somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভয়ংকর ঠগী ( শেষ পর্ব)

৩১ শে মার্চ, ২০১১ বিকাল ৩:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভয়ংকর ঠগী (প্রথম পর্ব)
ভয়ংকর ঠগী (দ্বীতিয় পর্ব)
ভয়ংকর ঠগী (তৃতীয় পর্ব)
ভয়ংকর ঠগী (চতুর্থ পর্ব)




ঠগীদের দমন

এখনও ঠগিরা বেঁচে আছে ইতিহাসের পাতায় আর লোকমুখে। এদের হাত থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে এগিয়ে এসেছিলেন একজন ইংরেজ সেনা, নাম ‘ফিরিঙ্গি ঠগি , হেনরি শ্লীম্যান’! ১৮৩০-এর দশকে ভারতে প্রশাসক এসেছিলেন উইলিয়াম হেনরি শ্লীম্যান- ঠগী দমনে তার উৎসাহ আর একনিষ্ঠার ফলে যার নামই হয়ে গিয়েছিল ‘ঠগী শ্লীম্যান’ অথবা ‘ ফিরিঙ্গি ঠগি’।

১৮২২ সালে উইলিয়াম শ্লীম্যান বেঙ্গল আর্মির অফিসার ছিলেন। পরে তিনি সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন; তাকেই গর্ভনর জেনারেল লর্ড বেন্টিক শ্বাসরুদ্ধকারী ঠগীদের নির্মূল করার নির্দেশ দেন। চারটি ভারতীয় ভাষা জানা শ্লীম্যান অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ ব্যাক্তি ছিলেন।

উইলিয়াম শ্লীম্যানই সর্বপ্রথম ঠগীদের কার্যপ্রনালী সম্বন্ধে আঁচ করতে পারেন। তিনি জানতেন ঠগীদের দমন করা সহজ না। কেননা, অন্যান্য দুস্কৃতিকারীদেও থেকে ঠগীদের আলাদা করা যাচ্ছিল না। তাছাড়া সুকৌশলে অপরাধ ঢেকে রাখছিল তারা। উইলিয়াম শ্লীম্যান গুপ্তচর নিয়োগ করেন, গঠন করেন পুলিশ ফোর্স।বিশেষ ট্রাইবুনাল ও দ্রুত বিচার আদালত গঠন করেন। এরই পাশাপাশি শ্লীম্যান ঠগীদের অপরাধস্থল সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষন করে মানচিত্র তৈরি করেন এবং অপরাধের দিনক্ষণের একটি তালিকা তৈরি করেন; যার ফলে তিনি পরবর্তী গনহত্যার সময়কাল আঁচ করতে সক্ষম হন। নিজের লোকদের ব্যবসায়ীর ছদ্মবেশে অস্ত্রসহ পাঠান।

এভাবে ১৮৩০ থেকে ১৮৪১ সালের মধ্যে ৩, ৭০০ ঠগী ধরা পড়ে। ঠগীদের জিজ্ঞাসাবাদের ফলে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। যেমন মাত্র ২০ জনের দল ৫,২০০ পথযাত্রীকে হত্যা করেছে । এদের মধ্যে এক ঠগী সর্দার বেহরাম ; সে ১৭৯০ থেকে ১৮৩০ সাল এর মধ্যে প্রায় ১২০০ টি খুন করে! তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল এর জন্য তার অনুশোচনা হয় কি না? উত্তরে বেহরাম নির্বিকার কন্ঠে বলেছিল, ব্যবসার জন্য কারা আক্ষেপ করে! সেসময় ৫০০ জনের মত ঠগীর ফাঁসি হয়, বাকিদের দ্বীপান্তর অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। ফাঁসীকাষ্ঠে ঠগীরা ছিল অভিব্যাক্তিশূন্য । বরং তারা কর্তৃপক্ষের কাছে ফাঁস দিয়ে মৃত্যুর আবেদন করে, যে ভাবে তারা নিরীহ যাত্রীদের হত্যা করত!

ঠগীদের দীর্ঘ বিচারপর্বে উঠে এল অনেক কাহিনী, যাতে স্তম্ভিত হল সভ্য সমাজ। ঠগীদের জবানবিন্দ থেকে খুনের একটা সাম্ভাব্য হিসাবও পাওয়া গেল। ১৯৩৩ সালে শ্লীম্যানের নাতি জেমস শ্লীম্যানের লেখা থেকে জানা যায়, একজন ঠগী গড়ে মাসে ৮-১০ জনকে খুন করত। ২০ বছর ধরে সে যদি এই কাজ করে যায় আর এই সংখ্যাকে ভারতে ঠগীর সংখ্যা দিয়ে গুণ করা হয়, তা হলে সংখ্যাটা কম করেও বিশ থেকে তিরিশ লক্ষ হতে পারে। ১৮৪০ দশকে ঠগীদের বিচারের পর ঠগীদের কথা আর খুব বেশী শোনা যায়নি।

এরপর ঠগিদের স্থান হয় গল্প উপন্যাস ও চলচ্চিত্রে। হলিউডি মুভি ‘ইন্ডিয়ানা জোনস অ্যান্ড দি টেমপল অভ ডুমস’ এ ঠগীদের দেখানো হয়েছে। সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ এ ছবিতে অভিনেতা বিখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেতা অমরেশপুরী কালীউপাসক ঠগী চরিত্রে অভিনয় করে প্রসংশা কুড়িয়েছেন। এছাড়া সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা সিরিজের গোঁসাইপুর সরগরম ঊপন্যাসেও ঠগিদের ফাঁস লাগিয়ে হত্যাপদ্ধতি বর্ণিত আছে।

এখনও ভারতের রাজস্থানে ঠগীদের বংশধরদের দেখতে পাওয়া যায়- যদিও তারা এখন স্বাভাবিক মানুষদের মত জীবনযাপন করে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০১১ বিকাল ৪:৪৪
১৪টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×