somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রকাশিতব্য ‘জনতা ব্যাংক রোড’ পাণ্ডুলিপি থেকে দশটি কবিতা

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হুলস্থুল

লাশবাহী গাড়ি থেকে নামলে তুমি
একা
এবং অন্যান্য দিনের চেয়ে সম্মনিত পোশাকে;
গরীব ও স্বভাব সুলভ বিষণ্নতায় দাঁড়ানো রোড লাইটের
কাছাকাছি স্থির আমি—খালি হাতে বেরিয়েছি আজ।

কোথাও থেমে নেই কিছু
লবণ ও গ্রন্থিত তাপমাত্রার মতন ছড়িয়েছো তুমি;
ভূমিহীন বালক আমি
পথের পথে বসে আছি চুপচাপ—অন্ধকার অরণ্যে।

দেখা হলে ফের মুছে দিও ঘুম
ছুঁয়ে দিও ঠোঁট—
অলীক কুসুম জড়িয়ে নাকে
তোমার ডাকে
প্রিয় ঘোর গুঁজে তলিয়ে যাবো নিখুঁত সাদায়।


জনতা ব্যাংক রোড

গোলাপি মলাটের তাশাহুদ বাজছে
মৃদু কান্নায় জড়িয়ে যাচ্ছে ক্ষুধার তবলা,
আহা কোকিলের এসরাজ
ক্রমাগত সঙ্কটে ফুটেছো একা—
আমাদের পড়শি বাগানে
ফুলে-ফলে বেড়ে উঠছো আবার;
অবিকল হাট ফেরত বাবার মতন।

না’র ওজনে চাপা পড়েছে জীবন
নাগরিক তীব্রতাও;
তবুও ইচ্ছেরা হাঁটে—অনাগত ত্রাসের লোভে
গলিমুখে নিঃশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকে সাদা পোশাকের কেউ।

আমাদের টানাটানির সংসার
ভুলেও শখের দোকান খুলে না কেউ
নুয়ে যাচ্ছে বাবাটা;
জনতা ব্যাংক রোড ধরে যেতে যেতে বলি
—কন্যা ভাগ্যের বাবাদের একটা টাঁকশাল থাকা ভালো!

বাতাসের কানে কানে

কোনো এক ভোরে তেজদাসকাঠী যাবো আবার
পায়ে শিশির মেখে
গোপনে
একা
একা
হেঁটে যাবো তোমার দরোজায়।

যুদ্ধ থেমে যাওয়ার আগে অন্তত একবার
মসজিদের পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা
নিঃসঙ্গ ইদগাঁয়ের পাশ দিয়ে হেঁটে যাবো
অন্তহীন নিঃশ্বাসের শেষ ছায়ায়।
পুরানো রঙ দেখে দেখে হলুদ ফ্রক অবদি
চোখে ছড়িয়ে দিবো ঘুম—

উষ্ণ স্পর্শে জ্বলে উঠবে ছোঁয়াছে ইশকুল;
ধীর পায়ে পাশাপাশি
কেঁদে
কেঁদে
শেষ বিকেলের গাঢ় চুম্বনে তলিয়ে যাবো আবার।

পরমা এসেছিল

ক্লান্তি মুখর উৎসব শুধু
তাকিয়ে থাকে—পাশাপাশি সন্ধ্যায়
একাকী গোলাপ বাগানে;
মানুষহীন সংলাপ তবু ভিজে যায়
অন্যত্র
অতিকায় বৃত্তের মুখোমুখি।

সুরম্য সন্ধ্যায় এসেছিল পরমা
গভীর কালোর মিছিল শেষে
অন্যসব জীবনের মতন
অস্থির, আলুথালুবেশে—
হাতে ছিল জমানো পথের উৎসুক ধুলো
থিতানো কান্নার নীরব ছয়লাব।

তবুও সে
বিরতির গোস্্সা নিয়ে
ছুটেছে গণিতের পা অবদি;
থেমে থেমে
মুছে গেছে
এলোমেলো গলির গভীর সুর-তালে।

উনুন

ঘর পোড়া মানুষের মতো তাকিয়ে থাকি
দেখি তুমি জ্বলছো, একা—
সঙ্গমরত সাপের মতন গলে যাচ্ছো
ধীরে
ধীরে
নিজের শরীর হারিয়ে
অন্য শরীরের গভীরে।

আমারও বুক পুড়ে যায়
নিজস্ব গঞ্জে গঞ্জে ছড়িয়ে যায় অগনিত সাপুরে মুখ;
সমগ্র বন্দনার পাশে দাঁড়িয়ে যায় অদ্ভুত এক দেয়াল—
সামনে পিছনে সারি সারি তুমি
অথবা দীর্ঘ লাইনের আগুন;
হইচইয়ের তাপে আমিও গলে যাই।
তবুও তাকিয়ে থাকি—আগুনের গুনগুনে
অদৃশ্যের অজস্র সঙ্গমের মাঝে
তোমাকে আবিষ্কারের ভরসায়।


রোজার সন্ধ্যা

নগরীর কৌশলে আস্ত একটা জীবন খুইয়ে
জীবন হারানো মাস্তানের মতন বসে আছি।
অসহায়
দুস্থ
কবরস্ত গণিতের মতন নীরব।
দূর থেকে টের পাই
মায়ের শরীর থেকে একটা দুঃখ দুঃখ ঘ্রাণ আসে,
তবুও মা হাসেন,
হয়তো কাঁদেনও
...দেখি না কখনো।
কেবল টের পাই উনুন ফেরত মুখোশ খুলে
ছড়িয়ে যাওয়া ক্লান্ত মাথায় মা নামিয়ে দিচ্ছেন সৌরজগত।


মুখোমুখি

বিষণ্ন দূরবিনে চোখ রেখে গেয়ে ওঠে দিন;
কী এক বিভ্রম ফুটছে গোপনে—আরও অস্থির, উম্মাদ
কলহ জুড়ে ডুবছে লাটাই। কেটে যাচ্ছো? যাও,
গহীন সন্ধানে আবৃত হও তুমুল।
নগন্য এ তীর্থে ছোঁয়াছে কুঠার, কেটে দেয় ডাক;
এবং অভ্যাস ফেরত মুখোমুখি
ফিরেছে কেবল, অভাবী ভ্রু নিয়ে কাটাকাটি বিস্তর।
ভুলে গেছি কবুলের বায়না ছিল সন্ধ্যা সন্ধ্যা নাচে,
ঘিরে ছিল পশমি দরজা;
বিশ্বাস রেখো নরম চোখাচোখি নিয়ে
আমাদেরও একদিন স্নান হবে
ঘুড়ির ব্যাকরণ ভুলে ছয়লাব হবে নিষিদ্ধ কোলাহল,
কান্নার ঘ্রাণে তলিয়ে যাবে সমগ্র কাঁটাতার।


অবশিষ্ট

বিদায়ের পরে কী থাকে আর?
গহীন প্রলয়ে ডুবে যাওয়া ছাড়া;
অসুখের পাপড়ি ছড়িয়ে থাকে পথে পথে
নির্ঘুম আঁকি—
মন্থর কান্নায় মার্জিত মায়া লেপ্টে থাকে একা,
দূর নয়; কাছাকাছি কোথাও জেগে থাকে সকাল
এলোমেলো শখের শয্যায় চুপচাপ।

অনাগত দেয়ালের শরীর বৃত্তান্তে কোন্ ছবি?
কে আবার ছইহীন নাওয়ের গলুইয়ে এখন
রাত্তির নামায় গানের গলায়!
বিদায়ের পরে কী থাকে আর?
ধুলোমাখা চুম্বন ছাড়া।্


কবর

পাশ দিয়ে হেঁটে যাও
টের পাই,
দেখা পাই না কভু;
অনাথ
অন্ধকার জড়িয়ে শুয়ে থাকি, একা—
পড়শি দোকানে বসে থাকো তুমি
ক্ষুধার্ত, অস্থির আলেয়ার জানালা ছুঁয়ে
উড়ে যায় ক্লান্ত চোখ আমার;
তীঘ্ন শোকের উল্লাস তোমার
বয়ে যায় দূরে...

আমাদের কোলাহল ফুরিয়েছে কবে;
অজস্র জ্বরের জ্বালা নিয়ে ঠোঁটে
নাকের পাঠ শেষে শুয়েছে কালো
মিথ্যের আম্রেলায়—
কেবল আমি মিশেছি আয়নায়
সাদার শরীর জুড়ে গভীর আশ্রয়ে
যেভাবে ফুটে থাকে ভাটফুল!


দাস

চেয়েছিলাম, সহজ—সুখি ঢেউ;
সবুজ বৃক্ষের মতন সরল বাক্য
বিটিভির রক্ষণশীল ছায়া
ইচ্ছে হলে শুক্রবার ডিঙিয়ে চলে যাবো
—পড়শির সিনেবক্সে।
বিজ্ঞাপনের ধৈর্য পরীক্ষায় পাশ করে
স্থির নদীর মতন গন্তব্যের অপেক্ষায় কেটে যাবে দিন;
কেবল ভালো লাগার জোড়ে পাড়া-মহল্লার নাট্যমঞ্চে
ভেঙে দিবো রোদ
ছড়িয়ে পড়বো বিকেলের ইশারায়
ভাঁজে ভাঁজে রহস্য, বুদ্বুদ তুলবে চোখে-মুখে।

চেয়েছিলাম—কবি, বটবৃক্ষ;
ইচ্ছে ছিল জীবনের সরলতাকে উল্টেপাল্টে
ডুবে যাবো যাপনে—
পাল্টে দিবো দেশ-দিন;

ছুঁতে পারিনি নিজেকে
জীবনের ধুলোবালিতে মাখামাখি সব;
কী হয়েছি এখন?
...কর্পোরেট দাস!


#সানাউল্লাহ_সাগরের_কবিতা

[ বাংলাদেশের শীর্ষ নিউজ পোর্টাল jagonews24.com-এর সাহিত্য বিভাগে প্রকাশিত।]
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৩:২৮
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×