেতে দেখলে আমার মোটেই ভালো লাগবে না।
আচ্ছা একটা ব্যাপার বলো তো—ওই যে ছোকরাটার কথা বলেছিলাম। আমার জুনিয়র কলিগ। ছ-সাত মাস হয়েছে জয়েন করেছে। আমাকে বাঁকা চোখে দেখতো। সে এরই মধ্যে অফিসের আরেকটি নতুন মেয়েকে বাগিয়ে নিলো। আসলে আমার মতো হাদারাম দিয়ে কিচ্ছু হবে না। তোমার কথাই ঠিক। এই অলৌকিক কাঠি দিয়েই বাকী জীবন কাটাতে হবে। আসল জিনিসের মজা আর পাবো না।
শরীরটা কদিন থেকে খারাপ যাচ্ছে। বুঝতে পারছি না ডাইবেটিকস হলো কিনা। ওজনটাও একবার মাপাতে হবে। তাহলে হয়তো বুঝতে পারবো। বোঝো না বাঙালি মেয়েদের পঁয়ত্রিশ পার হলেই হাজার রোগ এসে দরজায় দাঁড়ায়। কোনো রক্ষা নেই। বহু সচেতনভাবে চলি তাই এখনো দু চারজন একটু আকটু তাকায়। মাথার চুলগুলো পেকে গেছে গো। কলপ না দিলে বুড়ি নাম হয়ে যেতো এতোদিনে। কিন্তু শরীরের মধ্যে আগুনের তো কোনো কমতি দেখি না। সব বুড়িয়ে যায় আর বাল ওর ক্ষুধা যেন বাড়তেই থাকে!
যাই যা বলো—এবার ভাবছি জমিয়ে একটা প্রেম করবো। তোমার দেওয়া মালটাও মাঝে মধ্যে কাজে লাগবে। কিন্তু আসল চাই আমার। যদিও প্রেমটেম বলতে দুনিয়ায় এখন আর কিচ্ছু অবশিষ্ট নেই। সব শরীর। সে তো আমাকে তুমি আরো ভালো ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিতে পারবে। তোমার কথা বলার সময় আমি অবাক হয়ে যাই। এতো কমবয়সী একটা ছেলে এতো ভালো করে গুছিয়ে—বিশ্লেষণ করে কিভাবে কথা বলে। এতো ম্যাচুয়ুরিটি কোথা থেকে আসে! বয়সের সময় যদি তোমাকে পেতাম তাহলে দেখতে। তোমাকে জিতে নেওয়ার জন্য যুদ্ধ লাগলেও করতাম। কি হাসছো ? হয়তো কিছুই করতাম না। যার যা থাকে না তার জন্যই তার সব চেয়ে বেশি দুঃখ।
ওহ গত সপ্তাহে প্রথম আলোয় আমার একটা গল্প ছাপা হয়েছে। দেখেছো? তুমি পড়বে না জানি। কিন্তু দেখতে তো পরো। লেখাটা অনেক যতœ করে ছেপেছে। সর্বাধিক প্রচারিত পত্রিকার সাহিত্য বিভাগে একটা গল্প ছাপার মানে বোঝো তো। একবারে সবার কাছে পরিচিত হয়ে যাওয়া! আমার যে কি আনন্দ হয়েছিলো সেটা তোমাকে বুঝাতে পারবো না। বিল পেলে তোমাকে মিষ্টি খাওয়াবো। তবে লেখাটা ছাপাতে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। সে কথা আর বলবো না তোমাকে। শেষে আমাকে খোটা দিবা। ছাপা হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ পড়েছে আবার টাকা পাবো এটাই বড় কথা। তুমিও এই উছিলায় একদিন মিষ্টি খাবে। অবশ্য অন্য মিষ্টিও চাইলে খেতে পারো। হাহাহা...
কি মুখটা লাল হয়ে গেলো নাকি! এতো সহজ না বাবু। এতো সহজ হলে আমাকে এতো দিনে মানুষ্য শকুনেরা ছিঁড়ে খেয়ে ফেলতো। সেই ছাত্রজীবন থেকে কাজ করে পড়ালেখা করেছি। তখন তো গায়ের রঙটা আরো ভালো ছিলো। মেদও ছিলো না। তখনই কেউ বসাতে পারেনি। আর এখন! আমি জানি শুভ্র—এই কথাগুলো তুমি বিশ^াস করো না। তুমি মনে করো আমি এখনো তিন চারজনের সাথে বেড শেয়ার করি। বিশেষ করে ওই বুড়ো ব্যবসায়ীর সাথে। আর ওই যে ইয়াং কলিগ তার সাথেও। সেটা তুমি ভাবতেই পারো। তোমার জায়গায় অন্য কোনো পুরুষ থাকলে সেও তাই ভাবতো। ভাবো। ভাবতে তো আর কোনো বাঁধা নেই। নিজের মতো করেই ভাবা যায়। আমি যেমন কল্পনায় অনেক পুরুষের সাথে সেক্স করি। কিন্তু বাস্তবে কি কিছু করতে পারছি? পারছি না। তবুও তো বেঁচে আছি। বাঁচার অভিনয় করছি। ধুর বাল্্ কে যেন ফোন করেছে। যাও তুমি একটা সিগারেট আর এক কাপ চা খেয়ে আসো। আমি একটু কথা বলি।


রোববার
১৩ জুন ২০১০ খ্রি:
এখন দুপুর পৌণে তিনটা। শুয়ে বসে কাটানোর মতো অলস সময় থাকলে ভালো হতো। মাঝে মাঝে লাঞ্চের পর আর কাজ করতে ইচ্ছে করে না। তখন ঝিমাই।
চিঠিটা পারলাম না তখন। শেষে বাকী লেখাটা অফিসেই নিয়ে আসতে হলো। তাও সেই ব্যবসায়ী শালা। এক ঘন্টা ধরে সামনে বসেছিলো। একটা মানুষ যদি না বোঝে তাকে আমি পছন্দ করছি না। সামনে বেহায়ার বসে থাকে। বসেই থাকে! তাকে কিভাবে তাড়ানো যায় বলো তো! কুত্তাগুলোর মেয়ে দেখলেই যেন লোল ঝরে। আজ আমি শাড়ী পড়েছি। তুমি দেখলেও একদম ফিদা হয়ে যাবা। প্রেমেও পড়ে যেতে পারো। সেতু ফেতু আজ আমার কাছে কোনো পাত্তা পাবে না। আজ ঋতুতে তুমি মজে যাবে। এটা আমি হলফ করে বলতে পারি। এই ঋতু আসলেই ঋতু। একেবারেই ঋতুরাজ বসন্ত। ওহ ভালো কথা। তোমার সাথে প্রথম যখন আমার পরিচয় হয়েছিলো। তখনো তো বসন্ত ছিলো। সেই দিনটা আমার মনে আছে। ওরে বাবা তোমার কি ভাব! পিচ্চি একটা ছেলে ভাবের শেষ নাই। আসলে তোমার মধ্যে অন্য ধরণের একটা ক্ষমতা আছে। যেটার কারণে মেয়েরা তোমাকে পছন্দ করে। সাথে আরো একটা ব্যাপার আছে যে কারণে মেয়েরা তোমার ঠিক কাছে আসতে আসতে আবার আসে না। সেই ব্যাপারটা বলবো না। বলে দিলে তো আমার কেরামতি শেষ। দেখবো একদম পারফেক্ট হয়ে যাবা। তখন আর ঋতুর কোনো দামই থাকবে না তোমার কাছে। অবশ্য এখনও তো তেমন কোনো দাম নেই। কেবল বন্ধু। হাহাহা। থাক বন্ধুই ভালো। কি বলো? এই তো ভালো চলছে। আমরা কতো কথা অকপটে শেয়ার করি। যে কথা মানুষ কাউকে শেয়ার করতে পারে না সেকথাও। একেবারে বিছানার কথাও।
আমি বুঝতে পারি না তোমার উপর সেতু কিভাবে এতো প্রভাব বিস্তার করতে পারলো! এর থেকে বহু সুন্দরী মেয়ের কথা তো তোমার মুখে শুনেছি। ওই যে ছিপছিপে মেয়েটা একটা সরকারি কলেজে বাংলা পড়ায়। তার মধ্যে কিন্তু প্রেমে পড়ার অনেক যোগ্যতা আছে। সেটা না করে তুমি মজে গেলে এমন একটা মেয়ের প্রেমে যার একটা বাচ্চা আছে। প্লিজ রাগ করিও না। সেতুকে আমি মোটেও ছোট করছি না। আমি জানি সেতুকে ছোট করলে তুমি ক্ষ্যাপে যাবে।
কিন্তু কি করবো বলো—আমার ঈর্ষা হয়। তোমাকে আমি যে খুব ভালোবাসি তা কিন্তু নয়। কিন্তু অন্য একটা মেয়ের জন্য তুমি পাগল হচ্ছো এটা ভাবতেই আমার কেমন যেন মন খারাপ হয়ে যায়। নিজের মনের মধ্যে একটা পোকা কামড়াতে থাকে। সে বলতে থাকে ‘তুই তো জয় করতে পারলি না। দেখলি কেমন করে অন্য একটা মেয়ে তোর কাছের একটা হ্যান্ডসাম ছেলেকে জয় করে নিলো।’ তখন আমি নিজেকে কি বলে সান্তনা দেই জানো? তখন আমি নিজের মনকে অনেক কৌশলে সান্তনা দেই। আমিও চাইলে অনেক সুঠাম দেহের—সুন্দর চেহারার ছেলেদের সাথে প্রেম করতে পারি। শুইতে পারি। কিন্তু আমার একটা যে অলিখিত রুচিবোধ তৈরি হয়ে গেছে। সে কারণে কিচ্ছু করতে পারি না। সত্যি বলছি সে কারণে আমি ইচ্ছেকে হাওয়ায় উড়াতে পারি না। নিজেও ভাসতে পারি না কামের স্রোতে। কি করবো বলো মানুষ নামে সৃষ্টি হয়ে যে ভুল হয়েছে সেটা বলে আল্লাহকে গালিও দিতে পারি না। সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে তো আর কোনো লাভ হবে না। তার বিরুদ্ধে কি কিছু করার কোনো যোগ্যতা আছে আমার! তার চেয়ে সে যেটা করেছে সেটা মেনে নিচ্ছি।
কি হাঁপিয়ে উঠছো? ভাবছো তোমাকে জ্ঞান দিচ্ছি! আরে না। এ সকল কথা তো আমি আাসলে তোমার কাছ থেকেই শিখেছি। তুমিই আমাকে শিখিয়েছো। কিভাবে উদার হতে হয়। আকাশ সমান ভাবতে হয়। কিভাবে মানুষকে বিশ্লেষণ করতে হয়। কিভাবে নিজের মধ্যে ডুবে নিজেকে আবিষ্কার করতে হয়। আমি হয়তোবা নিজেকে আবিষ্কার করতে পারিনি। তবে চেষ্টা করছি। প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি। ধাৎ্ আবার এক ক্লাইন্ড এলো। পরে আবার লিখছি। প্লিজ...

কি ফ্রি আছো তো?
যাই যা করো। আমার চিঠি পড়ার জন্য যে তুমি এক্কবারে হা করে নাই সেটা আমি জানি। তবে একেবারে যে আগ্রহ নাই সেটাও বিশ^াস করতে ইচ্ছে করছে না। যাই বলো—লেখক জীবনটাই অন্য রকম। মানে যারা লেখে তারা নিজেদের অন্য রকম ভাবতে ভালোবাসে। ভেবে ভেবে একটা তৃপ্তি পাওয়ার চেষ্টা করে। এই যে দেখো হুমায়ুন আহমেদ বুড়ো বয়সে একটা মেয়েকে বিয়ে করলেন। তাও আবার মেয়ের বান্ধবীকে। যদিও শাওন বলেছেন ‘ আমি আমার বান্ধবীর বাবার সাথে প্রেম করিনি বরং আমার বন্ধু মেয়ের সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়েছিলো।’ এটা তিনি করতেই পারেন। কিন্তু তার পাঠকরা হইচই করে দেশ মাতিয়ে ছাড়লো। এ জন্য তার বই পড়া কিন্তু কেউ ছাড়েনি। আমিও এ পর্যন্ত তার প্রকাশিত সব বই পড়েছি। তাকে মনে মনে স্যালুট দেই। কেনো জানো? সে একজন সুপুররুষ। এই বয়সে বিয়ে করে দুই ছেলের বাবা হয়েছেন। আমার কোনো ভয় নেই কারণ এই চিঠি হুমায়ুন আহমেদ বা তার নতুন বউয়ের চোখে পড়বে না। সে আশংকা থাকলে আমি লিখতাম না। এ তো শুধু তুমি পড়বে। তুমি আমাকে যতো গালি দাও তাতে আর আমার কি আসে যায়। হাজার গালি দিলেও দিন শেষে তোমাকে চাইলে যে আমি আমার দু পায়ের মাঝে এনে ডুবিয়ে রাখতে পারি। সেই বিশ্বাস আমার আছে। কি মেজাজ গরম হয়ে গেলো? তোমার তা হোক! কতো আর মেজাজ গরম করবে? আমার জন্য যখন সেক্সটয় কুরিয়ার করে আমাকে অপমান করলে তখন আমার মেজাজ গরম হয়নি? হ্যাঁ ওটা আমার কাজে লাগবে। কিন্তু তাই বলে তুমি ? তোমার কাছ থেকেই ওটা আমাকে নিতে হবে? হয়তো আমার ধারণায় ভুল থাকতেও পারে। আমার মতো মেদ জমে যাওয়া নারীর কাছে তোমার পুরুষত্ব নাও জাগতে পারে। তবে সত্যি বলতে কি জানো? একজন নারী চাইলে একজন পুরুষকে যে কোনো ভাবে—যে কেনো পরিবেশে একেবারে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে পারে। তবে সেই নারীর ধুলোয় বাসার মতো সাহসও থাকতে হবে।
তোমার সাথে একদিন দেখা হওয়া দরকার। অনেক কথা জমে আছে। তুমি কি একবার পটুয়াখালিতে আসতে পারো? এখানে একটা পতিতাপল্লী আছে। এটাও দেখে গেলা সাথে তোমার ফটোগ্রাফিও কিছুটা সম্মৃদ্ধ হলো। আর তোমার শরীরও কিছুটা সম্মৃদ্ধ হলো। ভিন্ন স্বাদ নিয়ে। ক্ষ্যাপো না সোনামনি। ক্ষ্যাপে তো কোনো লাভ নেই। আমি এখন তোমার থেকে শত শত মাইল দূরে আছি। তোমার রাগান্বিত চোখ আমাকে কাঁপাতে পারবে না। আর সামনে আসলে? হাহাহহা। সামনে আসলে তো ওরকম রাগ করে তুমি আমার দিকে তাকাতেই পারবে না। যাক মসকরা বাদ। আমার কলিগের জামাই এখানে একটি এনজিওতে কাজ করে। তার সুপারিশ পেলে হয়তো তোমাকে ওখানে ঢুকানো যাবে। ওখানে গেলে সাধারণত কিছু না করে ওরা নিরাপদে বের হতে দেয় না। তোমার হাতে তো এখন মেলা সময়। আসো একবার। লুকিয়ে হলেও একবার কিছু সময়ের জন্য একটু রিকশায় ঘুরবো। বাসায় তো আর নিয়ে আসতে পারবো না।
গম্বুজের জন্য আমার জীবনটা শেষ হয়ে গেলো শুভ্র। আহারে জীবন। ইশকুলে পড়ার সময় কতো প্রেমপত্র পেয়েছি। সেগুলো সংগ্রহ করে কলেজ জীবন পর্যন্ত রেখেছিলাম। কিন্তু কুত্তার বাচ্চা ওই ক্যাডারের সাথে [ তখনো সে ছাত্র ছিলো] প্রেম হওয়ার পর সব পুড়িয়ে ফেলেছিলাম। ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে। সে খুব একরোখা ধরণের ছিলো। আমাকে চিঠি দিয়েছে আর আমি চিঠি দেইনি সেটা সে কোনো ভাবেই বিশ্বাস করতো না। কুয়াকাটা তো নিশ্চয়ই এসেছো। সে হয়তো অনকে দিন আগে। আসো আবার একবার দেখে যাও। সেখানেও তোমার ফটোগ্রাফার মনের খাদ্য পেয়ে যাবা। জানি এতো করে বলছি। হয়তো তুমি চলেও আসবে। কিন্তু আমি হয়তো তখন সময় দিতে পারবো না।
যেটাই হোক। এবার একটা সত্যি কথা বলছি। হাসবে না প্লিজ। তুমি যদি হাসো তো কথাটার কোনো মূল্য থাকবে না। জানি এই কথা তোমাকে বিশ্বাস করাতে কষ্ট হবে। গত রাতে তোমাকে স্বপ্নে দেখেছি। না না সেই স্বপ্নে বিছানার কোনো দৃশ্য ছিলো না। কোনো ঠোঁটের দৃশ্য ছিলো না। তুমি গান গাইছো। আমি শুনছি। আমি গল্প করছি। তুমি শুনছো। আমি কবিতা পড়ছি। তুমি শুনছো। তারপর আমরা দুজনে মিলে কোথায় যেন গেলাম। সেখানে অনেক মানুষ। কিন্তু একজনও পরিচিত মানুষ নেই। একটা মুখের মধ্যেও আর কৌতুহল নেই। তারা কেবল যার যার মধ্যে ঢুকে আছে। তারপর একসময় সব মানুষগুলো দৌড়াতে লাগলো। সে কি দৌড়...! আমি তোমাকে খোঁচাতে লাগলাম। তুমি দৌড়াচ্ছো না কেনো? তুমি চুপ হয়ে দৌড়ানো মানুষের দিকে তাকিয়ে থাকলে। তাদের পায়ের ছাপে আটকে আছে তোমার চোখ। আমি তোমাকে আবার তাড়া দিলাম। দৌড়াচ্ছো না কেনো? চলো। তুমি আমার হাত ছেড়ে দিলে। আমি দৌড়াতে থাকলাম। দৌড়াচ্ছি আর দৌড়াচ্ছি। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো। দেখলাম আমি ঘেমে নেয়ে উঠেছি। উঠে পানি খেলাম। তারপর সারারাতে আর ঘুম হলো না।
কি তোমার বিশ্বাস হলো? আমি জানতাম তোমাকে বিশ্বাস করাতে পারবো না। তুমি বলবে ‘সারাদিন অফিসের কলিগের সাথে লটরপটর আর রাতের স্বপ্নে আমি?’ তারপর হাহাহা করে হাসতে থাকবে।
তখন আমি বিরক্ত হবো। কারণ তোমাকে অনেক বার বলেছি তোমাকে হাসলে বোকাবোকা লাগে। বরং চুপ করে থাকলে তোমাকে মার্জিত একজন পুরুষ মনে হয়।
এরকম না ঘুরে ফিরে একটা কাজ জোগার করো। বিয়ে করো। উড়ে উড়ে মধু খাওয়ার মধ্যে কোনো শান্তি নাইরে পাগলা।
এখন আবার রাখতে হচ্ছে। অফিস ছুটি হয়ে গেছে। এখন বসে থাকলে সবাই হাবজাবি ভাববে। অফিস তো ছুটির পর ম্যাডাম বসে বসে কি করছে! মেয়েতো হওনি। মেয়ে হয়ে জন্মালে টের পেতে! মেয়েদের কতো কিছু ম্যান্টেইন্ট করে চলতে হয়। ড্রাইভারও এসে পড়েছে মনে হয়। ওহ তোমাকে বলা হয়নি আমরা এ মাসের শুরুতে একটা নতুন গাড়ি কিনলাম। আমার অংশ খুবই কম। বেশির ভাগই আমার হাবাগেবা স্বামীর। গম্বুজটার।

সোমবার
১৪ জুন ২০১০ খ্রি:
রাত পৌণে দুইটা। ঘুম আসছে না শুভ্র। কি করি বলো তো? তিনটা ঘুমের ট্যাবলেট খেলাম। এতোক্ষণ ব্যালকনিতে বসে চা খেলাম। কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। সরকারি চাকুরি তাও আবার ব্যাংকের। সকাল ন’টার মধ্যে উপস্থিত থাকতে হবে। কি যে করি। মাথাটাও ব্যথা করছে। এবার তোমাকে অনেক কিছু লিখতে চাইছিলাম। কিচ্ছু লেখা হলো না। মনে হয় কি জানো? তোমাকে সারাজীবন ধরে লিখলেও আমার কথা ফুরাবে না।
পাশের রুমে ষাঁড়টা নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। ষাঁড় বললেও ষাঁড়ের অপমান হবে। ষাঁড়ের তো ইয়ে বড় একটা মাল থাকে। বাল খুব অস্থির লাগছে। রবীন্দ্র-নজরুল শোনার চেষ্টা করলাম। কোনো কাজ হলো না। মাঝে মাঝে মুড এতোই খারপ থাকে যে কোনো ঔষধেই কাজ হয় না।

কিছু দিন এমন আসে যে—বিশেষ কোনো কারণ ছাড়াই খুব ভালো লাগে। একা একা হাসতে ইচ্ছে করে। গাছের পাতার সাথে তর্ক করতে ইচ্ছে করে। আবার খাঁচাবন্ধি কবুতরের সাথে ছি কুত কুত খেলতে ইচ্ছে করে। নাইতে নেমে আর উঠতেই ইচ্ছে করে না। মনে হয় গোলাম আলীকে পাশেই বসিয়ে রাখি। আজিজুল ইসলামকে খবর দিয়ে বলি—গুরু আপনি আজ বাঁশীতে জোছনা নামাবেন। আমি ভিজবো।
তখন একলা একলা বলি ইস্ এমন একটি দিন আজ চলে যাচ্ছে... কেউ টেরও পেলো না।

তুমি তো জানো আমি গল্প লিখি। হাহাহা এই সুযোগে তোমাকে একটা কবিতা শুনিয়ে দিলাম। মগা বালক টেরও পাইলা না। অসহ্য এই জীবন প্রতিনিয়ত আরো অসহ্য হয়ে উঠছে। কি যে করবো! হ্যান্ডস্যাম যুবককে দিয়েও মনে হয় কোনো কাজ হবে না। সে আমার চেয়েও অনেক কিপ্টে। অনেক হিসেবি। অনেক হিসেব করে ইশারা ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেয় আমার আর তার বয়সের পাথক্য। আরে মজনু ভালোবাসা তো শরীরের (!) আবার বয়স দিয়ে কি করবি? ধুয়ে ধুয়ে পানি খাবি?
আরো তিনটা ট্যাবলেট খেলাম। কাল ঠিক সময় অফিসে যেতে পারবো না। এটা নিশ্চিত। তবে ভয় পেয়ে না পাঁচ ছয়টা ট্যাবলেট খেলে কেউ মরে না। আমিও বেঁচে থাকবো। আমার হইলো কৈ মাছের প্রাণ। আমি মরে গেলে গম্বুজের জাত-ধর্ম আর পৌরুষত্বকে কে বাঁচিয়ে রাখবে?

তোমার সুবেহতারা
ঋতু


প্রথম পর্বের লিংক ঃ Click This Link
দ্বিতীয় পর্বের লিংকঃ Click This Link

[ বইটি সংগ্রহ করতে চাইলেঃ https://www.rokomari.com/book/176452/guha ]
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:৪৭
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×